সংরক্ষণ কোনও বিশল্যকরণী নয়
শুধু রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব বাড়াবার লড়াই পিছিয়ে পড়া জনজাতির মূল সমস্যাগুলো দূর করতে পারে না। আত্মপরিচয়ের রাজনীতি প্রসঙ্গেমইদুল ইসলাম। শেষ পর্ব
দ্বিতীয় ইন্টারন্যাশনাল-এর পর থেকেই আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের সর্বত্র 'নিপীড়িতের শৃঙ্খলমুক্তির অগ্রদূত' হিসেবে শ্রমিক শ্রেণিকেই আন্দোলনের কেন্দ্রস্থলে কল্পনা করে নেওয়া হয়েছিল৷ এই গোঁড়া শ্রেণিকেন্দ্রিক দৃষ্টিকোণ এবং শ্রমিক শ্রেণির কেন্দ্রীয় ভূমিকা আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের ব্যর্থতার পর থেকেই প্রশ্নের মুখে পড়ে৷ অন্য দিকে, ছয়ের দশক থেকেই উঠে আসে বিভিন্ন অ-শ্রেণিগত দ্বন্দ্বের প্রশ্ন- লিঙ্গসমতার লড়াই, ভাষাগত জাতীয়তাবাদের প্রসঙ্গ এবং বিশেষত ভারতীয় প্রেক্ষিতে, দলিতদের মর্যাদা, আদিবাসীদের অধিকার এবং সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্ন৷ সাবেকি মার্কসিয়-লেনিনিয় যুক্তি মেনে বামপন্থীরা এই সব দ্বন্দ্বকে মৌলিক কোনও দ্বন্দ্ব বলে স্বীকার করেনি৷ এমনকী তারা এ কথাও বলেছে যে এ সবই হল শ্রমিক শ্রেণিকে বিভক্ত করার জন্য শাসক শ্রেণির চক্রান্ত৷ যেহেতু বামপন্থীদের কাছে একমাত্র শ্রেণিসংগ্রামের ভূমিকাই প্রাথমিক, কাজেই ভারতীয় প্রেক্ষিতে আত্মপরিচয়ের সামাজিক মর্যাদার লড়াইয়ের প্রসঙ্গটি খতিয়ে দেখায় বামপন্থীদের খামতি থেকে গিয়েছে৷
স্মর্তব্য, ভারতে এই জাতীয় অ-শ্রেণিগত দ্বন্দ্বের ইতিহাস সুপ্রাচীন৷ ব্রাহ্মণ্যতান্ত্রিক ও পুরুষতান্ত্রিক আধিপত্যের জন্য এই সামাজিক ফাটলগুলিকে রেখেঢেকে দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু যখনই আত্মপরিচয়ের রাজনীতি প্রকাশের পথ খুঁজে পেল, আমরা দেখতে পেলাম দলিত, আদিবাসী, ওবিসি এবং মুসলিমদের ভিত্তি করে কৌমভিত্তিক আনুগত্যের রাজনীতির উত্থান৷ আটের দশকের শেষ থেকেই কেন্দ্রে মূলত কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন একদলীয় শাসনের কাঠামো ভাঙতে থাকে৷ ফলত ভারতীয় রাজনীতিতেও বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতা বিভাজিত হয়৷ যার মধ্যে অন্যতম প্রধান ভূমিকা নেয় দলিত-আদিবাসী-মুসলিম রাজনীতি, যা আত্মপরিচয়ের রাজনীতির নিজস্ব ভাষায় নিজেদের অধিকার দাবি করে৷ যেহেতু কৌমভিত্তিক এই রাজনীতির কাছে বামপন্থীদের মতো কোনও প্রগতিশীল রাজনৈতিক ভাষা ছিল না, কাজেই রাজনীতির চলতি ভাষাই হয়ে ওঠে শাসক শ্রেণি/ জাতের বিরুদ্ধে প্রান্তিক বর্গের প্রতিবাদ জানাবার আয়ুধ৷
