মেয়েরক্তস্নাত এই উপমহাদেশ, মোমের আলোয়
মুছে যাবে কি রক্তের দাগ?
পলাশ বিশ্বাস
মেয়েরক্তস্নাত এই উপমহাদেশ, মোমের আলোয় মুছে যাবে কি রক্তের দাগ? বাংলাদেশ মুক্তিসংগ্রামে সোনার বাংলার বুকে শত্রু সৈন্যবাহিনী নারীর প্রতি যে অত্যাচার করেছিল, সেই ধারা আজও অব্যাহত।এপার বাংলা, ওপার বাংলা, সারা ভারতবর্ষে ও এই উপমহাদেশে নারীরক্তস্নান পর্ব চলছে বিশ্বায়নের খোলা বাজারের সবকিছু পণ্য সংস্কৃতিতে।শত্রুবাহিনী লোকালয়ে ঘাপটি মেরে বসে রয়েছে নারী শিকারের লালাসায়। ক্ষমতা ও পুঁজির সমন্বয়ে মুক্ত বাজারে যে নবধনাঢ্য শ্রেণীর জন্ম. তারই মধ্যে প্রতিক্ষন নারী শিকারের কার্নিওয়াল চলছে কর্তৃত্বের প্রত্যক্ষ সংরক্ষণে। হাজার হাজার বত্সর ব্যাপী পুরুষতন্ত্রের যে ইতিহাস, তার প্রতিটি ছত্রে ছত্রে এই রক্ত উত্সব। নারী নিরাপদ নয় কোথাও।ভারতবর্ষের রাজধানী দিল্লীতে শাষকগোষ্ঠীর প্রধান এক নারী। দিল্লীতে রাজত্ব আর এক নারীর।ভারতবর্ষের প্রতিপক্ষের নেত্রী তিনিও এক নারী।পশ্চিম বাংলায় মা মাটি মানুষের সরকারে মুখ্যমন্ত্রী পুনশ্চ এক নারী।বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিপক্ষনেতা দুজনেই নারী। ভারতে ব্রাহ্মণ্যের বিরুদ্ধে আত্মমর্যাদার যে দ্রাবিড় আন্দোলন বা মনুস্মৃতি কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে যে বহুজনসমাজ, তার নেত্রীরাো নারী। কিন্তু নারীর ক্ষমতায়ন কি হয়েছে? কোথাও? রেজাকর বাহিনী ঘরের মধ্যেই ধর্ষণ চালাচ্ছে নির্বিঘ্নে।রাজনেতিক সংস্কৃতি ও ক্ষমতার রাজনীতিতে নারীকে ব্যবহার কারা হয় যথেছ্ছ।মোমবাতির আলো কত অন্ধকার দুর করতে পারে, সমাজজীবনে যেখানে চলছে অখন্ড আমাবস্যা।দিল্লী , কোলকাতা, মুম্বাই, ঢাকার সুশীল সমাজের আন্দোলন প্যাসন ও ফ্যাশনে কি বদলে যাবে সমাজবাস্তব? কাশ্মীর বা মণিপুর বা দন্ডকারণ্য, আদিবাসী গ্রাম ও দলিত বস্তি সবই ত উঠে আসছে দেবী আরাধনার মন্ডপে।মন্ডপ ভেসে যায় রক্তনদীতে আর আমরা বিসর্জনের আনন্দে আওয়াজ দিতে থাকি ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ!সবার নসীবে দেবীর অদৃষ্টলিপি লেখা নেই। সব্বাইকে ঢাক ঢোল পিটিয়ে মিছিল সহকারে বিদায় দেওয়া হয়না।নিঃশব্দে পাচার হয়ে যায় তারা।অত্যাচারের সব গল্পই মহাভারত হয়না। সব সত্যই প্রতিষ্ঠিত হয়না।ক্ষমতার আস্ফালনে খারিজ হয়ে যায় সত্য।সমতা ও ন্যায়ের কথা শুনতে ভালো, অতি ভদ্রলোকের কারবার।ছোট হয়ে আছে যারা, আলোর শিখা জ্বালার দায়বদ্ধতা তাঁদেরই। সেই আলোয় ভদ্র সমাজের অট্টালিকা আলোকিত, এটাই প্রথা। লেঠেল, গুন্ডা পুষে জমিদারী চালানোর দিন এখনও শেষ হয়ে যায়নি। গুন্ডাবাহিনীর রাজনৈতিক সংরক্ষণে সেটাই প্রমাণিত।অভিযোগ কখনো কখনও নথিবদ্ধ হয় জরূর, কিন্তু চার্জসীট দাখিল হতে অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হয়।পুলিশকে হাজার বার চিন্তা করতে হয় অপরাধীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে, শেষ পর্যন্ত দময়ন্তী সেন হয়ে যেতে হবে না ত!
পর্যাপ্ত আলো নেই। টহলদারির কথা থাকলেও সন্ধ্যার পর দেখা মেলে না পুলিসের। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, তারই সুযোগ নিয়ে দুষ্কৃতীদের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে ডায়মন্ডহারবার পুরসভার দু নম্বর ওয়ার্ড। নিজের প্রাণ দিয়ে এক তরুণীকে যার খেসারত দিতে হল ।
শনিবার রাতে ডায়মন্ডহারবারের নিউটাউনে একাই মেলা দেখতে গিয়েছিলেন ওই তরুণী। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, এক যুবকের সঙ্গে বাইকে চেপে মেলা থেকে বেরিয়ে যান তিনি। রবিবার সকালে দু নম্বর ওয়ার্ডের রামরামপুরের হুগলি নদী তীরবর্তী এলাকায় পড়ে থাকতে দেখা যায় তরুণীর মৃতদেহ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন ডায়মন্ডহারবার থানার আইসি। আসেন স্থানীয় কাউন্সিলর। পুলিসের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনিও।
মৃতদেহের পাশ থেকে মোবাইল ফোন এবং একটি মানিব্যাগ উদ্ধার হয়েছে। পরিজনদের অভিযোগ, ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে তরুণীকে। প্রিন্স ও রাজা নামে স্থানীয় দুই যুবকের বিরুদ্ধে ডায়মন্ডহারবার থানায় অভিযোগও দায়ের করেছে তরুণীর পরিবার।
ঘটনার তদন্তে নেমেছে ডায়মন্ডহারবার থানার পুলিস। খতিয়ে দেখা হচ্ছে উদ্ধার হওয়া মোবাইলের কললিস্ট।
বারাসতে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার তদন্তে নেমে পুকুর থেকে অস্ত্র উদ্ধার করল পুলিস। সোনাখরকি এলাকায় ওই পুকুরের পাড় থেকেই মহিলার দেহ উদ্ধার হয়েছিল। পুকুরে তল্লাসি চালিয়ে আজ সেখান থেকে একটি হাতুড়ি এবং একটি হাঁসুয়া উদ্ধার হয়েছে।
ইছা মোড়ল নামে ইটভাটার এক কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিস। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই অস্ত্র উদ্ধার করেছেন গোয়েন্দারা। তাঁদের অনুমান, ওই অস্ত্র দিয়েই মহিলাকে আঘাত করা হয় এবং তাতেই তাঁর মৃত্যু হয়। ইছা মোড়লের মেডিক্যাল টেস্ট হবে। ঘটনায় বারোজনকে আটক করেছে পুলিস। তারা সকলেই ইটভাটার কর্মী।
মহিলার ওপর শারীরিক অত্যাচারের প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে। আজ সকালে সিআইডির গোয়েন্দারা ঘটনাস্থল ঘুরে নমুনা সংগ্রহ করেন। বিকেলে ডিআইজি, সিআইডি প্রেসিডেন্সি রেঞ্জ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
অন্যদিকে, মহিলার স্বামীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁর মুখে অ্যাসিড ঢেলে দেয় দুষ্কৃতীরা। কিডনি ও পাকস্থলীতে সংক্রমণের কারণে আরজি কর মেডিক্যাল হাসপাতালে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে তাঁকে। বারাসতের ঘটনার প্রতিবাদে, চাঁপাডালি মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় বামফ্রন্ট। এর আগে রাসত কাণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় পুলিসি নিষ্কৃয়তার অভিযোগ তুললেন সিপিআইএম নেতা অমিতাভ নন্দী। তিনি বলেন, "বারাসতে আইনশৃঙ্খলা বলে কিছু নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে প্রশাসন সম্পূর্ণ ব্যর্থ।"
ইছা মোড়ল নামে ইটভাটার এক কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিস। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই অস্ত্র উদ্ধার করেছেন গোয়েন্দারা। তাঁদের অনুমান, ওই অস্ত্র দিয়েই মহিলাকে আঘাত করা হয় এবং তাতেই তাঁর মৃত্যু হয়। ইছা মোড়লের মেডিক্যাল টেস্ট হবে। ঘটনায় বারোজনকে আটক করেছে পুলিস। তারা সকলেই ইটভাটার কর্মী।
মহিলার ওপর শারীরিক অত্যাচারের প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে। আজ সকালে সিআইডির গোয়েন্দারা ঘটনাস্থল ঘুরে নমুনা সংগ্রহ করেন। বিকেলে ডিআইজি, সিআইডি প্রেসিডেন্সি রেঞ্জ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
অন্যদিকে, মহিলার স্বামীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁর মুখে অ্যাসিড ঢেলে দেয় দুষ্কৃতীরা। কিডনি ও পাকস্থলীতে সংক্রমণের কারণে আরজি কর মেডিক্যাল হাসপাতালে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে তাঁকে। বারাসতের ঘটনার প্রতিবাদে, চাঁপাডালি মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় বামফ্রন্ট। এর আগে রাসত কাণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় পুলিসি নিষ্কৃয়তার অভিযোগ তুললেন সিপিআইএম নেতা অমিতাভ নন্দী। তিনি বলেন, "বারাসতে আইনশৃঙ্খলা বলে কিছু নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে প্রশাসন সম্পূর্ণ ব্যর্থ।"
দেশজুড়ে যখন দিল্লি গণধর্ষণকাণ্ডের প্রতিবাদ চলছে তখনই এই রাজ্যে ফের উঠল ধর্ষণের অভিযোগ। শনিবার রাতে বারাসাতে এক মহিলাকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ উঠল।
বারাসতে ইটভাটা থেকে উদ্ধার হয়েছে এক মহিলার অর্ধনগ্ন দেহ।
তাঁকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। মারধর করা হয়েছে মহিলার স্বামীকেও। আহত অবস্থায় তাঁকে ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালে। মহিলার মাথায় তিনটি চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে বলে খবর।
বারাসতে ইটভাটা থেকে উদ্ধার হয়েছে এক মহিলার অর্ধনগ্ন দেহ।
তাঁকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। মারধর করা হয়েছে মহিলার স্বামীকেও। আহত অবস্থায় তাঁকে ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালে। মহিলার মাথায় তিনটি চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে বলে খবর।
ডায়মন্ডহারবার: মহিলাদের উপর নির্যাতনে শুধু দিল্লি নয়, পিছিয়ে নেই এ রাজ্যও। দিল্লির ঘটনা নিয়ে দেশজোড়া প্রতিবাদের মধ্যেই রাজ্যে একের পর এক ধর্ষণ এ কথাই চোখে আঙুল দিয়ে প্রমাণ করছে। শনিবারের বারাসতের পর এবার ডায়মন্ডহারবার। আবার ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ। বারাসতের ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করা হলেও এক্ষেত্রে এখনও বেপাত্তা দুই অভিযুক্ত।
ডায়মন্ডহারবারের হরিণঘাটা থানা এলাকার বাসিন্দা বছর বাইশের তরুণী শনিবার তাঁর প্রেমিক প্রিন্সের সঙ্গে মেলা দেখতে যান। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন প্রিন্সের বন্ধু রাজাও। নিউটাউন থেকে মেলা দেখে সন্ধের কিছু পরেই তাঁর ফেরার কথা থাকলেও, রাতে ওই তরুণী বাড়ি না ফেরায় খোঁজখবর শুরু করেন বাড়ির লোকজন। রবিবার সকালে আবদালপুরের মাঠে তাঁর অর্ধনগ্ন ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার করে এলাকবাসী। দেহটি তাঁর দিদির বলে শনাক্ত করেন মানস পুরকায়স্থ।
ওই তরুণীর দীর্ঘদিনের প্রেমিক প্রিন্স ও রাজার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ এনেছেন মানাস। ডায়মন্ডহারবার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। তরুণীকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত ভাবে জানতে মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। রাজা ও প্রিন্স পলাতক। তাঁদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।
এদিকে বারাসতের ঘটনায় রবিবার একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও সাতজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে পুলিশ। নির্যাতিতা মহিলাকে যে অস্ত্র দিয়ে খুন করা হয়েছিল, সেই হাতুড়ি ও হাঁসুয়া উদ্ধার করা গিয়েছে। এখনও আশঙ্কাজনক তাঁর স্বামীর শারীরিক অবস্থা। তাঁকে আরজিকর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ডায়মন্ডহারবারের হরিণঘাটা থানা এলাকার বাসিন্দা বছর বাইশের তরুণী শনিবার তাঁর প্রেমিক প্রিন্সের সঙ্গে মেলা দেখতে যান। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন প্রিন্সের বন্ধু রাজাও। নিউটাউন থেকে মেলা দেখে সন্ধের কিছু পরেই তাঁর ফেরার কথা থাকলেও, রাতে ওই তরুণী বাড়ি না ফেরায় খোঁজখবর শুরু করেন বাড়ির লোকজন। রবিবার সকালে আবদালপুরের মাঠে তাঁর অর্ধনগ্ন ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার করে এলাকবাসী। দেহটি তাঁর দিদির বলে শনাক্ত করেন মানস পুরকায়স্থ।
ওই তরুণীর দীর্ঘদিনের প্রেমিক প্রিন্স ও রাজার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ এনেছেন মানাস। ডায়মন্ডহারবার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। তরুণীকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত ভাবে জানতে মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। রাজা ও প্রিন্স পলাতক। তাঁদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।
এদিকে বারাসতের ঘটনায় রবিবার একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও সাতজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে পুলিশ। নির্যাতিতা মহিলাকে যে অস্ত্র দিয়ে খুন করা হয়েছিল, সেই হাতুড়ি ও হাঁসুয়া উদ্ধার করা গিয়েছে। এখনও আশঙ্কাজনক তাঁর স্বামীর শারীরিক অবস্থা। তাঁকে আরজিকর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আদিবাসী স্কুলছাত্রী ধর্ষণ ও খুনের বিচার দাবিতে মানববন্ধন
রাঙামাটিতে আদিবাসী নারী ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে গতকাল রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে মানববন্ধন করা হয়
ছবি: প্রথম আলো
ডিসেম্বরের শেষ। রবিবার। তার সঙ্গে জমাটি ঠাণ্ডা। এই ত্র্যহস্পর্শে জমে উঠল ছুটির দিনের চিড়িয়াখানা। ছোট থেকে বড়, জেলা থেকে শহর, এমনকি ভিন রাজ্যের বাসিন্দা, সবার ভিড়ে আজকের চিড়িয়াখানা হয়ে উঠেছিল যেন এক কার্নিভ্যাল। পশুপাখিদের ঘিরে ছোটদের বিস্ময় আর আনন্দ, বড়দের দিলদরিয়া মেজাজ আর দেদার খাওয়াদাওয়া, সব মিলিয়ে আজ দিনভর যেন আনন্দের হাট বসেছিল চিড়িয়াখানা চত্বরে।
শীতের কুয়াশা গায়ে মেখে চিড়িয়াখানার সামনে বহুবর্ণরঞ্জিত মানুষের ভিড়। বছরের শেষ রবিবারের সকালে দেখা গেল সেই চেনা ছবি। ছোটদের হাত ধরে এসেছেন বড়রা। তবে শুধুই ছোটদের আনন্দ দিতে নয়, বছরের শেষ রবিবারটা নিজেরাও উপভোগ করতে। বেলা বাড়তেই তিল ধারণের জায়গা ছিল না চিড়িয়াখানা চত্বরে। সব খাঁচার সামনেই উত্সাহী মানুষের ভিড়। চোখের সামনে বইয়ে দেখা পশুপাখিদের নড়াচড়া দেখে বেজায় খুশি ছোটরা।
খুশি বড়রাও। কারণ সপরিবারে চিড়িয়াখানার মধ্যেই জমে উঠেছে পিকনিকের মেজাজ।
খানিক পরে খেলায় মেতে উঠল ছোটরা। সঙ্গে দফায় দফায় মনপসন্দ খাবারের প্যাকেট। মাসের শেষ হলেও বছর শেষের ছুটির দিনে বড়দের মেজাজ কিন্তু দিলদরিয়া। পারিবারিক আন্ন্দ উপভোগের সেই চেনা ছবির আবহ দিনভর মাতিয়ে রাখল সকলকেই।
শীতের কুয়াশা গায়ে মেখে চিড়িয়াখানার সামনে বহুবর্ণরঞ্জিত মানুষের ভিড়। বছরের শেষ রবিবারের সকালে দেখা গেল সেই চেনা ছবি। ছোটদের হাত ধরে এসেছেন বড়রা। তবে শুধুই ছোটদের আনন্দ দিতে নয়, বছরের শেষ রবিবারটা নিজেরাও উপভোগ করতে। বেলা বাড়তেই তিল ধারণের জায়গা ছিল না চিড়িয়াখানা চত্বরে। সব খাঁচার সামনেই উত্সাহী মানুষের ভিড়। চোখের সামনে বইয়ে দেখা পশুপাখিদের নড়াচড়া দেখে বেজায় খুশি ছোটরা।
খুশি বড়রাও। কারণ সপরিবারে চিড়িয়াখানার মধ্যেই জমে উঠেছে পিকনিকের মেজাজ।
খানিক পরে খেলায় মেতে উঠল ছোটরা। সঙ্গে দফায় দফায় মনপসন্দ খাবারের প্যাকেট। মাসের শেষ হলেও বছর শেষের ছুটির দিনে বড়দের মেজাজ কিন্তু দিলদরিয়া। পারিবারিক আন্ন্দ উপভোগের সেই চেনা ছবির আবহ দিনভর মাতিয়ে রাখল সকলকেই।
দিল্লিতে নির্যাতিতা তরুণীর হত্যাকারীদের দ্রুত সাজার দাবিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠল যন্তরমন্তর এলাকা। রবিবার পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বাধে বিক্ষোভকারীদের। পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে এগনোর চেষ্টা করেন বিক্ষোভকারীরা। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কয়েকজন গোলমাল ছড়ানোর চেষ্টা করছে বলে পুলিশের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে। তাদের চিহ্নিত করে আটক করা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।
শনিবারের মতো রবিবারও সকাল থেকে দিল্লির যন্তরমন্তরে চলছিল ধর্না-অবস্থান। তরুণ-তরুণী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা নির্বিশেষে মৃত তরুণীর সুবিচারের দাবিতে অবস্থানে বসেছিল। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন বেলা একটা নাগাদ হঠাতই উত্তপ্ত চেহারা নেয়। এর পেছনে বিজেপি-র ছাত্র সংগটন এবিভিপি-র কর্মী-সমর্থকরা রয়েছেন বলে অভিযোগ। এবিভিপি-র পতাকা নিয়ে বেশ কয়েকজন যন্তরমন্তরে আসে। তারাই গোলমাল বাধানোর চেষ্টা করে বলে পুলিশের অভিযোগ। এবিভিপি কর্মীরা যন্তরমন্তর থেকে কনট প্লেসের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বিক্ষোভকারীরা। এরপরই পুলিশকর্মীদের সঙ্গে হাতাহাতি বাধে বিক্ষোভকারীদের। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে আরও বাহিনী এনে অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
ধর্ষকদের ফাঁসির দাবিতে রবিবার যন্তরমন্তরে একদিনের প্রতীকি অনশন পালন করে বিক্ষোভকারীদের একটি দল। গত সপ্তাহে সুবিচারের দাবিতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠা ইন্ডিয়া গেট এবং রাইসিনা হিল এদিনও সাধারণ মানুষের জন্য বন্ধ ছিল। গোলমাল এড়াতে রাজপথ, বিজয় চক, ইন্ডিয়া গেটগামী সমস্ত রাস্তা সহ গোটা সেন্ট্রাল ভিস্তা এলাকা বন্ধ করে রেখেচে পুলিশ। মোতায়েন রয়েছে প্রচুর বাহিনী, র্যাফ।
শনিবারের মতো রবিবারও সকাল থেকে দিল্লির যন্তরমন্তরে চলছিল ধর্না-অবস্থান। তরুণ-তরুণী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা নির্বিশেষে মৃত তরুণীর সুবিচারের দাবিতে অবস্থানে বসেছিল। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন বেলা একটা নাগাদ হঠাতই উত্তপ্ত চেহারা নেয়। এর পেছনে বিজেপি-র ছাত্র সংগটন এবিভিপি-র কর্মী-সমর্থকরা রয়েছেন বলে অভিযোগ। এবিভিপি-র পতাকা নিয়ে বেশ কয়েকজন যন্তরমন্তরে আসে। তারাই গোলমাল বাধানোর চেষ্টা করে বলে পুলিশের অভিযোগ। এবিভিপি কর্মীরা যন্তরমন্তর থেকে কনট প্লেসের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বিক্ষোভকারীরা। এরপরই পুলিশকর্মীদের সঙ্গে হাতাহাতি বাধে বিক্ষোভকারীদের। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে আরও বাহিনী এনে অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
ধর্ষকদের ফাঁসির দাবিতে রবিবার যন্তরমন্তরে একদিনের প্রতীকি অনশন পালন করে বিক্ষোভকারীদের একটি দল। গত সপ্তাহে সুবিচারের দাবিতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠা ইন্ডিয়া গেট এবং রাইসিনা হিল এদিনও সাধারণ মানুষের জন্য বন্ধ ছিল। গোলমাল এড়াতে রাজপথ, বিজয় চক, ইন্ডিয়া গেটগামী সমস্ত রাস্তা সহ গোটা সেন্ট্রাল ভিস্তা এলাকা বন্ধ করে রেখেচে পুলিশ। মোতায়েন রয়েছে প্রচুর বাহিনী, র্যাফ।
প্রতিবাদের আগুন এখনও জ্বলছে। এরইমধ্যে, সিঙ্গাপুর থেকে দিল্লি নিয়ে আসা তরুনীর দেহের অন্ত্যেষ্টি সম্পন্ন হল কড়া পুলিসি নিরাপত্তায়। রাজধানী পৌছানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অন্ত্যেষ্টি কাজ শেষ হয়। রবিবার ভোররাতে দেহ নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর বাড়িতে। সেখানেই অন্ত্যেষ্টির আগের রীতি সম্পন্ন হয়। তারপর কুয়াশা ঢাকা দ্বারকায় তাঁর শেষকাজ সমাধা হয়। অন্ত্যেষ্টির স্থল ঘিরে ছিল কড়া নিরাপত্তা। মোতায়েন করা হয় র্যাফ।
ভারতীয় সময় রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ তরুণীর নিথর দেহ নিয়ে দিল্লি বিমানবন্দের মাটি ছোঁয় এয়ারইন্ডিয়ার বিশেষ বিমান। বিমানবন্দরে তখন উপস্থিত প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। শোকবার্তায় পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি। ন্যায়বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
সকাল থেকেই শোনা যাচ্ছিল এয়ারইন্ডিয়ার বিশেষ বিমান এআইসি-৩৮০ নির্যাতিতার দেহ নিয়ে দেশে পৌঁছবে। কিন্তু কখন? তাই নিয়েই ছিল জল্পনা। সময় পরিবর্তিত হয়েছে বারবার। দেরি হয়েছে পোস্ট মর্টেমের কারণে। দিল্লি থেকে যে বিশেষ বিমানটি সিঙ্গাপুর গিয়েছিল, তার ক্লিয়ারেন্স পেতেও কিছুটা সময় লেগেছে। সময় লেগেছে ডেথ সার্টিফিকেট পেতেও।
প্রথমে মনে করা হয়েছিল ভারতীয় সময় দুপুর দেড়টার মধ্যেই মিটিয়ে ফেলা সম্ভব হবে প্রয়োজনীয় কাজ। কিন্তু শেষমেষ তা মিটতে মিটতেই শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা বেজে যায়। নানা কারণে দেরি হলেও নয়াদিল্লির মাটিতে অপেক্ষা করেছেন কয়েকশো মানুষ। তরুণীর দেহ নিয়ে ভারতীয় সময় রাত পৌনে দশটা নাগাদ রওনা হয় এয়ারইন্ডিয়ার বিশেষ বিমান। দিল্লি বিমানবন্দরে যখন বিমান এল, ঘড়ির কাটায় রাত সাড়ে তিনটে। কিন্তু সেই গভীর রাতেও বিমানবন্দরে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর শোকবার্তায় তিনি বলেন, "আমি মর্মাহত, দুঃখিত।" তরুণীর মা, বাবার মনের অবস্থা বুঝেই ন্যায় বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
