Friday, August 15, 2014

পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে খুন

পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে খুন
যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ : ১৬ আগস্ট, ২০১৪
যুবলীগ নেতার কাছে পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে খুন হয়েছেন কম্পিউটার প্রকৌশলী গিয়াসউদ্দীন রাজু। বৃহস্পতিবার যুবলীগ নেতাদের হামলায় গুরুতর আহত হওয়ার পর শুক্রবার তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। যুবলীগ নেতাদের হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন রাজুর আপন দুই ভাইও। ঘটনার পর শাহবাগ থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে থানা পুলিশ উল্টো যুবলীগ নেতাদের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। নানা টালবাহানার পর থানায় হত্যা মামলা নেয়া হয়েছে। ওদিকে নিহত রাজু ও তার দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে যুবলীগ নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ এনে পাল্টা মামলাও করা হয়েছে।
নিহতের বড় ভাই জয়নাল আবেদিন সাগর জানান, জানান, ২১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম ওরফে আক্তারের সঙ্গে তার ভাইয়ের অনেক আগে থেকেই পরিচয় ছিল। প্রথমদিকে সাইফুল ইসলাম ফ্লেক্সিলোড ও মোবাইল রিচার্জ কার্ডের ব্যবসা করতেন। তখন আক্তারের সঙ্গে তার ভাইয়ের ঘনিষ্ঠতা ছিল। এছাড়া তারা উভয়েই একই এলাকার বাসিন্দা। সেই সূত্রে আক্তার বিভিন্ন সময় রাজুর কাছ থেকে টাকা-পয়সা ধার নিতেন। তিন বছর আগে আক্তার রাজুর কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকা ধার নেন। কিন্তু সেই টাকা দীর্ঘদিন হয়ে গেলেও তিনি পরিশোধ করছিলেন না। এ নিয়ে আক্তারের সঙ্গে রাজুর সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে পাওনা টাকা আক্তারের কাছে চাইতে যান রাজু। এ নিয়ে রাজুর সঙ্গে আক্তারের কথা কাটাকাটি হয়। রাজুর ছোট ভাই টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার আদনান আবেদীন বাবু জানান, তারা তিন ভাই আজিজ সুপার মার্কেটের পূর্ব পাশে মেডিসিন মার্কেটে ওষুধ কিনতে যাচ্ছিলেন। তখন রাত সাড়ে ১১টা। এ সময় ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি আক্তার, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলাম জুয়েল, যুবলীগকর্মী রুবেল, সুমন, আসাদ, রনি ও ফারুকসহ ১৫-২০ জন তাদের তিন ভাইয়ের ওপর হামলা চালায়। গুলি, কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করেন তাদের তিন ভাইকে। আক্তারের গুলিতে আহত হন আদনান। রাজুর মাথায় ও কপালে কোপায় এবং জয়নালকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করেন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে নেন। গুরুতর অবস্থায় আদনান ও রাজুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাজুর অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় চিকিৎসকরা বলেন, তাকে আইসিইউ বিভাগে রাখা প্রয়োজন। সেখানে আইসিইউর সিট খালি না থাকায় রাত দেড়টার দিকে হাতিরপুল এলাকার ব্রাইটন হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে আইসিইউতে রাখা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রাজুর মৃত্যু হয়।
নিহতের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, ঘটনার পর থেকেই যুবলীগ নেতাকর্মীদের পক্ষ নিয়েছেন ওসি সিরাজুল ইসলাম। তাদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে একতরফা কথা বলছেন তিনি। মৃত্যুর আগে মামলাও নেননি ওসি।
