পুলিশের গোলাবারুদ বিক্রি!
তোহুর আহমদ
প্রকাশ : ১৫ আগস্ট, ২০১৪
পুলিশের অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ চোরাইপথে বাইরে বিক্রি হচ্ছে কিনা- তা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। সম্প্রতি সরকারের একটি বিশেষ বাহিনীর হাতে পুলিশের ব্যবহৃত সাউন্ড গ্রেনেডসহ দুই ব্যক্তি গ্রেফতার হলে এমন প্রশ্ন তুলেছেন সরকারের সংশ্লিষ্টরা। রাজারবাগ পুলিশ লাইনে কর্মরত এক পুলিশ কনস্টেবলের কাছ থেকে ওই সাউন্ড গ্রেনেডটি কেনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গ্রেফতাকৃতরা। এই কনস্টেবলের নাম-ঠিকানা পুলিশ সদর দফতরকে জানানো হলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহলে শুরু হয়েছে মহাতোলপাড়। এ ঘটনার পরপরই পুলিশের সব অস্ত্রাগারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে দেয়া হয়েছে বিশেষ নির্দেশ। আর প্রকৃত ঘটনা বের করতে চলছে ব্যাপক অনুসন্ধান। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
সূত্র জানায়, তিন মাস আগে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল মনিরুজ্জামান একটি সাউন্ড গ্রেনেড নিয়ে তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় যান। সেখানে তিনি তৌহিদুল ইসলাম নামের তার এক বাল্যবন্ধুকে গ্রেনেডটি দেন। তৌহিদ তার পূর্বপরিচিত মেহেদী হাসান জুয়েল ওরফে বাবু ওরফে রোকন নামের এক যুবকের কাছে গ্রেনেডটি বিক্রি করেন।
আরও জানা গেছে, ২৮ জুলাই বিক্রির জন্য গ্রেনেডসহ তৌহিদুল ইসলাম রাজধানীর উত্তরা এলাকায় আসেন। এরপর তিনি মোবাইল ফোনে মেহেদী হাসানের সঙ্গে কথা বলেন। মেহেদী তাকে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর এলাকায় যেতে বলেন। কাঁচপুর এলাকার একটি চুনের ফ্যাক্টরিতে মেহেদী হাসানের কাছে গ্রেনেডটি হস্তান্তর করা হয়। সূত্র জানায়, তৌহিদ গ্রেনেডের দাম চান ১০ হাজার টাকা। কিন্তু মেহেদী হাসান ৭ হাজার টাকা দিতে রাজি হন। একপর্যায়ে টাকা-পয়সা লেনদেন নিয়ে দুজনের মধ্যে বিরোধ বাধলে ঘটনা প্রকাশিত হয়ে পড়ে। পরবর্তীকালে তৌহিদ ও মেহেদী হাসান দুজনেই বিশেষ বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন।
জানা গেছে, পুলিশের ব্যবহৃত সাউন্ড গ্রেনেডসহ দুই যুবককে গ্রেফতারের পর পুলিশের ভাবমূর্তির কথা ভেবে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এমনকি দুটি বাহিনীর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হতে পারে ভেবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত পুলিশ কনস্টেবল মনিরুজ্জামানকে গ্রেফতার না করে এ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত পুলিশের উচ্চপর্যায়ে সরবরাহ করা হয়। দুই সংস্থার ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে কথাবার্তার পর বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা গ্রেনেডসহ গ্রেফতারকৃত দুই যুবককে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
ডিবির কাছে হস্তান্তরের আগে তৌহিদ ও জুয়েলের ১৬১ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। জবানবন্দিতে গ্রেফতারকৃত তৌহিদ বলেন, গ্রেনেড বিক্রির পর ৫ আগস্ট রাজাবাগ পুলিশ লাইনে তিনি কনস্টেবল মনিরুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি মনিরুজ্জামানকে জানান, গ্রেনেডটি ৭ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিন্তু টাকা এখনও পাওয়া যায়নি। টাকা পরে পাওয়া যাবে জানিয়ে রাত ২টার দিকে তৌহিদ রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে বাসে চড়ে ময়মনসিংহ চলে যান।
