প্রশাসন সঠিক স্থানে নদীর সীমানা পিলার স্থাপন করেনি ॥ দখলদারই বৈধ!
কয়েক কোটি বর্গফুট নদীর জমি হাতছাড়া ॥ আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়ন জরুরী
শাহীন রহমান ॥ আদালতের রায় মেনে সঠিকভাবে সীমানা পিলার স্থাপন না করায় নদীর দুই পাড় সংলগ্ন কয়েক কোটি বর্গফুট আয়তনের মূল্যবান নদীর জমি হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। জেলা প্রশাসনের ভুল, প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে নদীর বিশাল রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে। সরেজমিন পরিদর্শন পরিবেশ সংগঠনের জরিপে দেখা গেছে অধিকাংশ সীমানা পিলারই ভুলভাবে স্থাপনা করা হয়েছে। দেখা গেছে সব পিলারই নদীর পাড়ের ভিতরে বা ফোরশোরে (নদীতট) বসানো হয়েছে। অনেকস্থানে ফোরশোরের ভিতরে বা একেবারে নদীর তলদেশে পিলার বসানো হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে এভাবে সীমানা পিলার স্থাপনের ফলে একদিকে যেমন দখলদারদের বৈধতা দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে সরকারী অর্থের অপচয় করা হয়েছে।
পরিবেশ সংগঠন বাপার সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুল মতিন বলেন, বাপার পক্ষ থেকে সমস্ত সীমানা পিলার স্থাপনের কাজ জরিপ করা হয়েছে। জরিপে দেখা গেছে একটি পিলারও সঠিক স্থানে স্থাপন করা হয়নি। এতে করে হাইকোর্টের রায় মারাত্মকভাবে লংঘিত হয়েছে। নদীর জমি দখলদারদের বেআইনী দখলীস্বত্তের বৈধতা দেয়া হচ্ছে। সীমানা পিলার বসানো হাইকোর্টের রায়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না হওয়ার বিষয়টি অনেক আগেই টাস্কফোর্সকে জানানো হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন বেশির ভাগ সীমানা পিলারই ভুলভাবে বসানোর ফলে একদিকে যেমন দখলদারদের বৈধতা দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে সরকারী অর্থের অপচয় করা হয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে ঢাকায় পরিবেশ ও মানবিক বিপর্যয় নেমে আসবে। ক্রমবর্ধমান ঢাকা মহানগরীর জলাবদ্ধতা, পানি নিস্কাশন ও ভূগর্ভস্থ পানিরস্তর ক্রমাগত নিচে নেমে যাওয়ায় এই নদীগুলো পুনরুদ্ধার ও সঠিক সংরক্ষণ ঢাকা মহানগরীর অস্তিত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত। জনগণের বৃহত্তর কল্যাণ নিশ্চিত করতে আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া জরুরী।
ঢাকার চার নদীর সীমানা জরিপ ও সীমানা পিলার স্থাপনের জন্য আদালত ২০০৯ সালে যুগান্তকারী রায় প্রদান করে। রায়ে প্রাথমিক কাজ হিসেবে নদীর সীমানা নির্ধারণের কথা বলা হয়। আদালত নদীর একটি সংজ্ঞাও প্রদান করেন। সরকার নদী বিষয়ক হাইকোর্টের এই রায় বাস্তবায়নের কাজও শুরু করে। গঠন করা হয় জাতীয় নদী টাস্কফোর্স। নদী কমিশন গঠনও প্রক্রিয়াধীন। নদী টাস্কফোর্সের পক্ষ থেকে হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়নের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে নদীর সীমানা নির্ধারণ কল্পে বিআইডব্লিউটিএর তত্ত্বাবধানে জেলা প্রশাসনের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। জানা গেছে বর্তমানে বুড়িগঙ্গার সীমানা পিলার স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া শীতলক্ষ্যায়ও সীমানা পিলার স্থাপনের কাজ চলছে। তুরাগ নদীতে কাজ শুরু হলেও সঠিকভাবে পিলার স্থাপন না করায় তা বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় নতুন করে আদালত তুরাগ ও বালু নদীর সীমানা জরিপসহ সীমানা পিলার স্থাপনের জন্য নির্দেশ দিয়েছে।
