এই শিশুদের বাঁচাবে কে
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ : ০২ আগস্ট, ২০১৪
গাজায় ইসরাইলি বর্বরতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা। এ পর্যন্ত নিহত ১৫শ’ মানুষের এক-তৃতীয়াংশই শিশু। যারা আহত হচ্ছে তারা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। আবার কেউ চিরদিনের জন্য পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে। এসব শিশুর ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা। কেন শিশুদের ওপর এ বর্বরতা? জাতিংসঘ কেন শিশুদের রক্ষা করতে পারছে না। বিশ্ববিবেক কেন কথা বলছে না? আরব লীগ, ওআইসির মতো সংগঠনগুলো কেন নাম সর্বস্ব সংগঠনে পরিণত হয়েছে? এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া না গেলেও ইসরাইল যে ফিলিস্তিনের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংস করতে চায় সেটা সহজেই বুঝা যায়। তারা চায় ফিলিস্তিনিরা একটি পঙ্গু জাতিতে পরিণত হোক। এজন্য তারা পরিকল্পিতভাবে শিশুদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। রয়টার্স ও এনডিটিভির প্রতিবেদনে ফুটে উঠেছে সে চিত্র।
বয়স ৫-৬ এর বেশি নয়। গায়ে সংঘর্ষের সংবাদ সংগ্রহকারী সাংবাদিকের মতো জ্যাকেট। মাথায় টিভি লেখা হেলমেট। গাজার ছেলেটি আসলে নিজেকে ইসরাইলি বর্বরতার হাত থেকে বাঁচাতে এ পোশাক পরেছে। দেখে কিন্তু মনে হবে না বাঁচার জন্য তার এ ভান। শিশুটিকে দেখে মনে হবে সে আসলেই কোনো টেলিভিশনের এক সংবাদকর্মী। চারদিকে ইসরাইলি হামলায় হতভম্ব শিশুটি বাঁচার উপায় খুঁজছে। এ কারণে কালো পলিথিন দিয়ে জ্যাকেটের মতো বানিয়ে গায়ে জড়িয়ে ও টিভি শব্দ লেখা পুরনো একটি হেলমেট পরে ‘সাংবাদিক’ সেজেছে সে।
সম্প্রতি ফিলিস্তিনের গাজায় সংবাদ সংগ্রহকালীন সুইডিশ সাংবাদিক জোহান-ম্যাথিয়াস সমারস্টর্ম এ ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন। তাকে দেখে ওই শিশুটি দৌড়ে এসে বলতে থাকে, ‘আমি একজন সাংবাদিক। এখানে যা ঘটছে তা নিয়ে আমি রিপোর্ট করি। এটা আমার ফ্লাক জ্যাকেট (ধাতুর প্রলেপযুক্ত ভারী কাপড়ের জ্যাকেট)।
গাজা সিটির আল সাফিয়া হাসপাতালের বিছানায় শোয়া ১০ বছরের মোহাম্মদ আলালিয়া। ইসরাইলি হামলায় তার হাত ভেঙে গেছে। ঝলসে গেছে শরীরের বিভিন্ন জায়গা।
সে বলে গাজার শিশুরা একটি স্বাধীন ভূমিতে বাস করতে পারছে না বলে আমার বেদনা হয়। আমার আশা, গাজার শিশুরা একটি স্বাধীন ভূমিতে বাস করবে। তাই বিশ্বের কাছে অনুরোধ, গাজার শিশুদের স্বাধীনভাবে বাস করতে দাও। তাদের কি এই অধিকার নেই? কেন তারা বিশ্বের অন্য শিশুদের মতো বাঁচতে পারবে না? আমি বিশ্বনেতাদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি, গাজার শিশুদের স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার দাও।
সাংবাদিক সেজে বাঁচার আকুতি কিংবা আল সাফিয়া হাসপাতালে শুধু আলালিয়া নয়, ইসরাইলি হামলার শিকার হয়ে সমবয়সী এবং তার চেয়ে কম বয়সী অনেক শিশু রয়েছে। গাজার আহত শিশুদের আহাজারিতে ভরে গেছে এ হাসপাতালের শিশু বিভাগ।
বরাবরই গাজায় ইসরাইলি বর্বরতার বড় শিকার হয় গাজার শিশুরা। এবারের সংখ্যা অতীতের যে কোনো সময়কে ছাড়িয়ে গেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা এ পর্যন্ত গাজায় নিহত ও আহত শিশুর পরিসংখ্যান দিতে না পারলেও জানান, আহতদের অনেক শিশু রয়েছে।
ছয় বছরের নূরকে উত্তর গাজার বেইত হানাউন এলাকা থেকে আহত অবস্থায় নিয়ে আসা হয়। তাদের বাড়ির কাছেই ছিল জাতিসংঘের একটি স্কুল। যেদিন সকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল, সেদিনই তাদের বাড়ির কাছে ইসরাইলের ছোড়া একটি শেল বিস্ফোরিত হয়। এতে বিস্ফোরক দ্রব্যের সুঁচালো টুকরো গিয়ে তার ফুসফুসে বিঁধে যায়।
নূর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে তার পাশের বিছানায় সঙ্গী হয় খালেদা ও ইয়ামিন জাবির। তাদের আনা হয়েছে উত্তর-পূর্ব গাজার জাবালিয়া এলাকায়। তাদের দু’জনের বয়সই চার বছর করে। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা নূরের মতো। আরেকজনের শরীর ঝলসে গেছে।
জাবালিয়া থেকে আনা ছয় বছরের আরেক শিশু মারজোব মুসা আর ভানের ফুসফুসে বিঁধেছে বিস্ফোরিত বোমার টুকরো। কিন্তু বিঁধে যাওয়া এসব বস্তু বের করার যন্ত্রপাতি নেই আল সাফিয়া হাসপাতালে। মারজোবের পরিবার তাকে গাজার বাইরে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি চাইলেও তা দেয়া হয়নি।
সাংবাদিকেরা জানান, দুঃসহ এই অবস্থার মধ্যেও যারা শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসা পাচ্ছে, তাদের ভাগ্যবান বলতে হয়। সাংবাদিকদের এ প্রতিনিধি দলটি শিশু ওয়ার্ডে প্রবেশের আগে বাইরে ক্রমাগত অ্যাম্বুলেন্স আসতে দেখেন।
No comments:
Post a Comment