পুলিশ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের ব্যবহৃত গ্রেনেড পুলিশ সদস্যের মাধ্যমে বিক্রির এ ঘটনায় পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, এভাবে আরও কোনো অস্ত্র বা গোলাবারুদ বাইরে বিক্রি হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে চলছে অনুসন্ধান। একই সঙ্গে পুলিশ সদর দফতর থেকে দেয়া হয়েছে দেশের সব অস্ত্রাগারের নিরাপত্তা বাড়ানোর নির্দেশ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার বৃহস্পতিবার রাত ৮টা ২৮ মিনিটে তার সেলফোনে যুগান্তরকে বলেন, আপনি পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি আপনাকে প্রকৃত তথ্য দিতে পারবেন। আইজিপির পরামর্শ অনুযায়ী একই দিন পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। রাত ৮টা ৪৭ মিনিট ও ৮টা ৪৮ মিনিটে তার দুটি সরকারি সেলফোনে ডায়াল করা হলে কেউ রিসিভ করেননি। তবে মহানগর পুলিশের জনসংযোগ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মাসুদুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, তার এ বিষয়ে কিছু জানা নেই।
সরকারের একটি বিশেষ বাহিনীর একজন পদস্থ কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, সাউন্ড গ্রেনেডটি নানা হাত ঘুরে জামায়াত-শিবির বা চরমপন্থী কোনো গোষ্ঠীর হাতে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। আর পুলিশের ব্যবহৃত গ্রেনেড পুলিশ সদস্যের মাধ্যমে বিক্রি হওয়ার কারণে বিষয়টি ছোট করে দেখার সুযোগ নেই।
সূত্র জানায়, গ্রেনেড বিক্রির সঙ্গে জড়িত হিসেবে গ্রেফতারকৃত দুই যুবকের অতীত অপরাধ রেকর্ড (পিসিআর) ভালো নয়। তাদের বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্যও পাওয়া গেছে। তারা দুজনই স্থানীয়ভাবে সন্ত্রাসী প্রকৃতির। যেমন গ্রেফতারকৃত তৌহিদুল ইসলাম ২০০৩ ও ২০০৪ সালে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় দুটি মারামারি মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে ২০০৭ সালে দ্রুত বিচার আইনে একটি ও ২০১৩ সালে একটি ভাংচুর মামলা হয়। আর গ্রেফতারকৃত অপর যুবক মেহেদী হাসান এর আগে হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন।
যুগান্তরের কাছে আসা তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী গ্রেনেড বিক্রির সঙ্গে জড়িত পুলিশ কনস্টেবল মনিরুজ্জামান গ্রামের বাড়ি মুক্তাগাছার ঈশ্বরগ্রামে। তার বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত বিডিআর সদস্য। গ্রেফতারকৃত তৌহিদুল ইসলাম ওরফে তৌহিদের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থানার পাড়াটঙ্গী গ্রামে। তিনি ২০১৩ সালে মুক্তাগাছা শহীদ স্মৃতি কলেজ থেকে বিএসএস পাস করেন। গ্রেফতারকৃত মেহেদী হাসান ওরফে জুয়েল ওরফে বাবু ওরফে রোকনের গ্রামের বাড়ি মুক্তাগাছার ঈশ্বরগ্রামে।
- See more at: http://www.jugantor.com/first-page/2014/08/15/134932#sthash.u24F1LOp.dpufসূত্র জানায়, তিন মাস আগে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল মনিরুজ্জামান একটি সাউন্ড গ্রেনেড নিয়ে তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় যান। সেখানে তিনি তৌহিদুল ইসলাম নামের তার এক বাল্যবন্ধুকে গ্রেনেডটি দেন। তৌহিদ তার পূর্বপরিচিত মেহেদী হাসান জুয়েল ওরফে বাবু ওরফে রোকন নামের এক যুবকের কাছে গ্রেনেডটি বিক্রি করেন।
আরও জানা গেছে, ২৮ জুলাই বিক্রির জন্য গ্রেনেডসহ তৌহিদুল ইসলাম রাজধানীর উত্তরা এলাকায় আসেন। এরপর তিনি মোবাইল ফোনে মেহেদী হাসানের সঙ্গে কথা বলেন। মেহেদী তাকে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর এলাকায় যেতে বলেন। কাঁচপুর এলাকার একটি চুনের ফ্যাক্টরিতে মেহেদী হাসানের কাছে গ্রেনেডটি হস্তান্তর করা হয়। সূত্র জানায়, তৌহিদ গ্রেনেডের দাম চান ১০ হাজার টাকা। কিন্তু মেহেদী হাসান ৭ হাজার টাকা দিতে রাজি হন। একপর্যায়ে টাকা-পয়সা লেনদেন নিয়ে দুজনের মধ্যে বিরোধ বাধলে ঘটনা প্রকাশিত হয়ে পড়ে। পরবর্তীকালে তৌহিদ ও মেহেদী হাসান দুজনেই বিশেষ বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন।