ভারতীয় সময় রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ তরুণীর নিথর দেহ নিয়ে দিল্লি বিমানবন্দের মাটি ছোঁয় এয়ারইন্ডিয়ার বিশেষ বিমান। বিমানবন্দরে তখন উপস্থিত প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। শোকবার্তায় পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি। ন্যায়বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
সকাল থেকেই শোনা যাচ্ছিল এয়ারইন্ডিয়ার বিশেষ বিমান এআইসি-৩৮০ নির্যাতিতার দেহ নিয়ে দেশে পৌঁছবে। কিন্তু কখন? তাই নিয়েই ছিল জল্পনা। সময় পরিবর্তিত হয়েছে বারবার। দেরি হয়েছে পোস্ট মর্টেমের কারণে। দিল্লি থেকে যে বিশেষ বিমানটি সিঙ্গাপুর গিয়েছিল, তার ক্লিয়ারেন্স পেতেও কিছুটা সময় লেগেছে। সময় লেগেছে ডেথ সার্টিফিকেট পেতেও।
প্রথমে মনে করা হয়েছিল ভারতীয় সময় দুপুর দেড়টার মধ্যেই মিটিয়ে ফেলা সম্ভব হবে প্রয়োজনীয় কাজ। কিন্তু শেষমেষ তা মিটতে মিটতেই শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা বেজে যায়। নানা কারণে দেরি হলেও নয়াদিল্লির মাটিতে অপেক্ষা করেছেন কয়েকশো মানুষ। তরুণীর দেহ নিয়ে ভারতীয় সময় রাত পৌনে দশটা নাগাদ রওনা হয় এয়ারইন্ডিয়ার বিশেষ বিমান। দিল্লি বিমানবন্দরে যখন বিমান এল, ঘড়ির কাটায় রাত সাড়ে তিনটে। কিন্তু সেই গভীর রাতেও বিমানবন্দরে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর শোকবার্তায় তিনি বলেন, "আমি মর্মাহত, দুঃখিত।" তরুণীর মা, বাবার মনের অবস্থা বুঝেই ন্যায় বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
কাল ভোররাতেই থেমে গেছে দিল্লির তরুণীর জীবনের লড়াই। কিন্তু থামেনি প্রতিবাদ। সারা দেশের সঙ্গে প্রতিবাদে সামিল শহর কলকাতাও। সামিল আমরাও, ২৪ ঘণ্টা।
দিল্লির ঘটনায় যখন উত্তাল সারা দেশ, ঠিক তখনই ধর্ষকের পৈশাচিক মনোবৃত্তির শিকার হচ্ছেন বারাসাতের মধ্যবয়স্কা থেকে বেঙ্গালুরুর কিশোরী। তাই দিল্লির ঘটনাতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে না প্রতিবাদ, বরং তৈরি হচ্ছে নতুন লড়াইয়ের পটভূমি। সেই পটভূমির উদযাপনে আজ বিকেল পাঁচটা থেকে ২৪ ঘণ্টার উদ্যোগে মিলেনিয়াম পার্কে প্রতিবাদ সভা হবে। গান, নাচ, নাটক, কবিতায় এই নৃশংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে আমরা থাকছি। আপনারাও আসুন। আজকের মঞ্চে আমাদের সবার প্রতিবাদ এক সঙ্গে নতুন লড়াইয়ের অঙ্গীকারবদ্ধ হোক।
দিল্লির ঘটনায় যখন উত্তাল সারা দেশ, ঠিক তখনই ধর্ষকের পৈশাচিক মনোবৃত্তির শিকার হচ্ছেন বারাসাতের মধ্যবয়স্কা থেকে বেঙ্গালুরুর কিশোরী। তাই দিল্লির ঘটনাতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে না প্রতিবাদ, বরং তৈরি হচ্ছে নতুন লড়াইয়ের পটভূমি। সেই পটভূমির উদযাপনে আজ বিকেল পাঁচটা থেকে ২৪ ঘণ্টার উদ্যোগে মিলেনিয়াম পার্কে প্রতিবাদ সভা হবে। গান, নাচ, নাটক, কবিতায় এই নৃশংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে আমরা থাকছি। আপনারাও আসুন। আজকের মঞ্চে আমাদের সবার প্রতিবাদ এক সঙ্গে নতুন লড়াইয়ের অঙ্গীকারবদ্ধ হোক।
এই সময়: দিল্লিতে নিগৃহীতা ছাত্রীর মৃত্যুর খবরে অস্থির হয়ে উঠল মহানগরী৷ কলকাতার রাস্তায় প্রতিবাদে সামিল হলেন সাধারণ মানুষ থেকে রাজনৈতিক নেতৃত্ব৷ মোমবাতি মিছিল, অস্থায়ী স্মৃতি সৌধে ফুল দেওয়া কিংবা স্লোগানে সরকারের সমালোচনা৷ প্রতিবাদের ধরন ভিন্ন হলেও নাগরিক মহলে শুধুই শোকের আবহ৷
শহরের যখন ঘুম ভাঙ্গেনি, তখন শীত উপেক্ষা করেই সাত সকালে ধর্মতলায় নিগৃহীতা ছাত্রীর স্মৃতিতে অস্থায়ী সৌধ তৈরি করেন কয়েকজন৷ তাঁদের কেউই রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি নন৷ প্রকৃতই 'আম আদমি'৷ সারাদিন ধরে সেই সৌধেই পথ চলতি মানুষের মোমবাতি আর ফুল জানান দিল, দিল্লি থেকে পার্কস্ট্রিট, সর্বত্র ধর্ষনের ঘটনাকে ধিক্কার জানায় এই শহর৷
বার্তা ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুক-এসএমএসে৷ সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে বিড়লা তারামণ্ডলের সামনে জড়ো হন বিভিন্ন বয়সের মানুষ৷ তাঁদের কেউ স্কুলের গন্ডি পার হয়নি, কেউবা সদ্য অবসর নিয়েছেন৷ আবার কেউ পথ চলতে চলতে সামিল হলেন, সমব্যাথীদের জমায়েতে৷ শ-পাঁচেকের এই জমায়েত থেকে নিগৃহীতার পরিবারের প্রতি জানানো হল সমবেদনা৷ এই ধরনের ঘটনার র্নিমূল করতে প্রচার চালানোটাই ছিল জমায়েতের অঙ্গীকার৷
বেলা বাড়তেই শহরে বেশির ভাগ পথ দখল নিল প্রতিবাদী মানুষের মিছিল৷ ঘটনার তীব্র ধিক্কার জানিয়ে মৌনমিছিল করে এসইউসিআই৷ শ্যামবাজার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত পথ হাঁটেন কয়েকশো মহিলা সর্মথক এবং দলীয় নেতৃত্ব৷ মৌন মিছিলের দিল্লির ধর্ষণকারীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি করা ফেস্টুন হাতে হাঁটতে দেখা যায় সর্মথকদের৷ বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় ক্ষমতাসীন দলগুলির পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার জন্যই ধর্ষণ বেড়ে চলেছে বলে দাবি করেন এসইউসিআই-এর সাধারণ সম্পাদক প্রভাস ঘোষ৷
এরপর কলেজ স্কোয়ার থেকে নকশাল পন্থী ছাত্ররা এবং মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিরা মিছিল করে ধর্মতলায় এসে জমায়েত করেন৷ দিল্লির পাশাপাশি এরাজ্যে ধর্ষণের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীসহ শাসকদলের বিভিন্ন নেতা নেত্রী যে 'সাজানো' তত্ত্বের পক্ষে সওয়াল করছেন, তার বিরুদ্ধে সরব ছিল এই মিছিল৷ শুধুমাত্র দিল্লি নয়, তাঁদের মতে কলকাতাসহ এরাজ্যে মহিলার কোনভাবেই নিরাপদ নন৷ একই সঙ্গে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের অভ্যাসের ফলে এই ধরণের ঘটনা আগামী দিনে বাড়বে বলেও তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন৷
একই ঘটনায় সরব বামেরাও৷ বামফ্রন্টের কলকাতা জেলা কমিটি ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউস থেকে বিড়লা তারামণ্ডল পর্যন্ত মৌনমিছিল করে৷ এদিনের মিছিলে সিপিএমের মানব মুখোপাধ্যায়,মহম্মদ সেলিম,রবীন দেব সহ বামফ্রন্ট্রের অন্যান্য শরিক-নেতাকে দেখা গেল৷ মানব মুখোপাধ্যায় বলেন,'গোটা দেশের ঘুম কেড়ে নিয়েছে দিল্লির ঘটনা৷ এরাজ্যের ধর্ষণের মাত্রাও মহিলাদের নিরাপদ রাখছে না৷ রাজ্য সরকার মধ্যযুগীয় মনোভাব প্রকাশ করে র্দুবৃত্তদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন৷'
যদিও, রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে না গিয়ে ধর্ষণ ও মহিলাদের সম্পর্কে বর্তমান রাজনৈতিক নেতাদের কুরুচিকর মানসিকতায় হতাশ এবং ক্ষুব্ধ শহরের নাগরিক মহল৷ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর প্রথম বর্ষের ছাত্রী স্বর্ণপ্রিয়া মুখোপাধ্যায় এসেছিলেন স্মৃতি সৌধে শ্রদ্ধা জানাতে৷ তাঁর অভিযোগ, 'সমাজের মানসিকতার পরিবর্তন দরকার৷ মহিলাদের মর্যাদা সম্পর্কে কটূক্তি করে কাকলি ঘোষদস্তিদার,আনিসুর রহমান এবং অভিজিত্ মুখোপাধ্যায়রা একই অন্যায় করেছেন৷'
এই সবের পরেও থেকে গেল আশঙ্কা৷ নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্নের তুলেই শেষ হল এই প্রতিবাদের দিন৷
শহরের যখন ঘুম ভাঙ্গেনি, তখন শীত উপেক্ষা করেই সাত সকালে ধর্মতলায় নিগৃহীতা ছাত্রীর স্মৃতিতে অস্থায়ী সৌধ তৈরি করেন কয়েকজন৷ তাঁদের কেউই রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি নন৷ প্রকৃতই 'আম আদমি'৷ সারাদিন ধরে সেই সৌধেই পথ চলতি মানুষের মোমবাতি আর ফুল জানান দিল, দিল্লি থেকে পার্কস্ট্রিট, সর্বত্র ধর্ষনের ঘটনাকে ধিক্কার জানায় এই শহর৷
বার্তা ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুক-এসএমএসে৷ সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে বিড়লা তারামণ্ডলের সামনে জড়ো হন বিভিন্ন বয়সের মানুষ৷ তাঁদের কেউ স্কুলের গন্ডি পার হয়নি, কেউবা সদ্য অবসর নিয়েছেন৷ আবার কেউ পথ চলতে চলতে সামিল হলেন, সমব্যাথীদের জমায়েতে৷ শ-পাঁচেকের এই জমায়েত থেকে নিগৃহীতার পরিবারের প্রতি জানানো হল সমবেদনা৷ এই ধরনের ঘটনার র্নিমূল করতে প্রচার চালানোটাই ছিল জমায়েতের অঙ্গীকার৷
বেলা বাড়তেই শহরে বেশির ভাগ পথ দখল নিল প্রতিবাদী মানুষের মিছিল৷ ঘটনার তীব্র ধিক্কার জানিয়ে মৌনমিছিল করে এসইউসিআই৷ শ্যামবাজার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত পথ হাঁটেন কয়েকশো মহিলা সর্মথক এবং দলীয় নেতৃত্ব৷ মৌন মিছিলের দিল্লির ধর্ষণকারীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি করা ফেস্টুন হাতে হাঁটতে দেখা যায় সর্মথকদের৷ বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় ক্ষমতাসীন দলগুলির পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার জন্যই ধর্ষণ বেড়ে চলেছে বলে দাবি করেন এসইউসিআই-এর সাধারণ সম্পাদক প্রভাস ঘোষ৷
এরপর কলেজ স্কোয়ার থেকে নকশাল পন্থী ছাত্ররা এবং মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিরা মিছিল করে ধর্মতলায় এসে জমায়েত করেন৷ দিল্লির পাশাপাশি এরাজ্যে ধর্ষণের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীসহ শাসকদলের বিভিন্ন নেতা নেত্রী যে 'সাজানো' তত্ত্বের পক্ষে সওয়াল করছেন, তার বিরুদ্ধে সরব ছিল এই মিছিল৷ শুধুমাত্র দিল্লি নয়, তাঁদের মতে কলকাতাসহ এরাজ্যে মহিলার কোনভাবেই নিরাপদ নন৷ একই সঙ্গে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের অভ্যাসের ফলে এই ধরণের ঘটনা আগামী দিনে বাড়বে বলেও তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন৷
একই ঘটনায় সরব বামেরাও৷ বামফ্রন্টের কলকাতা জেলা কমিটি ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউস থেকে বিড়লা তারামণ্ডল পর্যন্ত মৌনমিছিল করে৷ এদিনের মিছিলে সিপিএমের মানব মুখোপাধ্যায়,মহম্মদ সেলিম,রবীন দেব সহ বামফ্রন্ট্রের অন্যান্য শরিক-নেতাকে দেখা গেল৷ মানব মুখোপাধ্যায় বলেন,'গোটা দেশের ঘুম কেড়ে নিয়েছে দিল্লির ঘটনা৷ এরাজ্যের ধর্ষণের মাত্রাও মহিলাদের নিরাপদ রাখছে না৷ রাজ্য সরকার মধ্যযুগীয় মনোভাব প্রকাশ করে র্দুবৃত্তদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন৷'
যদিও, রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে না গিয়ে ধর্ষণ ও মহিলাদের সম্পর্কে বর্তমান রাজনৈতিক নেতাদের কুরুচিকর মানসিকতায় হতাশ এবং ক্ষুব্ধ শহরের নাগরিক মহল৷ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর প্রথম বর্ষের ছাত্রী স্বর্ণপ্রিয়া মুখোপাধ্যায় এসেছিলেন স্মৃতি সৌধে শ্রদ্ধা জানাতে৷ তাঁর অভিযোগ, 'সমাজের মানসিকতার পরিবর্তন দরকার৷ মহিলাদের মর্যাদা সম্পর্কে কটূক্তি করে কাকলি ঘোষদস্তিদার,আনিসুর রহমান এবং অভিজিত্ মুখোপাধ্যায়রা একই অন্যায় করেছেন৷'
এই সবের পরেও থেকে গেল আশঙ্কা৷ নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্নের তুলেই শেষ হল এই প্রতিবাদের দিন৷
এখনও থামেনি প্রতিবাদ। দিল্লির এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সে জন্য এখন সময় আরেক নতুন লড়াইয়ের প্রস্তুতি। গণধর্ষণে দোষীদের মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে আজও বিক্ষোবমুখর গোটা দেশ। সকাল থেকে দিল্লির যন্তরমন্তরে বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন বহু মানুষ। সমাজকে নারীর বাসযোগ্য করার দাবিতে যন্তরমন্তরে একদিনের প্রতীকী অনশনে বসেছেন বিক্ষোভকারীদের একাংশ। দেশের অন্যান্য অংশ থেকেও আসছে বিক্ষোভের খবর। গণধর্ষণকাণ্ডের প্রতিবাদে পুরীর সমুদ্র পাড়ে বালির মূর্তি তৈরি করেছেন শিল্পী। চেন্নাই, কলকাতাতেও দিল্লির ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবিতে মিছিলে সামিল হয়েছেন সাধারণ মানুষ।
দিনভর কড়াকড়ির পর বিকেলের দিকে একটু শিথিল করা হল দিল্লির নিরাপত্তা বাঁধন। বিকেলের দিকে বন্ধ দশটি মেট্রোস্টেশনের পাঁচটিতে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। প্রগতি ময়দান, মাণ্ডি হাউস, বারাখাম্বা রোড, রাজীব চক ও প্যাটেল চক মেট্রোস্টেশন খোলার অনুমতি দিয়েছে পুলিস। তবে দিল্লির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলিতে এখনও নিরাপত্তার কড়াকড়ি অপরিবর্তিত। রাজপথ, বিজয়চক এবং ইন্ডিয়া গেট সংযোগকারী সড়কগুলিতে যান চলাচল নিষিদ্ধ। বন্ধ কামাল আতাতুর্ক মার্গ। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন, রাষ্ট্রপতি ভবন ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের বাড়ির সামনে বাড়তি নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন রাখা হয়েছে। রাজ্যনৈতিক নেতাদের বাসভবন ও দিল্লির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলিও কড়া নিরাপত্তার চাদরে। সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ প্রদর্শনের কেবল খোলা রয়েছে যন্তরমন্তরের দরজা।
গণধর্ষণে দোষীদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ দেখানোকে কেন্দ্র করে পুলিসের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ালেন বিজেপির ছাত্র সংগঠন এবিভিপির সদস্যরা। দুপুর একটা নাগাদ, এবিভিপির একটি বিক্ষোভ মিছিল যন্তরমন্তরে পৌঁছয়। মিছিলটি যন্তরমন্তর থেকে কনট প্লেসের দিকে এগোনোর চেষ্টা করলে বাধা দেয় পুলিস। পুলিসের সঙ্গে প্রথমে ধস্তাধস্তি ও পরে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। সঙ্গে সঙ্গেই অতিরিক্ত পুলিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিক্ষোভকারীদের কয়েকজনকে চিহ্নিত করে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নিয়ে যায় পুলিস।
দিনভর কড়াকড়ির পর বিকেলের দিকে একটু শিথিল করা হল দিল্লির নিরাপত্তা বাঁধন। বিকেলের দিকে বন্ধ দশটি মেট্রোস্টেশনের পাঁচটিতে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। প্রগতি ময়দান, মাণ্ডি হাউস, বারাখাম্বা রোড, রাজীব চক ও প্যাটেল চক মেট্রোস্টেশন খোলার অনুমতি দিয়েছে পুলিস। তবে দিল্লির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলিতে এখনও নিরাপত্তার কড়াকড়ি অপরিবর্তিত। রাজপথ, বিজয়চক এবং ইন্ডিয়া গেট সংযোগকারী সড়কগুলিতে যান চলাচল নিষিদ্ধ। বন্ধ কামাল আতাতুর্ক মার্গ। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন, রাষ্ট্রপতি ভবন ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের বাড়ির সামনে বাড়তি নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন রাখা হয়েছে। রাজ্যনৈতিক নেতাদের বাসভবন ও দিল্লির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলিও কড়া নিরাপত্তার চাদরে। সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ প্রদর্শনের কেবল খোলা রয়েছে যন্তরমন্তরের দরজা।
গণধর্ষণে দোষীদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ দেখানোকে কেন্দ্র করে পুলিসের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ালেন বিজেপির ছাত্র সংগঠন এবিভিপির সদস্যরা। দুপুর একটা নাগাদ, এবিভিপির একটি বিক্ষোভ মিছিল যন্তরমন্তরে পৌঁছয়। মিছিলটি যন্তরমন্তর থেকে কনট প্লেসের দিকে এগোনোর চেষ্টা করলে বাধা দেয় পুলিস। পুলিসের সঙ্গে প্রথমে ধস্তাধস্তি ও পরে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। সঙ্গে সঙ্গেই অতিরিক্ত পুলিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিক্ষোভকারীদের কয়েকজনকে চিহ্নিত করে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নিয়ে যায় পুলিস।
দিল্লিতে নির্যাতিতা তরুণীর মৃত্যুর প্রতিবাদে পথে নামল মুম্বই। সন্ধেয় মোমবাতি মিছিলে সামিল হন বহু মানুষ। মিছিলে হাজির ছিলেন জয়া বচ্চন, হেমা মালিনী, ওম পুরীসহ বিশিষ্টজনেরা। প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন জয়া বচ্চন। এই লজ্জা যেন আমাদের বিবেককে জাগিয়ে দেয়, বললেন হেমা মালিনী।
অভিনেত্রী সাবানা আজ একটি টুইট করেন। তাঁর টুইটে তিনি সিনেমা এবং থিয়েটার জগতের সমস্ত কলাকুশিলবদের সঙ্গেই মুম্বইয়ের সাধারণ মানুষকে মেয়েটির মৃত্যুর প্রতিবাদে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান। জুহু বিচের গান্ধী মূর্তির পাদদেশে মুম্বইয়ের রুপোলী জগতের মানুষদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সাধারণ মানুষও।
আজকের এই প্রতিবাদে যোগ দেন কৈলাশ খের থেকে শুরু করে জাভেদ আখতার, কুণাল কাপুর, সোনু নিগম, সতীশ কৌশিকের মত আরও বহু তারকারা।
অভিনেত্রী সাবানা আজ একটি টুইট করেন। তাঁর টুইটে তিনি সিনেমা এবং থিয়েটার জগতের সমস্ত কলাকুশিলবদের সঙ্গেই মুম্বইয়ের সাধারণ মানুষকে মেয়েটির মৃত্যুর প্রতিবাদে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান। জুহু বিচের গান্ধী মূর্তির পাদদেশে মুম্বইয়ের রুপোলী জগতের মানুষদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সাধারণ মানুষও।
আজকের এই প্রতিবাদে যোগ দেন কৈলাশ খের থেকে শুরু করে জাভেদ আখতার, কুণাল কাপুর, সোনু নিগম, সতীশ কৌশিকের মত আরও বহু তারকারা।
আপনাদের কথা শুনব না, রাজনীতিকে তাড়াল দিল্লি
গৌতম হোড়
নয়াদিল্লি: তেইশটি মোমের সামনে ঠিক ততগুলোই সাদা গোলাপ৷
সাক্ষী নীরবতা৷
দেশের একরত্তি মেয়েটাকে এ ভাবেই মনে রাখল যন্তর-মন্তর৷ এই মৌন প্রতিবাদই যেন যুদ্ধের রব তুলল চারপাশে৷
দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মুখগুলি জানিয়ে দিল, লড়াই থামছে না৷ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে অনশন৷ অবস্থান৷ রবিবার ভারত বন্ধের ডাক দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা৷
যন্তর মন্তরের সামনে রাস্তা জুড়ে ছিলেন তিন ধরনের বিক্ষোভকারী৷ প্রথমেই নীরব প্রতিবাদ৷ গোল হয়ে বসে আছেন বিক্ষোভকারীরা৷ মুখে কালো কাপড় বাঁধা৷ হাতে প্ল্যাকার্ড৷ লেখা, 'আমরা লজ্জিত৷' তাঁদের পাশেই একই রকম ভাবে নীরবে রাস্তায় শুয়ে ২৪ ঘণ্টার অনশন শুরু করেছেন জনা পঞ্চাশেক ছাত্রছাত্রী৷ পরের দলটি অবশ্য প্রতিবাদে সরব৷ মাঝে মাঝেই হচ্ছে গান, 'হাম হোঙ্গে কামইয়াব৷'
তবে রাজনীতিকে কেউ এক মুহূর্তের জন্যও কাছে ঘেঁষতে দেননি৷ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতকে হটিয়ে দেওয়া হয় বিক্ষোভস্থল থেকে, তেমনই অনুমতি মেলেনি সীতারাম ইয়েচুরি-বৃন্দা কারাটেরও৷
শীলা গাড়ি থেকে নেমে কিছু বলার চেষ্টা করতেই, বিক্ষোভকারীরা সেই সময় 'হায় হায়' ধ্বনি দিতে থাকেন৷ সঙ্গে বিদ্রুপ৷ গণবিক্ষোভের আঁচ টের পেয়ে পুলিশি প্রহরায় গাড়িতে উঠে এক রকম পালিয়ে যান তিনি৷ তার আগে অবশ্য ব্যারিকেডের বাইরে একটা মোমবাতি জ্বালাতে পেরেছেন তিনি৷
তার খানিক পরেই সেখানে আসেন সীতারাম, বৃন্দারা৷ সীতারাম কিছু বলার চেষ্টা করলে প্রতিবাদকারীরা বলেন, 'যা বলার সংসদে গিয়ে বলুন৷ আমরা শুনতে চাই না৷' হতাশ বৃন্দা উল্টোদিকের ফুটপাথের কিনারায় কিছুক্ষণ বসে থেকে চলে যান৷ রাজনীতির লোক বলতে শুধু অনুমতি পেয়েছিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল, যোগেন্দ্র যাদবরা৷ তবে তাঁরা এসেছিলেন মুখে কলো কাপড় বেঁধে, দলীয় পতাকা ছাড়াই৷ তাঁরা প্রথম দিন থেকেই বিক্ষোভের শরিক৷ প্রধানমন্ত্রী, সনিয়া থেকে শুরু করে তাবড় রাজনীতিকদের শোকবার্তাও তাঁদের কাছে অর্থহীন৷ দাবি একটাই, কথায় হবে না, পরিবর্তন চাই- আইন, পুলিশি ব্যবস্থা ও মানসিকতার৷
শুক্রবার গভীর রাতে তরুণীর মৃত্যুসংবাদ এসে পৌঁছতেই সরকার সতর্ক হয়ে যায়৷ আশঙ্কা ছিল, এ দিন বিক্ষোভ তীব্র হবে৷ তাই আগেভাগেই যুদ্ধকালীন তত্পরতায় দিল্লি জুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়৷ বন্ধ করে দেওয়া হয় রাজপথ, বিজয় চক ও ইন্ডিয়া গেট-গামী সব রাস্তা ও ১০টি মেট্রো স্টেশন৷
তৈরি রাখা হয়েছে ১২ কোম্পানি পুলিশ ও ২৮ কোম্পানি আধা সামরিক বাহিনীকে৷ এ ছাড়া আরও ২০ কোম্পানি পুলিশ রাখা হয়েছে সংবেদনশীল সেন্ট্রাল ভিস্তা এলাকায়৷ অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে ১০ জনপথ, যন্তর-মন্তর, ৭ রেস কোর্স ও পুলিশের সদর দপ্তরে৷
জনরোষ ক্রমশই বাড়ছে এই আঁচ পেয়ে, শীলা দীক্ষিত মানুষকে শান্তি বজায় রাখতে অনুরোধ করেন৷ এমনকী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্ডেকে অনুরোধ করেন, প্রতিবাদকারীদের যেন ইন্ডিয়া গেটে শান্তিপূর্ণ ভাবে বিক্ষোভ সমাবেশ করতে দেওয়া হয়৷
