‘অনৈতিক সম্পর্কের’ অভিযোগে গৃহবধূকে ১০১ বেত্রাঘাত
নওগাঁ প্রতিনিধি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 2014-07-26 00:17:37.0 BdST Updated: 2014-07-26 00:52:39.0 BdST
মোবাইল ফোনে স্বামীর ভাগ্নের সঙ্গে কথা বলায় নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় ‘অনৈতিক সম্পর্কের’ অভিযোগে এক গৃহবধূকে ১০১টি বেত্রাঘাত করা হয়েছে।
উপজেলার কালিগ্রাম ইউনিয়নের ছাতারবাড়িয়া গ্রামে মঙ্গলবার রাতে সালিশ বসিয়ে ওই দণ্ড দেন স্থানীয় মাতব্বররা।
সালিশে ‘দণ্ডিত’ হাওয়া বিবি (২৬) বেত্রাঘাতে ক্ষতবিক্ষত হওয়ার পরেও বিনা চিকিৎসায় তাকে বাড়িতে আটকে রাখা হয়েছে বলে স্থানীয় সাংবাদিকরা জানিয়েছেন।
ঘটনার পর তিনদিন পেরিয়ে গেলেও স্থানীয় থানা পুলিশ কিছুই জানে না।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “খয়বর আলীর স্ত্রী হাওয়া বিবির সঙ্গে একই গ্রামের আব্দুর রহমান খুশুর ছেলে ও খয়বরের ভাগ্নে বাবুর মোবাইল ফোনে কথা হতো।
“এর জের ধরে গ্রামের মাতব্বররা ১৫ দিন আগে মসজিদে নামাজ শেষে এক সালিশ বেঠকে তাদের মধ্যে অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে বলে অভিযোগ আনে। তাদের দুই পরিবারকে একঘরে করে রাখে।
“এরপর গত রোববার রাতে বাবুকে মারধর করেন মাতব্বররা। দুইদিন পর মঙ্গলবার রাতে এশার নামাজ শেষে তাদের বাড়িতে গিয়ে হাওয়া বিবিকে ১০১টি দোররা মারা হয়।”
স্থানীয় মাতব্বর সখিন উদ্দিন, মোসলেম উদ্দিন ও আফতাব মাস্টারসহ আরো কয়েকজন গৃহবধূকে দোররা মারার সময় উপস্থিত ছিলেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে সখিন উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তাদের মধ্যে অনৈতিক সম্পর্ক থাকার প্রমাণ পাওয়ার পরই ওই বিচার করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “শুধু প্রচলিত আইন দিয়েই সব করা যায় না। পবিত্র রমজান মাসে তারা এধরনের কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকবে তা মানা যায় না।”
দণ্ড কার্যকরকারী মোসলেম উদ্দিন বলেন, “প্রধান মাতব্বর সখিন উদ্দিনের নির্দেশে ওই গৃহবধূকে ১০১টি দোররা মারা হয়েছে। এই বিচারে গ্রামের সকল মানুষের মত আছে।”
ওই ঘটনার সময় উপস্থিত আর এক মাতব্বর সেকেন্দার আলী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, “তারা অপরাধ করেছে। বিচার করা হয়েছে।”
অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগে অভিযুক্ত বাবু বলেন, “হাওয়া বিবি সম্পর্কে আমার মামী হন। তার সাথে আমার কোন অনৈতিক সম্পর্ক নেই। তারা অন্যায়ভাবে আমাদের নির্যাতন করেছে।”
এ ব্যাপারে ওই গৃহবধূর বাবা একই গ্রামের বাসিন্দা জাফের আলীও মেয়েকে বেত্রাঘাতের কথা স্বীকার করে বলেন, “সমাজে বসবাস করতে হলে তাদের এই রায় তো মেনে নিতেই হবে। বর্তমানে আমার মেয়ে মারাত্মক অসুস্থ্, তার চিকিৎসার প্রয়োজন।”
এ বিষয়ে হাওয়া বিবির স্বামী খয়বর আলী কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, “ঘটনা শুনেছি। তবে সেখানে আমি উপস্থিত ছিলাম না।”
ঘটনা জানার পর তথ্য সংগ্রহে সেখানে গেলে মাতব্বররা বাধা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিকদের।
ফিরোজ হোসেন বলেন, “সারা দেশে যখন এধরনের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা হয়েছে ঠিক তখন ওই গ্রামের মাতব্বর প্রধানরা এই কাজ করে জঘন্য অপরাধ করেছে।
“শুধু তাই নয়, তথ্য সংগ্রহে বাধা দেয়া হয়েছে। তাদের বাধার কারণে অবরুদ্ধ করে রাখা ওই গৃহবধূর সঙ্গে কথা বলা যায়নি।”
এদিকে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “আমি এই ঘটনা সর্ম্পকে কিছু জানি না। তবে এধরনের ঘটনা থেকে সকল মাতব্বর প্রধানদের বিরত থাকার জন্য এর আগে এলাকার গ্রামে গ্রামে প্রচার চালানো হয়েছে।”
রাণীনগর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মাসউদ চৌধুরীর সঙ্গে শুক্রবার রাতে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “এই ধরনের ঘটনা এখন পর্যন্ত আমি কিছু জানি না। বিষয়টির খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
No comments:
Post a Comment