চিন-ভারত যুদ্ধের গোপন নথি ফাঁস নিয়ে তুলকালাম
নয়াদিল্লি: ১৯৬২ সালে চিন-ভারত যুদ্ধে ভারতের লজ্জাজনক হারের পিছনে মূল কারণ কি জওহরলাল নেহরুর ভুল সিদ্ধান্ত ও নীতি? এই যুদ্ধ নিয়ে ৫২ বছর ধরে চূড়ান্ত গোপনীয়তায় রক্ষা করা ব্রুকস-ভগত রিপোর্টের অংশবিশেষ ইন্টারনেটে ফাঁস করে দিয়েছেন বর্ষীয়ান অস্ট্রেলিয়ান সাংবাদিক নেভিল ম্যাক্সওয়েল৷ সেখান থেকেই পাওয়া যাচ্ছে এমন তথ্য, চিন-ভারত যুদ্ধ সম্পর্কে ভারত সরকারের পোশাকি বক্তব্য যার বিপরীত৷ ভারতের তরফে এত দিন ধরে দাবি করে আসা হয়েছে, কোনও প্ররোচনা ছাড়াই চিন আক্রমণ করেছিল এবং সীমান্তের পরিস্থিতি সম্পর্কে নেহরু অবগত ছিলেন না৷ কিন্ত্ত এই রিপোর্টে বলা হচ্ছে, নেহরু সীমান্তের পরিস্থিতি এবং চিনের তুলনায় ভারতীয় সেনার দুর্বলতর অবস্থা ভালোভাবেই জানতেন এবং তা সত্ত্বেও সীমান্তে বিতর্কিত 'ফরওয়ার্ড পলিসি' লাগু করার নির্দেশ দেন৷ এই নীতি চিনকে আক্রমণে প্ররোচিত করেছিল বলে রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে৷
১৯৬২ যুদ্ধের শেষে তত্কালীন লেফটেন্যান্ট জেনারেল হেন্ডারসন ব্রুকস এবং ব্রিগেডিয়ার পি এস ভগতের তৈরি এই রিপোর্টটি ঘিরে গোপনীয়তা ও সুরক্ষার বলয় ভারতীয় সেনাবাহিনীতে প্রায় কিংবদন্তির পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে৷ সরকারের ক্লাসিফায়েড বা গোপন নথি যে নির্ধারিত সময়ের পর সাধারণত প্রকাশ করে দেওয়া হয়ে থাকে, তার পরেও এই রিপোর্টটি সামনে আনা হয়নি৷ দীর্ঘদিন ধরেই এই রিপোর্ট প্রকাশ করার দাবি জানিয়ে যাচ্ছে বিজেপি৷ ২০১০ সালে সংসদে প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি জানান, রিপোর্টটিতে চিন-ভারত সীমান্ত সম্পর্কিত বেশ কিছু সংবেদনশীল এবং কৌশলগত তথ্য রয়েছে যা প্রকাশ করা জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষে ক্ষতিকারক হতে পারে৷ এর পরেও ২০১২ সালে ফের এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনার দাবি তুলেছিলেন রাজনাথ সিং৷ কিন্ত্ত মঞ্জুর হয়নি তা৷
এখন বিজেপির বক্তব্য, গোটা রিপোর্টটি সামনে আনতে হবে৷ বিজেপি মুখপাত্র রবিশঙ্কর প্রসাদের কথায়, 'এই রিপোর্ট ক্ল্যাসিফায়েড করে রেখে কী লুকোতে চায় সরকার? কী ভুল হয়েছিল তা জানার অধিকার আছে আমাদের৷ নেহরুর জন্য আমরা যুদ্ধ হেরেছিলাম৷' আবার আরএসএস-এর শীর্ষ নেতা রাম মাধবের বক্তব্য, 'দেশকে মিথ্যা কথা বলে, তথ্য লুকিয়ে একটা রূপকথার জগতে বাস করছিল জাতীয় নেতৃত্ব৷ ফল কী হল? যুদ্ধে হার, এলাকা বেদখল, ভাবমূর্তির ক্ষতি৷' এর জবাবে কংগ্রেস আবার তুলে ধরছে রিপোর্ট ফাঁস হওয়ার সময়কালকে৷ কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির মতে, ঘটনার এত দিন পরে লোকসভা ভোটের ঠিক মুখে এসে এই নিয়ে হইচই শুরু করে সস্তা রাজনীতি ছাড়া আর কিছুই করছে না বিজেপি৷ এ প্রসঙ্গে ১৯৯৯ সালে এনডিএ জমানার কার্গিল যুদ্ধের কথাও টেনে এনেছেন তিনি৷ তাঁর কথায়, 'কার্গিল যুদ্ধের সময় এত এত নতুন যুদ্ধজাহাজ ও সরঞ্জাম থাকা সত্ত্বেও অনুপ্রবেশকারীরা কী ভাবে সীমান্ত পার করল, সে প্রশ্নও তো আমরা করতে পারি৷ কিন্তু বিজেপির মতো নির্বাচনের মুখে সস্তা রাজনীতি করাটা আমাদের স্বভাব নয়৷'
কী বলা আছে রিপোর্টে? সরকারি ভাবে এখনও 'গোপন' এই রিপোর্টে নেহরুর ফরওয়ার্ড পলিসিকে তুলোধোনা করা হয়েছে৷ এই নীতি অনুসারে চিন সীমান্তে ভারতের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে বিতর্কিত এলাকাগুলিতে ভারতীয় আউটপোস্ট তৈরি এবং সীমান্তে সামরিক কার্যকলাপ ও টহলদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল৷ রিপোর্টে ইঙ্গিত, ওই সময় সামরিক ভাবে এমন আক্রমণাত্মক অবস্থান নেওয়ার অবস্থায় ছিল না ভারত৷ রিপোর্টে বেশ কিছু উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের উল্লেখ রয়েছে, যার একটিতে খোদ নেহরু উপস্থিত ছিলেন৷ উপরন্ত্ত, সেনাবাহিনীর তরফে নাকি এই নীতির বিরুদ্ধে সওয়ালও করা হয়েছিল৷ ওয়েস্টার্ন কম্যান্ডের তরফে বার বার বলা হয়, চিন আক্রমণ করলে তা ঠেকানোর ক্ষমতা ভারতীয় সেনাবাহিনীর নেই৷ কিন্ত্ত তা না শুনে এই বিতর্কিত নীতি নিয়ে এগিয়ে যায় সরকার৷ রিপোর্টের বক্তব্য, 'নিজেদের সামরিক ক্ষমতার থেকে চিন প্রতি-আক্রমণ করবে না, এই ধারণার উপর বেশি নির্ভর করেছিলাম আমরা৷'
নেভিল ম্যাক্সওয়েলের ফাঁস করা রিপোর্টের সত্যতা নিয়েও অবশ্য প্রশ্ন উঠছে৷ নিজের বল্গস্পটে বর্তমানে ৮৭ বছর বয়সি এই সাংবাদিক দাবি করেছেন, তাঁর কাছে রিপোর্টটির একটি প্রতিলিপি ছিল যা ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কোনও আধিকারিকের সূত্রেই পেয়েছিলেন তিনি৷ অথচ এই রিপোর্টটির এখনও পর্যন্ত মাত্র দু'টি প্রতিলিপিই রয়েছে বলে জানা যায়৷ তার একটি আছে প্রতিরক্ষা সচিবের দপ্তরে, অন্যটি ভারতীয় সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশন ডিরেক্টোরেটে৷ ম্যাক্সওয়েলের দাবি সত্য হলে একটি তৃতীয় প্রতিলিপিরও অস্তিত্ব স্বীকার করতে হয়৷ ১৯৬২ সালের যুদ্ধে উপস্থিত অন্যতম সাংবাদিক ছিলেন ম্যাক্সওয়েল৷ রিপোর্টটিও তার পর পরই হস্তগত করেন তিনি৷ তা হলে এত দিন পরে কেন ফাঁস করতে গেলেন? নিজের ব্লগে ম্যাক্সওয়েলের সাফাই, ৯০-এর দশকে একাধিক ভারতীয় সংবাদসংস্থাকেও এই রিপোর্ট