প্রতিবাদকারীরা অনড় তাঁদের একটাই দাবিতে, বদলাতে হবে মানসিকতা৷ লড়তে হবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে৷ রাস্তায় নয় সকলে না-ই নামলেন, ভাবনাটাকে ছড়িয়ে দিতে ক্ষতি কী? সন্ধে নামতেই এ দিন মোম-মশালের আলোয় প্রতিবাদের আগুন আরও জোরালো হয়েছে৷ আর সেই আলোই পথ দেখাবে দেশকে, আশায় বুক বেঁধেছেন সকলেই৷
নয়াদিল্লি: তেইশটি মোমের সামনে ঠিক ততগুলোই সাদা গোলাপ৷
সাক্ষী নীরবতা৷
দেশের একরত্তি মেয়েটাকে এ ভাবেই মনে রাখল যন্তর-মন্তর৷ এই মৌন প্রতিবাদই যেন যুদ্ধের রব তুলল চারপাশে৷
দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মুখগুলি জানিয়ে দিল, লড়াই থামছে না৷ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে অনশন৷ অবস্থান৷ রবিবার ভারত বন্ধের ডাক দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা৷
যন্তর মন্তরের সামনে রাস্তা জুড়ে ছিলেন তিন ধরনের বিক্ষোভকারী৷ প্রথমেই নীরব প্রতিবাদ৷ গোল হয়ে বসে আছেন বিক্ষোভকারীরা৷ মুখে কালো কাপড় বাঁধা৷ হাতে প্ল্যাকার্ড৷ লেখা, 'আমরা লজ্জিত৷' তাঁদের পাশেই একই রকম ভাবে নীরবে রাস্তায় শুয়ে ২৪ ঘণ্টার অনশন শুরু করেছেন জনা পঞ্চাশেক ছাত্রছাত্রী৷ পরের দলটি অবশ্য প্রতিবাদে সরব৷ মাঝে মাঝেই হচ্ছে গান, 'হাম হোঙ্গে কামইয়াব৷'
তবে রাজনীতিকে কেউ এক মুহূর্তের জন্যও কাছে ঘেঁষতে দেননি৷ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতকে হটিয়ে দেওয়া হয় বিক্ষোভস্থল থেকে, তেমনই অনুমতি মেলেনি সীতারাম ইয়েচুরি-বৃন্দা কারাটেরও৷
শীলা গাড়ি থেকে নেমে কিছু বলার চেষ্টা করতেই, বিক্ষোভকারীরা সেই সময় 'হায় হায়' ধ্বনি দিতে থাকেন৷ সঙ্গে বিদ্রুপ৷ গণবিক্ষোভের আঁচ টের পেয়ে পুলিশি প্রহরায় গাড়িতে উঠে এক রকম পালিয়ে যান তিনি৷ তার আগে অবশ্য ব্যারিকেডের বাইরে একটা মোমবাতি জ্বালাতে পেরেছেন তিনি৷
তার খানিক পরেই সেখানে আসেন সীতারাম, বৃন্দারা৷ সীতারাম কিছু বলার চেষ্টা করলে প্রতিবাদকারীরা বলেন, 'যা বলার সংসদে গিয়ে বলুন৷ আমরা শুনতে চাই না৷' হতাশ বৃন্দা উল্টোদিকের ফুটপাথের কিনারায় কিছুক্ষণ বসে থেকে চলে যান৷ রাজনীতির লোক বলতে শুধু অনুমতি পেয়েছিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল, যোগেন্দ্র যাদবরা৷ তবে তাঁরা এসেছিলেন মুখে কলো কাপড় বেঁধে, দলীয় পতাকা ছাড়াই৷ তাঁরা প্রথম দিন থেকেই বিক্ষোভের শরিক৷ প্রধানমন্ত্রী, সনিয়া থেকে শুরু করে তাবড় রাজনীতিকদের শোকবার্তাও তাঁদের কাছে অর্থহীন৷ দাবি একটাই, কথায় হবে না, পরিবর্তন চাই- আইন, পুলিশি ব্যবস্থা ও মানসিকতার৷
শুক্রবার গভীর রাতে তরুণীর মৃত্যুসংবাদ এসে পৌঁছতেই সরকার সতর্ক হয়ে যায়৷ আশঙ্কা ছিল, এ দিন বিক্ষোভ তীব্র হবে৷ তাই আগেভাগেই যুদ্ধকালীন তত্পরতায় দিল্লি জুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়৷ বন্ধ করে দেওয়া হয় রাজপথ, বিজয় চক ও ইন্ডিয়া গেট-গামী সব রাস্তা ও ১০টি মেট্রো স্টেশন৷
তৈরি রাখা হয়েছে ১২ কোম্পানি পুলিশ ও ২৮ কোম্পানি আধা সামরিক বাহিনীকে৷ এ ছাড়া আরও ২০ কোম্পানি পুলিশ রাখা হয়েছে সংবেদনশীল সেন্ট্রাল ভিস্তা এলাকায়৷ অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে ১০ জনপথ, যন্তর-মন্তর, ৭ রেস কোর্স ও পুলিশের সদর দপ্তরে৷
জনরোষ ক্রমশই বাড়ছে এই আঁচ পেয়ে, শীলা দীক্ষিত মানুষকে শান্তি বজায় রাখতে অনুরোধ করেন৷ এমনকী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্ডেকে অনুরোধ করেন, প্রতিবাদকারীদের যেন ইন্ডিয়া গেটে শান্তিপূর্ণ ভাবে বিক্ষোভ সমাবেশ করতে দেওয়া হয়৷
প্রতিবাদকারীরা অনড় তাঁদের একটাই দাবিতে, বদলাতে হবে মানসিকতা৷ লড়তে হবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে৷ রাস্তায় নয় সকলে না-ই নামলেন, ভাবনাটাকে ছড়িয়ে দিতে ক্ষতি কী? সন্ধে নামতেই এ দিন মোম-মশালের আলোয় প্রতিবাদের আগুন আরও জোরালো হয়েছে৷ আর সেই আলোই পথ দেখাবে দেশকে, আশায় বুক বেঁধেছেন সকলেই৷
'বিটিয়া রানি'ই বাঁচাবে হাজার মেয়েকে
নয়াদিল্লি: শূন্যতা৷ নৈঃশব্দ্য৷ অবিশ্বাস৷
চোখের জলে চারপাশ ঝাপসা হয়ে এলেও তাঁরা মেনে নিয়েছেন, মেয়ে আর নেই৷ সে আর ফিরবে না৷ কিন্ত্ত হাজার হাজার ভারতবাসীর মধ্যে বেঁচে থাকবে তাঁদের মেয়ে৷ দিল্লির ওই নির্যাতিতা মারা যাওয়ার পর তাঁর বাবা-মায়ের প্রতিক্রিয়া এ রকমই৷
এই শোকেও তাঁরা কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি অসংখ্য অপরিচিত মানুষকে, যাঁরা মেয়েটির পাশে দাঁড়িয়েছেন৷ প্রতিবাদ-প্রতিরোধ-বিক্ষোভে সাহস জুগিয়েছেন ২৪ ঘণ্টা৷ সিঙ্গাপুরে ভারতের রাষ্ট্রদূত টিসিএ রাঘবনকে তাঁরা জানিয়েছেন, ওর মৃত্যুতে হয়তো অনেকের ঘুম ভাঙবে৷ তা ভারতকে মেয়েদের জন্য নিরাপদ করে তুলবে৷
মেয়েটির বাবা দু'দিন আগেও জানিয়েছিলেন, 'ও বাঁচবে৷ খুব লড়াই করছে৷ আপনারা পাশে থাকুন৷' তিনি জানতেন, লড়াইটা কতটা কঠিন৷ অসম৷ কিন্ত্ত জন্ম থেকে দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়তে লড়তে মেয়েটিরও চোয়াল শক্ত হয়ে উঠেছিল৷ বাবা-মাকে বলেছিলেন, 'বাঁচতে চাই!' তাঁকে এই ইচ্ছাশক্তিই বাঁচিয়ে রেখেছিল, চিকিত্সকেরও তেমনই দাবি৷ আর বাবা ভেবেছিলেন 'বর্ন ফাইটার' কখনও হারবে না৷ তাই তাঁর ছোট মেয়েটা যখন আস্তে আস্তে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে গেছে, মাথার কাছে দাঁড়িয়ে তিনি মেয়েকে সাহস জুগিয়েছেন৷ সকলের সামনে শক্ত থাকলেও, ভেতরে ভেতরে ছিন্নভিন্ন হয়েছেন৷ বাবা ঠিকই বুঝেছিলেন, মেয়েকে আর বাঁচানো যাবে না৷
সে অবস্থাতেও প্রতিবাদকারীদের কাছে আবেদন করেছিলেন, শান্তিপূর্ণ ভাবে বিক্ষোভ দেখাতে৷ হিংসার আশ্রয় না নিতে৷ তবে ওই মেয়েটির বন্ধুর পরিবার চায়, ওই ছ'জনেরই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফাঁসি হোক৷ তারা বলে, 'ওর মৃত্যুতে আমরা মর্মাহত৷ কথা হারিয়ে ফেলেছি৷'
ঘটনার আকস্মিকতায় খেই হারিয়েছিলেন বাবা-মাও৷
দিল্লিতে যখন তরুণীর চিকিত্সা চলছে, সেই সময় তাঁরা দেখা করেছিলেন লোকসভার অধ্যক্ষ মীরা কুমারের সঙ্গে৷ তাঁদের দিন গুজরানের কথা শুনে চোখের জল রাখা কঠিন হয়ে পড়েছিল মীরারও৷
উত্তরপ্রদেশের কালান নামে এক ছোট্ট গ্রামে তাঁদের বসত৷ দিন-আনি-দিন-খাই পরিবার৷ কোনও কোনও দিন শুধুই 'নমক-রোটি' জোটে ৷ ভরসা ছিল একফালি জমি৷ আর তাঁদের 'বিটিয়া রানি৷' তাই তাকে পড়ানোর জন্য আধপেটা খেয়েও বাবা-মা-দাদারা লড়াই করেছেন৷ কিচ্ছু না ভেবে বেচে দিয়েছিলেন ওই জমিও৷
ওঁদের চলে যাচ্ছিল কোনওক্রমে৷ আর মেয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তরতরিয়ে৷
একটাই স্বপ্ন আঁকড়ে দিন গুনতেন ওই দম্পতি, 'বিটিয়া বড় হয়ে আমাদের সুখের মুখ দেখাবে!'
কিন্ত্ত ১৬ ডিসেম্বর রাতের ঘটনা সব কিছু এক লহমায় ভেঙে দিয়েছে৷ বদলে গিয়েছে পরিবারের জীবনযাত্রা৷
সিঙ্গাপুরের একটি সংবাদপত্রকে ওই মেয়েটির বাবা বলেছেন, কখনও ভাবিনি বিদেশে আসব৷ বিমানে চড়ব৷ সবই হল সেই মেয়ের জন্যই৷ অথচ...' আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি, গলা বুজে এসেছে কান্নায়৷
কোনও ক্রমে বলেছেন, 'ঈশ্বরও পারলেন না ওর স্বপ্নপূরণ করতে...!'
স্বপ্নকে আসলে ধরতে দেওয়া হল না তরুণীকে৷ মা-বাবার চোখে তাই শুধুই দুঃস্বপ্নের মিছিল৷
চোখের জলে চারপাশ ঝাপসা হয়ে এলেও তাঁরা মেনে নিয়েছেন, মেয়ে আর নেই৷ সে আর ফিরবে না৷ কিন্ত্ত হাজার হাজার ভারতবাসীর মধ্যে বেঁচে থাকবে তাঁদের মেয়ে৷ দিল্লির ওই নির্যাতিতা মারা যাওয়ার পর তাঁর বাবা-মায়ের প্রতিক্রিয়া এ রকমই৷
এই শোকেও তাঁরা কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি অসংখ্য অপরিচিত মানুষকে, যাঁরা মেয়েটির পাশে দাঁড়িয়েছেন৷ প্রতিবাদ-প্রতিরোধ-বিক্ষোভে সাহস জুগিয়েছেন ২৪ ঘণ্টা৷ সিঙ্গাপুরে ভারতের রাষ্ট্রদূত টিসিএ রাঘবনকে তাঁরা জানিয়েছেন, ওর মৃত্যুতে হয়তো অনেকের ঘুম ভাঙবে৷ তা ভারতকে মেয়েদের জন্য নিরাপদ করে তুলবে৷
মেয়েটির বাবা দু'দিন আগেও জানিয়েছিলেন, 'ও বাঁচবে৷ খুব লড়াই করছে৷ আপনারা পাশে থাকুন৷' তিনি জানতেন, লড়াইটা কতটা কঠিন৷ অসম৷ কিন্ত্ত জন্ম থেকে দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়তে লড়তে মেয়েটিরও চোয়াল শক্ত হয়ে উঠেছিল৷ বাবা-মাকে বলেছিলেন, 'বাঁচতে চাই!' তাঁকে এই ইচ্ছাশক্তিই বাঁচিয়ে রেখেছিল, চিকিত্সকেরও তেমনই দাবি৷ আর বাবা ভেবেছিলেন 'বর্ন ফাইটার' কখনও হারবে না৷ তাই তাঁর ছোট মেয়েটা যখন আস্তে আস্তে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে গেছে, মাথার কাছে দাঁড়িয়ে তিনি মেয়েকে সাহস জুগিয়েছেন৷ সকলের সামনে শক্ত থাকলেও, ভেতরে ভেতরে ছিন্নভিন্ন হয়েছেন৷ বাবা ঠিকই বুঝেছিলেন, মেয়েকে আর বাঁচানো যাবে না৷
সে অবস্থাতেও প্রতিবাদকারীদের কাছে আবেদন করেছিলেন, শান্তিপূর্ণ ভাবে বিক্ষোভ দেখাতে৷ হিংসার আশ্রয় না নিতে৷ তবে ওই মেয়েটির বন্ধুর পরিবার চায়, ওই ছ'জনেরই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফাঁসি হোক৷ তারা বলে, 'ওর মৃত্যুতে আমরা মর্মাহত৷ কথা হারিয়ে ফেলেছি৷'
ঘটনার আকস্মিকতায় খেই হারিয়েছিলেন বাবা-মাও৷
দিল্লিতে যখন তরুণীর চিকিত্সা চলছে, সেই সময় তাঁরা দেখা করেছিলেন লোকসভার অধ্যক্ষ মীরা কুমারের সঙ্গে৷ তাঁদের দিন গুজরানের কথা শুনে চোখের জল রাখা কঠিন হয়ে পড়েছিল মীরারও৷
উত্তরপ্রদেশের কালান নামে এক ছোট্ট গ্রামে তাঁদের বসত৷ দিন-আনি-দিন-খাই পরিবার৷ কোনও কোনও দিন শুধুই 'নমক-রোটি' জোটে ৷ ভরসা ছিল একফালি জমি৷ আর তাঁদের 'বিটিয়া রানি৷' তাই তাকে পড়ানোর জন্য আধপেটা খেয়েও বাবা-মা-দাদারা লড়াই করেছেন৷ কিচ্ছু না ভেবে বেচে দিয়েছিলেন ওই জমিও৷
ওঁদের চলে যাচ্ছিল কোনওক্রমে৷ আর মেয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তরতরিয়ে৷
একটাই স্বপ্ন আঁকড়ে দিন গুনতেন ওই দম্পতি, 'বিটিয়া বড় হয়ে আমাদের সুখের মুখ দেখাবে!'
কিন্ত্ত ১৬ ডিসেম্বর রাতের ঘটনা সব কিছু এক লহমায় ভেঙে দিয়েছে৷ বদলে গিয়েছে পরিবারের জীবনযাত্রা৷
সিঙ্গাপুরের একটি সংবাদপত্রকে ওই মেয়েটির বাবা বলেছেন, কখনও ভাবিনি বিদেশে আসব৷ বিমানে চড়ব৷ সবই হল সেই মেয়ের জন্যই৷ অথচ...' আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি, গলা বুজে এসেছে কান্নায়৷
কোনও ক্রমে বলেছেন, 'ঈশ্বরও পারলেন না ওর স্বপ্নপূরণ করতে...!'
স্বপ্নকে আসলে ধরতে দেওয়া হল না তরুণীকে৷ মা-বাবার চোখে তাই শুধুই দুঃস্বপ্নের মিছিল৷
তার মাঝে হয়তো একটাই ছোট্ট সান্ত্বনা, ও এখন সবার মেয়ে৷ এই দেশের মেয়ে৷
এই এক মেয়ের মৃত্যু হয়তো বাঁচাবে আরও এমন অনেক প্রাণ!
হেরে গিয়েও আলো ছড়াল সাহসিনীর অদম্য লড়াই
নয়াদিল্লি: ১৬ ডিসেম্বর রাতে ক্ষতবিক্ষত মেয়েটিকে যখন সফদরজঙ্গ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় তখন তাকে দেখে চমকে উঠেছিলেন দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞ চিকিত্সকেরাও৷ টানা ৪৫ মিনিট ধরে উপর্যুপরি ধর্ষণের পর মরচে পড়া লোহার রড দিয়ে তার ২৩ বছরের শরীরটাকে যে ভাবে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছিল ছ'জন উন্মত্ত পুরুষ তা হাড় হিম করে দিয়েছিল চিকিত্সকদের৷ কিন্ত্ত এত যন্ত্রণাতেও হেরে যায়নি সেই মেয়ে৷ শুধু বেঁচে থাকার তীব্র ইচ্ছা সম্বল করে গত ১৩ দিন ধরে মৃত্যুর সঙ্গে অসম যুদ্ধে পাঞ্জা কষে গিয়েছে সে৷ কখনও ইশারায়, কখনও যন্ত্রণাক্লিষ্ট স্বরে তার উপর অত্যাচার করেছে যারা তাদের শাস্তির দাবিতে বিচার চেয়েছে সে৷ কিন্ত্ত শুক্রবার গভীর রাতে জয় হল মৃত্যুরই৷
আরও ভাল চিকিত্সার জন্য বুধবার গভীর রাতে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল দিল্লির গণধর্ষিতা তরুণীকে৷ কিন্ত্ত শুক্রবার রাত সোয়া দু'টো নাগাদ চিকিত্সকদের চেষ্টা ব্যর্থ করে মৃত্যু হল সেই মেয়েটির৷ শুক্রবার সকাল থেকেই শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছিল তাঁর৷ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ফলে তার মস্তিষ্কে জল জমা শুরু হয়েছিল আগেই৷ প্রায় সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গও কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল৷ মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের সিইও কেলভিন লো এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, মৃত্যুর সময় ওই তরুণীর পাশে ছিলেন তাঁর মা বাবা ও ভারতীয় হাইকমিশনের সদস্যরা৷ সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে অটোপ্সির পর এয়ার ইন্ডিয়ার বিশেষ চার্টার্ড বিমানে মেয়েটির দেহ দেশে ফিরিয়ে আনা হয়৷ রাত সাড়ে ন'টা নাগাদ সিঙ্গাপুর থেকে রওনা হয় বিমান৷ গভীর রাতে তার কফিনবন্দি দেহ পোঁছয় দিল্লি বিমানবন্দরে৷
তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে শুক্রবার দিন ভর চরম উদ্বেগে কাটিয়েছে গোটা দেশ৷ তাঁর মৃত্যুর খবরে ফের প্রতিবাদে গোটা রাজধানী উত্তাল হয়ে উঠতে পারে আঁচ করেই কড়া নিরাপত্তার ঘেরাটোপে মুড়ে ফেলা হয় দিল্লিকে৷ শনিবার সকাল থেকেই ইন্ডিয়া গেট চত্বরে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষেধ করে দেওয়া হয়৷ বন্ধ করে দেওয়া হয় দশটি মেট্রো স্টেশন৷ কিন্ত্ত প্রতিবাদ ঠেকানো যায়নি তাতে৷ সকাল থেকে মুখে কালো কাপড় বেঁধে মৌন মিছিল পৌঁছে যায় যন্তরমন্তরে৷ চোখের জলে নীরব প্রতিবাদে সামিল হয়েছে সব বয়সের মানুষ৷ উত্তরপ্রদেশের এই প্যারামেডিক্যাল ছাত্রীর মৃত্যুর পর আত্মীয় বিয়োগের যন্ত্রণায় স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে এত দিনের তীব্র বিক্ষোভ৷
মানুষের প্রতিবাদে সামিল হতে গিয়ে চরম অপমানিত হয়ে যন্তরমন্তর থেকে ফিরতে হয়েছে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতকে৷ জনতার ধিক্কারে ফিরে যেতে হয় সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি ও বৃন্দা কারাটকেও৷ প্রধানমন্ত্রী বিবৃতি দিয়ে অভিযুক্তদের দ্রুত শাস্তির আশ্বাস দিয়েছেন৷ মা হিসেবে সাধারণ মানুষের যন্ত্রণা তিনি বোঝেন, জানিয়েছেন সনিয়া গান্ধী৷ 'দেশের এই সাহসী কন্যার এমন নিষ্ঠুর মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী তাদের দ্রুত শাস্তি হবে' - বলেছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ও৷ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত স্বীকার করেছেন এই ঘটনা তাঁর কাছে 'চরম লজ্জার'৷
কিন্ত্ত রাজনীতিবিদদের এই আশ্বাস ও দুঃখপ্রকাশ নিয়ে শনিবার মাথা ঘামায়নি কেউ৷ ধর্ষিতা তরুণীর মৃত্যুর ফলে অভিযুক্ত ছয় জনের বিরুদ্ধেই খুনের মামলা দায়ের করেছে পুলিশ৷ মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে বলে এ দিনও জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্ডে৷ কিন্ত্ত সাধারণ মানুষের মনোভাব আঁচ করেই গোটা দিল্লি জুড়ে হাই অ্যালার্ট জারি করে পুলিশ প্রশাসনকে সতর্ক রেখেছে সরকার৷
রবিবার নৃশংস অত্যাচারের তিন দিন পর সফদরজঙ্গ হাসপাতালে মায়ের সঙ্গে প্রথমবার দেখা হয়েছিল ওই তরুণীর৷ সে দিন মায়ের কাছে বেঁচে থাকার আকুল আর্তি জানিয়েছিলেন ওই তরুণী৷ তাঁর সুস্থ হয়ে ওঠার প্রার্থনায় সামিল হয়েছিল গোটা দেশ৷ তাঁর উপর হওয়া নারকীয় অত্যাচারকে সামনে রেখে বহুকাল পর গর্জে উঠেছিল ঘুমিয়ে থাকা সমাজ৷ তাঁর মৃত্যুঞ্জয়ী বিশ্বাসে ভর করেই রাজপথে পুলিশের লাঠির ঘা খেয়ে পিছিয়ে আসেননি অসংখ্য ছাত্রছাত্রী৷
দেশের সীমানা পেরিয়ে ভিনদেশে সেই মেয়েটির মৃত্যুতে সমাপ্ত হল যন্ত্রণা আর অপচয়ের একটা সংক্ষিপ্ত অধ্যায়৷
আরও ভাল চিকিত্সার জন্য বুধবার গভীর রাতে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল দিল্লির গণধর্ষিতা তরুণীকে৷ কিন্ত্ত শুক্রবার রাত সোয়া দু'টো নাগাদ চিকিত্সকদের চেষ্টা ব্যর্থ করে মৃত্যু হল সেই মেয়েটির৷ শুক্রবার সকাল থেকেই শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছিল তাঁর৷ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ফলে তার মস্তিষ্কে জল জমা শুরু হয়েছিল আগেই৷ প্রায় সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গও কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল৷ মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের সিইও কেলভিন লো এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, মৃত্যুর সময় ওই তরুণীর পাশে ছিলেন তাঁর মা বাবা ও ভারতীয় হাইকমিশনের সদস্যরা৷ সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে অটোপ্সির পর এয়ার ইন্ডিয়ার বিশেষ চার্টার্ড বিমানে মেয়েটির দেহ দেশে ফিরিয়ে আনা হয়৷ রাত সাড়ে ন'টা নাগাদ সিঙ্গাপুর থেকে রওনা হয় বিমান৷ গভীর রাতে তার কফিনবন্দি দেহ পোঁছয় দিল্লি বিমানবন্দরে৷
তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে শুক্রবার দিন ভর চরম উদ্বেগে কাটিয়েছে গোটা দেশ৷ তাঁর মৃত্যুর খবরে ফের প্রতিবাদে গোটা রাজধানী উত্তাল হয়ে উঠতে পারে আঁচ করেই কড়া নিরাপত্তার ঘেরাটোপে মুড়ে ফেলা হয় দিল্লিকে৷ শনিবার সকাল থেকেই ইন্ডিয়া গেট চত্বরে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষেধ করে দেওয়া হয়৷ বন্ধ করে দেওয়া হয় দশটি মেট্রো স্টেশন৷ কিন্ত্ত প্রতিবাদ ঠেকানো যায়নি তাতে৷ সকাল থেকে মুখে কালো কাপড় বেঁধে মৌন মিছিল পৌঁছে যায় যন্তরমন্তরে৷ চোখের জলে নীরব প্রতিবাদে সামিল হয়েছে সব বয়সের মানুষ৷ উত্তরপ্রদেশের এই প্যারামেডিক্যাল ছাত্রীর মৃত্যুর পর আত্মীয় বিয়োগের যন্ত্রণায় স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে এত দিনের তীব্র বিক্ষোভ৷
মানুষের প্রতিবাদে সামিল হতে গিয়ে চরম অপমানিত হয়ে যন্তরমন্তর থেকে ফিরতে হয়েছে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতকে৷ জনতার ধিক্কারে ফিরে যেতে হয় সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি ও বৃন্দা কারাটকেও৷ প্রধানমন্ত্রী বিবৃতি দিয়ে অভিযুক্তদের দ্রুত শাস্তির আশ্বাস দিয়েছেন৷ মা হিসেবে সাধারণ মানুষের যন্ত্রণা তিনি বোঝেন, জানিয়েছেন সনিয়া গান্ধী৷ 'দেশের এই সাহসী কন্যার এমন নিষ্ঠুর মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী তাদের দ্রুত শাস্তি হবে' - বলেছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ও৷ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত স্বীকার করেছেন এই ঘটনা তাঁর কাছে 'চরম লজ্জার'৷
কিন্ত্ত রাজনীতিবিদদের এই আশ্বাস ও দুঃখপ্রকাশ নিয়ে শনিবার মাথা ঘামায়নি কেউ৷ ধর্ষিতা তরুণীর মৃত্যুর ফলে অভিযুক্ত ছয় জনের বিরুদ্ধেই খুনের মামলা দায়ের করেছে পুলিশ৷ মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে বলে এ দিনও জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্ডে৷ কিন্ত্ত সাধারণ মানুষের মনোভাব আঁচ করেই গোটা দিল্লি জুড়ে হাই অ্যালার্ট জারি করে পুলিশ প্রশাসনকে সতর্ক রেখেছে সরকার৷
রবিবার নৃশংস অত্যাচারের তিন দিন পর সফদরজঙ্গ হাসপাতালে মায়ের সঙ্গে প্রথমবার দেখা হয়েছিল ওই তরুণীর৷ সে দিন মায়ের কাছে বেঁচে থাকার আকুল আর্তি জানিয়েছিলেন ওই তরুণী৷ তাঁর সুস্থ হয়ে ওঠার প্রার্থনায় সামিল হয়েছিল গোটা দেশ৷ তাঁর উপর হওয়া নারকীয় অত্যাচারকে সামনে রেখে বহুকাল পর গর্জে উঠেছিল ঘুমিয়ে থাকা সমাজ৷ তাঁর মৃত্যুঞ্জয়ী বিশ্বাসে ভর করেই রাজপথে পুলিশের লাঠির ঘা খেয়ে পিছিয়ে আসেননি অসংখ্য ছাত্রছাত্রী৷
দেশের সীমানা পেরিয়ে ভিনদেশে সেই মেয়েটির মৃত্যুতে সমাপ্ত হল যন্ত্রণা আর অপচয়ের একটা সংক্ষিপ্ত অধ্যায়৷
আমার মুক্তি
আমরা কেন হাত গুটিয়ে থাকলাম আর গোটা ব্যবস্থাটা পচে গেল? প্রতিবাদ জিনিসটাই একটা ভোঁতা অস্ত্র হয়ে ওঠার আগেই আমরা কেন প্রতিবাদ করিনি? প্রশ্ন তুলেছেন প্রীতীশ নন্দী
খারাপ খবর পড়তে পড়তে আমি ক্লান্ত৷ গত কয়েকটা বছর যেন একটা দুঃস্বপ্ন৷ প্রতিদিন সকালে খবর পড়া মানেই রাগ, হতাশা, আশঙ্কা৷ শেষে খবরের কাগজ পড়াই বন্ধ করে দিলাম৷ দুর্নীতি, হত্যা, ডাকাতি, দাঙ্গা, নারী নির্যাতন, জঙ্গি হানা, বোমাবাজি, ধর্ষণ, লুঠ, পরিবারের 'ইজ্জত' বাঁচাতে হত্যা- কাঁহাতক আর পড়া যায়! তাই সিদ্ধান্ত নিলাম যেখান থেকেই যাওয়ার ডাক আসবে, তত্ক্ষণাত্ যাব৷ দৈনিক এই সংবাদপ্রবাহ থেকে বাঁচতে৷ ঠিক করলাম টিভি-তে খবর দেখাই বন্ধ করে দেব৷ দেখব অসহ্য রকম বোরিং 'রিয়্যালিটি শো'৷ এমনকী বীভত্স ভূতপ্রেতের গপ্পো বা এর-ওর কেচ্ছার মতো ছাইভস্মও দেখব মন দিয়ে৷ যা যা করলে আনন্দে থাকা যায়, সবগুলো চেষ্টা করে দেখেছি৷ একটাই কারণে৷ স্রেফ তিক্ত একটা সত্যের মুখোমুখি হব না বলে৷
কী সত্য?