অন্য দিকে, ভারতীয় বামপন্থীরা এই প্রশ্নকে যথাযথ গুরুত্ব দিতে অনেকটা সময় লাগিয়ে দেন৷ কাজেই যখন বামপন্থীদের তরফে এই পিছিয়ে পড়া সামাজিক বর্গের সুনির্দিষ্ট সমস্যার কথা বলা হয়, তত দিনে জাতীয় রাজনীতিতে দলিত আন্দোলন এবং আদিবাসীদের ক্ষমতায়নের আন্দোলন যথেষ্ট প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে৷ এই একই সময়ে কংগ্রেস কিছু প্রতীকী প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে দলিত এবং মুসলিমদের কাছে টানার চেষ্টা করে৷ কিছু ক্ষেত্রে, নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক বা সাংস্কৃতিক কারণে বামপন্থীরা দলিত এবং পিছিয়ে পড়া জাতের প্রশ্ন উত্থাপন করে, যেমন কেরলে মন্দিরে প্রবেশাধিকার আন্দোলনের সময়ে৷ কিন্তু ছয়ের দশকে ই এম এস নাম্বুদ্রিপাদ এবং আটের দশকের প্রথম দিকে বি টি রনদিভে শ্রেণি সংগ্রাম এবং জাতিবৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামের মধ্যে যোগসূত্র রচনার তাত্ত্বিক ভাবনা পেশ করলেও, কেবল একুশ শতকের গোড়াতেই বামপন্থীরা প্রথম এই বিষয়ে কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ নেয়৷ বস্ত্তত সি পি আই এম-এর অষ্টাদশ পার্টি কংগ্রেসের আগে দলিতদের প্রশ্নের দিকে সেই ভাবে কোনও নজর দেওয়া হয়নি৷ নজর পড়ে তখনই যখন বহুজন সমাজ পার্টি উত্তর ভারতে প্রভাবশালী রাজনৈতিক শক্তি হয়ে উঠেছে৷ ঠিক একই ভাবে অতিসম্প্রতি সময় পর্যন্ত আদিবাসী অধিকারের প্রশ্নটি বামপন্থীদের কাছে উপেক্ষিতই থেকে গিয়েছে৷
অথচ প্রান্তিক সামাজিক বর্গের আর্থ-সামাজিক বঞ্চনার মৌলিক কোনও সমাধান কেবল মাত্র সামাজিক ন্যায়ের রাজনীতির মাধ্যমে সম্ভব নয়, কারণ এই রাজনীতি আবর্তিত হয় পিছিয়ে পড়া সামাজিক বর্গের জন্য বিশেষ সুযোগসুবিধা এবং সংরক্ষণের দাবিকে ঘিরে৷ পশ্চাত্পদ সামাজিক বর্গের আর্থ-সামাজিক বঞ্চনার প্রশ্নের সমাধান করতে হলে অর্থনৈতিক পুনর্বণ্টনের ক্ষেত্রে ন্যায়ের কথাটাও ভাবতে হবে৷ মনে রাখা দরকার, সংকীর্ণ গোষ্ঠীগত স্বার্থের জন্য কৌমভিত্তিক আনুগত্যের ভিত্তিতে একটি বিশেষ গোষ্ঠীর জন্য লড়াই কোনও ভাবে নয়া উদারবাদী জমানার স্থিতাবস্থায় কোনও রকম ফাটল ধরাতে পারবে না৷ এবং আত্মপরিচয়ের এই রাজনীতি প্রান্তিক বর্গের আর্থ-সামাজিক বঞ্চনার কোনও মৌলিক সমাধানেও সক্ষম নয়| কাজেই, প্রান্তিক সামাজিক বর্গের গণতান্ত্রিক দাবিদাওয়ার সঙ্গে যুক্ত করতে হবে শ্রমিক এবং কৃষকদের দাবিকে, কারণ ভারতের মেহনতি জনসংখ্যার সিংহভাগই দলিত, মুসলিম, আদিবাসী বা অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জাতিভুক্ত৷