প্রকাশ করতে অনুরোধ করেন তিনি৷ কিন্তু কেউ তা করতে চায়নি৷ তিনি ভেবেছিলেন সরকার নিজে থেকেই এই রিপোর্ট প্রকাশ করবে, কারণ এতে তেমন সংবেদনশীল কোনও তথ্য নেই যা নিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে৷ নেহরু-গান্ধী পরিবারতন্ত্রের প্রতি ইঙ্গিত করে ম্যাক্সওয়েলের বক্তব্য, 'আমার মতে, রিপোর্ট এত দিন গোপন করে রাখার কারণ শুধুমাত্র রাজনৈতিক৷ হয়তো পারিবারিকও৷'
১৯৬২ যুদ্ধের শেষে তত্কালীন লেফটেন্যান্ট জেনারেল হেন্ডারসন ব্রুকস এবং ব্রিগেডিয়ার পি এস ভগতের তৈরি এই রিপোর্টটি ঘিরে গোপনীয়তা ও সুরক্ষার বলয় ভারতীয় সেনাবাহিনীতে প্রায় কিংবদন্তির পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে৷ সরকারের ক্লাসিফায়েড বা গোপন নথি যে নির্ধারিত সময়ের পর সাধারণত প্রকাশ করে দেওয়া হয়ে থাকে, তার পরেও এই রিপোর্টটি সামনে আনা হয়নি৷ দীর্ঘদিন ধরেই এই রিপোর্ট প্রকাশ করার দাবি জানিয়ে যাচ্ছে বিজেপি৷ ২০১০ সালে সংসদে প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি জানান, রিপোর্টটিতে চিন-ভারত সীমান্ত সম্পর্কিত বেশ কিছু সংবেদনশীল এবং কৌশলগত তথ্য রয়েছে যা প্রকাশ করা জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষে ক্ষতিকারক হতে পারে৷ এর পরেও ২০১২ সালে ফের এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনার দাবি তুলেছিলেন রাজনাথ সিং৷ কিন্ত্ত মঞ্জুর হয়নি তা৷
এখন বিজেপির বক্তব্য, গোটা রিপোর্টটি সামনে আনতে হবে৷ বিজেপি মুখপাত্র রবিশঙ্কর প্রসাদের কথায়, 'এই রিপোর্ট ক্ল্যাসিফায়েড করে রেখে কী লুকোতে চায় সরকার? কী ভুল হয়েছিল তা জানার অধিকার আছে আমাদের৷ নেহরুর জন্য আমরা যুদ্ধ হেরেছিলাম৷' আবার আরএসএস-এর শীর্ষ নেতা রাম মাধবের বক্তব্য, 'দেশকে মিথ্যা কথা বলে, তথ্য লুকিয়ে একটা রূপকথার জগতে বাস করছিল জাতীয় নেতৃত্ব৷ ফল কী হল? যুদ্ধে হার, এলাকা বেদখল, ভাবমূর্তির ক্ষতি৷' এর জবাবে কংগ্রেস আবার তুলে ধরছে রিপোর্ট ফাঁস হওয়ার সময়কালকে৷ কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির মতে, ঘটনার এত দিন পরে লোকসভা ভোটের ঠিক মুখে এসে এই নিয়ে হইচই শুরু করে সস্তা রাজনীতি ছাড়া আর কিছুই করছে না বিজেপি৷ এ প্রসঙ্গে ১৯৯৯ সালে এনডিএ জমানার কার্গিল যুদ্ধের কথাও টেনে এনেছেন তিনি৷ তাঁর কথায়, 'কার্গিল যুদ্ধের সময় এত এত নতুন যুদ্ধজাহাজ ও সরঞ্জাম থাকা সত্ত্বেও অনুপ্রবেশকারীরা কী ভাবে সীমান্ত পার করল, সে প্রশ্নও তো আমরা করতে পারি৷ কিন্তু বিজেপির মতো নির্বাচনের মুখে সস্তা রাজনীতি করাটা আমাদের স্বভাব নয়৷'