আমার দেশটা কোথায় চলেছে? সেই ভয়ঙ্কর সত্য! স্বীকার করছি সিনেমা হলে জাতীয় সঙ্গীত বাজার সময় অনেক সময় উঠে দাঁড়াতেও ইচ্ছে করেনি৷ যদি নিজের দেশ সম্পর্কে গর্ববোধই না-করি, তা হলে এই তামাশার অর্থ কী?
আসলে পুরো ব্যবস্থার মধ্যেই একটা বড় গলদ রয়ে গেছে৷ মানুষের উপর দেশপ্রেম জোর করে আরোপ করা যায় না৷ ব্যাপারটা নিজের ভিতর থেকে আসতে হয়৷ একটা সময় ছিল যখন তেরঙা পতাকা উড়ছে দেখলে বা জাতীয় সঙ্গীত শুনলে গর্বে বুকটা আরও একটু চওড়া হয়ে যেত৷ আমাদের জীবন থেকে সেই গৌরববোধটাই হারিয়ে গিয়েছে৷ থেকে গিয়েছে একটা হাঁ করা ফাটল, আর একটা জ্বলন্ত ক্রোধ৷
চারপাশের সব কিছু নিয়ে আমরা ক্ষিন্ত৷ সব থেকে বড় কথা, আমরা নিজেদের উপরেই ক্ষিন্ত৷ এত দিন ধরে আমরা কেন হাত গুটিয়ে থাকলাম আর গোটা ব্যবস্থাটা পচে গেল? কেন আমরা এত দিন অন্ধ ছিলাম? প্রতিবাদ জিনিসটাই একটা ভোঁতা অস্ত্র হয়ে ওঠার আগেই আমরা কেন প্রতিবাদ করিনি?
নিশ্চিত, কোথাও কোনও একটা বড় মাপের ভুল হয়েছে৷ আর সেই পচনের শুরু আমার মধ্যে৷ আপনার মধ্যে৷ এই পচনকে যদি রুখতে চাই, তা হলে আমাদের প্রত্যেককে উঠে দাঁড়াতে হবে৷ প্রতিরোধের জন্য৷ ফিরিয়ে আনতে হবে আমাদের ভারতকে৷ ফিরিয়ে আনতে হবে রাজনৈতিক নেতাদের গ্রাস থেকে৷ সেই সব ব্যবসায়ীর কবল থেকে যাঁরা ভারতের মুখে লেপে দিয়েছেন লজ্জা, বদনামের কলঙ্ক৷
অবশ্যই, সংবাদমাধ্যমের হাত থেকেও বটে৷ সেই সব ধ্বংসের গণত্কারদের থেকে যাঁরা সারাক্ষণ আমাদের স্বপ্নের মৃত্যু নিয়ে গলাবাজি করছেন৷ নতুন করে আবিষ্কার করতে হবে আশা৷ ফের খুঁজে পেতে হবে আমাদের স্বপ্ন৷ প্রতিটি আনাচে কানাচে খুঁজে দেখতে হবে কোথায় সৌন্দর্য, মেধা, বিশ্বাস ও আশার খোঁজ মেলে৷ পুনরুদ্ধার করতে হবে আমাদের কল্পনাকে৷ নিজেদেরই চ্যালেঞ্জ জানাতে হবে৷ চারদিকে ভরসার এত অভাব যে সেই আবহকে কাটিয়ে ওঠার জন্য এই কাজটা না-করলে উপায় নেই৷ যে সাহসকে আমরা তাত্ক্ষণিক সাফল্যের মোহে অবহেলা করেছি, তাকেও তো ফিরিয়ে আনা জরুরি৷
জীবন তো আর ম্যাগি'র নুডলস নয়৷ আমাদের চার দিকে ছড়িয়ে থাকা সমস্যার কোনও চটজলদি সমাধান নেই৷ কিন্ত্ত সেই সব সমস্যা কাটিয়ে ওঠার রাস্তা আছে৷ অন্ধ রাগের মধ্যে সেই পথের খোঁজ মেলা কঠিন৷ তা হলে কোথায় মিলবে?
মিলবে আমাদের সেই ক্ষমতায়, যার মাধ্যমে আমরা হতাশা এবং আক্রোশের যুগ্ম প্রকোপটা পেরিয়ে যেতে পারি৷ মিলবে সেই সব সদর্থক চেষ্টায় যা দিয়ে বাস্তব সমাধানের হদিস পাওয়া যায়৷ কী করে পাবেন? উত্তরটা সহজ৷
এক, চুপ করে থাকবেন না৷ অন্যায় বরদাস্ত করবেন না৷ যখন দেখবেন কেউ অন্যায় করছে, মুখ ঘুরিয়ে চলে যাবেন না৷ নিজের মধ্যেই সাহস খুঁজুন৷ ভারতীয় হিসেবে গর্বিত বোধ করার সেটাই প্রথম পদক্ষেপ৷ নির্ভয় হোন৷
পরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলো এর থেকেই উঠে আসবে৷ আপনার স্বাধীনতাটুকু ফিরিয়ে আনুন৷ আজকাল, ধীরে ধীরে আমরা সেই বস্ত্তটি হারিয়ে ফেলেছি৷ হারিয়ে ফেলেছি কাদের সামনে? এক, এমন এক সরকারের সামনে যারা প্রত্যেকটি দুর্নীতির পরে ভয়ে ভয়ে পিঠ বাঁচানোর চেষ্টা করছে৷ দুই, চোখ-গরম-করা কিছু চরমপন্থী, প্রান্তিক গোষ্ঠীর সামনে৷ তিন, কিছু উন্মাদ আর দুর্বৃত্তের সামনে৷ চার, নৈতিকতার সেই সব ধ্বজাধারীর সামনে যাঁরা ঠিক করে দিতে চান আমরা কী বলব, কী পড়ব, কী শুনব, কী পরব, কী খাব৷ ছয়, রাজনৈতিক বিরোধীদের সামনে যাঁরা নিজেদের নৈতিক মানদণ্ড হারিয়ে ফেলেছেন৷ সাত, এমন কিছু গোষ্ঠীর সামনে যাঁরা জাতপাত বা তথাকথিত 'ইজ্জত' নিয়ে হত্যাকে সমর্থন করে দেশটাকে অষ্টাদশ শতাব্দীতেই রেখে দিতে চান৷ আট, এমন এক সংবাদ মাধ্যমের সামনে যাদের গরিষ্ঠ অংশই সাহস হারিয়ে নতজানু৷ এই তো সময় উঠে দাঁড়ানোর, আমাদের স্বাধীনতাকে ফিরিয়ে আনার৷ যখনই কেউ কোনও কার্টুন, টুইট বা ফেসবুক-এর কিছু লেখা, কোনও বই, গান, ব্লগ বা ছবির জন্য কারারুদ্ধ হবেন, যখনই কারও 'অনুভূতি' আহত হওয়ার জন্য ফিল্ম থেকে কোনও দৃশ্য কাটা হবে, মনে রাখবেন আমাদেরই একটি অংশের মৃত্যু হল৷
কারণ, আমরা যা যা বিশ্বাস করি, সে সব মিলিয়েই ভারত৷ একটি সামগ্রিকতা৷
সেই সব বিশ্বাস যতই পরস্পরবিরোধী হোক, কারওকে বাদ দেওয়া যাবে কি?
খারাপ খবর পড়তে পড়তে আমি ক্লান্ত৷ গত কয়েকটা বছর যেন একটা দুঃস্বপ্ন৷ প্রতিদিন সকালে খবর পড়া মানেই রাগ, হতাশা, আশঙ্কা৷ শেষে খবরের কাগজ পড়াই বন্ধ করে দিলাম৷ দুর্নীতি, হত্যা, ডাকাতি, দাঙ্গা, নারী নির্যাতন, জঙ্গি হানা, বোমাবাজি, ধর্ষণ, লুঠ, পরিবারের 'ইজ্জত' বাঁচাতে হত্যা- কাঁহাতক আর পড়া যায়! তাই সিদ্ধান্ত নিলাম যেখান থেকেই যাওয়ার ডাক আসবে, তত্ক্ষণাত্ যাব৷ দৈনিক এই সংবাদপ্রবাহ থেকে বাঁচতে৷ ঠিক করলাম টিভি-তে খবর দেখাই বন্ধ করে দেব৷ দেখব অসহ্য রকম বোরিং 'রিয়্যালিটি শো'৷ এমনকী বীভত্স ভূতপ্রেতের গপ্পো বা এর-ওর কেচ্ছার মতো ছাইভস্মও দেখব মন দিয়ে৷ যা যা করলে আনন্দে থাকা যায়, সবগুলো চেষ্টা করে দেখেছি৷ একটাই কারণে৷ স্রেফ তিক্ত একটা সত্যের মুখোমুখি হব না বলে৷
কী সত্য?
আমার দেশটা কোথায় চলেছে? সেই ভয়ঙ্কর সত্য! স্বীকার করছি সিনেমা হলে জাতীয় সঙ্গীত বাজার সময় অনেক সময় উঠে দাঁড়াতেও ইচ্ছে করেনি৷ যদি নিজের দেশ সম্পর্কে গর্ববোধই না-করি, তা হলে এই তামাশার অর্থ কী?
আসলে পুরো ব্যবস্থার মধ্যেই একটা বড় গলদ রয়ে গেছে৷ মানুষের উপর দেশপ্রেম জোর করে আরোপ করা যায় না৷ ব্যাপারটা নিজের ভিতর থেকে আসতে হয়৷ একটা সময় ছিল যখন তেরঙা পতাকা উড়ছে দেখলে বা জাতীয় সঙ্গীত শুনলে গর্বে বুকটা আরও একটু চওড়া হয়ে যেত৷ আমাদের জীবন থেকে সেই গৌরববোধটাই হারিয়ে গিয়েছে৷ থেকে গিয়েছে একটা হাঁ করা ফাটল, আর একটা জ্বলন্ত ক্রোধ৷
চারপাশের সব কিছু নিয়ে আমরা ক্ষিন্ত৷ সব থেকে বড় কথা, আমরা নিজেদের উপরেই ক্ষিন্ত৷ এত দিন ধরে আমরা কেন হাত গুটিয়ে থাকলাম আর গোটা ব্যবস্থাটা পচে গেল? কেন আমরা এত দিন অন্ধ ছিলাম? প্রতিবাদ জিনিসটাই একটা ভোঁতা অস্ত্র হয়ে ওঠার আগেই আমরা কেন প্রতিবাদ করিনি?
নিশ্চিত, কোথাও কোনও একটা বড় মাপের ভুল হয়েছে৷ আর সেই পচনের শুরু আমার মধ্যে৷ আপনার মধ্যে৷ এই পচনকে যদি রুখতে চাই, তা হলে আমাদের প্রত্যেককে উঠে দাঁড়াতে হবে৷ প্রতিরোধের জন্য৷ ফিরিয়ে আনতে হবে আমাদের ভারতকে৷ ফিরিয়ে আনতে হবে রাজনৈতিক নেতাদের গ্রাস থেকে৷ সেই সব ব্যবসায়ীর কবল থেকে যাঁরা ভারতের মুখে লেপে দিয়েছেন লজ্জা, বদনামের কলঙ্ক৷
অবশ্যই, সংবাদমাধ্যমের হাত থেকেও বটে৷ সেই সব ধ্বংসের গণত্কারদের থেকে যাঁরা সারাক্ষণ আমাদের স্বপ্নের মৃত্যু নিয়ে গলাবাজি করছেন৷ নতুন করে আবিষ্কার করতে হবে আশা৷ ফের খুঁজে পেতে হবে আমাদের স্বপ্ন৷ প্রতিটি আনাচে কানাচে খুঁজে দেখতে হবে কোথায় সৌন্দর্য, মেধা, বিশ্বাস ও আশার খোঁজ মেলে৷ পুনরুদ্ধার করতে হবে আমাদের কল্পনাকে৷ নিজেদেরই চ্যালেঞ্জ জানাতে হবে৷ চারদিকে ভরসার এত অভাব যে সেই আবহকে কাটিয়ে ওঠার জন্য এই কাজটা না-করলে উপায় নেই৷ যে সাহসকে আমরা তাত্ক্ষণিক সাফল্যের মোহে অবহেলা করেছি, তাকেও তো ফিরিয়ে আনা জরুরি৷
জীবন তো আর ম্যাগি'র নুডলস নয়৷ আমাদের চার দিকে ছড়িয়ে থাকা সমস্যার কোনও চটজলদি সমাধান নেই৷ কিন্ত্ত সেই সব সমস্যা কাটিয়ে ওঠার রাস্তা আছে৷ অন্ধ রাগের মধ্যে সেই পথের খোঁজ মেলা কঠিন৷ তা হলে কোথায় মিলবে?
মিলবে আমাদের সেই ক্ষমতায়, যার মাধ্যমে আমরা হতাশা এবং আক্রোশের যুগ্ম প্রকোপটা পেরিয়ে যেতে পারি৷ মিলবে সেই সব সদর্থক চেষ্টায় যা দিয়ে বাস্তব সমাধানের হদিস পাওয়া যায়৷ কী করে পাবেন? উত্তরটা সহজ৷
এক, চুপ করে থাকবেন না৷ অন্যায় বরদাস্ত করবেন না৷ যখন দেখবেন কেউ অন্যায় করছে, মুখ ঘুরিয়ে চলে যাবেন না৷ নিজের মধ্যেই সাহস খুঁজুন৷ ভারতীয় হিসেবে গর্বিত বোধ করার সেটাই প্রথম পদক্ষেপ৷ নির্ভয় হোন৷
পরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলো এর থেকেই উঠে আসবে৷ আপনার স্বাধীনতাটুকু ফিরিয়ে আনুন৷ আজকাল, ধীরে ধীরে আমরা সেই বস্ত্তটি হারিয়ে ফেলেছি৷ হারিয়ে ফেলেছি কাদের সামনে? এক, এমন এক সরকারের সামনে যারা প্রত্যেকটি দুর্নীতির পরে ভয়ে ভয়ে পিঠ বাঁচানোর চেষ্টা করছে৷ দুই, চোখ-গরম-করা কিছু চরমপন্থী, প্রান্তিক গোষ্ঠীর সামনে৷ তিন, কিছু উন্মাদ আর দুর্বৃত্তের সামনে৷ চার, নৈতিকতার সেই সব ধ্বজাধারীর সামনে যাঁরা ঠিক করে দিতে চান আমরা কী বলব, কী পড়ব, কী শুনব, কী পরব, কী খাব৷ ছয়, রাজনৈতিক বিরোধীদের সামনে যাঁরা নিজেদের নৈতিক মানদণ্ড হারিয়ে ফেলেছেন৷ সাত, এমন কিছু গোষ্ঠীর সামনে যাঁরা জাতপাত বা তথাকথিত 'ইজ্জত' নিয়ে হত্যাকে সমর্থন করে দেশটাকে অষ্টাদশ শতাব্দীতেই রেখে দিতে চান৷ আট, এমন এক সংবাদ মাধ্যমের সামনে যাদের গরিষ্ঠ অংশই সাহস হারিয়ে নতজানু৷ এই তো সময় উঠে দাঁড়ানোর, আমাদের স্বাধীনতাকে ফিরিয়ে আনার৷ যখনই কেউ কোনও কার্টুন, টুইট বা ফেসবুক-এর কিছু লেখা, কোনও বই, গান, ব্লগ বা ছবির জন্য কারারুদ্ধ হবেন, যখনই কারও 'অনুভূতি' আহত হওয়ার জন্য ফিল্ম থেকে কোনও দৃশ্য কাটা হবে, মনে রাখবেন আমাদেরই একটি অংশের মৃত্যু হল৷
কারণ, আমরা যা যা বিশ্বাস করি, সে সব মিলিয়েই ভারত৷ একটি সামগ্রিকতা৷
সেই সব বিশ্বাস যতই পরস্পরবিরোধী হোক, কারওকে বাদ দেওয়া যাবে কি?
কথাই যথেষ্ট?
নারীর নিরাপত্তার দাবিতে উত্তাল রাজধানীতে দলমত নির্বিশেষে রাজনৈতিক নেতৃবর্গ সহসা নিদ্রাভঙ্গের হাব ভাব দেখাতে শুরু করেছেন৷ কেউ বার বার ক্ষমা চাইছেন৷ কেউ বা ধর্ষণের অপরাধে মৃত্যুদণ্ডর দাবিতে সংসদ তুলকালাম করছেন৷ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং আশ্বাস দিয়েছেন সরকার শীঘ্রই মহিলাদের নিরাপত্তার যাবতীয় ব্যবস্থা করবে৷ আবার বিরোধী পক্ষের কোনও কোনও নেতা ঘোলা জলে মাছ ধরার চেষ্টায় গোটা বিষয়টাকেই কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের চরম ব্যর্থতা বলে প্রমাণ করতে মরিয়া৷ রাজপথে জনসমক্ষে নারীর ওপর বর্বর আক্রমণ এই প্রথম নয়৷ খুব কম বড় শহরই আছে যেখানে কখনও এমন বর্বরতা দেখা যায়নি৷ এত বিপুল আকারে না হলেও এ ধরনের ঘটনার পর গণপ্রতিবাদও একেবারে নতুন কোনও ঘটনা নয়৷ দুর্ভাগ্যবশত, রাজনীতিবিদদের এই সব আশ্বাস, পারস্পরিক দোষারোপ এবং ক্ষমা প্রার্থনাও অত্যন্ত পুরনো৷ অথচ বাস্তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি৷ হয়নি এই কারণেই যে শুধুমাত্র প্রতিশোধের হুঙ্কার কিংবা বিনয়ে গদগদ বক্তৃতা দিয়ে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়৷ তার জন্য প্রয়োজন সুপরিকল্পিত ভাবে গোটা প্রশাসনিক ও বিচার ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো৷ এক, প্রশাসনিক স্তরে নারীর নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করাকে প্রাথমিক কর্তব্য হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে৷ দুই, দ্রুততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে যৌন নিগ্রহের সমস্ত অভিযোগের তদন্ত করতে হবে৷ এবং তিন, আদালতে যাতে এই সব মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি হয় তার ব্যবস্থা করতে হবে৷ বিশেষ বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে নয়, দেশ জুড়ে সর্বত্র এবং সর্বদা এই প্রশাসনিক ও বিচারব্যবস্থার তত্পরতা বজায় রাখাই সরকারের সব থেকে বড় কর্তব্য ও চ্যালেঞ্জ৷
নারী-সহ দেশের প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার প্রাথমিক দায়িত্ব পুলিশের৷ কিন্ত্ত বাস্তবে তা কার্যকর করতে হলে প্রয়োজন শক্তিশালী পুলিশ বাহিনী৷ বর্তমানে দেশজুড়ে চার লক্ষ কুড়ি হাজার পুলিশের পদ শূন্য৷ এ ছাড়া দেশের অসংখ্য 'ভি আই পি'-র নিরাপত্তায় নিযুক্ত বিপুল সংখ্যক পুলিশের হিসেব ধরলে দেখা যাবে প্রতি ৭৬১ জন নাগরিকের দায়িত্বে রয়েছেন মাত্র একজন পুলিশ কর্মী৷ এর উপর দুর্নীতি, কাজে অনীহা এবং এবং বিশেষ করে নারী নিগ্রহের তদন্তের ক্ষেত্রে এক ধরনের পুরুষতান্ত্রিক মনোবৃত্তি তো আছেই৷ তারও পরে আছে নানা বিধ রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের সমস্যা৷ ধর্ষণের বা অন্যান্য ধরনের নারী নিগ্রহের অভিযোগ দ্রুত তদন্তের ক্ষেত্রে পুলিশি গাফিলতি প্রায় প্রাত্যহিক ঘটনা৷ এর জন্যে উপরোক্ত সবকটি কারণই দায়ী৷ কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্যগুলি একত্রে পুলিশ বাহিনীকে উন্নত করার প্রচেষ্টা না করলে এমন বর্বর ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে বাধ্য৷ তবে প্রশাসনিক তত্পরতাই এ ক্ষেত্রে শেষ কথা নয়৷ অভিযুক্তকে আদালতে হাজির করা থেকে তার অপরাধী প্রমাণ হওয়া বা বেকসুর খালাস পাওয়ার মধ্যে এ দেশে দূরত্ব বিস্তর৷ ফলত, 'জাস্টিস ডিলেড ইজ জাস্টিস ডিনায়েড'-এর উদাহরণ ভুরি ভুরি৷ তা নেহাতই অকারণে নয় - দেশের বহু হাইকোর্টেই বিচারপতির আসন ৫০ শতাংশ শূন্য৷ কাজেই মামলার নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা খুবই স্বাভাবিক৷ সব মিলিয়ে যথা সময়ে দোষী ব্যক্তির সাজা না হওয়ার অর্থ সাধারণ ভাবে অপরাধীদের এক ধরনের প্ররোচনা দেওয়া৷ পুলিশ প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থার বিভিন্ন সমস্যার নিরসন খুব সহজ বিষয় নয়, বিশেষত যেহেতু কেন্দ্র ও সব কটি রাজ্যের মধ্যে সম্পূর্ণ ঐকমত্য ছাড়া তা সম্ভব নয়৷ এর জন্য যে রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন আশা করা যায় অবশেষে এ বার দেশবাসী তা সত্যিই দেখতে পাবে৷
নারী-সহ দেশের প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার প্রাথমিক দায়িত্ব পুলিশের৷ কিন্ত্ত বাস্তবে তা কার্যকর করতে হলে প্রয়োজন শক্তিশালী পুলিশ বাহিনী৷ বর্তমানে দেশজুড়ে চার লক্ষ কুড়ি হাজার পুলিশের পদ শূন্য৷ এ ছাড়া দেশের অসংখ্য 'ভি আই পি'-র নিরাপত্তায় নিযুক্ত বিপুল সংখ্যক পুলিশের হিসেব ধরলে দেখা যাবে প্রতি ৭৬১ জন নাগরিকের দায়িত্বে রয়েছেন মাত্র একজন পুলিশ কর্মী৷ এর উপর দুর্নীতি, কাজে অনীহা এবং এবং বিশেষ করে নারী নিগ্রহের তদন্তের ক্ষেত্রে এক ধরনের পুরুষতান্ত্রিক মনোবৃত্তি তো আছেই৷ তারও পরে আছে নানা বিধ রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের সমস্যা৷ ধর্ষণের বা অন্যান্য ধরনের নারী নিগ্রহের অভিযোগ দ্রুত তদন্তের ক্ষেত্রে পুলিশি গাফিলতি প্রায় প্রাত্যহিক ঘটনা৷ এর জন্যে উপরোক্ত সবকটি কারণই দায়ী৷ কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্যগুলি একত্রে পুলিশ বাহিনীকে উন্নত করার প্রচেষ্টা না করলে এমন বর্বর ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে বাধ্য৷ তবে প্রশাসনিক তত্পরতাই এ ক্ষেত্রে শেষ কথা নয়৷ অভিযুক্তকে আদালতে হাজির করা থেকে তার অপরাধী প্রমাণ হওয়া বা বেকসুর খালাস পাওয়ার মধ্যে এ দেশে দূরত্ব বিস্তর৷ ফলত, 'জাস্টিস ডিলেড ইজ জাস্টিস ডিনায়েড'-এর উদাহরণ ভুরি ভুরি৷ তা নেহাতই অকারণে নয় - দেশের বহু হাইকোর্টেই বিচারপতির আসন ৫০ শতাংশ শূন্য৷ কাজেই মামলার নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা খুবই স্বাভাবিক৷ সব মিলিয়ে যথা সময়ে দোষী ব্যক্তির সাজা না হওয়ার অর্থ সাধারণ ভাবে অপরাধীদের এক ধরনের প্ররোচনা দেওয়া৷ পুলিশ প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থার বিভিন্ন সমস্যার নিরসন খুব সহজ বিষয় নয়, বিশেষত যেহেতু কেন্দ্র ও সব কটি রাজ্যের মধ্যে সম্পূর্ণ ঐকমত্য ছাড়া তা সম্ভব নয়৷ এর জন্য যে রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন আশা করা যায় অবশেষে এ বার দেশবাসী তা সত্যিই দেখতে পাবে৷
অভূতপূর্ব জীবনীশক্তি শেষ
যতীন মেহতা
পারলাম না! এত চেষ্টা করেও বাঁচানো গেল না মেয়েটিকে৷ শুধু চিকিত্সাবিজ্ঞান নয়, মৃত্যুর কাছে হেরে গেল ওর অভূতপূর্ব জীবনীশক্তিও৷ সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে ওকে ভর্তি করে শুক্রবারই কলকাতায় ফিরলাম৷ ওই দিন সকাল দশটা নাগাদ শেষবার ওকে দেখেছি৷ আজ সকালেই দিল্লি ফেরার কথা ছিল আমার৷ কিন্ত্ত তার আগে শেষ রাতেই খবর পেলাম আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছে সেই মেয়ে৷ যে তীব্র সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে ওকে যেতে হচ্ছিল তাতে চিকিত্সক হিসেবে এই পরিণতি আমার কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল না৷ কিন্ত্ত এত তাড়াতাড়ি ওকে হারিয়ে ফেলব ভাবতে পারিনি৷
এখন দিল্লি পুলিশের কথা ভাবলে বিরক্ত লাগছে৷ সফদরজঙ্গ হাসপাতালে যখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছিল এই সাহসী মেয়েটা, তখন পুলিশ কী করেছে! একবার নয়, দু দু'বার ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে জবানবন্দি দিতে হল তাকে৷ দ্বিতীয়বার পুলিশ যাওয়ার পরই তো ওর স্বাস্থ্যের এতটা অবনতি হওয়ার শুরু৷ তার আগেই ওর তিন তিনটে অস্ত্রোপচার হয়েছে৷ দু'বার কার্ডিয়াক অ্যারেস্টও হয়েছে৷ ফলে ওর মস্তিষ্কের কোষগুলোর উপর এমনিতেই চাপ বাড়ছিল৷ তার মধ্যে পুলিশি জেরার এই ধকলটাই বোধহয় শেষ পর্যন্ত আর সামলাতে পারল না৷
সফদরজঙ্গ হাসপাতালে চিকিত্সকেরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন৷ সরকারি হাসপাতালে সব রকম অত্যাধুনিক জীবনদায়ী ব্যবস্থা তো ছিলই৷ কিন্ত্ত তার চেয়েও অনেক বেশি জরুরি ভূমিকা নিয়েছিল ওই মেয়েটির বেঁচে থাকার প্রবল ইচ্ছাশক্তি, যা নিরন্তর শক্তি জুগিয়েছে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকদেরও৷ দুর্ঘটনার পরও মারাত্মক জখম অবস্থায় ১৩টা দিন যে বাঁচার ইচ্ছেকে সম্বল করে যমের সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিল মেয়েটি, তা শেষ পর্যন্ত হার মানল রক্তে বিষক্রিয়ার (সেপটিসিমিয়ার) কাছে৷ তার জেরেই একে একে বিকল হয়ে গিয়েছে শরীরের সব ক'টা জরুরি অঙ্গ৷
দিল্লিতে ওর চিকিত্সায় কোনও ত্রুটি হয়েছে এমন কথা বলা যাবে না৷ কিন্ত্ত ওর শরীরের ক্ষতস্থানগুলোর যা অবস্থা আমি দেখেছি তাতে চিকিত্সক হিসেবে খুব বেশি আশাবাদী আমরা হতে পারিনি৷ আমাদের শরীরে অন্ত্রের মাপ হল ২৩ ফুট৷ ধর্ষকদের অমানুষিক অত্যচারের পর সেই অন্ত্রের মাত্র তিন ইঞ্চি অবশিষ্ট ছিল ওর শরীরে৷ গ্যাংগ্রিন হয়ে যাওয়ায় ধাপে ধাপে প্রায় সবটা অন্ত্রই বাদ দিতে বাধ্য হন চিকিত্সকেরা৷ এই অবস্থায় ও যে এত দিন ধরে লড়াই করে গিয়েছে সেটা ওর অবিশ্বাস্য মনের জোরেই৷
খুব আশা নিয়ে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ওকে পৌঁছে দিয়েছিলাম৷ পরিস্থিতি সঙ্কটজনক থাকলেও, আগের চেয়ে খারাপ হয়নি৷ ওখানকার বিশেষজ্ঞরা ওকে স্থিতিশীল করার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন৷ সিঙ্গাপুর থেকে দিল্লির ফিরতি উড়ান সরাসরি ছিল না বলে ভায়া কলকাতা হয়ে ফিরতে হল৷ শুক্রবার রাতেই দমদম পৌঁছেছিলাম৷ কিছুক্ষণ অন্তর অন্তর খবর পাচ্ছিলাম ওর৷ শুক্রবার সকালেও ঠিকঠাক ছিল সব কিছু৷ রক্তচাপও স্থিতিশীল৷ কিন্ত্ত সন্ধে থেকেই শেষের শুরু৷
