Saturday, August 2, 2014

‘বাগে পেয়েও’ বিন লাদেনকে মারেননি ক্লিনটন

‘বাগে পেয়েও’ বিন লাদেনকে মারেননি ক্লিনটন


২০০১ সালে টুইন টাওয়ারে হামলা চালিয়ে ৩০০০ মানুষকে হত্যার একদিন আগে অস্ট্রেলিয়ায় একটি অনুষ্ঠানে ক্লিনটনের দেয়া এই বক্তব্যের একটি অডিও টেপ প্রচার হওয়ার পর তা নিয়ে এখন ব্যাপক আলোচনা চলছে।
ক্লিনটনের ওই অডিও টেপ এই সপ্তাহে প্রচার করেছে অস্ট্রেলিয়ার স্কাই নিউজ। অস্ট্রেলিয়ার লেবার পার্টির তৎকালীন প্রধান মাইকেল ক্রোগার বলেছেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্টের জ্ঞাতসারেই মেলবোর্নের ওই অনুষ্ঠানে তার বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছিল।
যেদিন ক্লিনটন ওই কথা বলেছিলেন, তার একদিন বাদে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারে আল কায়দার বিমান হামলা হয়।
ততদিনে ক্লিনটন হোয়াইট হাউস থেকে বিদায় নিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে ছিলেন তখন জর্জ বুশ। ওই হামলার পর তিনি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন।
বুশের বিদায়ের পর ক্লিনটনের দল ডেমক্রেট পার্টির বারাক ওবামা ক্ষমতাসীন অবস্থায় ২০১১ সালে পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীর এক বিশেষ অভিযানে মারা পড়েন বিশ্বের শীর্ষ জঙ্গি নেতা বিন লাদেন।
ক্লিনটনের বক্তব্য অনুযায়ী, ১৯৯৮ সালে আফগানিস্তানের কান্দাহারে বিন লাদেনকে হত্যা করা যেত, তবে বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে তিনি তখন অভিযানে সায় দেননি।
অডিও টেপে ক্লিনটনকে বলতে শোনা যায়, “আমি বলছি শুনুন; আপনারা জানেন, ওসামা বিন লাদেন খুবই চতুর একজন ব্যক্তি। তাকে নিয়ে আমাকে অনেক ভাবতে হয়েছে, তবে তাকে একবার বাগে পেয়ে গিয়েছিলাম।”
এই পর্যায়ে অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া অন্যদের হাসিতে চাপা পড়ে ক্লিনটনের কথা।
এরপর তাকে বলতে শোনা যায়- “তাকে আমরা পেয়েই গিয়েছিলাম। তাকে মারতে পারতাম, কিন্তু সেজন্য কান্দাহার শহরটি ধুলায় মিশিয়ে দিতে হন, মারা পড়ত ৩০০ নিরীহ নারী ও শিশু। সেজন্য আমি অনুমতি দিইনি।”
যুক্তরাষ্ট্রের নাইন-ইলেভেন কমিশনের এক প্রতিবেদনেও ক্লিনটনের এই বক্তব্যের সমর্থন পাওয়া যায়। তাতে বলা হয়, ১৯৯৮ সালে ডিসেম্বরে বিন লাদেনকে হত্যার জন্য ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার একটি পরিকল্পনা নেয়া হলেও বেসমারিক মানুষের প্রাণহানি এড়াতে তা বাদ দেয়া হয়।
২০০১ সালে মেলবোর্নের ওই অনুষ্ঠানে বিল ক্লিনটন
২০০১ সালে মেলবোর্নের ওই অনুষ্ঠানে বিল ক্লিনটন
তবে সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের এই বক্তব্যে উড়িয়ে দিয়ে তাকে ‘মিথ্যুক’ আখ্যায়িত করেছেন সিআইএ-এর ওসামা বিন লাদেন ইউনিটের সাবেক প্রধান মাইকেল শুয়ের।
ক্লিনটনের অডিও টেপ প্রকাশের প্রতিক্রিয়ায় তিনি ফক্স নিউজকে বলেছেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট যেভাবে বলেছেন, ঘটনাটি আসলে তা নয়। তিনি মিথ্যাচার করেছেন।
সিআইএ-এর সাবেক এই কর্মকর্তা বলেন, ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে বিন লাদেন দক্ষিণ কান্দাহার থেকে কান্দাহার শহরে যান মোল্লা ওমরসহ তালেবান নেতাদের সঙ্গে দেখা করতে।  
কান্দাহারের গভর্নর ভবনে বিন লাদেন রাতে ছিলেন এবং তখন সেখানে হামলা চালালে আল কায়দা ও তালেবানের শীর্ষনেতারা ছাড়া অন্য কারো মারা পড়ার সম্ভাবনা ছিল না বলে মাইকেল শুয়ের দাবি করেন।
তিনি বলেন, সেদিন তিনি সিআইয়ের তৎকালীন প্রধান জর্জ টেনেটের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে গিয়েছিলেন।
“প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে এসে তিনি (টেনেট) একটি কথাও বলেননি। পরে গাড়িতে ওঠার পর বলেছিলেন, অভিযানটি হচ্ছে না। কারণ ক্রুজ মিসাইল হামলা হলে পাশের একটি মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আর তার প্রতিক্রিয়ায় মুসলিম দেশগুলোতে আমেরিকানদের ওপর হামলা শুরু হতে পারে।”
এই কারণেই তখন বিন-লাদেনকে বাগে পেয়েও অভিযান চালানো হয়নি বলে সিআইএ-এর সাবেক এই কর্মকর্তার দাবি।

No comments:

Post a Comment