Friday, August 15, 2014

সার্ক দেশগুলোকে নিয়ে দারিদ্র্য দূর করার ঘোষণা মোদির

সার্ক দেশগুলোকে নিয়ে দারিদ্র্য দূর করার ঘোষণা মোদির
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ : ১৬ আগস্ট, ২০১৪
আসুন আমরা সবাই মিলে এমনভাবে ভাবি যাতে বিশ্ব আমাদের নিয়ে ভাবতে শেখে। আমরা বিশ্বের মতো নই। ...সার্কের সবাই মিলে আমরা দারিদ্র্যকে দূর করব। এই সমস্যা আমাদের সবার। ... সন্ত্রাস আর সংঘাত থেকে আমরা কিছুই পাইনি। জাত বা ধর্মীয় সন্ত্রাস যাই হোক না কেন তা দেশের উন্নতির পথে বড় বাধা। ... বন্দুকের নলে মাটি লাল হয়, কোদাল দিয়ে আমরা মাটিকে সবুজ করতে পারি। ভারতের স্বাধীনতা দিবসে এভাবেই সম্প্রতি সৌহার্দ্য আর প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের সুন্দর সহাবস্থানের বাণী উচ্চারণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। স্বাধীনতার জন্য এক সঙ্গে লড়াই করার কথা স্মরণ করে চির প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের প্রতিও তিনি সহনশীল অবস্থানের বার্তা দেন। আহ্বান জানান এক হয়ে কাজ করার।
ভারতের ৬৮তম স্বাধীনতা দিবসে শুক্রবার রাজধানী নয়াদিল্লির লালকেল্লায় জাতির উদ্দেশে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন মোদি। পূর্বসূরিদের তুলনায় তার এ ভাষণ অনেক দিক থেকেই ছিল অন্যরকম। ইন্দিরা গান্ধী নিহত হওয়ার পর লালকেল্লায় প্রধানমন্ত্রীকে তিন দিক দিয়ে বুলেটপ্র“ফে ঘিরে রাখা হতো। মোদি তা হটিয়ে দেন। এ দিন লালকেল্লা চত্বরে মোদিকে ঘিরে ছিল না নিরাপত্তার ঘেরাটোপ। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর পর মোদির এই ভাষণ দ্বিতীয় দীর্ঘতম। এছাড়া এই প্রথম কোনো প্রধানমন্ত্রীকে লিখিত ভাষণ পাঠ করতে দেখল না ভারতবাসী। এর আগে এমন অনুষ্ঠানে শুধু আমন্ত্রিতরাই আসার সুযোগ পেতেন। মোদির নির্দেশে প্রথমবারের মতো এ অনুষ্ঠানে আসার অনুমতি দেয়া হল সাধারণ মানুষকে। অন্তত ১০ হাজার আম-আদমি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। মোদির পরনে ছিল হাফ হাতা ক্রিম রঙের পাঞ্জাবি ও পায়জামা। সঙ্গে পরেছিলেন গেরুয়া রঙের একটা প্রিন্টেড পাগড়ি, যার নিচের দিকটায় ছিল সবুজ প্রিন্ট। অর্থাৎ, সচেতনভাবেই এদিন মোদির পোশাকে ছিল ভারতের জাতীয় পতাকার তে-রঙার ছাপ।
ভাষণের শুরুতে মোদি বলেন, স্বাধীনতা দিবসে ভারতবাসীদের প্রতি প্রধান সেবকের শুভেচ্ছা। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়, আজ আমি আপনাদের সামনে এসেছি প্রধান সেবক হিসেবে। তিনি বলেন, একটি সাধারণ দরিদ্র পরিবার থেকে এসে একজন লোক আজ লালকেল্লায় দাঁড়িয়ে জাতির সামনে ভাষণ দিচ্ছে- এই কৃতিত্ব ভারতীয় গণতন্ত্রের। তিনি বলেন, প্রতিজ্ঞা করছি আমরা একসঙ্গে পথ চলব, একসঙ্গে ভাবব, একসঙ্গে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। আমি সব সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের জেরেই দেশ আজ এই উচ্চতায় পৌঁছেছে। এটা আমাদের সংবিধানের সৌন্দর্য যেখানে যে কোনো মানুষ এক পতাকার নিচে দাঁড়াতে পারে। নেতা বা শাসকরা এ দেশ গড়েনি। সরকারও নয়। কৃষক, শ্রমিক, মহিলা, যুবসমাজ, বিজ্ঞানীরা এ দেশ গড়ে তুলেছেন।
প্রতিবেশীদের গুরুত্ব : ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জয় লাভের পর থেকেই প্রতিবেশীদের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে আসছেন মোদি। স্বাধীনতা দিবসের ভাষণেও এর ব্যতিক্রম বলেননি তিনি। আগের প্রধানমন্ত্রীদের মতো ঘোরতর প্রতিদ্বন্দ্বী ও প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তানের বিরুদ্ধেও কোনো কড়া মন্তব্য করেননি মোদি। বরং, প্রতিবেশীদের সঙ্গে নিয়ে এ অঞ্চলের উন্নয়নের ঘোষণা দেন তিনি। তিনি বলেন, সার্কের সবাই মিলে আমরা অন্তত দারিদ্র্য দূরীকরণের চেষ্টা করতে পারি। এই সমস্যা আমাদের সবার। নাম উল্লেখ না করে পাকিস্তানের উদ্দেশে তিনি বলেন, সংঘাতে না গিয়ে শান্তির পথে থাকাই শ্রেয়। সংঘাত কেন? আমরা তো একই সঙ্গে স্বাধীনতার লড়াই লড়েছি?