কী বলা আছে রিপোর্টে? সরকারি ভাবে এখনও 'গোপন' এই রিপোর্টে নেহরুর ফরওয়ার্ড পলিসিকে তুলোধোনা করা হয়েছে৷ এই নীতি অনুসারে চিন সীমান্তে ভারতের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে বিতর্কিত এলাকাগুলিতে ভারতীয় আউটপোস্ট তৈরি এবং সীমান্তে সামরিক কার্যকলাপ ও টহলদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল৷ রিপোর্টে ইঙ্গিত, ওই সময় সামরিক ভাবে এমন আক্রমণাত্মক অবস্থান নেওয়ার অবস্থায় ছিল না ভারত৷ রিপোর্টে বেশ কিছু উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের উল্লেখ রয়েছে, যার একটিতে খোদ নেহরু উপস্থিত ছিলেন৷ উপরন্ত্ত, সেনাবাহিনীর তরফে নাকি এই নীতির বিরুদ্ধে সওয়ালও করা হয়েছিল৷ ওয়েস্টার্ন কম্যান্ডের তরফে বার বার বলা হয়, চিন আক্রমণ করলে তা ঠেকানোর ক্ষমতা ভারতীয় সেনাবাহিনীর নেই৷ কিন্ত্ত তা না শুনে এই বিতর্কিত নীতি নিয়ে এগিয়ে যায় সরকার৷ রিপোর্টের বক্তব্য, 'নিজেদের সামরিক ক্ষমতার থেকে চিন প্রতি-আক্রমণ করবে না, এই ধারণার উপর বেশি নির্ভর করেছিলাম আমরা৷'
নেভিল ম্যাক্সওয়েলের ফাঁস করা রিপোর্টের সত্যতা নিয়েও অবশ্য প্রশ্ন উঠছে৷ নিজের বল্গস্পটে বর্তমানে ৮৭ বছর বয়সি এই সাংবাদিক দাবি করেছেন, তাঁর কাছে রিপোর্টটির একটি প্রতিলিপি ছিল যা ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কোনও আধিকারিকের সূত্রেই পেয়েছিলেন তিনি৷ অথচ এই রিপোর্টটির এখনও পর্যন্ত মাত্র দু'টি প্রতিলিপিই রয়েছে বলে জানা যায়৷ তার একটি আছে প্রতিরক্ষা সচিবের দপ্তরে, অন্যটি ভারতীয় সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশন ডিরেক্টোরেটে৷ ম্যাক্সওয়েলের দাবি সত্য হলে একটি তৃতীয় প্রতিলিপিরও অস্তিত্ব স্বীকার করতে হয়৷ ১৯৬২ সালের যুদ্ধে উপস্থিত অন্যতম সাংবাদিক ছিলেন ম্যাক্সওয়েল৷ রিপোর্টটিও তার পর পরই হস্তগত করেন তিনি৷ তা হলে এত দিন পরে কেন ফাঁস করতে গেলেন? নিজের ব্লগে ম্যাক্সওয়েলের সাফাই, ৯০-এর দশকে একাধিক ভারতীয় সংবাদসংস্থাকেও এই রিপোর্ট প্রকাশ করতে অনুরোধ করেন তিনি৷ কিন্তু কেউ তা করতে চায়নি৷ তিনি ভেবেছিলেন সরকার নিজে থেকেই এই রিপোর্ট প্রকাশ করবে, কারণ এতে তেমন সংবেদনশীল কোনও তথ্য নেই যা নিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে৷ নেহরু-গান্ধী পরিবারতন্ত্রের প্রতি ইঙ্গিত করে ম্যাক্সওয়েলের বক্তব্য, 'আমার মতে, রিপোর্ট এত দিন গোপন করে রাখার কারণ শুধুমাত্র রাজনৈতিক৷ হয়তো পারিবারিকও৷'
http://eisamay.indiatimes.com/nation/indo-china-war-dispute-arises-once-more/articleshow/32282903.cms?
No comments:
Post a Comment