ভোররাতে দুঃসংবাদটা পেয়ে মনটা অবশ হয়ে গিয়েছিল৷ আমাদের পেশায় এমন কত মৃত্যুই তো দেখতে হয়৷ কিন্ত্ত আজ সকাল থেকে বারবার ওর উজ্জ্বল নিষ্পাপ মুখটা মনে পড়ছে৷ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বাড়ি ফিরছি৷
(লেখক ক্রিটিক্যাল কেয়ার স্পেশ্যালিস্ট, ধর্ষিতা তরুণী যাঁর তত্ত্বাবধানে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে করে সিঙ্গাপুর পাড়ি দিয়েছিলেন)
পারলাম না! এত চেষ্টা করেও বাঁচানো গেল না মেয়েটিকে৷ শুধু চিকিত্সাবিজ্ঞান নয়, মৃত্যুর কাছে হেরে গেল ওর অভূতপূর্ব জীবনীশক্তিও৷ সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে ওকে ভর্তি করে শুক্রবারই কলকাতায় ফিরলাম৷ ওই দিন সকাল দশটা নাগাদ শেষবার ওকে দেখেছি৷ আজ সকালেই দিল্লি ফেরার কথা ছিল আমার৷ কিন্ত্ত তার আগে শেষ রাতেই খবর পেলাম আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছে সেই মেয়ে৷ যে তীব্র সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে ওকে যেতে হচ্ছিল তাতে চিকিত্সক হিসেবে এই পরিণতি আমার কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল না৷ কিন্ত্ত এত তাড়াতাড়ি ওকে হারিয়ে ফেলব ভাবতে পারিনি৷
এখন দিল্লি পুলিশের কথা ভাবলে বিরক্ত লাগছে৷ সফদরজঙ্গ হাসপাতালে যখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছিল এই সাহসী মেয়েটা, তখন পুলিশ কী করেছে! একবার নয়, দু দু'বার ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে জবানবন্দি দিতে হল তাকে৷ দ্বিতীয়বার পুলিশ যাওয়ার পরই তো ওর স্বাস্থ্যের এতটা অবনতি হওয়ার শুরু৷ তার আগেই ওর তিন তিনটে অস্ত্রোপচার হয়েছে৷ দু'বার কার্ডিয়াক অ্যারেস্টও হয়েছে৷ ফলে ওর মস্তিষ্কের কোষগুলোর উপর এমনিতেই চাপ বাড়ছিল৷ তার মধ্যে পুলিশি জেরার এই ধকলটাই বোধহয় শেষ পর্যন্ত আর সামলাতে পারল না৷
সফদরজঙ্গ হাসপাতালে চিকিত্সকেরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন৷ সরকারি হাসপাতালে সব রকম অত্যাধুনিক জীবনদায়ী ব্যবস্থা তো ছিলই৷ কিন্ত্ত তার চেয়েও অনেক বেশি জরুরি ভূমিকা নিয়েছিল ওই মেয়েটির বেঁচে থাকার প্রবল ইচ্ছাশক্তি, যা নিরন্তর শক্তি জুগিয়েছে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকদেরও৷ দুর্ঘটনার পরও মারাত্মক জখম অবস্থায় ১৩টা দিন যে বাঁচার ইচ্ছেকে সম্বল করে যমের সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিল মেয়েটি, তা শেষ পর্যন্ত হার মানল রক্তে বিষক্রিয়ার (সেপটিসিমিয়ার) কাছে৷ তার জেরেই একে একে বিকল হয়ে গিয়েছে শরীরের সব ক'টা জরুরি অঙ্গ৷
দিল্লিতে ওর চিকিত্সায় কোনও ত্রুটি হয়েছে এমন কথা বলা যাবে না৷ কিন্ত্ত ওর শরীরের ক্ষতস্থানগুলোর যা অবস্থা আমি দেখেছি তাতে চিকিত্সক হিসেবে খুব বেশি আশাবাদী আমরা হতে পারিনি৷ আমাদের শরীরে অন্ত্রের মাপ হল ২৩ ফুট৷ ধর্ষকদের অমানুষিক অত্যচারের পর সেই অন্ত্রের মাত্র তিন ইঞ্চি অবশিষ্ট ছিল ওর শরীরে৷ গ্যাংগ্রিন হয়ে যাওয়ায় ধাপে ধাপে প্রায় সবটা অন্ত্রই বাদ দিতে বাধ্য হন চিকিত্সকেরা৷ এই অবস্থায় ও যে এত দিন ধরে লড়াই করে গিয়েছে সেটা ওর অবিশ্বাস্য মনের জোরেই৷
খুব আশা নিয়ে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ওকে পৌঁছে দিয়েছিলাম৷ পরিস্থিতি সঙ্কটজনক থাকলেও, আগের চেয়ে খারাপ হয়নি৷ ওখানকার বিশেষজ্ঞরা ওকে স্থিতিশীল করার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন৷ সিঙ্গাপুর থেকে দিল্লির ফিরতি উড়ান সরাসরি ছিল না বলে ভায়া কলকাতা হয়ে ফিরতে হল৷ শুক্রবার রাতেই দমদম পৌঁছেছিলাম৷ কিছুক্ষণ অন্তর অন্তর খবর পাচ্ছিলাম ওর৷ শুক্রবার সকালেও ঠিকঠাক ছিল সব কিছু৷ রক্তচাপও স্থিতিশীল৷ কিন্ত্ত সন্ধে থেকেই শেষের শুরু৷
ভোররাতে দুঃসংবাদটা পেয়ে মনটা অবশ হয়ে গিয়েছিল৷ আমাদের পেশায় এমন কত মৃত্যুই তো দেখতে হয়৷ কিন্ত্ত আজ সকাল থেকে বারবার ওর উজ্জ্বল নিষ্পাপ মুখটা মনে পড়ছে৷ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বাড়ি ফিরছি৷
(লেখক ক্রিটিক্যাল কেয়ার স্পেশ্যালিস্ট, ধর্ষিতা তরুণী যাঁর তত্ত্বাবধানে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে করে সিঙ্গাপুর পাড়ি দিয়েছিলেন)
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি২
এর আগের পোস্টে পুরোটা আসেনি পরেরটুকু এখানে দেয়া হলঃ
অক্টোবর-নভেম্বর মাসে একের পর এক অনেক ঘটনা ঘটে গেল। বাংলাদেশের মানুষ তখন বিজয়ের আভাস পাচ্ছে। তাই তাদের মধ্যে উল্লাস এবং সংগ্রামকে তীব্র করার আয়োজন। অন্যদিকে শত্রুপক্ষও মরণ কামড়ের জন্য প্রস্তুত। রাজাকার, আলবদররা কুত্তার মত হন্যে হয়ে শিকার খুঁজছে।
৬ নভেম্বর গভীর রাতে আমাদের সহকর্মী ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শফি আহমেদকে আল-বদর ও পাকবাহিনী বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গেল। ছয়-সাতজন আলবদর ও একজন সুবেদারের নেতৃত্বে সাত আটজন খানসেনা একটি ট্রাকে করে এসে তাঁকে ধরে নিয়ে যায়। কিছুদূর যেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রজেক্ট অফিসের কাছে ট্রাকটি থামে। ট্রাক থেকে নামানো হয় জনাব শফিকে। জনাব শফির ভাষ্য: "আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ, আমি ক্লাশে পাকিস্তানবিরোধী কথাবার্তা বলে ছাত্রদের উত্তেজিত করি এবং পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করি। আমি তাদের ক্লাশে যোগদান করতে নিরুৎসাহিত করি। আমি ভারতের দালালী করি। আমি বাংলাদেশ আন্দোলনের সাথে পরোক্ষভাবে জড়িত। — যখন সবই অস্বীকার করে যাচ্ছি তখন সুবেদারটি আমার মুখে বুকে পিঠে মাথায় ক্রমাগত ঘুষি, কিল ইত্যাদি মারতে শুরু করেছে। তার সাথে সাথে চার পাঁচজন সিপাহী ও বদর বাহিনীর চার পাঁচজন যুবক এক সঙ্গে আমার ওপর হিংস্র হায়েনার মত ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিল, ঘুষি, লাথি, রাইফেলের বাট দিয়ে আঘাত এক সাথে আমার ওপর পড়তে থাকে। এক সময়ে আমার পা দুটো ট্রাকের ওপর তুলে দু'জন খানসেনা তা চেপে ধরে এবং আমার সারা শরীর মাটির দিকে ঝুলন্ত অবস্থায় রেখে ট্রাক চালিয়ে দেয়। এক সময় আমাকে উপুড় করে আমার মাথায় রাইফেলের নল ধরে গুলি করবে বলে ভয় দেখায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সমস্ত ছাত্র মুক্তিবাহিনীতে ছিল এবং যে সমস্ত শিক্ষক ও কর্মচারী পাকিস্তানবিরোধী তাদের নাম বলতে তারা আমাকে পীড়াপীড়ি করে।"
ওখান থেকে অত্যাচারের প্রথম পর্ব শেষ করে তারা আমাকে সেই ট্রাকে করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে — তখনকার ব্রিগেড হেড কোয়ার্টার্সে নিয়ে আসে। — কিছুক্ষণ পরই ক্যাপ্টেনের রুমে আমার ডাক পড়ল। ক্যাপ্টেন আমাকে জিজ্ঞেস করলো: আমার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ আনা হয়েছে তা সত্যি কিনা! আমি প্রাণের ভয়ে তা অস্বীকার করি। — বদর বাহিনীর সেই কমান্ডারকে তখন ডাকা হয়। সে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। সে ক্যাপ্টেনের সামনে আমাকে পাকিস্তানবিরোধী প্রচারণার দায়ে অভিযুক্ত করে। ক্যাপ্টেন তখন আমাকে মিথ্যেবাদী বলে কুৎসিৎ গালাগালি করে আমাকে শেষ করে ফেলার নির্দেশ দিল। — লেফটেন্যান্টটি তখন কয়েকজন খান সেনা ও বদর বাহিনীর সদস্য নিয়ে আমাকে গেস্ট হাউস সংলগ্ন নদীর পাড়ের বধ্যভূমিতে নিয়ে গেল। সেখানে তারা আমার পরনের গেঞ্জি ও সার্ট খুলে আমার হাত-পা বেঁধে ফেলে। আমাকে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হতে বলা হয়। বদর বাহিনীর একজন সদস্য বেয়নেট হাতে আমার দিকে এগিয়ে আসে। সে গর্বভরে জানায়, সে ইতিমধ্যে এখানে এই বেয়নেট দিয়ে আটজনকে শেষ করেছে। আমাকে নিয়ে তার সংখ্যা হবে নয়। আমার প্রতি তখন নানা কটুক্তি ও বিদ্রুপবাণ বর্ষিত হতে থাকে। সবই বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রতি কটাক্ষ। রাত ২-২৫ মিনিটে বলা হয় ২-৩০ মিনিটে আমার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে। আমি তখন নিশ্চিত মৃত্যুর মুখোমুখি। আর মাত্র পাঁচ মিনিট পরেই আমার জীবনপ্রদীপ নিভে যাবে। — আমার স্ত্রী ও একমাত্র ছেলে, যার বয়স তখন চার মাস — তাদের কথা মনে পড়তে থাকে। আমি তখন নিশ্চল। এর মধ্যে একজন খানসেনা একটি জ্বলন্ত সিগারেট আমার পিঠে ঠেসে ধরে। আমি যন্ত্রণায় কাতরিয়ে উঠি। ককাতে ককাতে লেফটেন্যান্টের কাছে সে রাতের মত প্রাণভিজ্ঞা চাই। কী মনে করে সে আমার প্রার্থনা মঞ্জুর করে। মনে হল যে পরের দিন সবাই ব্যাপারটি জানবে এবং চেষ্টা তদবির করলে হয়ত প্রাণে বেঁচেও যেতে পারি। আমাকে আবার ট্রাকে তোলা হল। চেয়ে দেখলাম ওপরে মুঠোমুঠো তারার হাতছানি এবং নিচে আমার পরিচিত ক্যাম্পাস ঝিমিয়ে আছে। মনটা বেদনায় ভরে গেল। সবই আমার অতি পরিচিত কিন্তু তাদের কিছু করার নেই।"
৭ই নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী ছাত্রাবাস ক্যান্টনমেন্টে আমার ওপর কয়েক দফা নির্মম নির্যাতন চলে। বেলা দুটোর সময় আমাকে একজন ক্যাপ্টেন এসে ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার্সে নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে একটি মুচলেকায় সই করতে বলা হয়। প্রাণরক্ষার আশায় আমি তাতে সই করি। বেলা তিনটা নাগাদ আমাকে ছেড়ে দেয়া হয়।"
এর কয়েক দিন পর একদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তর পশ্চিমের গ্রামটিতে যায় দুইজন আর্মি জোয়ান। এক গৃহস্থ বাড়িতে যেয়ে এক তরুণী বধূকে ধরে ফেলে। বউটি বুদ্ধি করে ওদের একটু বসতে বলে — বলে কাপড় বদলে আসি। ঘুরে অন্য দিক থেকে এসে একটি ধান রাখার মর্টকিসের আড়াল থেকে ধারালো দায়ের এক কোপে একজনের ধর নামিয়ে ফেলে। এই আকস্মিক আক্রমণে অন্যজন পালায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের ল্যাবরেটরী অ্যাটেনডেন্ট হাসান আলী সুদর্শন তরুণ। শত্রবুহ্যের মধ্যে থেকেও তিনি ছিলেন সহযোগী যোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে ছিল তার গোপন যোগাযোগ। পাকবাহিনীর গতিবিধি এবং প্রয়োজনীয় তথ্যাদি মুক্তিবাহিনীকে অবহিত করতেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি-নিবাস ছিল পাক সেনাদের ময়মনসিংহ সেক্টরের সদর দফতর। সোহরাওয়ার্দী এবং ফজলুল হক ছাত্রাবাস দু'টি ছিল ক্যান্টনমেন্ট। সর্বত্র সতর্ক দৃষ্টি নিয়ে ঘুরতেন হাসান। সংগ্রহ করতেন তথ্য। ময়মনসিংহে চরম আক্রমণের পূর্বে তার ওপর ভার পড়েছিল পাকসেনাদের অবস্থানের মানচিত্র সরবরাহের। কিন্তু সে কাজ তিনি সমাধা করতে পারেননি। ম্যাপসহ ধরা পড়েছেন কুখ্যাত আলবদরের হাতে। আলবদর বাহিনী তাকে সোপর্দ করে দেয় জল্লাদ খানসেনাদের নিকট। চরম অমানুষিক নির্যাতন করা হয় তার ওপর। খানসেনারা ক্রমাগত দু'দিন চাবুক মেরে জর্জরিত করে তাকে। অবশেষে ২১শে নভেম্বর অতিথি নিবাসের বধ্যভূমিতে গুলি করে তাকে হত্যা করে তার মৃতদেহ ভাসিয়ে দেয় ব্রহ্মপুত্রে।
এরপর ময়মনসিংহ ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার থেকে এলো এক নির্দেশনামা। বর্বর হানাদার বাহিনীর লেঃ কর্ণেল আমির মোহাম্মদ খানের স্বাক্ষর সম্বলিত শাস্তির পরোয়ানা।
রাষ্ট্রবিরোধী কার্জের জন্য শাস্তি। পাকিস্তান বিরোধীতার জন্য শাস্তি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বারোজন অধ্যাপক, কর্মচারী ও ছাত্রের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার নির্দেশ। এরা হলেন: পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ড. মোস্তফা হামিদ হোসেন। বাংলা বিভাগের অধ্যক্ষ অলি নওয়াজ, অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক, ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক এ, বি, এম নুরুল ইসলাম নাজমী, উদ্ভিদবিদ্যার অধ্যাপক আবদুল বাকী, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যক্ষ এ, আর, এম মাসুদ, ছাত্রনেতা (শহীদ) শামসুল হক তালুকদার, উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আবদুল হক, পরীক্ষাসমূহের নিয়ন্ত্রক মুহাম্মদ হোসেন, কৃষি শিক্ষা সম্প্রসারণ বিভাগের অধ্যাপক আবদুল হালিম। এ নির্দেশনামা জারি করা হয়েছিল ৩রা ডিসেম্বর। বিশ্ববিদ্যালয় তা এসে পৌঁছে ৬ই ডিসেম্বর।
ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে ব্যাপক যুদ্ধ। মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর সমন্বিত দুর্বার আক্রমণে ওরা ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন। দিশেহারা ও পশ্চাদপসরণে ব্যস্ত। তাই আমাদের এই ক'জন শিক্ষক-কর্মচারী বেঁচে গেলেন অলৌকিকভাবে। আর মুক্তিযোদ্ধা ছাত্রনেতা শামসুল হক শহীদ হয়েছিলেন অনেক আগেই।
এই নির্দেশ আসার অনেক আগেই তৎকালীন উপাচার্য আমীরুল ইসলামের নির্দেশে আমি ঢাকায় চলে আসি। এবং অক্টোবর নভেম্বর মাস ঢাকা ও আমার গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জ মহকুমার (বর্তমান জেলা) চারিগ্রামে থাকি। তিনি বলেছিলেন: "পালান। তা না হলে বাঁচাতে পারবো না। ঢাকায় এসে উঠি ধানমণ্ডির ৭২৭ নম্বর সাত মসজিদ রোডের শামসুল ইসলাম খানের বাড়িতে। তিনি আমার আত্মীয়। তাঁর সঙ্গে যেতাম জনাব আবুল মনসুর আহমদের বাড়িতে — ইসলাম সাহেব মনসুর সাহেবকে চাচা বলতেন। সেই সুবাদে তিনি আমাকে নাত জামাই ডাকতেন, তাঁর বাড়িতে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আতাউর রহমান খান সাহেবও আসতেন।
একদিন আতাউর রহমান খান ইন্দিরা গান্ধীর ভূমিকার কথা তুললেন। আবুল মনসুর আহমদ উত্তরে বলেন, "ওই মহিলা না হলে আমরা ইঁদুর বিড়ালের মতো মরে পচতাম বিশ্ব জানতো কিনা বলতে পারি না। তাঁকে আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। তিনি ব্যাপারটা সারা বিশ্বের দৃষ্টিতে এনেছেন।"
মোনায়েম খাঁকে হত্যা করার পর দিন মুক্তিসেনারা মির্জা গোলাম হাফিজ সাহেবকে নিউ মার্কেটের কাছে প্রায় ধরে ফেলেছিলো। তাঁর ড্রাইভার কোনো রকমে গাড়ি চালিয়ে জান বাঁচিয়ে আসতে সক্ষম হয়। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে, তিনি নিজ বাড়িতে না যেয়ে ইসলাম সাহেবের বাড়িতে আশ্রয় নেন। হাফিজ সাহেব ভুট্টোর দূত মাহমুদ আলী কাসুরীর সঙ্গে নিজ বাড়িতে সভা করে উপনির্বাচনের ব্যবস্থা সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে চেয়েছিলেন।
১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর আমীর আবদুল্লাহ খান নিয়াজী ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করছেন।
ডিসেম্বর মাসে ময়মনসিংহ ফিরি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্ল্যাটে না উঠে শহরের আকুয়া মাদ্রাসা কোয়ার্টার্সে আমার স্ত্রীর বড় ভাইয়ের বাসায় উঠি। ভারতীয় ও মুক্তিবাহিনীর বিক্রম ও বোমা বর্ষণ দেখি — জেনারেল মানেক'শ বঙ্গোপসাগরের তীরে সমবেত ও অন্যত্র পলায়নরত পাকিস্তান বাহিনীর প্রতি আত্মসমর্পণের ঘোষণা শুনি। ৯ ডিসেম্বর রাতে ব্রহ্মপুত্র পুল ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দিয়ে পাকিরা পালায়। ১০ তারিখে মুক্ত হয় ময়মনসিংহ।
লিখেছেন শামসুজ্জামান খান।
অক্টোবর-নভেম্বর মাসে একের পর এক অনেক ঘটনা ঘটে গেল। বাংলাদেশের মানুষ তখন বিজয়ের আভাস পাচ্ছে। তাই তাদের মধ্যে উল্লাস এবং সংগ্রামকে তীব্র করার আয়োজন। অন্যদিকে শত্রুপক্ষও মরণ কামড়ের জন্য প্রস্তুত। রাজাকার, আলবদররা কুত্তার মত হন্যে হয়ে শিকার খুঁজছে।
৬ নভেম্বর গভীর রাতে আমাদের সহকর্মী ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শফি আহমেদকে আল-বদর ও পাকবাহিনী বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গেল। ছয়-সাতজন আলবদর ও একজন সুবেদারের নেতৃত্বে সাত আটজন খানসেনা একটি ট্রাকে করে এসে তাঁকে ধরে নিয়ে যায়। কিছুদূর যেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রজেক্ট অফিসের কাছে ট্রাকটি থামে। ট্রাক থেকে নামানো হয় জনাব শফিকে। জনাব শফির ভাষ্য: "আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ, আমি ক্লাশে পাকিস্তানবিরোধী কথাবার্তা বলে ছাত্রদের উত্তেজিত করি এবং পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করি। আমি তাদের ক্লাশে যোগদান করতে নিরুৎসাহিত করি। আমি ভারতের দালালী করি। আমি বাংলাদেশ আন্দোলনের সাথে পরোক্ষভাবে জড়িত। — যখন সবই অস্বীকার করে যাচ্ছি তখন সুবেদারটি আমার মুখে বুকে পিঠে মাথায় ক্রমাগত ঘুষি, কিল ইত্যাদি মারতে শুরু করেছে। তার সাথে সাথে চার পাঁচজন সিপাহী ও বদর বাহিনীর চার পাঁচজন যুবক এক সঙ্গে আমার ওপর হিংস্র হায়েনার মত ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিল, ঘুষি, লাথি, রাইফেলের বাট দিয়ে আঘাত এক সাথে আমার ওপর পড়তে থাকে। এক সময়ে আমার পা দুটো ট্রাকের ওপর তুলে দু'জন খানসেনা তা চেপে ধরে এবং আমার সারা শরীর মাটির দিকে ঝুলন্ত অবস্থায় রেখে ট্রাক চালিয়ে দেয়। এক সময় আমাকে উপুড় করে আমার মাথায় রাইফেলের নল ধরে গুলি করবে বলে ভয় দেখায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সমস্ত ছাত্র মুক্তিবাহিনীতে ছিল এবং যে সমস্ত শিক্ষক ও কর্মচারী পাকিস্তানবিরোধী তাদের নাম বলতে তারা আমাকে পীড়াপীড়ি করে।"
ওখান থেকে অত্যাচারের প্রথম পর্ব শেষ করে তারা আমাকে সেই ট্রাকে করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে — তখনকার ব্রিগেড হেড কোয়ার্টার্সে নিয়ে আসে। — কিছুক্ষণ পরই ক্যাপ্টেনের রুমে আমার ডাক পড়ল। ক্যাপ্টেন আমাকে জিজ্ঞেস করলো: আমার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ আনা হয়েছে তা সত্যি কিনা! আমি প্রাণের ভয়ে তা অস্বীকার করি। — বদর বাহিনীর সেই কমান্ডারকে তখন ডাকা হয়। সে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। সে ক্যাপ্টেনের সামনে আমাকে পাকিস্তানবিরোধী প্রচারণার দায়ে অভিযুক্ত করে। ক্যাপ্টেন তখন আমাকে মিথ্যেবাদী বলে কুৎসিৎ গালাগালি করে আমাকে শেষ করে ফেলার নির্দেশ দিল। — লেফটেন্যান্টটি তখন কয়েকজন খান সেনা ও বদর বাহিনীর সদস্য নিয়ে আমাকে গেস্ট হাউস সংলগ্ন নদীর পাড়ের বধ্যভূমিতে নিয়ে গেল। সেখানে তারা আমার পরনের গেঞ্জি ও সার্ট খুলে আমার হাত-পা বেঁধে ফেলে। আমাকে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হতে বলা হয়। বদর বাহিনীর একজন সদস্য বেয়নেট হাতে আমার দিকে এগিয়ে আসে। সে গর্বভরে জানায়, সে ইতিমধ্যে এখানে এই বেয়নেট দিয়ে আটজনকে শেষ করেছে। আমাকে নিয়ে তার সংখ্যা হবে নয়। আমার প্রতি তখন নানা কটুক্তি ও বিদ্রুপবাণ বর্ষিত হতে থাকে। সবই বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রতি কটাক্ষ। রাত ২-২৫ মিনিটে বলা হয় ২-৩০ মিনিটে আমার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে। আমি তখন নিশ্চিত মৃত্যুর মুখোমুখি। আর মাত্র পাঁচ মিনিট পরেই আমার জীবনপ্রদীপ নিভে যাবে। — আমার স্ত্রী ও একমাত্র ছেলে, যার বয়স তখন চার মাস — তাদের কথা মনে পড়তে থাকে। আমি তখন নিশ্চল। এর মধ্যে একজন খানসেনা একটি জ্বলন্ত সিগারেট আমার পিঠে ঠেসে ধরে। আমি যন্ত্রণায় কাতরিয়ে উঠি। ককাতে ককাতে লেফটেন্যান্টের কাছে সে রাতের মত প্রাণভিজ্ঞা চাই। কী মনে করে সে আমার প্রার্থনা মঞ্জুর করে। মনে হল যে পরের দিন সবাই ব্যাপারটি জানবে এবং চেষ্টা তদবির করলে হয়ত প্রাণে বেঁচেও যেতে পারি। আমাকে আবার ট্রাকে তোলা হল। চেয়ে দেখলাম ওপরে মুঠোমুঠো তারার হাতছানি এবং নিচে আমার পরিচিত ক্যাম্পাস ঝিমিয়ে আছে। মনটা বেদনায় ভরে গেল। সবই আমার অতি পরিচিত কিন্তু তাদের কিছু করার নেই।"
