Friday, August 1, 2014

জনকণ্ঠ সাংবাদিকের পরিবারের ওপর হামলা ॥ নিরাপত্তার অভাবে গোপনে চিকিৎসা চলছে

জনকণ্ঠ সাংবাদিকের পরিবারের ওপর হামলা ॥ নিরাপত্তার অভাবে গোপনে চিকিৎসা চলছে
জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ ঘুমের ঘোরে সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলমের ৫ বছরের শিশুপুত্র জয় এখনও ‘বাঁচাও’ ‘বাঁচাও’ করে চিৎকার করে ওঠে। জাহাঙ্গীর আলমের পুরো পরিবার এখন নিরাপত্তাহীন। না জানি আবারও কখন দুর্বৃত্তরা হামলা করে। ঈদ-উল-ফিতরের আগের দিন বিকেলে লালমনিরহাটে কর্মরত জনকণ্ঠের সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম শাহীনের বাড়িতে ২০-২৫ জনের দুর্বৃত্ত দল মোটরসাইকেলযোগে এসে হামলা করেছে। হামলায় সাংবাদিক শাহীনের পিতা রেলওয়ের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস ছালাম (৬৫), বৃদ্ধ মা জয়গুন নেছা (৫৫), ছোট ভাই আদিতমারী ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক জাকির হোসেন শামীম (৩১), সাংবাদিকের স্ত্রী রেবেকা সুলতানা কাকলী (২৯) ও সাংবাদিকের শিশুপুত্র ইয়ামেনুন জারিফ জয় (৫) আহত হয়। আহত পরিবারের সদস্যদের মাইক্রোবাসে লালমনিরহাট সরকারী হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানেও দুর্বৃত্তরা হামলা করে। দুর্বৃত্তরা মাইক্রোবাস থেকে ছোট ভাই, বাবা, স্ত্রী ও শিশুসন্তানকে টেনে হিঁচড়ে নামায়। জরুরী বিভাগের বারান্দায় ফেলে দুর্বৃত্তরা সাংবাদিকের বাবা ও ছোট ভাইকে বেদম মারপিট করে। দুর্বৃত্তরা দুটি দামী মোবাইল ফোন, সাংবাদিকের স্ত্রীর স্বর্ণের চেন ও নগদ অর্থ নিয়ে যায়। হাসপাতালের কর্মী ও আশপাশের লোকজন ছুটে এলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাট শহরের খোর্দসাপটানার (মিশন মোড়) বাসায় ২৮ জুলাই (সোমবার) বিকেলে সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম শাহীনের বাসায় দুর্বৃত্তরা হামলা করে। হামলাকারীরা দেশীয় লাঠিসোটা, বল্লম, রামদা ও বেকি নিয়ে চড়াও হয়। হামলা শেষে শহরের ওপর দিয়ে প্রকাশ অস্ত্র উঁচিয়ে চলে যায়। দুর্বৃত্তদের হামলায় সাংবাদিকের বাবা রেলওয়ের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস ছালাম, মা জয়গুন নেছা, ছোট ভাই আদিতমারী ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক জাকির হোসেন শামীম, সাংবাদিকের স্ত্রী রেবেকা সুলতানা ও শিশুপুত্র ইয়ামেনুন জারিফ জয় আহত হয়। এ সময় সন্ত্রাসীরা ঘরের আসবাবপত্র তছনছ ও ভাংচুর চালায়। হামলায় আহত সাংবাদিকের বাবা ও ছোট ভাইকে স্বজনরা মাইক্রোবাসে করে দ্রুত লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। দুর্বৃত্তরা হাসপাতালে চিকিৎসারত ছোট ভাই, বাবা, স্ত্রী ও শিশুসন্তানের ওপর ফের হামলা করে। ছোট ভাই শামীমকে জরুরী বিভাগের বারান্দায় ফেলে বেদম পেটায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় হাসপাতালের অন্যরা এগিয়ে এলে তাদেরও মারধর করে তারা। পরে আরও লোকজন এলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। যাওয়ার সময় সাংবাদিকের পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় তারা। পরিবারটি নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ায় তাদের আর হাসপাতালে রাখা হয়নি। সন্ত্রাসীদের ভয়ে গোপনে অন্যত্র তাদের চিকিৎসা করা হচ্ছে।