কাজেই বামপন্থীদের প্রাত্যহিক রাজনীতিতে স্থানীয় স্তরে প্রান্তিক বর্গের মানুষদের সঙ্গে অবিরত যোগসূত্র স্থাপন করতে হবে, তাঁদের সঙ্গে কথোপকথন চালাতে হবে৷ বামপন্থী আন্দোলনের সপক্ষে প্রান্তিক সামাজিক বর্গকে নিয়ে আসতে হলে সাবেকি ভারতীয় রাজনৈতিক দলগুলির মতো শুধু প্রতিনিধিত্বমূলক রাজনীতির আশ্রয় নিলে চলবে না৷ যে দলগুলি প্রান্তিক বর্গের কিছু বাছাই করা মানুষকে সংগঠনের দায়িত্বে এনে বা নির্বাচনে টিকিট দিয়ে সমর্থন জোটানোর চেষ্টা করেন৷ এই ধরনের দায়সারা রাজনীতি প্রান্তিক বর্গের কোনও সমস্যারই স্থায়ী সমাধান করতে পারে না৷ ঠিক যেমন ভাবে নয়া উদারবাদী অর্থনীতির সঙ্গে আপসকামী দলিত বা মুসলিম নেতৃত্বও পারে না স্থিতাবস্থায় কোনও বদল ঘটাতে৷ অবশ্যই তার মানে এই নয় যে, রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের বিষয়টিকে পুরোপুরি বিসর্জন দিতে হবে৷ বরং বামপন্থী সংগঠনের বিভিন্ন স্তরে প্রান্তিক বর্গের মানুষদের যথেষ্ট প্রতিনিধিত্ব প্রান্তিক বর্গের মধ্যেও প্রগতিশীল কণ্ঠকে আরও জোরালো করে তুলতে পারে৷ কিন্ত্ত প্রতিনিধিত্বের রাজনীতি কোনও ভাবেই সামাজিক ন্যায় আন্দোলনের একমাত্র লক্ষ্য হতে পারে না৷ এবং সেটাই রেজ্জাক মোল্লার মতো বামপন্থী নেতার ভাবনার মূল বিষয়বস্ত্ত হওয়া প্রয়োজন৷
লেখক প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক
দ্বিতীয় ইন্টারন্যাশনাল-এর পর থেকেই আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের সর্বত্র 'নিপীড়িতের শৃঙ্খলমুক্তির অগ্রদূত' হিসেবে শ্রমিক শ্রেণিকেই আন্দোলনের কেন্দ্রস্থলে কল্পনা করে নেওয়া হয়েছিল৷ এই গোঁড়া শ্রেণিকেন্দ্রিক দৃষ্টিকোণ এবং শ্রমিক শ্রেণির কেন্দ্রীয় ভূমিকা আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের ব্যর্থতার পর থেকেই প্রশ্নের মুখে পড়ে৷ অন্য দিকে, ছয়ের দশক থেকেই উঠে আসে বিভিন্ন অ-শ্রেণিগত দ্বন্দ্বের প্রশ্ন- লিঙ্গসমতার লড়াই, ভাষাগত জাতীয়তাবাদের প্রসঙ্গ এবং বিশেষত ভারতীয় প্রেক্ষিতে, দলিতদের মর্যাদা, আদিবাসীদের অধিকার এবং সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্ন৷ সাবেকি মার্কসিয়-লেনিনিয় যুক্তি মেনে বামপন্থীরা এই সব দ্বন্দ্বকে মৌলিক কোনও দ্বন্দ্ব বলে স্বীকার করেনি৷ এমনকী তারা এ কথাও বলেছে যে এ সবই হল শ্রমিক শ্রেণিকে বিভক্ত করার জন্য শাসক শ্রেণির চক্রান্ত৷ যেহেতু বামপন্থীদের কাছে একমাত্র শ্রেণিসংগ্রামের ভূমিকাই প্রাথমিক, কাজেই ভারতীয় প্রেক্ষিতে আত্মপরিচয়ের সামাজিক মর্যাদার লড়াইয়ের প্রসঙ্গটি খতিয়ে দেখায় বামপন্থীদের খামতি থেকে গিয়েছে৷
