Wednesday, March 26, 2014

অবশেষে এক খণ্ড জমি পেলেন মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী

অবশেষে এক খণ্ড জমি পেলেন মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী

Prothom Alo
সরকারিভাবে একটি ঘর বরাদ্দ পেয়েছিলেন নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার আশুজিয়া ইউনিয়নের চন্দপাড়া গ্রামের অসহায় মুক্তিযোদ্ধা মো. রহমত আলী (৭৩)। কিন্তু নিজের কোনো জমি না থাকায় বরাদ্দ পাওয়া ঘর তুলতে পারছিলেন না। রহমত আলীকে হূদয়বান এক ব্যক্তি এক খণ্ড জমি দান করলেও নিবন্ধনের টাকা জোগাড় করতে না পারায় তা নিবন্ধন করতে পারছিলেন না তিনি।
অবশেষে গতকাল মঙ্গলবার তিনি ধার দেনা করা টাকা দিয়ে ৩ শতাংশ পরিমাণ জমিটি নিজের নামে নিবন্ধন করেছেন। ফলে রহমত আলীর নামে সরকারি বরাদ্দের ঘরটি নির্মাণে আর কোনো বাধা রইল না।
জানা গেছে, ১৯৭১ সালে যুবক বয়সে রহমত আলী দেশের টানে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ১১ নম্বর সেক্টরের অধীন বিভিন্ন এলাকায় তিনি যুদ্ধ করেন। এরপর দেশ স্বাধীন হলে তিনি এলাকায় ফিরে আসেন। বিয়ে করে জীবিকার তাগিদে চলে যান কিশোরগঞ্জের ভৈরবে। সেখানে তিনি রিকশা চালাতেন। কয়েক বছর আগে আবার এলাকায় ফিরে এসে সেখানে রিকশা চালাতে থাকেন। সেখানে একটি ভাড়া ঘরে তিনি বসবাস করছেন। এ অবস্থায় অসহায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাঁর নামে সরকারিভাবে একটি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁর কোনো জায়গা-জমি না থাকায় এ নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। একপর্যায়ে সাহায্যের হাত বাড়ান রামনগর গ্রামের হারেছ উদ্দিন ফকির। তিনি তাঁকে ৩ শতাংশ জমি দান করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু গত মঙ্গলবার উপজেলা সাবরেজিস্ট্রারের কার্যালয় থেকে অতিরিক্ত ফি দাবি করায় ওই জমির দলিল নিবন্ধন করতে গিয়ে বিপাকে পড়েন রহমত আলী। ওই টাকার জন্য তিনি সরকারি দপ্তরসহ বিভিন্ন জনের কাছে ছুটে যান। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। একপর্যায়ে পৌর মেয়র আবদুল হক ভূঁইয়া হস্তক্ষেপ করলে টনক নড়ে সাবরেজিস্ট্রি কার্যালয়ের। পরে সন্ধ্যার দিকে আগের দাবির চেয়ে প্রায় দুই হাজার টাকা কমে ওই জমির দলিল রেজিস্ট্রি করা হয়। ওই টাকা ধার-দেনা করে অনেক কষ্টে জোগাড় করতে হয়েছে রহমত আলীকে।
উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার আজহার আলী খান এর সত্যতা স্বীকার করেছেন। তবে দপ্তরের আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে অসহায় মুক্তিযোদ্ধার জন্য কিছু করা সম্ভব হয়নি বলে তিনি দাবি করেন।
আজ বুধবার স্বাধীনতা দিবসে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আসেন মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী। এ সময় উপজেলা পরিষদ চত্বরে কথা হয় রহমত আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘জীবনে অনেক কষ্ট করছি। এহনও কষ্টে করতাছি। এই বয়সে আর রিকশা চালাইতে মন চায় না। কিন্তু না চালাইলে চলবাম কেমনে?’
রহমত আলী আরও বলেন, ‘এই জমিডা পাইয়া আমার বড় উপকার অইছে। অনেক কষ্টে এই টেহা জোগাড় কইরা জমির দলিল করছি। না অইলে আমি আর সরকারি ঘরডা পাইতাম না।’
এ ব্যাপারে জমিদানকারী হারেছ উদ্দিন ফকির বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী খুব অসহায়। তিনি অনেক মানবেতর জীবন যাপন করেন। তাই মনের টানে একজন অসহায় মুক্তিযোদ্ধার জন্য এটা করেছি।’
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুল খালেক আকন্দ বলেন, ‘রহমত আলীর জমি না থাকায় তাঁর নামে সরকারি বরাদ্দের ঘরটি নির্মাণ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। কিন্তু সেই সমস্যা এখন কেটে যাবে।’
এলজিইডির কেন্দুয়া উপজেলা প্রকৌশলী মো. আল-আমিন সরকার বলেন, ‘জমির ব্যবস্থা হলে খুব শিগগির মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলীর নামে সরকারি বরাদ্দের ঘরের নির্মাণকাজ শুরু করা হবে।’

No comments:

Post a Comment