এ ঘটনায় সোমবার রাতেই সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম শাহীন বাদী হয়ে লালমনিরহাট সদর থানায় ১০ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত ১০-১৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। আসামিরা হলো জেলা শহরের সুরকী মিল কলোনির আমিনের পুত্র রমজান (৩২), তার ছোট ভাই শহরের চিহ্নিত সন্ত্রাসী লিটন (২২), মৃত জাহাঙ্গীর আলমের পুত্র ছাত্রদলের ক্যাডার নির্ঝর (২১), কুদ্দুসের পুত্র ছাত্রদল ক্যাডার রুবেল (২০), আব্দুল হকের পুত্র বাঁধন (২০), সামছুল ইসলাম আলমের পুত্র যুবদল ক্যাডার রিয়াদ (২১), সোলাইমানের (রেলের দালাল) পুত্র ছাত্রদলের দুর্ধর্ষ ক্যাডার, একাধিক মামলার আসামি এসপি (২৯), শহরের টিউমলপাড়ার ইকবালের পুত্র যুবদল ক্যাডার বিপ্লব (২৬) ও যুবদল ক্যাডার শিপু (২০)। দুর্বৃত্তরা ৮-১০টি নম্বরপ্লেটবিহীন মোটরসাইকেলে এসে হামলা করে।
দুর্বৃত্তরা হামলার সময় সাংবাদিকের বাড়িতে একটি মোবাইল ফোন ফেলে যায়। এই ফেলে যাওয়া মোবাইল ফোনের স্কিন সেভারে সন্ত্রাসী দুর্বৃত্ত চক্রটির গ্রুপ ছবি রয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে খ্যাতনামা কয়েকটি জাতীয় দৈনিক ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক এবং লালমনিরহাট প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ লালমনিরহাট সদর থানায় ওসি (অপারেশন) মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে মামলার অগ্রগতি জানতে দেখা করেন। এ সময় ওসি জানান, ঈদের ছুটিতে জনবল কম থাকায় দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে এ্যাকশনে যেতে পারেনি।
সাংবাদিকের পিতা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস ছালাম জানান, হামলার পর তিন দিন অতিবাহিত হলেও পুলিশ এখনও মামলাটি রেকর্ড করেনি। কোন দুর্বৃত্তকে গ্রেফতারও করতে পারেনি। বিগত বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় আমার ছেলে জাহাঙ্গীর আলম শাহীন সেই সময়ে দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জোরালো ভূমিকা রেখেছিল। অথচ আজ তার আদর্শের ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকার ক্ষমতায় অথচ এ সময় আমার ছেলে ও পরিবারটির ওপর হামলা হলো।
সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম শাহীনের পিতা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস ছালাম (৬৫) ও মা জয়গুন নেছা (৫৫) তার পরিবারের নিরাপত্তা ও হামলার সুবিচারে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি ও আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সাংবাদিক শাহীনের বাবা জানান, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলের নেতা থাকার সময় লালমনিরহাটে এলেই সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম শাহীন তাঁর সফরসঙ্গী থাকতেন। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় জাহাঙ্গীর আলম শাহীনের ওপর নির্যাতন নিপীড়ন হয়েছিল। সে সময় শেখ হাসিনা সংসদে দাঁড়িয়ে শাহীনের নাম উল্লেখ করে নিরাপত্তা চেয়ে বক্তব্য দিয়েছিলেন। বিরোধী দলের নির্যাতিত সাংবাদিকের প্রকাশিত তালিকায় তার নাম ছিল। তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন এবং বিশ্বাস করা কী অপরাধ?

No comments:

Post a Comment