স্মর্তব্য, ভারতে এই জাতীয় অ-শ্রেণিগত দ্বন্দ্বের ইতিহাস সুপ্রাচীন৷ ব্রাহ্মণ্যতান্ত্রিক ও পুরুষতান্ত্রিক আধিপত্যের জন্য এই সামাজিক ফাটলগুলিকে রেখেঢেকে দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু যখনই আত্মপরিচয়ের রাজনীতি প্রকাশের পথ খুঁজে পেল, আমরা দেখতে পেলাম দলিত, আদিবাসী, ওবিসি এবং মুসলিমদের ভিত্তি করে কৌমভিত্তিক আনুগত্যের রাজনীতির উত্থান৷ আটের দশকের শেষ থেকেই কেন্দ্রে মূলত কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন একদলীয় শাসনের কাঠামো ভাঙতে থাকে৷ ফলত ভারতীয় রাজনীতিতেও বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতা বিভাজিত হয়৷ যার মধ্যে অন্যতম প্রধান ভূমিকা নেয় দলিত-আদিবাসী-মুসলিম রাজনীতি, যা আত্মপরিচয়ের রাজনীতির নিজস্ব ভাষায় নিজেদের অধিকার দাবি করে৷ যেহেতু কৌমভিত্তিক এই রাজনীতির কাছে বামপন্থীদের মতো কোনও প্রগতিশীল রাজনৈতিক ভাষা ছিল না, কাজেই রাজনীতির চলতি ভাষাই হয়ে ওঠে শাসক শ্রেণি/ জাতের বিরুদ্ধে প্রান্তিক বর্গের প্রতিবাদ জানাবার আয়ুধ৷
অন্য দিকে, ভারতীয় বামপন্থীরা এই প্রশ্নকে যথাযথ গুরুত্ব দিতে অনেকটা সময় লাগিয়ে দেন৷ কাজেই যখন বামপন্থীদের তরফে এই পিছিয়ে পড়া সামাজিক বর্গের সুনির্দিষ্ট সমস্যার কথা বলা হয়, তত দিনে জাতীয় রাজনীতিতে দলিত আন্দোলন এবং আদিবাসীদের ক্ষমতায়নের আন্দোলন যথেষ্ট প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে৷ এই একই সময়ে কংগ্রেস কিছু প্রতীকী প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে দলিত এবং মুসলিমদের কাছে টানার চেষ্টা করে৷ কিছু ক্ষেত্রে, নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক বা সাংস্কৃতিক কারণে বামপন্থীরা দলিত এবং পিছিয়ে পড়া জাতের প্রশ্ন উত্থাপন করে, যেমন কেরলে মন্দিরে প্রবেশাধিকার আন্দোলনের সময়ে৷ কিন্তু ছয়ের দশকে ই এম এস নাম্বুদ্রিপাদ এবং আটের দশকের প্রথম দিকে বি টি রনদিভে শ্রেণি সংগ্রাম এবং জাতিবৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামের মধ্যে যোগসূত্র রচনার তাত্ত্বিক ভাবনা পেশ করলেও, কেবল একুশ শতকের গোড়াতেই বামপন্থীরা প্রথম এই বিষয়ে কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ নেয়৷ বস্ত্তত সি পি আই এম-এর অষ্টাদশ পার্টি কংগ্রেসের আগে দলিতদের প্রশ্নের দিকে সেই ভাবে কোনও নজর দেওয়া হয়নি৷ নজর পড়ে তখনই যখন বহুজন সমাজ পার্টি উত্তর ভারতে প্রভাবশালী রাজনৈতিক শক্তি হয়ে উঠেছে৷ ঠিক একই ভাবে অতিসম্প্রতি সময় পর্যন্ত আদিবাসী অধিকারের প্রশ্নটি বামপন্থীদের কাছে উপেক্ষিতই থেকে গিয়েছে৷