ধর্ষণ ও ভ্রুণ হত্যা : মোদি ধর্ষণ ও ভ্রুণ হত্যার কড়া সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ধর্ষণের কারণে লজ্জায় আমার মাথা ঝুঁকে গিয়েছে। অভিভাবকদের প্রতি প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ধর্ষণের হাত থেকে বাঁচতে আমাদের বাবা-মায়েরা মেয়েদের শাসনে রাখেন। কিন্তু তারা কি নিজের ছেলেদের শাসন করছেন? যে ধর্ষণ করছে, সে তো কারও না কারও ছেলে। আমরা কি জানি আমাদের ছেলেরা কোথায় যাচ্ছে, কি করছে? মেয়ে শিশুদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধ করতে ভারতীয়দের প্রতি আহ্বান জানান মোদি। তিনি বলেন, দেশের ডাক্তারদের প্রতি আমি আবেদন জানাই, আপনারা মায়ের গর্ভে মেয়ে ভ্রুণ হত্যা করবেন না। বাবা-মায়ের প্রতি আমি মিনতি জানাই, ছেলে চান বলে আপনারা অনাগত কন্যাকে খুন করবেন না। তিনি বলেন, মেয়ে ভ্রুণ হত্যা বন্ধ করুন, একুশ শতকের ভারতে এটা একটা কলংক। আমি এমন পরিবার দেখেছি যেখানে একজন মেয়ে তার বাবা-মায়ের জন্য যা করেছে, পাঁচজন ছেলে সন্তানও তা পারে না।
উন্নয়ন ও তরুণসমাজ : বিদেশী বিনিয়োগকারীদের ভারতে আসার আহ্বান জানিয়ে মোদি বলেন, বিশ্বকে আমি বলতে চাই, তোমরা ভারতে আস। দুনিয়ার যেখানে খুশি বিক্রি কর, কিন্তু উৎপাদন কর এখানে। সেই দক্ষতা আর মেধা আমাদের আছে। সারা বিশ্বে মেড ইন ইন্ডিয়া শোনা আমাদের স্বপ্ন। তিনি বলেন, তরুণরা আমাদের শক্তি। বিশ্ব এক সময় ভাবত ভারত বুঝি সাপুড়ে আর জাদু-টোনার দেশ। কিন্তু আমার দেশের তরুণরা আজ তথ্যপ্রযুক্তির দক্ষতা দেখিয়ে বিশ্বকে চমকে দিয়েছে। তরুণ প্রজন্মের প্রতি আমার আহ্বান- তোমারা সারা বিশ্বে মেরা ভারত প্রচার করো।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি : গুজরাটের দাঙ্গার কারণে বহু বছর ধরে সমালোচিত এই বিজেপি নেতা সাম্প্রদায়িক সংঘাত বন্ধের জন্যও ভারতবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, জাতি ও সম্প্রদায়ের দাঙ্গা বন্ধ রাখার সময় এসেছে। তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের বহু নজির দেখে আসছি। এর শেষ কোথায়? বর্ণ প্রথাই হোক বা সাম্প্রদায়িক বিরোধ- এসব ঘটনা জাতির উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করছে। মোদি আরও বলেন, আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নয়, ঐকমত্যের ভিত্তিতে আমরা এগিয়ে যেতে চাই।
গ্রামকে গুরুত্ব : মোদি তার ভাষণে বলেন, সফল জাতি গড়তে গেলে গ্রাম থেকে কাজ শুরু করতে হবে। গ্রামীণ উন্নয়নের মধ্য দিয়ে দেশের উন্নতিতে তিনি এমপিদের নতুন দায়িত্ব দেয়ার কথা ঘোষণা করেন। তা হলো প্রত্যেক এমপিকে নিজেদের নির্বাচনী এলাকায় একটি করে আদর্শ গ্রাম তৈরি করতে হবে। পরে এই দায়িত্ব বিধায়ক স্তরেও ছড়িয়ে দেয়া হবে।
মোদি তার ঐতিহাসিক ভাষণে সবার জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও ভারতের প্রতিটি স্কুলে টয়লেটের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্র“তিও দেন। তিনি গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। খেলাধুলা নিয়েও কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, দেশের ক্রীড়াবিদরা আমাদের গর্বিত করেছে। তবে দুর্নীতি নিয়ে এ দিন মোদি কোনো কথা বলেননি। যদিও ৪ দিন আগে কাশ্মীরে গিয়ে মোদি বলেছিলেন, না ম্যায় খাউঙ্গা, না কিসিকো খানে দুঙ্গা। অর্থাৎ, নিজে দুর্নীতি করব না, কাউকে করতেও দেব না। স্বাধীনতা দিবসে যাতে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী হামলা না ঘটতে পারে, সেজন্য আগের দিন থেকেই নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয় রাজধানীকে। দিল্লির বিভিন্ন স্থানে কয়েক হাজার পুলিশ ও সেনা মোতায়েন করা হয়।
- See more at: http://www.jugantor.com/first-page/2014/08/16/135295#sthash.5A8ajVE6.dpuf

No comments:

Post a Comment