৭ই নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী ছাত্রাবাস ক্যান্টনমেন্টে আমার ওপর কয়েক দফা নির্মম নির্যাতন চলে। বেলা দুটোর সময় আমাকে একজন ক্যাপ্টেন এসে ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার্সে নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে একটি মুচলেকায় সই করতে বলা হয়। প্রাণরক্ষার আশায় আমি তাতে সই করি। বেলা তিনটা নাগাদ আমাকে ছেড়ে দেয়া হয়।"
এর কয়েক দিন পর একদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তর পশ্চিমের গ্রামটিতে যায় দুইজন আর্মি জোয়ান। এক গৃহস্থ বাড়িতে যেয়ে এক তরুণী বধূকে ধরে ফেলে। বউটি বুদ্ধি করে ওদের একটু বসতে বলে — বলে কাপড় বদলে আসি। ঘুরে অন্য দিক থেকে এসে একটি ধান রাখার মর্টকিসের আড়াল থেকে ধারালো দায়ের এক কোপে একজনের ধর নামিয়ে ফেলে। এই আকস্মিক আক্রমণে অন্যজন পালায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের ল্যাবরেটরী অ্যাটেনডেন্ট হাসান আলী সুদর্শন তরুণ। শত্রবুহ্যের মধ্যে থেকেও তিনি ছিলেন সহযোগী যোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে ছিল তার গোপন যোগাযোগ। পাকবাহিনীর গতিবিধি এবং প্রয়োজনীয় তথ্যাদি মুক্তিবাহিনীকে অবহিত করতেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি-নিবাস ছিল পাক সেনাদের ময়মনসিংহ সেক্টরের সদর দফতর। সোহরাওয়ার্দী এবং ফজলুল হক ছাত্রাবাস দু'টি ছিল ক্যান্টনমেন্ট। সর্বত্র সতর্ক দৃষ্টি নিয়ে ঘুরতেন হাসান। সংগ্রহ করতেন তথ্য। ময়মনসিংহে চরম আক্রমণের পূর্বে তার ওপর ভার পড়েছিল পাকসেনাদের অবস্থানের মানচিত্র সরবরাহের। কিন্তু সে কাজ তিনি সমাধা করতে পারেননি। ম্যাপসহ ধরা পড়েছেন কুখ্যাত আলবদরের হাতে। আলবদর বাহিনী তাকে সোপর্দ করে দেয় জল্লাদ খানসেনাদের নিকট। চরম অমানুষিক নির্যাতন করা হয় তার ওপর। খানসেনারা ক্রমাগত দু'দিন চাবুক মেরে জর্জরিত করে তাকে। অবশেষে ২১শে নভেম্বর অতিথি নিবাসের বধ্যভূমিতে গুলি করে তাকে হত্যা করে তার মৃতদেহ ভাসিয়ে দেয় ব্রহ্মপুত্রে।
এরপর ময়মনসিংহ ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার থেকে এলো এক নির্দেশনামা। বর্বর হানাদার বাহিনীর লেঃ কর্ণেল আমির মোহাম্মদ খানের স্বাক্ষর সম্বলিত শাস্তির পরোয়ানা।
রাষ্ট্রবিরোধী কার্জের জন্য শাস্তি। পাকিস্তান বিরোধীতার জন্য শাস্তি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বারোজন অধ্যাপক, কর্মচারী ও ছাত্রের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার নির্দেশ। এরা হলেন: পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ড. মোস্তফা হামিদ হোসেন। বাংলা বিভাগের অধ্যক্ষ অলি নওয়াজ, অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক, ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক এ, বি, এম নুরুল ইসলাম নাজমী, উদ্ভিদবিদ্যার অধ্যাপক আবদুল বাকী, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যক্ষ এ, আর, এম মাসুদ, ছাত্রনেতা (শহীদ) শামসুল হক তালুকদার, উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আবদুল হক, পরীক্ষাসমূহের নিয়ন্ত্রক মুহাম্মদ হোসেন, কৃষি শিক্ষা সম্প্রসারণ বিভাগের অধ্যাপক আবদুল হালিম। এ নির্দেশনামা জারি করা হয়েছিল ৩রা ডিসেম্বর। বিশ্ববিদ্যালয় তা এসে পৌঁছে ৬ই ডিসেম্বর।
ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে ব্যাপক যুদ্ধ। মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর সমন্বিত দুর্বার আক্রমণে ওরা ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন। দিশেহারা ও পশ্চাদপসরণে ব্যস্ত। তাই আমাদের এই ক'জন শিক্ষক-কর্মচারী বেঁচে গেলেন অলৌকিকভাবে। আর মুক্তিযোদ্ধা ছাত্রনেতা শামসুল হক শহীদ হয়েছিলেন অনেক আগেই।
এই নির্দেশ আসার অনেক আগেই তৎকালীন উপাচার্য আমীরুল ইসলামের নির্দেশে আমি ঢাকায় চলে আসি। এবং অক্টোবর নভেম্বর মাস ঢাকা ও আমার গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জ মহকুমার (বর্তমান জেলা) চারিগ্রামে থাকি। তিনি বলেছিলেন: "পালান। তা না হলে বাঁচাতে পারবো না। ঢাকায় এসে উঠি ধানমণ্ডির ৭২৭ নম্বর সাত মসজিদ রোডের শামসুল ইসলাম খানের বাড়িতে। তিনি আমার আত্মীয়। তাঁর সঙ্গে যেতাম জনাব আবুল মনসুর আহমদের বাড়িতে — ইসলাম সাহেব মনসুর সাহেবকে চাচা বলতেন। সেই সুবাদে তিনি আমাকে নাত জামাই ডাকতেন, তাঁর বাড়িতে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আতাউর রহমান খান সাহেবও আসতেন।
একদিন আতাউর রহমান খান ইন্দিরা গান্ধীর ভূমিকার কথা তুললেন। আবুল মনসুর আহমদ উত্তরে বলেন, "ওই মহিলা না হলে আমরা ইঁদুর বিড়ালের মতো মরে পচতাম বিশ্ব জানতো কিনা বলতে পারি না। তাঁকে আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। তিনি ব্যাপারটা সারা বিশ্বের দৃষ্টিতে এনেছেন।"
মোনায়েম খাঁকে হত্যা করার পর দিন মুক্তিসেনারা মির্জা গোলাম হাফিজ সাহেবকে নিউ মার্কেটের কাছে প্রায় ধরে ফেলেছিলো। তাঁর ড্রাইভার কোনো রকমে গাড়ি চালিয়ে জান বাঁচিয়ে আসতে সক্ষম হয়। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে, তিনি নিজ বাড়িতে না যেয়ে ইসলাম সাহেবের বাড়িতে আশ্রয় নেন। হাফিজ সাহেব ভুট্টোর দূত মাহমুদ আলী কাসুরীর সঙ্গে নিজ বাড়িতে সভা করে উপনির্বাচনের ব্যবস্থা সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে চেয়েছিলেন।
১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর আমীর আবদুল্লাহ খান নিয়াজী ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করছেন।
ডিসেম্বর মাসে ময়মনসিংহ ফিরি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্ল্যাটে না উঠে শহরের আকুয়া মাদ্রাসা কোয়ার্টার্সে আমার স্ত্রীর বড় ভাইয়ের বাসায় উঠি। ভারতীয় ও মুক্তিবাহিনীর বিক্রম ও বোমা বর্ষণ দেখি — জেনারেল মানেক'শ বঙ্গোপসাগরের তীরে সমবেত ও অন্যত্র পলায়নরত পাকিস্তান বাহিনীর প্রতি আত্মসমর্পণের ঘোষণা শুনি। ৯ ডিসেম্বর রাতে ব্রহ্মপুত্র পুল ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দিয়ে পাকিরা পালায়। ১০ তারিখে মুক্ত হয় ময়মনসিংহ।
লিখেছেন শামসুজ্জামান খান।
১৯৭১ : পাকসেনাদের ধর্ষণ ও এর পরিণতি :: প্রতিদিন শত নারীর গর্ভপাত করিয়েছি : ডা. ডেভিস
০৫ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১০:৪৩ |
১৯৭১ : পাকসেনাদের ধর্ষণ ও এর পরিণতি :: প্রতিদিন শত নারীর গর্ভপাত করিয়েছি : ডা. ডেভিস
মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি বড় অস্ত্র ছিল পাকিস্তানি সেনা কর্তৃক বাঙালি নারীদের ধর্ষণ। এর ফলে অনেক নারী গর্ভবতী হয়ে পড়েন। জন্ম নেয় অনেক যুদ্ধশিশু। অনেক নারী বেছে নেন আত্মহত্যার পথ। অনেকে চেষ্টা চালান গর্ভপাত ঘটানোর। ধর্ষিতা নারীদের গর্ভপাত ঘটাতে চিকিৎসা সহায়তা দিতে ১৯৭২ সালে এগিয়ে আসেন অস্ট্রেলীয় চিকিৎসক ডা. জিওফ্রে ডেভিস। তিনি সে সময় দিনে ঢাকায় প্রায় একশ নারীর গর্ভপাতও ঘটিয়েছেন। ডা. জিওফ্রে ডেভিসের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অস্ট্রেলীয় ইতিহাস গবেষক ড. বিনা ডি কস্তা। তার ভিত্তিতেই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন মেহেদী হাসান স্বাধীন।
'আমি বাঁচাতে চেয়েছি সেসব শিশুদের, যাদের জন্ম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বন্দীশিবিরে কারারুদ্ধ থাকা বাঙালি নারীর গর্ভে।' এ কথা ডা. জিওফ্রে ডেভিস-এর।
১৯৭২ সালে অস্ট্রেলিয়ান এই চিকিৎসক বাংলাদেশে ছুটে আসেন মানবিক সহায়তা দিতে। সে সময় বহু নারীকে গর্ভপাত ঘটাতে সহায়তা করেন তিনি। ওইসব নারী পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী দ্বারা ধর্ষিত হয়েছিলেন। অনেকেই আটক ছিলেন বন্দীশিবিরে। ডা. ডেভিসের ওই সময়কার অভিজ্ঞতার ওপর ২০০২ সালে একটি সাক্ষাৎকার নেন ইতিহাস গবেষক অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ড. বিনা ডি কস্তা। তিনি অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত ইতিহাস বিষয়ক প্রবন্ধ-নিবন্ধকে আরো সমৃদ্ধ করতে বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত নারীদের ওপর গবেষণা চালান। আর ওই গবেষণার ধারাবাহিকতায় তিনি ডা. ডেভিসের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন।
ওই গবেষণা প্রবন্ধে বিনা ডি কস্তা ডা. ডেভিসকে ১৯৭১ সালে নির্যাতিত নারীদের অসহায়ত্ব ও দুর্ভোগের প্রামাণিক সাক্ষী হিসেবে উল্লেখ করেন। যার কাছ থেকে হানাদারবাহিনীর নির্যাতনের একটি মূল্যবান দলিল পাওয়া যাবে।
সাক্ষাৎকারটিতে বিভিন্ন বিষয় উঠে আসলেও মূলত পাক সেনাদের নারী ধর্ষণের ফলে পরবর্তীতে যে নেতিবাচক সামাজিক ও মানবিক প্রভাব পড়ে বাংলাদেশের সমাজে সেটাই তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন বিনা ডি কস্তা।
যে নারীরা ওই সময় ধর্ষিত হয়েছিলেন তারা পরবর্তীতে সামাজিকভাবে কী অবস্থার সম্মুখীন হয়েছিলেন? এ বিষয়টি বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পরও আড়ালে থেকে গেছে। জানা গেছে, সে সময় বন্দীশিবির থেকে মুক্ত হয়ে আসা নারীদের একটা বড় অংশই তখন গর্ভবতী হয়ে পড়েন। আর এ বিষয়টি একটা বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় নারীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে। অনেকেই বেছে নেন আত্মহত্যার পথ। তবে তাদের একটি বড় অংশ গর্ভপাত ঘটানোর চেষ্টা করেন। বিভিন্ন হাসপাতালে কিংবা সহায়তা কেন্দ্রে তখন উপচেপড়া ভিড়। আবার লোকলজ্জায় যারা আসতে ভয় পাচ্ছিলেন তাদের জন্য বিভিন্ন সংগঠন মানবিক সহায়তায় এগিয়ে আসে। খোলা হয়েছিল গর্ভপাত করানোর কেন্দ্র।
ডা. ডেভিস জানিয়েছেন, সে সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরেই এ ধরনের কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়। অন্তত যেসব শহরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী প্রবেশ করে। ডেভিস মূলত বোঝাতে চেয়েছেন দেশের এমন কোনো শহর নেই যেখানে এ সমস্যাটি তখন মোকাবেলা করতে হয়নি।
ডা. ডেভিসের অভিজ্ঞতায় আরো জানা গেছে, ওই সময় কেবল নারী ধর্ষণের বিষয়টিই মুখ্য ছিল না; যুদ্ধশিশু বিষয়টিও প্রধান হয়ে ওঠে। এসব যুদ্ধশিশুর লালন-পালনের ভার তুলে দেয়া যাচ্ছিল না কারো ওপর। সে সময় কয়েকটি সংগঠন এসব যুদ্ধশিশুদের ইউরোপে পাঠাতে তৎপর হয়ে ওঠে। কারণ সেখানে তাদের দেখভালের যথেষ্ট সুযোগ ছিল। আর যেসব হোমস ছিল সেখান থেকে বিভিন্ন দেশের মানুষ এসব যুদ্ধশিশু দত্তক নিতো।
যদিও যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ধর্ষণকে 'অস্ত্র' হিসেবে ব্যবহার করে। যা ভয়ঙ্কর রূপ পায় ১৯৭১-এর যুদ্ধে। ডা. ডেভিস বিনা ডি কস্তাকে জানান, এমন এক নারীর অভিজ্ঞতা আমার জানা আছে যাকে দীর্ঘদেহী পাঞ্জাবী সৈনিক দিয়ে বারবার ধর্ষণ করানো হয়েছিল। যাতে তিনি যন্ত্রণা পান এবং গর্ভবতী হয়ে পড়েন। আর এ আচরণ সবার ক্ষেত্রেই ওই সময় সত্য হয়ে ওঠে। তবে ডা. ডেভিস এও বলেন, যারা নির্যাতিত হয়েছেন তাদের স্বামীরা কিংবা পরিবারের সদস্যরা এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাইতো না। যেমনটি চাইতো না গর্ভে থাকা যুদ্ধশিশুর জন্ম হোক।
আরো অনেক কথা উঠে এসেছে ডা. ডেভিসের কথায়। সাক্ষাৎকারে ডেভিস বলেন, অপরিকল্পিত গর্ভধারণ রোধ করতে আমার টেকনিক্যাল জ্ঞান ছিল। আমি ইউকে থেকে প্রশিক্ষণ নিই। যদিও আমি বাংলাদেশে গর্ভধারণের ৩০ সপ্তাহের পরও গর্ভপাত ঘটিয়েছি।
ঢাকার কোন জায়গায় কাজ করেছিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান তিনি ধানম-ির কোনো একটি ক্লিনিকে কাজ করেছেন। তিনি বলেন, আমি দেশের অন্য শহরগুলোতেও কাজ করেছি যেখানে হাসপাতালের সুষ্ঠু কোনো ব্যবস্থা ছিল না। আমি সেখানকার অনেক মানুষকেই প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এরপর দেখলাম এ সংখ্যা (গর্ভবতী) আরো বেড়েই চলেছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা হাল ধরলে আমি সে স্থান ছেড়ে অন্য স্থানে ছুটে গেছি।
ডেভিস বলেন, আমি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের নারীদের পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনতে একটি সংস্থা গড়ে তুলি। যেটির ইনচার্জ ছিলেন বিচারপতি কে এম সোবহান। চেষ্টা করা হয়েছিল যুদ্ধে গর্ভবতী হয়ে পড়া নারীদের একত্রিত করার। যারা গর্ভপাত ঘটাতে চেয়েছেন তাদের সহায়তা করা, আর যারা শিশু জন্ম দিতে চেয়েছেন কিন্তু শিশুর দেখভালের দায়িত্ব নিতে চাননি তাদের শিশুগুলোকে ইন্টারন্যাশনাল সোস্যাল সার্ভিসে (আইএসএস) জড়ো করার চেষ্টা করেছি। বিচারপতি সোবহানই ওই সংগঠনের প্রধান ছিলেন, আরো একজন খুব অ্যাকটিভ ছিলেন। ভন ইস্কুক; আমি তার নামের প্রথম শব্দটি মনে করতে পারছি না। আমার মনে হয় তার স্ত্রীর নাম ছিল মেরি। তারা আর্থিকভাবে সহায়তা করেছিলেন। যে সব বাঙালি আমার সঙ্গে ছিলেন তাদের নাম মনে করতে পারছি না। সাধারণত এর আগে কেউ এ ধরনের ইতিহাস জানতে চায়নি।
ডেভিস আরো বলেন, এটা সবারই জানা কমনওয়েলথের সদস্য পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাবাহিনী তখন ইংল্যান্ড থেকে প্রশিক্ষিত। সুনাম অর্জন করেছে বিদেশেও। যা ব্রিটিশ সরকারকে তীব্র লজ্জায় ফেলে। অথচ এ বিষয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের প্রশাসকদের কোনো স্নায়বিক উত্তেজনাও ছিল না। আমি তাদের অনেকের সাক্ষাৎকার নিয়েছি। যাদের অনেকেই কুমিল্লার কারাগারে বন্দী ছিল। তাদের অনেকে বলছিল, এটা ছিল যুদ্ধ। যেখানে আমাদের জন্য সব বৈধ ছিল।
যুদ্ধ চলাকালে সৈনিকদের নারী ধর্ষণকে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ কিভাবে বৈধতা দিয়েছিল জানতে চাইলে ডা. ডেভিস বলেন, তারা জেনারেল টিক্কা খানের সমন পেয়েছিল। যেখানে নির্দিষ্ট করে দিকনির্দেশনা দেয়া ছিল। বলা হয়েছিল 'একজন ভালো মুসলমান' যে কারো বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারে; এ তালিকায় তার পিতাও বাদ পড়বে না। যার ফলে তারা বাঙালি নারীদের ধর্ষণে মত্ত হয়ে পড়েছিল। এটাই এ ঘটনার পেছনের মূল কারণ।
এভাবে ধর্ষণের পেছনে যুক্তি কী ছিল জানতে চাইলে তিনি তার মত ব্যক্ত করে বলেন, পাকিস্তানিরা চেয়েছিল পুরো পশ্চিমের আদলে একটি প্রজন্ম গড়ে উঠবে পূর্বে। যা তারা বলেছিলও। হয়তো এখানে তাদের দীর্ঘ কোনো পরিকল্পনা ছিল।
পাকিস্তান থেকে পাওয়া অনেক তথ্য থেকে জানা গেছে, পাকিস্তানিদের দাবি ধর্ষণের এ সংখ্যাকে অতিরঞ্জিত করা হয়েছে। আপনি কি মনে করেন এটি সত্যি? এ প্রশ্নের জবাবে ডেভিস বলেন, না। সম্ভবত এ সংখ্যাকে খুব সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে যা তারা ঘটিয়েছে। এর ব্যাখ্যা আসতে পারে তারা কয়টি শহর দখল করেছিল। তারা পদাতিক বাহিনীকে পশ্চাতে রেখে গোলন্দাজ বাহিনীকে পাঠিয়েছিল হাসপাতাল, স্কুলে শেল নিক্ষেপ করতে। আর এ কারণেই শহরে নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছিল। হয়েছিল বিশৃঙ্খলা। পদাতিক বাহিনী পরবর্তীতে প্রবেশ করায় তারা হয়তো নারীদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। এর মানে এ নয় যে তারা ধর্ষণে লিপ্ত হয়নি। শিশুদেরও তারা রেহাই দেয়নি। তাদের বুলেটের সামনে থেকে কেউ রক্ষা পায়নি। পদাতিক বাহিনী শহরের শেষ সম্বলও লুণ্ঠন করে। নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায়। নারী-শিশু ধর্ষণ করে। যারা তৎকালীন আওয়ামী পন্থী ছিলেন কিংবা মুক্তিযুদ্ধে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন তাদের তো কোনো রেহাই ছিল না। আর সে সময় মেয়েদেরকে পাহারারত অবস্থায় কম্পাউন্ডে আটকে রাখা হয় যাতে সৈনিকদের সরবরাহ করা যেতে পারে।
আপনি কি এমন কোনো নারী কিংবা পুরুষের সঙ্গে কথা বলেছেন যে ওই সময়ের যুদ্ধে সরাসরি অভিজ্ঞ। বিশেষ করে কোনো নারী যিনি বন্দিশিবিরে ধর্ষিত হয়েছেন? এ প্রশ্নের জবাবে ডেভিস বলেন, হ্যাঁ। আমরা প্রতিনিয়তই এ ধরনের ঘটনার বিবরণ শুনেছি। তারা বলতে গিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়তো। যেমন তারা জানিয়েছিল দীর্ঘদেহী পাঠান সৈনিকরা কিভাবে বারবার ধর্ষণ করতো। কিভাবে তাদের সেনাবাহিনীর কাছে পাঠানো হতো। সাধারণত ধনী পরিবারের কিংবা সুন্দরী নারীদের পাঠানো হতো উপরের সারির সেনা কর্মকর্তাদের কাছে। তারপর র্যাঙ্ক অনুযায়ী বিভিন্ন স্থান থেকে তুলে আনা মেয়েদের সরবরাহ করা হতো। ওই নারীদের পর্যাপ্ত খেতে দেয়া হতো না। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে ছিল না কোনো চিকিৎসার ব্যবস্থা। ফলে অনেকেই মারা যায় ওইসব ক্যাম্পে। আর এটি প্রমাণ করতে এমন অনেক নিদর্শনই সামনে উপস্থিত ছিল যা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু অবিশ্বাসীরাই গুজব উঠায়।
ডেভিস আরো বলেন, অনেকেই এখন বিষয়টিকে অস্বীকার করতে চেয়েছে। ভুলে যেতে চাইছে। ছুঁড়ে ফেলতে চাইছে ওই অধ্যায় যা তাদের জীবনে ঘটেছিল।
যুদ্ধপরবর্তী সময়ে কোনো বীরাঙ্গনা তাদের ওই অভিজ্ঞতা জানিয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে ডেভিস বলেন, না, কেউ এ বিষয়ে বলতে আগ্রহী হয়নি। তুমি প্রশ্ন করলে ঠিকই একটা জবাব পাবে। কিন্তু এটা পর্যাপ্ত নয় যা তারা স্মরণ করতে চাইতো না। কারণ পুরুষরাও এ বিষয়ে বলতে চায়নি।
ড. বিনা ডি কস্তার নেয়া ডা. ডেভিসের সাক্ষাৎকারের বাকি অংশ প্রশ্নোত্তর আকারে দেয়া হলো :
বিনা : আপনি অবশ্যই বাংলা বলতে পারতেন না। যোগাযোগের জন্য এটি কি খুব কঠিন হয়েছিল?
ডেভিস : না, আমার একজন দোভাষী ছিল। তারা খুব সহজেই সমাধান করতে পারতো। তারা আমাকে একজন দিকনির্দেশক, একজন ড্রাইভার এবং একজন মাঠকর্মীকে সঙ্গে দিয়েছিল। তারাও দোভাষীর কাজ চালিয়েছে। ড্রাইভারের নাম যতদূর মনে পড়ে মমতাজ। তবে মাঠ কর্মীর নাম মনে আসছে না। অবাক করা বিষয় সেখানকার একটা বড় অংশ ইংরেজি জানতো। যে সমস্যা আমি তিউনিসিয়ায় বোধ করেছি।
বিনা : আপনার মতে তারা (বাংলাদেশী নির্যাতিত নারীরা) কেন চুপ হয়ে যেত?