রাতে রাজুর পিতা সাব্বির আহমেদ থানায় মামলা করতে গেলে শাহবাগ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম মামলা না নিয়ে উল্টো তাকে গালাগালি করেন বলে অভিযোগ ওঠে। সাব্বির আহমেদ বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। সবার সামনে ওসি আমাকে রাজাকার বলেছেন। এছাড়া চরম দুর্ব্যবহারও করেছেন ওসি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শাহবাগ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম। শুক্রবার তিনি যুগান্তরকে বলেন, নিকটাত্মীয় মারা গেলে আপনজনরা কত রকম কথাই তো বলেন। সব কি সত্যি হয়? ওসি বলেন, নিহত রাজু ও তার ভাইরা আগবাড়িয়ে গিয়ে ২১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ অফিসে হামলা চালিয়েছেন। ১৫ আগস্ট শোক দিবসের অনুষ্ঠানের প্যান্ডেল ভাংচুর করেছেন। তিনি দাবি করেন, রাতে উভয় পক্ষ থানায় এসে আপসের চেষ্টা করছিলেন। তখন রাজু মারা যাননি। এখন যেহেতু রাজু মারা গেছেন তাই নিহতের বাবা হত্যা মামলা করেছেন।ওসি বলেন, এত রাতে শোক দিবসের অনুষ্ঠানের প্যান্ডেলে টাকা চাইতে যাওয়ার বিষয়টি অনেকটা অস্বাভাবিক।
রাজুর মৃত্যুর সংবাদ জানার পর শুক্রবার সকাল থেকেই ব্রাইটন হাসপাতালে রাজুর লাশ দেখতে ভিড় করেন স্বজন ও পরিচিতরা। নিহতের অসুস্থ স্ত্রী রুবিনা আক্তার বন্যা স্বামীর মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতাল ছেড়ে যান ব্রাইটন হাসপাতালে। কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। স্বামীর হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। তিনি বলেন, আক্তারের সঙ্গে অনেক আগে থেকেই তার স্বামী রাজুর জানাশোনা। নিহতের মা কামরুন্নার হিরা ছেলের লাশের পাশে বসে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, যারা আমার কোল থেকে রাজুকে কেড়ে নিয়েছে আমি তাদের ফাঁসি চাই। এ ঘটনায় নিহতের পিতা সাব্বির আহমেদ বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা করেছেন। মামলার প্রধান আসামি ২১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি সাইফুল ইসলাম ওরফে আক্তার।
এদিকে ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি সাইফুল ইসলাম ওরফে আক্তার দাবি করেন, তার কাছে রাজু কোনো টাকা-পয়সা পেত না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ১৫ আগস্ট শোক দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাস্থলে যুবলীগ নেতা জুয়েল ও রুবেলসহ কয়েকজন রাত ১০টার দিকে গরু জবাই করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় রাজু ও জয়নালসহ ১০-১২ জন জুয়েল ও রুবেলকে মারধর করে। এ খবর আমাকে মোবাইল ফোনে জানায় জুয়েল। আমি শাহবাগ থানায় ফোন করে পুলিশ পাঠাই। পুলিশ যাওয়ার পর তারা পালিয়ে যায়। রাত ১১টার দিকে আমি যাই সেখানে। আমরা প্যান্ডেলে বসেছিলাম। রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজুরা ১০-১২ জন আবার আমাদের ওপর হামলা চালায়। প্যান্ডেল ভাংচুর করে। তখন আমাদের চিৎকারে লোকজন ছুটে আসে। রাজুদের হামলায় আমি ও জুয়েল আহত হই। জুয়েল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছে। জুয়েল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে তিনি দাবি করলেও শুক্রবার হাসপাতালে জুয়েলের ভর্তি সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। আক্তার জানান, তিনি প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে শুক্রবার সকাল থেকে বাসায় আছেন। তবে দুপুরে ঘটনাস্থলে গেলে যুবলীগ কর্মী পরিচয়ে আলমগীর যুগন্তরকে বলেন, আক্তার ভাইয়ের পায়ে লেগেছে। তারপরও তিনি সকাল থেকে পার্টি অফিসে প্রোগ্রামে আছেন।
এদিকে শুক্রবার বিকালে শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন থানায় ওই সময়কার ডিউটি অফিসার এসআই সোহেল। তিনি জানান, মামলা নম্বর ১২। মামলার বাদী নিহতের পিতা সাব্বির আহমেদ। সাব্বির আহমেদ জানান, ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি সাইফুল ইসলাম ওরফে আক্তার, রুবেল, সুমন, আসাদ, জুয়েল, রনি ও ফারুকসহ অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করা হয়েছে। অপরদিকে শাহবাগ ইউনিট যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান নিহত রাজুর দুই ভাইসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে পাল্টা মামলা করেছেন। মামলায় বলা হয়েছে, ঘটনার রাতে আসামিরা শোক দিবসের অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি করা প্যান্ডেলে হামলা চালায়। এতে যুবলীগের কয়েকজন কর্মী আহত হন।
- See more at: http://www.jugantor.com/first-page/2014/08/16/135293#sthash.ra3cx2VP.dpuf

No comments:

Post a Comment