ভালো নেই ‘মুক্তিযোদ্ধা গ্রাম’
জাকির হোসেন | আপডেট: ১৮:৩৭, মার্চ ২৬, ২০১৪
কাগজে-কলমে ছোট্ট গ্রামটির নাম বৈদ্যনাথপুর। সব মিলিয়ে ১২-১৩টি বাড়ি। ৩০টির মতো পরিবার। ঘরে ঘরে মুক্তিযোদ্ধা। তাই গ্রামটিকে সবাই ‘মুক্তিযোদ্ধা গ্রাম’ বলে ডাকে। এই নামেই চেনে। স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর দেশ এগিয়েছে অনেক দূর। কিন্তু ভালো নেই ‘মুক্তিযোদ্ধা গ্রাম’। এখানকার বীর সেনানীদের পরিবারের দিন কাটছে অনাহারে-অর্ধাহারে। ‘মুক্তিযোদ্ধা’—এই অহম-অহংকার বিজড়িত অভিধা ছাড়া আর কোনো সহায়-সম্বল তাঁদের নেই।
চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে গজরা বাজার। বাজারের কাছেই ওটারচর উচ্চবিদ্যালয়। সেখান থেকে তিন-চার মিনিট হাঁটলেই গজরা ইউনিয়নের এই ছোট্ট গ্রাম। বিদ্যুত্ নেই। সরু কাঁচা রাস্তা-ঘাট। পর্যাপ্ত নলকূপ নেই। বাধ্য হয়ে পান করতে হচ্ছে পুকুরের দূষিত পানি। আধুনিকতার স্পর্শ লাগেনি এ গ্রামে।
২০ মার্চ গজরা ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বশির আহম্মেদ প্রথম আলোর এই প্রতিনিধিকে নিয়ে যান মুক্তিযোদ্ধা তসলিম বকাউলের বাড়ি। সেখানে আসেন পাশের বাড়ির মুক্তিযোদ্ধা জামালউদ্দিন ও মো. রফিক। উঠোনে বসে তাঁরা শোনান যুদ্ধদিনের গল্প। ষাটোর্ধ্ব এই ব্যক্তিরা চার দশক আগের ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সময়ে ফিরে যান। কেন যুদ্ধ? কিসের যুদ্ধ? এমন নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যান অনর্গল।
যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই এ গ্রামের মানুষও পাকিস্তানিদের হামলার আশঙ্কা করছিলেন। মাস দেড়েকের মাথায় পাশের গ্রামে ঢুকে পড়ে পাকিস্তানি বাহিনী। ঘরবাড়ি পুড়ছে, প্রাণভয়ে ছুটছে নারী-শিশু-বৃদ্ধ। বাঙালি তরুণেরা এভাবে কি পুড়তে দিতে পারে দেশের মাটি? বশির আহম্মেদ বোঝাতে শুরু করলেন নিজ গ্রামের তরুণদের। তারপর একদিন কাউকে না জানিয়ে জুন-জুলাইয়ের দিকে চলে গেলেন প্রশিক্ষণে। তাঁর দেখানো পথে একে একে দেশ ছাড়লেন ২২ জন। এ সময়টা কীভাবে যে কেটেছে পরিবারের বাকি সদস্যদের! আশা-হতাশা-আতঙ্ক-বিষাদ...।
বশির আহম্মেদ জানান, এ গ্রামের ২৩ জন ২ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর হায়দারের অধীনে যুদ্ধ করেন। ভারতে প্রশিক্ষণ শেষে কুমিল্লার দাউদকান্দি, গৌরিপুর, গোয়ালমারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা, মতলব উত্তরের কালিপুর এলাকায় পাকস্তানি বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে গোয়ালমারীতে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়েছিল পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে। বশির আহম্মেদের চোখের সামনে শহীদ হন সহযোদ্ধা। কিন্তু বাঙালিরা পিছু হটেনি। বাঙালিদের পাল্টা আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনীর এক সেনারও মৃত্যু হয়। বাকিদের পাকড়াও করে ফেলেন তাঁরা। পরে মিত্রবাহিনীর হাতে তুলে দেন তাদের।
এ গ্রামের মুক্তিযোদ্ধারা হচ্ছেন আব্বাছউদ্দিন, আবুল বাসার, জহিরুল ইসলাম, সামছুল হক, হারুনুর রশিদ, মোজাম্মেল হক, শাহাজাহান, আবদুস সাত্তার, রবিউল্লাহ, মো. রফিক, জামালউদ্দিন, আহম্মদউল্লাহ, বশির আহম্মেদ, রাজা মিয়া, আলাউদ্দিন সরকার, সালাউদ্দিন সরকার, মাহাবুবুর রহমান, হুমায়ুন কবির, আব্দুল আজিজ, ওয়াহেদুজ্জামান, আব্দুল মতিন, মোস্তাক আহম্মেদ, মালুম ইসলাম। এঁদের মধ্যে প্রথম ১১ মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পান না।
এই ২৩ মুক্তিযোদ্ধার ১১ জন ভাতা পান না। অনেকেই হতাশ। জামালউদ্দিন (৬২) বলেন, ‘যুদ্ধ কইরা শত্রুগো হারাইলেও জীবন-যুদ্ধে হাইরা গেছি। সার্টিফিকেট না থাওনে সরকারি ভাতা পাই না। দেড় লাখ টেয়া কর্জ কইরা তিনডা মাইয়ারে বিয়া দিছি। সম্পদ একখান দোচালা ঘর। বাবুর্চিগিরি কইরা চলি। কাম না থাকলে না খাইয়াই থাহি।’
রফিক প্রধানের অবস্থা আরও করুণ। তাঁর বড় ছেলে প্রতিবন্ধী, ছোটটা বেকার। গজরা বাজারে ঝাড়ুদার-পাহারাদারের কাজ করেন।
চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে গজরা বাজার। বাজারের কাছেই ওটারচর উচ্চবিদ্যালয়। সেখান থেকে তিন-চার মিনিট হাঁটলেই গজরা ইউনিয়নের এই ছোট্ট গ্রাম। বিদ্যুত্ নেই। সরু কাঁচা রাস্তা-ঘাট। পর্যাপ্ত নলকূপ নেই। বাধ্য হয়ে পান করতে হচ্ছে পুকুরের দূষিত পানি। আধুনিকতার স্পর্শ লাগেনি এ গ্রামে।
২০ মার্চ গজরা ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বশির আহম্মেদ প্রথম আলোর এই প্রতিনিধিকে নিয়ে যান মুক্তিযোদ্ধা তসলিম বকাউলের বাড়ি। সেখানে আসেন পাশের বাড়ির মুক্তিযোদ্ধা জামালউদ্দিন ও মো. রফিক। উঠোনে বসে তাঁরা শোনান যুদ্ধদিনের গল্প। ষাটোর্ধ্ব এই ব্যক্তিরা চার দশক আগের ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সময়ে ফিরে যান। কেন যুদ্ধ? কিসের যুদ্ধ? এমন নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যান অনর্গল।
যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই এ গ্রামের মানুষও পাকিস্তানিদের হামলার আশঙ্কা করছিলেন। মাস দেড়েকের মাথায় পাশের গ্রামে ঢুকে পড়ে পাকিস্তানি বাহিনী। ঘরবাড়ি পুড়ছে, প্রাণভয়ে ছুটছে নারী-শিশু-বৃদ্ধ। বাঙালি তরুণেরা এভাবে কি পুড়তে দিতে পারে দেশের মাটি? বশির আহম্মেদ বোঝাতে শুরু করলেন নিজ গ্রামের তরুণদের। তারপর একদিন কাউকে না জানিয়ে জুন-জুলাইয়ের দিকে চলে গেলেন প্রশিক্ষণে। তাঁর দেখানো পথে একে একে দেশ ছাড়লেন ২২ জন। এ সময়টা কীভাবে যে কেটেছে পরিবারের বাকি সদস্যদের! আশা-হতাশা-আতঙ্ক-বিষাদ...।
বশির আহম্মেদ জানান, এ গ্রামের ২৩ জন ২ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর হায়দারের অধীনে যুদ্ধ করেন। ভারতে প্রশিক্ষণ শেষে কুমিল্লার দাউদকান্দি, গৌরিপুর, গোয়ালমারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা, মতলব উত্তরের কালিপুর এলাকায় পাকস্তানি বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে গোয়ালমারীতে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়েছিল পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে। বশির আহম্মেদের চোখের সামনে শহীদ হন সহযোদ্ধা। কিন্তু বাঙালিরা পিছু হটেনি। বাঙালিদের পাল্টা আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনীর এক সেনারও মৃত্যু হয়। বাকিদের পাকড়াও করে ফেলেন তাঁরা। পরে মিত্রবাহিনীর হাতে তুলে দেন তাদের।
এ গ্রামের মুক্তিযোদ্ধারা হচ্ছেন আব্বাছউদ্দিন, আবুল বাসার, জহিরুল ইসলাম, সামছুল হক, হারুনুর রশিদ, মোজাম্মেল হক, শাহাজাহান, আবদুস সাত্তার, রবিউল্লাহ, মো. রফিক, জামালউদ্দিন, আহম্মদউল্লাহ, বশির আহম্মেদ, রাজা মিয়া, আলাউদ্দিন সরকার, সালাউদ্দিন সরকার, মাহাবুবুর রহমান, হুমায়ুন কবির, আব্দুল আজিজ, ওয়াহেদুজ্জামান, আব্দুল মতিন, মোস্তাক আহম্মেদ, মালুম ইসলাম। এঁদের মধ্যে প্রথম ১১ মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পান না।
এই ২৩ মুক্তিযোদ্ধার ১১ জন ভাতা পান না। অনেকেই হতাশ। জামালউদ্দিন (৬২) বলেন, ‘যুদ্ধ কইরা শত্রুগো হারাইলেও জীবন-যুদ্ধে হাইরা গেছি। সার্টিফিকেট না থাওনে সরকারি ভাতা পাই না। দেড় লাখ টেয়া কর্জ কইরা তিনডা মাইয়ারে বিয়া দিছি। সম্পদ একখান দোচালা ঘর। বাবুর্চিগিরি কইরা চলি। কাম না থাকলে না খাইয়াই থাহি।’
রফিক প্রধানের অবস্থা আরও করুণ। তাঁর বড় ছেলে প্রতিবন্ধী, ছোটটা বেকার। গজরা বাজারে ঝাড়ুদার-পাহারাদারের কাজ করেন।
আরেক মুক্তিযোদ্ধা সামছুল হক (৬১)। তাঁর চার সন্তান। ছেলেরা দিনমজুর। পক্ষাঘাতগ্রস্ত এই মুক্তিযোদ্ধা অভাব, অসুস্থতা, ভাত-কাপড়ের কষ্টে মরতে বসেছেন।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মোজাম্মেল হক বলেন, ‘প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হলেও গেজেটে নাম না থাকায় গ্রামের অনেক মুক্তিযোদ্ধা সরকারি ভাতা পাচ্ছেন না। গেজেটভুক্ত হওয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে আবেদনের জন্য তাঁদের বলা হয়েছে। গেজেটভুক্ত হলে তাঁরা ভাতা পাবেন।’
No comments:
Post a Comment