অথচ প্রান্তিক সামাজিক বর্গের আর্থ-সামাজিক বঞ্চনার মৌলিক কোনও সমাধান কেবল মাত্র সামাজিক ন্যায়ের রাজনীতির মাধ্যমে সম্ভব নয়, কারণ এই রাজনীতি আবর্তিত হয় পিছিয়ে পড়া সামাজিক বর্গের জন্য বিশেষ সুযোগসুবিধা এবং সংরক্ষণের দাবিকে ঘিরে৷ পশ্চাত্পদ সামাজিক বর্গের আর্থ-সামাজিক বঞ্চনার প্রশ্নের সমাধান করতে হলে অর্থনৈতিক পুনর্বণ্টনের ক্ষেত্রে ন্যায়ের কথাটাও ভাবতে হবে৷ মনে রাখা দরকার, সংকীর্ণ গোষ্ঠীগত স্বার্থের জন্য কৌমভিত্তিক আনুগত্যের ভিত্তিতে একটি বিশেষ গোষ্ঠীর জন্য লড়াই কোনও ভাবে নয়া উদারবাদী জমানার স্থিতাবস্থায় কোনও রকম ফাটল ধরাতে পারবে না৷ এবং আত্মপরিচয়ের এই রাজনীতি প্রান্তিক বর্গের আর্থ-সামাজিক বঞ্চনার কোনও মৌলিক সমাধানেও সক্ষম নয়| কাজেই, প্রান্তিক সামাজিক বর্গের গণতান্ত্রিক দাবিদাওয়ার সঙ্গে যুক্ত করতে হবে শ্রমিক এবং কৃষকদের দাবিকে, কারণ ভারতের মেহনতি জনসংখ্যার সিংহভাগই দলিত, মুসলিম, আদিবাসী বা অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জাতিভুক্ত৷
কাজেই বামপন্থীদের প্রাত্যহিক রাজনীতিতে স্থানীয় স্তরে প্রান্তিক বর্গের মানুষদের সঙ্গে অবিরত যোগসূত্র স্থাপন করতে হবে, তাঁদের সঙ্গে কথোপকথন চালাতে হবে৷ বামপন্থী আন্দোলনের সপক্ষে প্রান্তিক সামাজিক বর্গকে নিয়ে আসতে হলে সাবেকি ভারতীয় রাজনৈতিক দলগুলির মতো শুধু প্রতিনিধিত্বমূলক রাজনীতির আশ্রয় নিলে চলবে না৷ যে দলগুলি প্রান্তিক বর্গের কিছু বাছাই করা মানুষকে সংগঠনের দায়িত্বে এনে বা নির্বাচনে টিকিট দিয়ে সমর্থন জোটানোর চেষ্টা করেন৷ এই ধরনের দায়সারা রাজনীতি প্রান্তিক বর্গের কোনও সমস্যারই স্থায়ী সমাধান করতে পারে না৷ ঠিক যেমন ভাবে নয়া উদারবাদী অর্থনীতির সঙ্গে আপসকামী দলিত বা মুসলিম নেতৃত্বও পারে না স্থিতাবস্থায় কোনও বদল ঘটাতে৷ অবশ্যই তার মানে এই নয় যে, রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের বিষয়টিকে পুরোপুরি বিসর্জন দিতে হবে৷ বরং বামপন্থী সংগঠনের বিভিন্ন স্তরে প্রান্তিক বর্গের মানুষদের যথেষ্ট প্রতিনিধিত্ব প্রান্তিক বর্গের মধ্যেও প্রগতিশীল কণ্ঠকে আরও জোরালো করে তুলতে পারে৷ কিন্ত্ত প্রতিনিধিত্বের রাজনীতি কোনও ভাবেই সামাজিক ন্যায় আন্দোলনের একমাত্র লক্ষ্য হতে পারে না৷ এবং সেটাই রেজ্জাক মোল্লার মতো বামপন্থী নেতার ভাবনার মূল বিষয়বস্ত্ত হওয়া প্রয়োজন৷
লেখক প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক
http://eisamay.indiatimes.com/editorial/post-editorial/conservation-is-of-no-use/articleshow/32711877.cms
No comments:
Post a Comment