জানা গেছে, পুলিশের ব্যবহৃত সাউন্ড গ্রেনেডসহ দুই যুবককে গ্রেফতারের পর পুলিশের ভাবমূর্তির কথা ভেবে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এমনকি দুটি বাহিনীর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হতে পারে ভেবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত পুলিশ কনস্টেবল মনিরুজ্জামানকে গ্রেফতার না করে এ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত পুলিশের উচ্চপর্যায়ে সরবরাহ করা হয়। দুই সংস্থার ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে কথাবার্তার পর বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা গ্রেনেডসহ গ্রেফতারকৃত দুই যুবককে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
ডিবির কাছে হস্তান্তরের আগে তৌহিদ ও জুয়েলের ১৬১ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। জবানবন্দিতে গ্রেফতারকৃত তৌহিদ বলেন, গ্রেনেড বিক্রির পর ৫ আগস্ট রাজাবাগ পুলিশ লাইনে তিনি কনস্টেবল মনিরুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি মনিরুজ্জামানকে জানান, গ্রেনেডটি ৭ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিন্তু টাকা এখনও পাওয়া যায়নি। টাকা পরে পাওয়া যাবে জানিয়ে রাত ২টার দিকে তৌহিদ রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে বাসে চড়ে ময়মনসিংহ চলে যান।
পুলিশ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের ব্যবহৃত গ্রেনেড পুলিশ সদস্যের মাধ্যমে বিক্রির এ ঘটনায় পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, এভাবে আরও কোনো অস্ত্র বা গোলাবারুদ বাইরে বিক্রি হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে চলছে অনুসন্ধান। একই সঙ্গে পুলিশ সদর দফতর থেকে দেয়া হয়েছে দেশের সব অস্ত্রাগারের নিরাপত্তা বাড়ানোর নির্দেশ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার বৃহস্পতিবার রাত ৮টা ২৮ মিনিটে তার সেলফোনে যুগান্তরকে বলেন, আপনি পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি আপনাকে প্রকৃত তথ্য দিতে পারবেন। আইজিপির পরামর্শ অনুযায়ী একই দিন পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। রাত ৮টা ৪৭ মিনিট ও ৮টা ৪৮ মিনিটে তার দুটি সরকারি সেলফোনে ডায়াল করা হলে কেউ রিসিভ করেননি। তবে মহানগর পুলিশের জনসংযোগ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মাসুদুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, তার এ বিষয়ে কিছু জানা নেই।
সরকারের একটি বিশেষ বাহিনীর একজন পদস্থ কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, সাউন্ড গ্রেনেডটি নানা হাত ঘুরে জামায়াত-শিবির বা চরমপন্থী কোনো গোষ্ঠীর হাতে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। আর পুলিশের ব্যবহৃত গ্রেনেড পুলিশ সদস্যের মাধ্যমে বিক্রি হওয়ার কারণে বিষয়টি ছোট করে দেখার সুযোগ নেই।
সূত্র জানায়, গ্রেনেড বিক্রির সঙ্গে জড়িত হিসেবে গ্রেফতারকৃত দুই যুবকের অতীত অপরাধ রেকর্ড (পিসিআর) ভালো নয়। তাদের বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্যও পাওয়া গেছে। তারা দুজনই স্থানীয়ভাবে সন্ত্রাসী প্রকৃতির। যেমন গ্রেফতারকৃত তৌহিদুল ইসলাম ২০০৩ ও ২০০৪ সালে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় দুটি মারামারি মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে ২০০৭ সালে দ্রুত বিচার আইনে একটি ও ২০১৩ সালে একটি ভাংচুর মামলা হয়। আর গ্রেফতারকৃত অপর যুবক মেহেদী হাসান এর আগে হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন।
যুগান্তরের কাছে আসা তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী গ্রেনেড বিক্রির সঙ্গে জড়িত পুলিশ কনস্টেবল মনিরুজ্জামান গ্রামের বাড়ি মুক্তাগাছার ঈশ্বরগ্রামে। তার বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত বিডিআর সদস্য। গ্রেফতারকৃত তৌহিদুল ইসলাম ওরফে তৌহিদের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থানার পাড়াটঙ্গী গ্রামে। তিনি ২০১৩ সালে মুক্তাগাছা শহীদ স্মৃতি কলেজ থেকে বিএসএস পাস করেন। গ্রেফতারকৃত মেহেদী হাসান ওরফে জুয়েল ওরফে বাবু ওরফে রোকনের গ্রামের বাড়ি মুক্তাগাছার ঈশ্বরগ্রামে।
No comments:
Post a Comment