আজকালের প্রতিবেদন: দিল্লি, ২ আগস্ট– ভারতে বসবাসের ভিসা নিয়ে তসলিমা নাসরিনের ‘আঁধার’ কেটে যাচ্ছে৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে দেখা করেন আজ বাংলাদেশের বিতর্কিত লেখিকা৷ রাতে তসলিমা নিজেই এক টিভি চ্যানেলে বলেন, আমি খুশি৷ মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন, আমাকে শিগগিরই দীর্ঘমেয়াদি বসবাসের পারমিট দেওয়া হবে৷ সরকার আমাকে এই দেশে থাকতে দিচ্ছে, আমি কৃতজ্ঞ৷ ভারতে তাঁর বসবাসের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার ঠিক মুখে গত বুধবার জানানো হয়, এবার আর এক বছরের জন্য ভিসা দেওয়া হচ্ছে না৷ ১ আগস্ট থেকে ২ মাসের জন্য ভিসা পাচ্ছেন তিনি৷ এক বছরের জন্য মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেছিলেন তসলিমা৷ এভাবেই চলছে ২০০৪ সাল থেকে৷ কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদির সরকার আসার পর হঠাৎ অন্যরকম সিদ্ধাম্ত ছিল তসলিমার কাছে একেবারেই অপ্রত্যাশিত৷ তবে আশা ছাড়েননি৷ দর্শনপ্রার্থী হলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের৷ আজ ২০ মিনিটের বৈঠকে তাঁর ভারতে থাকার মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়ার আবেদন জানান রাজনাথের কাছে৷ বৈঠক শেষে টুইট করে বিতর্কিত লেখিকা জানান, ‘রাজনাথ সিংজির সঙ্গে দেখা করে আমার ‘উয়ো আন্ধেরে দিন’ বইটি তাঁকে উপহার দিয়েছি৷ উনি বলেছেন, আপকে আন্ধেরে দিন খতম হো জায়েগা (আপনার অন্ধকার দিন কেটে যাবে)৷’ এই আশ্বাসবার্তা চাঙ্গা করে তোলে তসলিমাকে৷ এর মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক আধিকারিক জানান, তসলিমার ভিসার আবেদনপত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ সব দেখেশুনে যথাযথ সিদ্ধাম্ত নেওয়া হবে৷ রাতে একটি সংবাদ সংস্হাকেও তসলিমা জানান, সরকার তাঁর আবেদনে সাড়া দিয়েছে৷ নানা হল থেকেই অবশ্য এ ব্যাপারে সরকারের কাছে আবেদন আসছিল৷ প্রেস কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মার্কণ্ডেয় কাটজুও দাবি তোলেন, ভারতে স্হায়ী বসবাসের পারমিট দেওয়া হোক তসলিমাকে৷ তসলিমার আবেদনে সাড়া পাওয়া গেছে শোনার পর কালবিলম্ব না করে কাটজু টুইটারে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ‘নরেন্দ্র মোদিজি’র সরকারকে৷ লিখেছেন, সাহসিনী তসলিমাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে সঙ্কীর্ণতাবাদীরা৷ সংবাদ সংস্হার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এদিন তসলিমা অবশ্য অনুযোগে বিদ্ধ করেছেন কলকাতাকে৷ বলেছেন, কলকাতার মানুষ ন্যায়ের পক্ষে কথা বলেন, এরকমই জানি৷ কিন্তু ওঁদের নীরবতা আমাকে বিস্মিত করেছে৷ অবশ্য এ সব আজকাল মেনে নিতে শিখে গেছে৷ কলকাতা আমার বাড়ি৷ সেখান থেকে আমাকে যখন তাড়িয়ে দেওয়া হল, তখনও যথেষ্ট প্রতিবাদের আওয়াজ ওঠেনি৷ ১৯৯৪-এ বিতর্কিত ‘লজ্জা’ উপন্যাস প্রকাশের পর থেকেই বাংলাদেশ ও এই দেশেরর নানা মহলের বিরাগভাজন হন তসলিমা নাসরিন৷ ছাড়তে হয় বাংলাদেশ৷ তার পর এক দশক ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন শহরে ছিলেন৷ সুইডেনের নাগরিকত্বও পেয়েছেন৷ তবে ২০০৪ থেকে ভারতে থেকে গেছেন তিনি৷ তাঁর ভিসার মেয়াদ বাড়াতেই থাকে পূর্বতন ইউ পি এ সরকার৷ প্রথম ৩ বছর কলকাতাতেই ছিলেন৷ তবে ২০০৭-এ এই নিয়ে অশাম্তি ছড়ানোয় কলকাতা ছেড়ে যেতে বাধ্য হন৷ সেই থেকে রাজধানী দিল্লিই তাঁর অস্হায়ী ঠিকানা৷ ‘লজ্জা’ উপন্যাস নিয়ে নানা মহল যখন সমালোচনায় মুখর, তখন বি জে পি নেতারা ব্যগ্র হয়ে ওঠেন তসলিমার লেখাকে কাজে লাগাতে৷ তাঁর ভিসার মেয়াদ মাত্র দু’মাসের জন্য বাড়ানোর খবর পাওয়ার পর তসলিমার প্রতিক্রিয়ায় ঝরে পড়েছিল বিস্ময়৷ তিনি উল্লেখ করেন, এই উপমহাদেশে নরেন্দ্র মোদিই একমাত্র দেশনেতা, যিনি ‘লজ্জা’ উপন্যাসের পক্ষে কথা বলেছিলেন৷ সেই মোদির সরকার তাঁকে ভারত ছাড়তে বাধ্য করবে, এটা মানতে পারছিলেন না তসলিমা৷ রাজনাথের সঙ্গে দেখা করার পর আজ নিশ্চিম্ত হলেন৷
|
No comments:
Post a Comment