ডেভিস : কারণ আমরা ভিনদেশী ছিলাম। তারা আমাদের বিশ্বাস করে উঠতে পারেনি। তারা জানতোও না আমরা কী করতে যাচ্ছি।
বিনা : আপনি কি এমন কোনো এলাকা পরিদর্শন করেছিলেন যেখানে ধর্ষণ ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছিল?
ডেভিস : ওই ক্যাম্পগুলো গুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। আর রিহ্যাবিলিটেশন সংগঠন চেষ্টা করেছিল নির্যাতিত নারীদের তাদের গ্রামে-শহরে ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু ওইসব নির্যাতিত নারীদের স্বামী যা করেছিল তা উদ্বেগই বাড়াবে। তারা তাদের হত্যা করতে চেয়েছিল। কারণ ওই নারীরা পরিত্যাক্ত হয়েছিল এবং তাদের অনেকেই জানতো সত্যিকার অর্থে কী ঘটেছিল ওইসব বীরাঙ্গনাদের ওপর। তাদের অনেকেই দেহত্যাগ করেছিল যমুনায়।
বিনা : স্মরণ করতে পারেন কি কতোজন নারীর গর্ভপাত ঘটিয়েছিলেনে আপনি?
ডেভিস : এটি বলা খুবই কঠিন। কিন্তু দিনে কম হলেও ১০০ জন নারীকে।
বিনা : এটি ঢাকা নাকি বাংলাদেশের অন্য কোনো শহরে?
ডেভিস : এ বিষয়ে একটি সঠিক পরিসংখ্যান বের করা যে খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার তা বলার ব্যাখ্যা রাখে না। ঢাকায়ই যেখানে অন্তত ১০০ জন সেখানে অন্যান্য শহরের কথা আসলে সে সংখ্যা অনেক বড় আকার ধারণ করে। এছাড়া অনেকেই কলকাতা গিয়েছিলেন গর্ভপাত ঘটাতে।
বিনা : একটা শতকরা হিসাব কি বলতে পারেন? শ্রেণী ভিত্তিক কিংবা ধর্মীয় ভিত্তিক কতজন নারী হবেন?
ডেভিস : এটা সব শ্রেণীর ওপরই হয়েছিল। তাদের ধর্মীয় কিংবা শ্রেণীগতভাবে আলাদা করা যাবে না। সে সময় তাদের মূল সমস্যা সমাধানই আমাদের কর্তব্য ছিল। সাধারণত, অবশ্যই ধনীরা চটজলদি কলকাতা অভিমুখী হয়েছিলেন গর্ভপাত ঘটাতে।
বিনা : গর্ভপাত ঘটানোর বিষয়ে তারা কী জিজ্ঞেস করতো? কিংবা তাদের কি কোনো মতামত ছিল? কোনো পছন্দ?
ডেভিস : হ্যাঁ, কখনো। আমরা যাদের পেয়েছি তারা সবাই গর্ভপাত করানোর জন্যেই আসেন। অন্যদিকে, যারা জন্মদানের পক্ষ অবলম্বন করেছিল, যারা রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে আসে তাদের সংখ্যা কতো এ বিষয়ে আমার খুব একটা স্বচ্ছ ধারণা নেই।
বিনা : গর্ভপাত ঘটানোর সময় আপনি কি তাদের কাঁদতে দেখেছেন কিংবা দুঃখিত হতে?
ডেভিস : না, তারা কাঁদেনি। তবে তাদের মনে গভীর দাগ পড়েছিল এটা স্পষ্ট। তারা কেবল নিশ্চুপ ছিল।
বিনা : আপনি কি গর্ভধারণের একদম শেষ পর্যায়ের কোনো গর্ভপাত ঘটিয়েছেন? কিংবা কোনো অপরিপক্ক গর্ভধারণে?
ডেভিস : হ্যাঁ, আমি সেখানে যে ছয় মাস ছিলাম তার পুরো সময়ই এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছি। তারা ভীষণভাবে অপুষ্টিতে ভুগছিলো। ফলে দেখা গেছে ৪০ সপ্তাহের গর্ভবতী নারীর পেট ঠিক ১৮ সপ্তাহের গর্ভবতীর মাপের সমান।
বিনা : যারা সন্তান নিয়েছেন সেসব নারীদের আপনি কী কোনো উপদেশ দিয়েছেন?
ডেভিস : উপদেশ, হ্যাঁ রিহ্যাবিলিটেশন সংস্থায়। সেখানকার নারী কর্মীদের যারা নির্যাতিতদের সঙ্গে কথা বলতো। আমি মনে করি না এটা তাদের সহায়ক ছিল। কারণ তারা সবাই অপুষ্টিতে ভুগছিল, বিভন্ন রোগে আক্রান্ত ছিল। তাদের বেশিরভাগই যৌন রোগে আক্রান্ত ছিল। দেশটিতে খুবই কম সুবিধা ছিল। ওষুধপত্র সরঞ্জামাদির তীব্র অভাব ছিল। যার অনেক কিছু আমরা নিজেরাই সংগ্রহ করেছিলাম।
বিনা : আপনি কোথা থেকে সেগুলো আনিয়েছিলেন? তা কি পর্যাপ্ত ছিল?
ডেভিস : ইংল্যান্ড থেকে। আমি বলেছিলাম আমার নিজের আনা ব্যবস্থাপত্রের কথা। এছাড়া আমি দুই সেট যন্ত্রপাতি আর এন্টিবায়োটিক নিয়েছিলাম।
বিনা : আপনি কি ওই দুই সেট দিয়েই পুরো ছমাস গর্ভধারণ রোধ করেছিলেন?
ডেভিস : হ্যাঁ, স্থানীয় হাসপাতালগুলোর যন্ত্রপাতি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। আর তা পর্যাপ্তও ছিল না।
বিনা : চিকিৎসার কাজে এটি কি নিরাপদ ছিল?
ডেভিস : এ অবস্থা অন্তত ওই সব রোগের থেকে কম বিপজ্জনক ছিল। যা তারা ধারণ করছিল।
বিনা : আর এভাবে আপনি গর্ভপাত এবং দত্তক দেয়া নেয়া দুই কাজে সংশ্লিষ্ট ছিলেন?
ডেভিস : হ্যাঁ, কিন্তু নিষ্ঠভাবে দত্তক দেয়ার বিষয়টিতে আমি আইএসএসকে সহায়তা করেছি।
বিনা : ঢাকার বাইরের অবস্থাটা তখন কী ছিল? যেখানে আপনি গিয়েছেন? সে এলাকাগুলোতে কী ধরনের সুবিধা পেয়েছিলেন?
ডেভিস : হাসপাতাল কিংবা রিহ্যাবিলিটিশন সংস্থা; আমি মনে করতে পারছি না এটাকে কী বলে ডাকা হয়েছিল! হয়তো 'বাংলাদেশের নারীদের জাতীয় সহায়তা সংস্থা' ডাকা হতে পারে। যেটি পরিচালিত হয়েছিল সবচেয়ে বড় কেন্দ্র হিসেবে। হাসপাতালের বেশীরভাগ কর্মীরা মনে করতেন এটি অবৈধ। যদিও এ বিষয়ে আমি স্টেট সেক্রেটারি রব চৌধুরীর একটি পত্র পেয়েছিলাম। তিনি আমার কাজে সহায়তা করেছিলেন। এটি উল্লেখ করা প্রয়োজন যে আমি চেয়েছি সব কাজ বৈধভাবে করতে আর তারা আমাকে পর্যাপ্ত সহায়তা দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। আমি এখন ওই পত্রটি খুঁজে পাবো না। এটি কোথাও থেকে থাকবে হয়তো; বাংলাদেশ থেকে আসা অন্য কাগজপত্রগুলোর সাথে। আমি মনে করেছিলাম এগুলো প্রয়োজনীয় যতদিন আমি আর এমন কোনো ঘটনার সামনে না দাঁড়াই। তাই আমি চেয়েছি এগুলো সংরক্ষণ করতে। এটি ওই সময় খুব কঠিন ছিল।
বিনা : সব মেয়ারাই কি সাধারণভাবে গর্ভপাত ঘটাতে চেয়েছিল? কিংবা জন্মদানের পর দত্তক দেয়ার কথা ভেবেছিল? এমনকি কেউ ছিল যে তার জন্ম দেয়া শিশুকে নিজের কাছে রাখতে চেয়েছিল?
ডেভিস : জ্বি.. . তাদের খুব কম জনই এমন আগ্রহ প্রকাশ করেছিল।
বিনা : আপনি কি জানেন তাদের কী হয়েছিলো?
ডেভিস : আমার কোনো ধারণা নেই এ বিষয়ে। আইএসএস যতটা সম্ভব ওই শিশুদের নিয়ে গেছে। কারণ তখন আমেরিকা কিংবা পশ্চিমা দেশগুলোতে পর্যাপ্ত শিশু ছিল না দত্তক নেয়ার জন্য। তারা চেয়েছিলো যতো সংখ্যক শিশু সম্ভব জড়ো করার।
বিনা : (আইএসএসের কথা জানতে চাইলেন বিনা) ইন্টারন্যাশনাল সোস্যাল সার্ভিসেস?
ডেভিস : হ্যাঁ, এটি ওয়াশিংটন ডিসি-ভিত্তিক একটি সংস্থা।
বিনা : ওই মায়েদের কী হয়েছিলো?
ডেভিস : গর্ভপাত ঘটানোর পর খুব কম সময়ের জন্যই তারা সেখানে ছিল। যতদূর মনে পড়ে তারা রিলিফ এবং রিহ্যাবিলিটিশন সেন্টারগুলোতে আশ্রয় নিয়েছিল। তারা সেখানে যতোদিন খুশী ততোদিন অবস্থান করতে পারতো। পরবর্তীতে তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষিণে যুক্ত করা হয়েছিল। আমি তার কিছু দেখেছি। ঢাকা, দিনাজপুর, রংপুর, নোয়াখালীতে তাদের পরিধেয় বস্ত্র তৈরীর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল।
ড. বিনা ডি কস্তা ডেভিসের সাক্ষাৎকারটি এখানেই শেষ করেছিলেন। পরবর্তীতে এটি অস্ট্রেলিয়ার কোনো একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয় বলে জানা যায়। এটি প্রকাশ হওয়ার ছয় বছরের মাথায় ২০০৮ সালে ডা. জিওফ্রে ডেভিস মারা যান। ড. বিনা বলেছেন, এ সাক্ষাৎকারটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। যেটি বাংলাদেশে পাকিস্তানীদের মানবতাবিরোধী অপরাধের সাক্ষ্য হিসেবে সংরক্ষিত থাকবে। পরবর্তীতে যদিও পাকিস্তান তাদের বিভিন্ন মতামত বিশ্লেষণে দাবি করেছে, যতোটা বলা হয়েছে ততোটা অপরাধে লিপ্ত ছিল না তাদের সেনাবাহিনী। তবে পাকিস্তানের সে দাবি যে ভিত্তিহীন তা আজ উন্মোচিত হয়েছে।
ড. বিনা ডি কস্তা আশা করেন এটি বাংলাদেশের মুক্তিযদ্ধের ইতিহাসের একটি অধ্যায় হিসেবে সংরক্ষিত থাকবে। নতুন প্রজন্ম এখান থেকে আরো কিছু জানতে পারবে।
এছাড়া বিনা ডি কস্তা তার 'বাংলাদেশেজ ইরেজ পাস্ট' প্রবন্ধে লিখেছেন, সরকারি হিসাব অনুযায়ী একাত্তরে ধর্ষণের শিকার নারীর সংখ্যা দুই লাখ। একটি ইটালিয়ান মেডিক্যাল সার্ভেতে ধর্ষণের শিকার নারীর এ সংখ্যা উল্লেখ করা হয় চল্লিশ হাজার। লন্ডন-ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল প্লান্ড প্যারেন্টহুড ফেডারেশন (আইপিপিএফ) এ সংখ্যাকে বলেছে দুই লাখ। অন্যদিকে ডা. জিওফ্রে ডেভিসের মতে ওই সংখ্যা দুই লাখেরও অনেক বেশি। সুজান ব্রাউনমিলারও (সমাজকর্মী ও গবেষক) ধর্ষিতার সংখ্যা চার লাখ বলে উল্লেখ করেছেন। ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার এনবিসি টেলিভিশন ধর্ষিত নারীদের ওপর একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। এতে কেন এতো ধর্ষণ ঘটেছিল তার আরো অনেক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।
১৯৭১ সালে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সরাসরি বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য পাকিস্তান আর্মিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ বিষয়টি ২০০২ সালে ডনে প্রকাশ করা হয়েছিল। আর ইয়াহিয়ার এ কথাটি কোট করা হয়। সেখানে প্রকাশ করা হয়, যশোরে একদল সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি এয়ারপোর্টের কাছে জড়ো হওয়া অপর একদল বাঙালির দিকে আঙুল নির্দেশ করে বলেন যে, আগে এদেরকে মুসলমান বানাও।
এ ধরনের কথা অনেক বড় তাৎপর্য ধারণ করে। এর অর্থ, উচ্চ পর্যায়ের সামরিক অফিসারদের মধ্যে এ ধারণা স্পষ্ট ছিল যে বাঙালিরা খাঁটি মুসলমান নয়। এ ধারণার সাথে আরো দুটো সেন্টিমেন্ট যুক্ত ছিল। যদিও সেটি নিছক আর অবান্তর ছিল। তারা ভেবেই নিয়েছিল বাঙালিরা দেশপ্রেমিক পাকিস্তানী নয় এবং তারা হিন্দু আর ভারতের সাথে অনেক বেশি ঘনিষ্ট।
ইয়াহিয়া খানের ওই উক্তিতে উৎসাহিত হয়ে পাকিস্তান আর্মি বাঙালিদেরকে 'মুসলমান' বানানোর সুযোগ লুফে নিয়েছিল। আর এর জন্য বাঙালি মেয়েদের ধর্ষণ করে নতুন প্রজন্ম তৈরি করতে চেয়েছিল। পাকিস্তানি সৈন্য এবং তাদের এদেশীয় দোসররা শুধু যত্রতত্র ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হয়নি। জোর করে মেয়েদেরকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ধর্ষণ ক্যাম্পে। দিনের পর দিন আটকে রেখে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ করা হয়েছে। পালাতে যাতে না পারে সেজন্য বিবস্ত্র করে রাখা হতো। সিলিং এ ঝুলে আত্মহত্যা যাতে করতে না পারে তার জন্য চুল কেটে রাখা হতো তাদের।
আর টিক্কা খানের নির্দেশই মূলত বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। পাকিস্তান সেনাবাহিনী একটি 'উত্তরসূরি' রেখে যেতেই এ ধরনের মানবতা বিরোধী অপরাধে উন্মত্ত হয়ে পড়েছিল। আর যে দায় কখনোই পাকিস্তানের তৎকালীন প্রশাসকরা এড়িয়ে যেতে পারবেন না।
ড. বিনা ডি কস্তা
তিনি বিশেষভাবে পরিচিত উন্নয়ন ও মানবাধিকার কর্মী হিসেবে। এছাড়া তিনি দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা বিষয়ের ওপরও গবেষণা করেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং নিরাপত্তা বিষয়ক পাঠদান করে থাকেন। নটর ডেম ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি যুদ্ধ ও শান্তি বিষয়ক পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি বড় অস্ত্র ছিল পাকিস্তানি সেনা কর্তৃক বাঙালি নারীদের ধর্ষণ। এর ফলে অনেক নারী গর্ভবতী হয়ে পড়েন। জন্ম নেয় অনেক যুদ্ধশিশু। অনেক নারী বেছে নেন আত্মহত্যার পথ। অনেকে চেষ্টা চালান গর্ভপাত ঘটানোর। ধর্ষিতা নারীদের গর্ভপাত ঘটাতে চিকিৎসা সহায়তা দিতে ১৯৭২ সালে এগিয়ে আসেন অস্ট্রেলীয় চিকিৎসক ডা. জিওফ্রে ডেভিস। তিনি সে সময় দিনে ঢাকায় প্রায় একশ নারীর গর্ভপাতও ঘটিয়েছেন। ডা. জিওফ্রে ডেভিসের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অস্ট্রেলীয় ইতিহাস গবেষক ড. বিনা ডি কস্তা। তার ভিত্তিতেই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন মেহেদী হাসান স্বাধীন।
'আমি বাঁচাতে চেয়েছি সেসব শিশুদের, যাদের জন্ম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বন্দীশিবিরে কারারুদ্ধ থাকা বাঙালি নারীর গর্ভে।' এ কথা ডা. জিওফ্রে ডেভিস-এর।
১৯৭২ সালে অস্ট্রেলিয়ান এই চিকিৎসক বাংলাদেশে ছুটে আসেন মানবিক সহায়তা দিতে। সে সময় বহু নারীকে গর্ভপাত ঘটাতে সহায়তা করেন তিনি। ওইসব নারী পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী দ্বারা ধর্ষিত হয়েছিলেন। অনেকেই আটক ছিলেন বন্দীশিবিরে। ডা. ডেভিসের ওই সময়কার অভিজ্ঞতার ওপর ২০০২ সালে একটি সাক্ষাৎকার নেন ইতিহাস গবেষক অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ড. বিনা ডি কস্তা। তিনি অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত ইতিহাস বিষয়ক প্রবন্ধ-নিবন্ধকে আরো সমৃদ্ধ করতে বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত নারীদের ওপর গবেষণা চালান। আর ওই গবেষণার ধারাবাহিকতায় তিনি ডা. ডেভিসের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন।
ওই গবেষণা প্রবন্ধে বিনা ডি কস্তা ডা. ডেভিসকে ১৯৭১ সালে নির্যাতিত নারীদের অসহায়ত্ব ও দুর্ভোগের প্রামাণিক সাক্ষী হিসেবে উল্লেখ করেন। যার কাছ থেকে হানাদারবাহিনীর নির্যাতনের একটি মূল্যবান দলিল পাওয়া যাবে।
সাক্ষাৎকারটিতে বিভিন্ন বিষয় উঠে আসলেও মূলত পাক সেনাদের নারী ধর্ষণের ফলে পরবর্তীতে যে নেতিবাচক সামাজিক ও মানবিক প্রভাব পড়ে বাংলাদেশের সমাজে সেটাই তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন বিনা ডি কস্তা।
যে নারীরা ওই সময় ধর্ষিত হয়েছিলেন তারা পরবর্তীতে সামাজিকভাবে কী অবস্থার সম্মুখীন হয়েছিলেন? এ বিষয়টি বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পরও আড়ালে থেকে গেছে। জানা গেছে, সে সময় বন্দীশিবির থেকে মুক্ত হয়ে আসা নারীদের একটা বড় অংশই তখন গর্ভবতী হয়ে পড়েন। আর এ বিষয়টি একটা বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় নারীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে। অনেকেই বেছে নেন আত্মহত্যার পথ। তবে তাদের একটি বড় অংশ গর্ভপাত ঘটানোর চেষ্টা করেন। বিভিন্ন হাসপাতালে কিংবা সহায়তা কেন্দ্রে তখন উপচেপড়া ভিড়। আবার লোকলজ্জায় যারা আসতে ভয় পাচ্ছিলেন তাদের জন্য বিভিন্ন সংগঠন মানবিক সহায়তায় এগিয়ে আসে। খোলা হয়েছিল গর্ভপাত করানোর কেন্দ্র।
ডা. ডেভিস জানিয়েছেন, সে সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরেই এ ধরনের কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়। অন্তত যেসব শহরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী প্রবেশ করে। ডেভিস মূলত বোঝাতে চেয়েছেন দেশের এমন কোনো শহর নেই যেখানে এ সমস্যাটি তখন মোকাবেলা করতে হয়নি।
ডা. ডেভিসের অভিজ্ঞতায় আরো জানা গেছে, ওই সময় কেবল নারী ধর্ষণের বিষয়টিই মুখ্য ছিল না; যুদ্ধশিশু বিষয়টিও প্রধান হয়ে ওঠে। এসব যুদ্ধশিশুর লালন-পালনের ভার তুলে দেয়া যাচ্ছিল না কারো ওপর। সে সময় কয়েকটি সংগঠন এসব যুদ্ধশিশুদের ইউরোপে পাঠাতে তৎপর হয়ে ওঠে। কারণ সেখানে তাদের দেখভালের যথেষ্ট সুযোগ ছিল। আর যেসব হোমস ছিল সেখান থেকে বিভিন্ন দেশের মানুষ এসব যুদ্ধশিশু দত্তক নিতো।
যদিও যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ধর্ষণকে 'অস্ত্র' হিসেবে ব্যবহার করে। যা ভয়ঙ্কর রূপ পায় ১৯৭১-এর যুদ্ধে। ডা. ডেভিস বিনা ডি কস্তাকে জানান, এমন এক নারীর অভিজ্ঞতা আমার জানা আছে যাকে দীর্ঘদেহী পাঞ্জাবী সৈনিক দিয়ে বারবার ধর্ষণ করানো হয়েছিল। যাতে তিনি যন্ত্রণা পান এবং গর্ভবতী হয়ে পড়েন। আর এ আচরণ সবার ক্ষেত্রেই ওই সময় সত্য হয়ে ওঠে। তবে ডা. ডেভিস এও বলেন, যারা নির্যাতিত হয়েছেন তাদের স্বামীরা কিংবা পরিবারের সদস্যরা এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাইতো না। যেমনটি চাইতো না গর্ভে থাকা যুদ্ধশিশুর জন্ম হোক।
আরো অনেক কথা উঠে এসেছে ডা. ডেভিসের কথায়। সাক্ষাৎকারে ডেভিস বলেন, অপরিকল্পিত গর্ভধারণ রোধ করতে আমার টেকনিক্যাল জ্ঞান ছিল। আমি ইউকে থেকে প্রশিক্ষণ নিই। যদিও আমি বাংলাদেশে গর্ভধারণের ৩০ সপ্তাহের পরও গর্ভপাত ঘটিয়েছি।
ঢাকার কোন জায়গায় কাজ করেছিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান তিনি ধানম-ির কোনো একটি ক্লিনিকে কাজ করেছেন। তিনি বলেন, আমি দেশের অন্য শহরগুলোতেও কাজ করেছি যেখানে হাসপাতালের সুষ্ঠু কোনো ব্যবস্থা ছিল না। আমি সেখানকার অনেক মানুষকেই প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এরপর দেখলাম এ সংখ্যা (গর্ভবতী) আরো বেড়েই চলেছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা হাল ধরলে আমি সে স্থান ছেড়ে অন্য স্থানে ছুটে গেছি।
ডেভিস বলেন, আমি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের নারীদের পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনতে একটি সংস্থা গড়ে তুলি। যেটির ইনচার্জ ছিলেন বিচারপতি কে এম সোবহান। চেষ্টা করা হয়েছিল যুদ্ধে গর্ভবতী হয়ে পড়া নারীদের একত্রিত করার। যারা গর্ভপাত ঘটাতে চেয়েছেন তাদের সহায়তা করা, আর যারা শিশু জন্ম দিতে চেয়েছেন কিন্তু শিশুর দেখভালের দায়িত্ব নিতে চাননি তাদের শিশুগুলোকে ইন্টারন্যাশনাল সোস্যাল সার্ভিসে (আইএসএস) জড়ো করার চেষ্টা করেছি। বিচারপতি সোবহানই ওই সংগঠনের প্রধান ছিলেন, আরো একজন খুব অ্যাকটিভ ছিলেন। ভন ইস্কুক; আমি তার নামের প্রথম শব্দটি মনে করতে পারছি না। আমার মনে হয় তার স্ত্রীর নাম ছিল মেরি। তারা আর্থিকভাবে সহায়তা করেছিলেন। যে সব বাঙালি আমার সঙ্গে ছিলেন তাদের নাম মনে করতে পারছি না। সাধারণত এর আগে কেউ এ ধরনের ইতিহাস জানতে চায়নি।
ডেভিস আরো বলেন, এটা সবারই জানা কমনওয়েলথের সদস্য পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাবাহিনী তখন ইংল্যান্ড থেকে প্রশিক্ষিত। সুনাম অর্জন করেছে বিদেশেও। যা ব্রিটিশ সরকারকে তীব্র লজ্জায় ফেলে। অথচ এ বিষয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের প্রশাসকদের কোনো স্নায়বিক উত্তেজনাও ছিল না। আমি তাদের অনেকের সাক্ষাৎকার নিয়েছি। যাদের অনেকেই কুমিল্লার কারাগারে বন্দী ছিল। তাদের অনেকে বলছিল, এটা ছিল যুদ্ধ। যেখানে আমাদের জন্য সব বৈধ ছিল।
যুদ্ধ চলাকালে সৈনিকদের নারী ধর্ষণকে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ কিভাবে বৈধতা দিয়েছিল জানতে চাইলে ডা. ডেভিস বলেন, তারা জেনারেল টিক্কা খানের সমন পেয়েছিল। যেখানে নির্দিষ্ট করে দিকনির্দেশনা দেয়া ছিল। বলা হয়েছিল 'একজন ভালো মুসলমান' যে কারো বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারে; এ তালিকায় তার পিতাও বাদ পড়বে না। যার ফলে তারা বাঙালি নারীদের ধর্ষণে মত্ত হয়ে পড়েছিল। এটাই এ ঘটনার পেছনের মূল কারণ।
এভাবে ধর্ষণের পেছনে যুক্তি কী ছিল জানতে চাইলে তিনি তার মত ব্যক্ত করে বলেন, পাকিস্তানিরা চেয়েছিল পুরো পশ্চিমের আদলে একটি প্রজন্ম গড়ে উঠবে পূর্বে। যা তারা বলেছিলও। হয়তো এখানে তাদের দীর্ঘ কোনো পরিকল্পনা ছিল।
পাকিস্তান থেকে পাওয়া অনেক তথ্য থেকে জানা গেছে, পাকিস্তানিদের দাবি ধর্ষণের এ সংখ্যাকে অতিরঞ্জিত করা হয়েছে। আপনি কি মনে করেন এটি সত্যি? এ প্রশ্নের জবাবে ডেভিস বলেন, না। সম্ভবত এ সংখ্যাকে খুব সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে যা তারা ঘটিয়েছে। এর ব্যাখ্যা আসতে পারে তারা কয়টি শহর দখল করেছিল। তারা পদাতিক বাহিনীকে পশ্চাতে রেখে গোলন্দাজ বাহিনীকে পাঠিয়েছিল হাসপাতাল, স্কুলে শেল নিক্ষেপ করতে। আর এ কারণেই শহরে নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছিল। হয়েছিল বিশৃঙ্খলা। পদাতিক বাহিনী পরবর্তীতে প্রবেশ করায় তারা হয়তো নারীদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। এর মানে এ নয় যে তারা ধর্ষণে লিপ্ত হয়নি। শিশুদেরও তারা রেহাই দেয়নি। তাদের বুলেটের সামনে থেকে কেউ রক্ষা পায়নি। পদাতিক বাহিনী শহরের শেষ সম্বলও লুণ্ঠন করে। নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায়। নারী-শিশু ধর্ষণ করে। যারা তৎকালীন আওয়ামী পন্থী ছিলেন কিংবা মুক্তিযুদ্ধে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন তাদের তো কোনো রেহাই ছিল না। আর সে সময় মেয়েদেরকে পাহারারত অবস্থায় কম্পাউন্ডে আটকে রাখা হয় যাতে সৈনিকদের সরবরাহ করা যেতে পারে।
আপনি কি এমন কোনো নারী কিংবা পুরুষের সঙ্গে কথা বলেছেন যে ওই সময়ের যুদ্ধে সরাসরি অভিজ্ঞ। বিশেষ করে কোনো নারী যিনি বন্দিশিবিরে ধর্ষিত হয়েছেন? এ প্রশ্নের জবাবে ডেভিস বলেন, হ্যাঁ। আমরা প্রতিনিয়তই এ ধরনের ঘটনার বিবরণ শুনেছি। তারা বলতে গিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়তো। যেমন তারা জানিয়েছিল দীর্ঘদেহী পাঠান সৈনিকরা কিভাবে বারবার ধর্ষণ করতো। কিভাবে তাদের সেনাবাহিনীর কাছে পাঠানো হতো। সাধারণত ধনী পরিবারের কিংবা সুন্দরী নারীদের পাঠানো হতো উপরের সারির সেনা কর্মকর্তাদের কাছে। তারপর র্যাঙ্ক অনুযায়ী বিভিন্ন স্থান থেকে তুলে আনা মেয়েদের সরবরাহ করা হতো। ওই নারীদের পর্যাপ্ত খেতে দেয়া হতো না। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে ছিল না কোনো চিকিৎসার ব্যবস্থা। ফলে অনেকেই মারা যায় ওইসব ক্যাম্পে। আর এটি প্রমাণ করতে এমন অনেক নিদর্শনই সামনে উপস্থিত ছিল যা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু অবিশ্বাসীরাই গুজব উঠায়।
ডেভিস আরো বলেন, অনেকেই এখন বিষয়টিকে অস্বীকার করতে চেয়েছে। ভুলে যেতে চাইছে। ছুঁড়ে ফেলতে চাইছে ওই অধ্যায় যা তাদের জীবনে ঘটেছিল।
যুদ্ধপরবর্তী সময়ে কোনো বীরাঙ্গনা তাদের ওই অভিজ্ঞতা জানিয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে ডেভিস বলেন, না, কেউ এ বিষয়ে বলতে আগ্রহী হয়নি। তুমি প্রশ্ন করলে ঠিকই একটা জবাব পাবে। কিন্তু এটা পর্যাপ্ত নয় যা তারা স্মরণ করতে চাইতো না। কারণ পুরুষরাও এ বিষয়ে বলতে চায়নি।
ড. বিনা ডি কস্তার নেয়া ডা. ডেভিসের সাক্ষাৎকারের বাকি অংশ প্রশ্নোত্তর আকারে দেয়া হলো :
বিনা : আপনি অবশ্যই বাংলা বলতে পারতেন না। যোগাযোগের জন্য এটি কি খুব কঠিন হয়েছিল?