নদীর দখল দূষণ নিয়ে আদালতের রিট আবেদনকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, আদালতের আদেশ অনুসারে বুড়িগঙ্গায় কাজ হয়েছে। শীতলক্ষ্যায় কাজ চলছে। তুরাগ ও বালু নদীতে কাজ শুরু হলেও প্রকৃত সীমানায় পিলার স্থাপন না করায় জনদাবির মুখে পিলার স্থাপন বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর দুই বছরেও সীমানা পিলার স্থাপনের কাজ পুনরায় শুরু না করায় নদী অনেক জায়গায় দখলদারদের হাতে চলে গেছে। নদীর সীমানায় বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করে অস্থায়ী দখল চলছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নদীর সীমানা পিলার স্থাপনের কাজ শুষ্ক মৌসুমের প্রবাহ ধরে করা হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে নদীর প্রবাহ অনেক দূর পর্যন্ত চলে যায়। তখন নদীর আকার আয়তন অনেক বড় হয়ে যায়। এ সময়ে নদীর যে প্রবাহ থাকে তাকে আসল নদী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু নদীর আসল সীমানা বাদ দিয়ে এমন ভাবে পিলার স্থাপন করা হয়েছে যাতে নদী দখলকে বেশি করে বৈধতা দেয়া হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেভাবে পিলার স্থাপন করা হচ্ছে সেটা আসলে কোন নদী নয়। বর্ষা মৌসুমে নদীর প্রবাহ যেখানে থাকে সেটাই আসল নদী। এর মাধ্যমে নদী দখলকে আরও উৎসাহ দেয়া হচ্ছে।
আদালতের রায়ে নদীর তলদেশ, প্রবাহ, তীর ও তীরভূমি ঠিক রেখে সিএস ও আরএস রেকর্ডের ভিত্তিতে নদীর সীমানা জরিপের আদেশ দেয়। কিন্তু যে স্থান দিয়ে সীমানা পিলার দেয়া হয়েছে তা আদালতের রায়কে সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী শুষ্ক মৌসুমে নদীর সর্বনিম্ন প্রবাহ থেকে ৫০ গজ পর্যন্ত এলাকাকে নদীর তীরভূমি (ফোরশোর) হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। আর বর্ষা মৌসুমে নদী প্রবাহ যেখান দিয়ে প্রবাহিত হয় সেটা নদীর তীর ধরা হয়ে থাকে। নদীর এই তীরভূমি এলাকার মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত কোন প্রকার স্থাপনা তৈরি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
জানা গেছে টাস্কফোর্স গঠিত কমিটি নদীর দখল সরেজমিনে দেখার পর বেআইনী দখলদারদের সঠিক তালিকা টাস্কফোর্সের কাছে জমা দিয়েছেন। কিন্তু ফলাফল এখনও শূন্য। জেলা প্রশাসনের স্থাপিত ভুল পিলার কোনভাবেই অপসারণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। অথচ নদীর পাড় রক্ষায় ও পানি সংরক্ষণে আইনও রয়েছে। নদী টাস্কফোর্স আদালতের রায় অনুযায়ী নদী রক্ষায় বিআইডব্লিউটিএকে প্রশাসনিক নির্দেশ প্রদান করেছে। বিআইডব্লিউটি সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনকে এ বিষয়ে দায়িত্ব দিয়েছে। কিন্তু জেলা প্রশাসন সঠিকভাবে কাজ করতে না পারার কারণে পিলার সঠিক স্থানে স্থাপন করা সম্পন্ন হয়নি। বিশেষজ্ঞরা জেলা প্রশাসনের অবহেলা ও দুর্বলতাকেই নদী রক্ষার প্রধান সঙ্কট হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাদের ইচ্ছা অনিচ্ছার কাছে এসে নদী আজ অচল হয়ে পড়ছে।
পরিবেশ সংগঠন বাপার সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুল মতিন বলেন, বাপার পক্ষ থেকে সমস্ত সীমানা পিলার স্থাপনের কাজ জরিপ করা হয়েছে। জরিপে দেখা গেছে একটি পিলারও সঠিক স্থানে স্থাপন করা হয়নি। এতে করে হাইকোর্টের রায় মারাত্মকভাবে লংঘিত হয়েছে। নদীর জমি দখলদারদের বেআইনী দখলীস্বত্তের বৈধতা দেয়া হচ্ছে। সীমানা পিলার বসানো হাইকোর্টের রায়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না হওয়ার বিষয়টি অনেক আগেই টাস্কফোর্সকে জানানো হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন বেশির ভাগ সীমানা পিলারই ভুলভাবে বসানোর ফলে একদিকে যেমন দখলদারদের বৈধতা দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে সরকারী অর্থের অপচয় করা হয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে ঢাকায় পরিবেশ ও মানবিক বিপর্যয় নেমে আসবে। ক্রমবর্ধমান ঢাকা মহানগরীর জলাবদ্ধতা, পানি নিস্কাশন ও ভূগর্ভস্থ পানিরস্তর ক্রমাগত নিচে নেমে যাওয়ায় এই নদীগুলো পুনরুদ্ধার ও সঠিক সংরক্ষণ ঢাকা মহানগরীর অস্তিত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত। জনগণের বৃহত্তর কল্যাণ নিশ্চিত করতে আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া জরুরী।
