Friday, August 1, 2014

গাজায় মানবিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ জাতিসংঘ

গাজায় মানবিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ জাতিসংঘ
আশ্রয় শিবিরগুলোতে শরণার্থীর ঢল সামলানো এবং তাদের মানবিক চাহিদা পূরণে জাতিসংঘ ব্যর্থ হচ্ছে।
বিধ্বস্ত গাজার অমানবিক পরিস্থিতি এবং তা সামাল দিতে জাতিসংঘের অসহায়ত্বের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছেন বিশ্ব সংস্থাটির এক কর্মকর্তা। গাজায় জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ তাদের শিবিরগুলোতে শরণার্থীর ঢল সামলাতে এবং তাদের মানবিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে বলে জানান সংস্থাটির মুখপাত্র ক্রিস গুনেস।
গুনেস বলেন, ‘সময় এমনও হয়, যখন চোখের পানি মুখের ভাষার চেয়েও স্পষ্ট ভাব প্রকাশ করে।’ তিনি বলেন, ‘গাজায় ইউএনআরডব্লিউএ হিমশিম খাচ্ছে, আমাদের সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। আমাদের কর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মানুষের জায়গা হচ্ছে না। এই পরিস্থিতির শেষ কোথায়...?’ খবর এএফপি ও ওয়েবসাইটের।
তিনি আরও বলেন, গাজায় তাদের ৮৬টি শরণার্থী শিবিরে এখন দুই লাখ ২৫ হাজার ১৭৮ জন বাস্তুহারা আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু ইতোমধ্যেই গাজা প্রায়ই ধ্বংস হয়ে গেছে। তাহলে এই ঘরবাড়ি হারা মানুষগুলো কোথায় যাবে? যুদ্ধেরই বা শেষ হবে কবে?
বুধবার ভোরে গাজার জাবালিয়ায় জাতিসংঘের একটি বালিকা স্কুলে স্থাপিত আশ্রয়কেন্দ্রে কামানের গোলা ছুড়ে ইসরাইলী সেনারা। এতে নারী-শিশুসহ সেখানে ঘুমিয়ে থাকা ১৫ শরণার্থীর মৃত্যু হয়। যুদ্ধ শুরুর পর তিন হাজার মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে শেষ আশ্রয় হিসেবে ওই স্কুলটিতে এসেছিল। তবে সেখানে হামলার পর এখন তারা পুরোপুরি আশ্রয়হীন। গত ৮ জুলাই গাজায় ইসরাইলের অভিযান শুরুর পর এ পর্যন্ত আটজন জাতিসংঘ কর্মী মারা গেছেন বলে সংস্থাটি জানিয়েছে। ছয়টি স্থানে তাদের আশ্রয়কেন্দ্র সেনাবাহিনীর হামলার শিকার হয়েছে। গত সপ্তাহেও আরেকটি আশ্রয়কেন্দ্রে একইভাবে গোলা হামলায় ১৫ জন মারা গিয়েছিল। তবে বুধবার শরণার্থী শিবির এলাকা থেকে হামলার শিকার হওয়ার পরই পাল্টা হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করে ইসরাইল। গাজার কর্মকর্তারা জানান, ইসরাইলী অভিযানে তাদের ১৩৭০ জন নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। যুদ্ধে ইসরাইলেরও ৫৬ জন সেনাসদস্য নিহত হয়।
এর আগে ইসরাইল ও হামাস শুক্রবার গ্রীনিচমান সময় ০৫টা থেকে অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ও জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন এক যৌথ বিবৃতিতে ইসরাইল ও হামাসের তিন দিনের অস্ত্রবিরতির ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে উভয়পক্ষ থেকে তা নিশ্চিত করা হয়। এদিকে প্রায় চার সপ্তাহের এ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ঠেকাতে কূটনৈতিক তৎপরতাও জোরদার করা হয়েছে। অস্ত্রবিরতি শুরুর মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলী ট্যাঙ্ক ও বিমান হামলায় আরও ১৪ ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছে। এ ছাড়া ইসরাইলী বাহিনী বলছে, গাজা সীমান্তের কাছে গোলা হামলায় তাদের পাঁচ সৈন্য নিহত হয়েছে।
জন কেরি বলেন, অস্ত্রবিরতি শুরুর পর হামাসসহ ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিরা কায়রোয় আরও টেকসই অস্ত্রবিরতি নিয়ে আলোচনায় বসবে। মিসরও এ খবর নিশ্চিত করে। তবে তিনি উল্লেখ করেন, এ সময়ে ইসরাইলী বাহিনী গাজায় অবস্থান করবে। এর আগে বৃহস্পতিবার ইসরাইল ঘোষণা করেছিল যে তারা কোন ধরনের অস্ত্রবিরতি গ্রহণ করবে না। শুক্রবার সকালে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলী ট্যাঙ্ক ও গোলা হামলায় যে ১৪ ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছে তাদের মধ্যে একজন নারী ও দু’জন শিশু রয়েছে। জরুরী সেবার স্থানীয় মুখপাত্র এ কথা জানান। অস্ত্রবিরতির ওই সময়টিতে হামাস ও ইসরাইলের প্রতিনিধিরা মিসরের কায়রোতে আলোচনায় বসবেন। কী ভাবে একটি দীর্ঘমেয়াদি সমঝোতায় পৌঁছানো যায় আলোচনায় সে বিষয় নিয়ে দুই পক্ষ কথা বলবে। প্রায় তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজায় ইসরাইলী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনার মাধ্যমে শান্তি স্থাপনে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মহল থেকে প্রস্তাব দেয়া হলেও কোন পক্ষই দীর্ঘমেয়াদি অস্ত্রবিরতিতে যেতে রাজি হয়নি। ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে ইতোমধ্যে ইসরাইলের অভিযানের ২৩ দিন পার হয়েছে। এতে নিহত ফিলিস্তিনীর সংখ্যা প্রায় দেড় হাজারের কাছাকাছি, যাদের প্রায় সবাই বেসামরিক লোক। ইসরাইলের দাবি, ফিলিস্তিন থেকে হামাসের ছোড়া রকেটে তাদের অর্ধশত সেনা সদস্য মারা গেছেন। অব্যাহত প্রস্তাবের মুখে গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকবার অস্ত্রবিরতিতে গেলেও প্রতিবারই প্রতিশ্রুতি ভেঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়েছে ইসরাইল ও হামাস।

No comments:

Post a Comment