ডেভিস : না, আমার একজন দোভাষী ছিল। তারা খুব সহজেই সমাধান করতে পারতো। তারা আমাকে একজন দিকনির্দেশক, একজন ড্রাইভার এবং একজন মাঠকর্মীকে সঙ্গে দিয়েছিল। তারাও দোভাষীর কাজ চালিয়েছে। ড্রাইভারের নাম যতদূর মনে পড়ে মমতাজ। তবে মাঠ কর্মীর নাম মনে আসছে না। অবাক করা বিষয় সেখানকার একটা বড় অংশ ইংরেজি জানতো। যে সমস্যা আমি তিউনিসিয়ায় বোধ করেছি।
বিনা : আপনার মতে তারা (বাংলাদেশী নির্যাতিত নারীরা) কেন চুপ হয়ে যেত?
ডেভিস : কারণ আমরা ভিনদেশী ছিলাম। তারা আমাদের বিশ্বাস করে উঠতে পারেনি। তারা জানতোও না আমরা কী করতে যাচ্ছি।
বিনা : আপনি কি এমন কোনো এলাকা পরিদর্শন করেছিলেন যেখানে ধর্ষণ ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছিল?
ডেভিস : ওই ক্যাম্পগুলো গুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। আর রিহ্যাবিলিটেশন সংগঠন চেষ্টা করেছিল নির্যাতিত নারীদের তাদের গ্রামে-শহরে ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু ওইসব নির্যাতিত নারীদের স্বামী যা করেছিল তা উদ্বেগই বাড়াবে। তারা তাদের হত্যা করতে চেয়েছিল। কারণ ওই নারীরা পরিত্যাক্ত হয়েছিল এবং তাদের অনেকেই জানতো সত্যিকার অর্থে কী ঘটেছিল ওইসব বীরাঙ্গনাদের ওপর। তাদের অনেকেই দেহত্যাগ করেছিল যমুনায়।
বিনা : স্মরণ করতে পারেন কি কতোজন নারীর গর্ভপাত ঘটিয়েছিলেনে আপনি?
ডেভিস : এটি বলা খুবই কঠিন। কিন্তু দিনে কম হলেও ১০০ জন নারীকে।
বিনা : এটি ঢাকা নাকি বাংলাদেশের অন্য কোনো শহরে?
ডেভিস : এ বিষয়ে একটি সঠিক পরিসংখ্যান বের করা যে খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার তা বলার ব্যাখ্যা রাখে না। ঢাকায়ই যেখানে অন্তত ১০০ জন সেখানে অন্যান্য শহরের কথা আসলে সে সংখ্যা অনেক বড় আকার ধারণ করে। এছাড়া অনেকেই কলকাতা গিয়েছিলেন গর্ভপাত ঘটাতে।
বিনা : একটা শতকরা হিসাব কি বলতে পারেন? শ্রেণী ভিত্তিক কিংবা ধর্মীয় ভিত্তিক কতজন নারী হবেন?
ডেভিস : এটা সব শ্রেণীর ওপরই হয়েছিল। তাদের ধর্মীয় কিংবা শ্রেণীগতভাবে আলাদা করা যাবে না। সে সময় তাদের মূল সমস্যা সমাধানই আমাদের কর্তব্য ছিল। সাধারণত, অবশ্যই ধনীরা চটজলদি কলকাতা অভিমুখী হয়েছিলেন গর্ভপাত ঘটাতে।
বিনা : গর্ভপাত ঘটানোর বিষয়ে তারা কী জিজ্ঞেস করতো? কিংবা তাদের কি কোনো মতামত ছিল? কোনো পছন্দ?
ডেভিস : হ্যাঁ, কখনো। আমরা যাদের পেয়েছি তারা সবাই গর্ভপাত করানোর জন্যেই আসেন। অন্যদিকে, যারা জন্মদানের পক্ষ অবলম্বন করেছিল, যারা রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে আসে তাদের সংখ্যা কতো এ বিষয়ে আমার খুব একটা স্বচ্ছ ধারণা নেই।
বিনা : গর্ভপাত ঘটানোর সময় আপনি কি তাদের কাঁদতে দেখেছেন কিংবা দুঃখিত হতে?
ডেভিস : না, তারা কাঁদেনি। তবে তাদের মনে গভীর দাগ পড়েছিল এটা স্পষ্ট। তারা কেবল নিশ্চুপ ছিল।
বিনা : আপনি কি গর্ভধারণের একদম শেষ পর্যায়ের কোনো গর্ভপাত ঘটিয়েছেন? কিংবা কোনো অপরিপক্ক গর্ভধারণে?
ডেভিস : হ্যাঁ, আমি সেখানে যে ছয় মাস ছিলাম তার পুরো সময়ই এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছি। তারা ভীষণভাবে অপুষ্টিতে ভুগছিলো। ফলে দেখা গেছে ৪০ সপ্তাহের গর্ভবতী নারীর পেট ঠিক ১৮ সপ্তাহের গর্ভবতীর মাপের সমান।
বিনা : যারা সন্তান নিয়েছেন সেসব নারীদের আপনি কী কোনো উপদেশ দিয়েছেন?
ডেভিস : উপদেশ, হ্যাঁ রিহ্যাবিলিটেশন সংস্থায়। সেখানকার নারী কর্মীদের যারা নির্যাতিতদের সঙ্গে কথা বলতো। আমি মনে করি না এটা তাদের সহায়ক ছিল। কারণ তারা সবাই অপুষ্টিতে ভুগছিল, বিভন্ন রোগে আক্রান্ত ছিল। তাদের বেশিরভাগই যৌন রোগে আক্রান্ত ছিল। দেশটিতে খুবই কম সুবিধা ছিল। ওষুধপত্র সরঞ্জামাদির তীব্র অভাব ছিল। যার অনেক কিছু আমরা নিজেরাই সংগ্রহ করেছিলাম।
বিনা : আপনি কোথা থেকে সেগুলো আনিয়েছিলেন? তা কি পর্যাপ্ত ছিল?
ডেভিস : ইংল্যান্ড থেকে। আমি বলেছিলাম আমার নিজের আনা ব্যবস্থাপত্রের কথা। এছাড়া আমি দুই সেট যন্ত্রপাতি আর এন্টিবায়োটিক নিয়েছিলাম।
বিনা : আপনি কি ওই দুই সেট দিয়েই পুরো ছমাস গর্ভধারণ রোধ করেছিলেন?
ডেভিস : হ্যাঁ, স্থানীয় হাসপাতালগুলোর যন্ত্রপাতি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। আর তা পর্যাপ্তও ছিল না।
বিনা : চিকিৎসার কাজে এটি কি নিরাপদ ছিল?
ডেভিস : এ অবস্থা অন্তত ওই সব রোগের থেকে কম বিপজ্জনক ছিল। যা তারা ধারণ করছিল।
বিনা : আর এভাবে আপনি গর্ভপাত এবং দত্তক দেয়া নেয়া দুই কাজে সংশ্লিষ্ট ছিলেন?
ডেভিস : হ্যাঁ, কিন্তু নিষ্ঠভাবে দত্তক দেয়ার বিষয়টিতে আমি আইএসএসকে সহায়তা করেছি।
বিনা : ঢাকার বাইরের অবস্থাটা তখন কী ছিল? যেখানে আপনি গিয়েছেন? সে এলাকাগুলোতে কী ধরনের সুবিধা পেয়েছিলেন?
ডেভিস : হাসপাতাল কিংবা রিহ্যাবিলিটিশন সংস্থা; আমি মনে করতে পারছি না এটাকে কী বলে ডাকা হয়েছিল! হয়তো 'বাংলাদেশের নারীদের জাতীয় সহায়তা সংস্থা' ডাকা হতে পারে। যেটি পরিচালিত হয়েছিল সবচেয়ে বড় কেন্দ্র হিসেবে। হাসপাতালের বেশীরভাগ কর্মীরা মনে করতেন এটি অবৈধ। যদিও এ বিষয়ে আমি স্টেট সেক্রেটারি রব চৌধুরীর একটি পত্র পেয়েছিলাম। তিনি আমার কাজে সহায়তা করেছিলেন। এটি উল্লেখ করা প্রয়োজন যে আমি চেয়েছি সব কাজ বৈধভাবে করতে আর তারা আমাকে পর্যাপ্ত সহায়তা দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। আমি এখন ওই পত্রটি খুঁজে পাবো না। এটি কোথাও থেকে থাকবে হয়তো; বাংলাদেশ থেকে আসা অন্য কাগজপত্রগুলোর সাথে। আমি মনে করেছিলাম এগুলো প্রয়োজনীয় যতদিন আমি আর এমন কোনো ঘটনার সামনে না দাঁড়াই। তাই আমি চেয়েছি এগুলো সংরক্ষণ করতে। এটি ওই সময় খুব কঠিন ছিল।
বিনা : সব মেয়ারাই কি সাধারণভাবে গর্ভপাত ঘটাতে চেয়েছিল? কিংবা জন্মদানের পর দত্তক দেয়ার কথা ভেবেছিল? এমনকি কেউ ছিল যে তার জন্ম দেয়া শিশুকে নিজের কাছে রাখতে চেয়েছিল?
ডেভিস : জ্বি.. . তাদের খুব কম জনই এমন আগ্রহ প্রকাশ করেছিল।
বিনা : আপনি কি জানেন তাদের কী হয়েছিলো?
ডেভিস : আমার কোনো ধারণা নেই এ বিষয়ে। আইএসএস যতটা সম্ভব ওই শিশুদের নিয়ে গেছে। কারণ তখন আমেরিকা কিংবা পশ্চিমা দেশগুলোতে পর্যাপ্ত শিশু ছিল না দত্তক নেয়ার জন্য। তারা চেয়েছিলো যতো সংখ্যক শিশু সম্ভব জড়ো করার।
বিনা : (আইএসএসের কথা জানতে চাইলেন বিনা) ইন্টারন্যাশনাল সোস্যাল সার্ভিসেস?
ডেভিস : হ্যাঁ, এটি ওয়াশিংটন ডিসি-ভিত্তিক একটি সংস্থা।
বিনা : ওই মায়েদের কী হয়েছিলো?
ডেভিস : গর্ভপাত ঘটানোর পর খুব কম সময়ের জন্যই তারা সেখানে ছিল। যতদূর মনে পড়ে তারা রিলিফ এবং রিহ্যাবিলিটিশন সেন্টারগুলোতে আশ্রয় নিয়েছিল। তারা সেখানে যতোদিন খুশী ততোদিন অবস্থান করতে পারতো। পরবর্তীতে তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষিণে যুক্ত করা হয়েছিল। আমি তার কিছু দেখেছি। ঢাকা, দিনাজপুর, রংপুর, নোয়াখালীতে তাদের পরিধেয় বস্ত্র তৈরীর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল।
ড. বিনা ডি কস্তা ডেভিসের সাক্ষাৎকারটি এখানেই শেষ করেছিলেন। পরবর্তীতে এটি অস্ট্রেলিয়ার কোনো একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয় বলে জানা যায়। এটি প্রকাশ হওয়ার ছয় বছরের মাথায় ২০০৮ সালে ডা. জিওফ্রে ডেভিস মারা যান। ড. বিনা বলেছেন, এ সাক্ষাৎকারটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। যেটি বাংলাদেশে পাকিস্তানীদের মানবতাবিরোধী অপরাধের সাক্ষ্য হিসেবে সংরক্ষিত থাকবে। পরবর্তীতে যদিও পাকিস্তান তাদের বিভিন্ন মতামত বিশ্লেষণে দাবি করেছে, যতোটা বলা হয়েছে ততোটা অপরাধে লিপ্ত ছিল না তাদের সেনাবাহিনী। তবে পাকিস্তানের সে দাবি যে ভিত্তিহীন তা আজ উন্মোচিত হয়েছে।
ড. বিনা ডি কস্তা আশা করেন এটি বাংলাদেশের মুক্তিযদ্ধের ইতিহাসের একটি অধ্যায় হিসেবে সংরক্ষিত থাকবে। নতুন প্রজন্ম এখান থেকে আরো কিছু জানতে পারবে।
এছাড়া বিনা ডি কস্তা তার 'বাংলাদেশেজ ইরেজ পাস্ট' প্রবন্ধে লিখেছেন, সরকারি হিসাব অনুযায়ী একাত্তরে ধর্ষণের শিকার নারীর সংখ্যা দুই লাখ। একটি ইটালিয়ান মেডিক্যাল সার্ভেতে ধর্ষণের শিকার নারীর এ সংখ্যা উল্লেখ করা হয় চল্লিশ হাজার। লন্ডন-ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল প্লান্ড প্যারেন্টহুড ফেডারেশন (আইপিপিএফ) এ সংখ্যাকে বলেছে দুই লাখ। অন্যদিকে ডা. জিওফ্রে ডেভিসের মতে ওই সংখ্যা দুই লাখেরও অনেক বেশি। সুজান ব্রাউনমিলারও (সমাজকর্মী ও গবেষক) ধর্ষিতার সংখ্যা চার লাখ বলে উল্লেখ করেছেন। ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার এনবিসি টেলিভিশন ধর্ষিত নারীদের ওপর একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। এতে কেন এতো ধর্ষণ ঘটেছিল তার আরো অনেক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।
১৯৭১ সালে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সরাসরি বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য পাকিস্তান আর্মিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ বিষয়টি ২০০২ সালে ডনে প্রকাশ করা হয়েছিল। আর ইয়াহিয়ার এ কথাটি কোট করা হয়। সেখানে প্রকাশ করা হয়, যশোরে একদল সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি এয়ারপোর্টের কাছে জড়ো হওয়া অপর একদল বাঙালির দিকে আঙুল নির্দেশ করে বলেন যে, আগে এদেরকে মুসলমান বানাও।
এ ধরনের কথা অনেক বড় তাৎপর্য ধারণ করে। এর অর্থ, উচ্চ পর্যায়ের সামরিক অফিসারদের মধ্যে এ ধারণা স্পষ্ট ছিল যে বাঙালিরা খাঁটি মুসলমান নয়। এ ধারণার সাথে আরো দুটো সেন্টিমেন্ট যুক্ত ছিল। যদিও সেটি নিছক আর অবান্তর ছিল। তারা ভেবেই নিয়েছিল বাঙালিরা দেশপ্রেমিক পাকিস্তানী নয় এবং তারা হিন্দু আর ভারতের সাথে অনেক বেশি ঘনিষ্ট।
ইয়াহিয়া খানের ওই উক্তিতে উৎসাহিত হয়ে পাকিস্তান আর্মি বাঙালিদেরকে 'মুসলমান' বানানোর সুযোগ লুফে নিয়েছিল। আর এর জন্য বাঙালি মেয়েদের ধর্ষণ করে নতুন প্রজন্ম তৈরি করতে চেয়েছিল। পাকিস্তানি সৈন্য এবং তাদের এদেশীয় দোসররা শুধু যত্রতত্র ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হয়নি। জোর করে মেয়েদেরকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ধর্ষণ ক্যাম্পে। দিনের পর দিন আটকে রেখে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ করা হয়েছে। পালাতে যাতে না পারে সেজন্য বিবস্ত্র করে রাখা হতো। সিলিং এ ঝুলে আত্মহত্যা যাতে করতে না পারে তার জন্য চুল কেটে রাখা হতো তাদের।
আর টিক্কা খানের নির্দেশই মূলত বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। পাকিস্তান সেনাবাহিনী একটি 'উত্তরসূরি' রেখে যেতেই এ ধরনের মানবতা বিরোধী অপরাধে উন্মত্ত হয়ে পড়েছিল। আর যে দায় কখনোই পাকিস্তানের তৎকালীন প্রশাসকরা এড়িয়ে যেতে পারবেন না।
ড. বিনা ডি কস্তা
তিনি বিশেষভাবে পরিচিত উন্নয়ন ও মানবাধিকার কর্মী হিসেবে। এছাড়া তিনি দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা বিষয়ের ওপরও গবেষণা করেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং নিরাপত্তা বিষয়ক পাঠদান করে থাকেন। নটর ডেম ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি যুদ্ধ ও শান্তি বিষয়ক পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
গৃহবধূকে ধর্ষণ শেষে হত্যার ঘটনায় মামলা, গ্রেপ্তার ২ - প্রথম আলো
1 দিন আগে – ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায় গৃহবধূ হাসিনা বেগমকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে বৃহস্পতিবার তাঁর স্বামী আবু কাউছার মামলা করেছেন। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরে তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন কসবা পৌর শহরের গুরুহিত গ্রামের শাকিল মিয়া ও মাইনুল ...
Brutal Gang Rape and Murder of minority Hindu family members traumatized the local Hindus of Bagherhat, Bangladesh
An Investigative report from HRCBMI along with Advocate Jagadish Chandra Sarkar, Prof. Ashoke Taru Saha of HRCBM, Dhaka and also two others from Hindu community visited the place of occurrence on 14th March, 2003 at Komarpur, Thakurbari, Bagerhat where Tapan Bhattacharjee was brutally killed and three women were gang-raped by terrorists on 9th March,2003 on the basis of horrific news published in different dailies in Bangladesh. We also got three more incident of repressions on Hindus ,one is in Sultanpur village another is in Fatepur village and another is in Bishnupur village within Bagerhat district after reaching at Bagerhat "Ramkrishna Mission" which was not published in the dailies.Picture: Victim of brutality Mrs. Shewli Bhattacherjee (20) who is admitted to Khulna Medical Hospital signing sworn affidavits and other paper works allowing HRCBM to take drastic legal action against the miscreants. Prof. Taru of HRCBM is seen in photograph taking statements of the victims while victim's mother sitting on the side. Picture: While Prof Taru of HRCBM gives assurance to the family of pursuing the legal action, other advocates of HRCBM is listening to the statements of victims. We started for Bagerhat from Dhaka by bus on 13th of March,2003 at about 9 p.m. and reached at Bagerhat in the next morning on 14th March,2003 and met with the "Maharaj" of Ramkrishna Mission at Bagerhat who apprised us the overall situation of Bagerhat and before proceeding towards Komarpur,Thakurbari we talked with the Supdt.of Police, and Deputy Commissioner Bagerhat to know the situation. We went to Md.Ishaque Dudu @ (Dhuku) Officer-in-Charge of Bagerhat Sadar police station and recorded his statements. We requested the O.C. Bagerhat to co-operate us helping mete out justice to the victims. We also requested him to supply us copies of complaint filed by the victims and he gave us two copies of F.I.R.(First information report) filed by one Prof.Sarbajit Chakravorty of Sultanpur village who was attacked by some unknown terrorists and another from Md.Badsha Meah, S.I. of police, Bagerhat Sadar P.S. on behalf of Deb Das Samaddar of Fatepur village whose dwelling house was burnt by some terrorists... more.....ang rape of a minority Girl in Shibalaya, Manikganj HRCBM-Dhaka has visited the place of occurrence at Akua within Shibalayapolice station where one minor girl Shilpi Rani Chakravorty (17) daughter of Shymal Chakravorty was gang raped by the local rapists on 27th April, 2003.On the way to Faridpur I reached at Shibalaya police station at Manikganj District at about 12-30 p.m. and found Sub-Inspector, Md. Zahid Hossaina of the said police station and we have been ..... more.. Indigenous "Adhibashi" Hindus are attacked in Faridpur I, Advocate Rabindra Ghosh on behalf of HRCBM, Dhaka visited Kanaipur(Malanga) Faridpur Sadar on 15th and 16th of May, 03 10 kilometers from Faridpur town where a good number of Hindu Adhibashis residing at "Adhibashi Pally" have been attacked by some terrorists and as a result 26 dwelling houses including family "Goddess Jagatbandhu Mahaprakash Math" and Manasha Images in a Manasha Mandir were destroyed and some women have been molested on 7th May,03..more.. A letter from the victim of brutality My Name is Bibha Rani Singha, father: Binoy Krishna Singha, village: Surigarta, P.S. Bakarganj, Thana: Chitalmary and District: Bagherhat of Bangladesh. I do hereby state that I was on my way to the private tutor near Sher-e-Bangla College on last 04/22/2003 when Naren Mazumder and his criminal gang kidnapped me showing ....more.... Attacks on minorities at Mirzapur: three including a pregnant women wounded It is that I know what the pain could be! It is passionate pain! Hundreds of pregnant minority women feel that despair that broke their hearts.
Justice never been serve to them and perhaps never will be. She lost the sign of her love, the child, the fetus of her own blood and flesh. The picture shows broken heart Sabita Rani Sarkar is under treatment at the local hospital. Sabita is speechless, wounds of her body though yet to cure but the scratch on the heart will never be..!! .....more.....Gruesome attacks on minority men and women at Gazipur On 28th of March,2003 at about 10-30 a.m. I, Advocate Rabindra Ghosh and Prof. Ashoke Taru of HRCBM-Dhaka rushed to Dhaka Medical College Hospital to see Deepak Mallick, a wounded victim being treated after an outrageous attack by the terrorists on 24th March, 2003 at his village home "Degoliar Teck" on the basis of horrific news published in different dailies in Bangladesh. On reaching there, we came to know he was released the day before yesterday 27th March, 2003 and henceforth, we started for the place of occurrence at about 11.00 AM.. more...Hindu Religious festival attacked in Chandpur, hundreds wounded
Manir Haider, Kachua (Chandpur): It was expected to see the gatherings of thousands of Hindu devotees there, should be the festive of "Hymn of Lord Krishna" and the joyful gala of children. For 150 years, at every "winter full moon" (Maghi Purnima) it was the said festivity being observed in the promises of Lord Jagannath Temple. This time too the festivity started as scheduled by the thread of heritage.... more...Investigative Report of Chontia incident at Jamalpur District, Bangladesh Investigation conducted by Human Rights Congress for Bangladesh Minorities (HRCBM) -Dhaka, Bangladesh on 26th of March,03....
I, Rabindra Ghosh, of Human Rights Congress for Bangladesh Minorities (HRCBM) - Dhaka Chapter, Bangladesh decided to visit the place of occurrence - Village Chontia at Jamalpur district on the basis of information published in the various dailies of Bangladesh and also to visit the victims of torture at Mymensingh Medical College Hospital where two Hindu male and female more.....Open Letter to PM of Bangladesh: OMCT PRIME MINISTER OF BANGLADESHGeneva, March 20th 2003
Ms. Prime Minister,
The International Secretariat of the World Organisation Against Torture (OMCT) would like to bring to your attention the demolition of houses belongings to members of the Hindu community of the Chakribakri, Madhukhali, Radhanagar, Bigordana and Parmadhukhali villages (Khulna district) by the police, as a form of punishment for their alleged support for so-called terrorist groups. more...Innvestigation conducted by Human Rights Congress for Bangladesh Minorities (HRCBM) -Dhaka, Bangladesh on 9th April,03....Members of Human Rights Congress for Bangladesh Minorities (HRCBM) - Dhaka Chapter and HRCBM-Feni Chapter, Bangladesh decided to visit the place of occurrence - Village Shibpur village under Nabinagar P.S., Dist. Brahmanbaria on the basis of information published in the Daily Janakantha dated 7th March, 2003. more.....
No comments:
Post a Comment