ঢাকার চার নদীর সীমানা জরিপ ও সীমানা পিলার স্থাপনের জন্য আদালত ২০০৯ সালে যুগান্তকারী রায় প্রদান করে। রায়ে প্রাথমিক কাজ হিসেবে নদীর সীমানা নির্ধারণের কথা বলা হয়। আদালত নদীর একটি সংজ্ঞাও প্রদান করেন। সরকার নদী বিষয়ক হাইকোর্টের এই রায় বাস্তবায়নের কাজও শুরু করে। গঠন করা হয় জাতীয় নদী টাস্কফোর্স। নদী কমিশন গঠনও প্রক্রিয়াধীন। নদী টাস্কফোর্সের পক্ষ থেকে হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়নের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে নদীর সীমানা নির্ধারণ কল্পে বিআইডব্লিউটিএর তত্ত্বাবধানে জেলা প্রশাসনের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। জানা গেছে বর্তমানে বুড়িগঙ্গার সীমানা পিলার স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া শীতলক্ষ্যায়ও সীমানা পিলার স্থাপনের কাজ চলছে। তুরাগ নদীতে কাজ শুরু হলেও সঠিকভাবে পিলার স্থাপন না করায় তা বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় নতুন করে আদালত তুরাগ ও বালু নদীর সীমানা জরিপসহ সীমানা পিলার স্থাপনের জন্য নির্দেশ দিয়েছে।
নদীর দখল দূষণ নিয়ে আদালতের রিট আবেদনকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, আদালতের আদেশ অনুসারে বুড়িগঙ্গায় কাজ হয়েছে। শীতলক্ষ্যায় কাজ চলছে। তুরাগ ও বালু নদীতে কাজ শুরু হলেও প্রকৃত সীমানায় পিলার স্থাপন না করায় জনদাবির মুখে পিলার স্থাপন বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর দুই বছরেও সীমানা পিলার স্থাপনের কাজ পুনরায় শুরু না করায় নদী অনেক জায়গায় দখলদারদের হাতে চলে গেছে। নদীর সীমানায় বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করে অস্থায়ী দখল চলছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নদীর সীমানা পিলার স্থাপনের কাজ শুষ্ক মৌসুমের প্রবাহ ধরে করা হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে নদীর প্রবাহ অনেক দূর পর্যন্ত চলে যায়। তখন নদীর আকার আয়তন অনেক বড় হয়ে যায়। এ সময়ে নদীর যে প্রবাহ থাকে তাকে আসল নদী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু নদীর আসল সীমানা বাদ দিয়ে এমন ভাবে পিলার স্থাপন করা হয়েছে যাতে নদী দখলকে বেশি করে বৈধতা দেয়া হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেভাবে পিলার স্থাপন করা হচ্ছে সেটা আসলে কোন নদী নয়। বর্ষা মৌসুমে নদীর প্রবাহ যেখানে থাকে সেটাই আসল নদী। এর মাধ্যমে নদী দখলকে আরও উৎসাহ দেয়া হচ্ছে।
আদালতের রায়ে নদীর তলদেশ, প্রবাহ, তীর ও তীরভূমি ঠিক রেখে সিএস ও আরএস রেকর্ডের ভিত্তিতে নদীর সীমানা জরিপের আদেশ দেয়। কিন্তু যে স্থান দিয়ে সীমানা পিলার দেয়া হয়েছে তা আদালতের রায়কে সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী শুষ্ক মৌসুমে নদীর সর্বনিম্ন প্রবাহ থেকে ৫০ গজ পর্যন্ত এলাকাকে নদীর তীরভূমি (ফোরশোর) হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। আর বর্ষা মৌসুমে নদী প্রবাহ যেখান দিয়ে প্রবাহিত হয় সেটা নদীর তীর ধরা হয়ে থাকে। নদীর এই তীরভূমি এলাকার মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত কোন প্রকার স্থাপনা তৈরি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
জানা গেছে টাস্কফোর্স গঠিত কমিটি নদীর দখল সরেজমিনে দেখার পর বেআইনী দখলদারদের সঠিক তালিকা টাস্কফোর্সের কাছে জমা দিয়েছেন। কিন্তু ফলাফল এখনও শূন্য। জেলা প্রশাসনের স্থাপিত ভুল পিলার কোনভাবেই অপসারণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। অথচ নদীর পাড় রক্ষায় ও পানি সংরক্ষণে আইনও রয়েছে। নদী টাস্কফোর্স আদালতের রায় অনুযায়ী নদী রক্ষায় বিআইডব্লিউটিএকে প্রশাসনিক নির্দেশ প্রদান করেছে। বিআইডব্লিউটি সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনকে এ বিষয়ে দায়িত্ব দিয়েছে। কিন্তু জেলা প্রশাসন সঠিকভাবে কাজ করতে না পারার কারণে পিলার সঠিক স্থানে স্থাপন করা সম্পন্ন হয়নি। বিশেষজ্ঞরা জেলা প্রশাসনের অবহেলা ও দুর্বলতাকেই নদী রক্ষার প্রধান সঙ্কট হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাদের ইচ্ছা অনিচ্ছার কাছে এসে নদী আজ অচল হয়ে পড়ছে।
http://allbanglanewspapers.com/janakantha/
No comments:
Post a Comment