যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের পর নিহত দেড়শ, বিশ্ববিদ্যালয় বিধ্বস্ত
ফয়সাল আতিক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 2014-08-03 02:26:12.0 BdST Updated: 2014-08-03 02:53:10.0 BdST
গাজায় ৭২ ঘণ্টার অস্ত্রবিরতি ভঙ্গ করে শুরু করা অভিযানে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা, যাতে একদিনে অন্তত দেড়শ মানুষ নিহত হয়েছেন বলে ফিলিস্তিনের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
RELATED STORIES
-
2014-08-02 22:38:43.0
-
2014-08-02 13:03:58.0
-
2014-08-01 17:43:39.0
শনিবার দিনভর গোলা হামলায় গাজার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বেসামরিক স্থাপনা ধ্বংসের পর হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে না গিয়ে হামলার তীব্রতা কমিয়ে দীর্ঘমেয়াদে অভিযান চালানোর ইঙ্গিত দিয়েছে ইসরায়েল।
এদিকে গাজায় প্রায় এক মাস (২৫ দিন) ধরে চলা ইসরায়েলি অভিযানে নিহতের সংখ্যা এক হাজার ৬৬৫ জনে দাঁড়িয়েছে, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। এছাড়া আকাশ, স্থল ও নৌপথে চালানো ত্রিমুখী হামলায় আহত হয়েছেন প্রায় নয় হাজার ফিলিস্তিনি।
সকালের দিকে গাজা শহরের আবাসিক এলাকা, মসজিদ এবং সেখানকার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিমান হামলা চালানো হয়। এতে বিধ্বস্ত তিনটি মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস হামাসের সামরিক কাজে ব্যবহৃত হতো বলে দাবি করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
শুক্রবার গাজায় সুড়ঙ্গ পথের তল্লাশিতে থাকা সেনাদের ওপর হামাসের আক্রমণের পরই যুদ্ধবিরতি ভেঙে তারা হামলা চালাতে বাধ্য হয় বলে দাবি ইসরায়েলি সেনাদের। তবে হামাস বলেছে, অস্ত্রবিরতির শর্ত লঙ্ঘনের মতো কোনো তৎপরতা তারা চালায়নি।
শুক্রবার আন্তর্জাতিক মহলের মধ্যস্থতায় দুইপক্ষ ৭২ ঘণ্টার অস্ত্রবিরতিতে রাজি হওয়ায় জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি যৌথভাবে তা ঘোষণা করেন।
ওই সময়ের মধ্যে মিশরের রাজধানী কায়রোতে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় বসার আয়োজন হতে থাকে, যাতে হামাসের প্রতিনিধিদেরও রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
গাজার স্থানীয় সময় শুক্রবার সকাল ৮টায় অস্ত্রবিরতি শুরু হলে বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া ফিলিস্তিনিরা নিজেদের এলাকায় ফিরতে শুরু করে। তবে সাড়ে ৯টার দিকেই দক্ষিণ গাজার রাফাহ এলাকা ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক থেকে গোলা হামলা শুরু হতে দেখেন রয়টার্সের এক ফটো সাংবাদিক।
গাজার বেইত হানুন শহরে নিজের বিধ্বস্ত বাড়িতে বসে বিলাপ করছেন এক ফিলিস্তিনি নারী। ছবি: রয়টার্স।
অভিযান চলাকালে কয়েক দফায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে সাময়িক যুদ্ধবিরতি হয়। তবে মানবিক কারণে শুরু হওয়া এসব বিরতি শেষ হতে না হতেই পাল্টাপাল্টি আক্রমণ শুরু করে উভয় পক্ষ।
বিধ্বস্ত নগরী রাফাহ
আন্তর্জাতিক মহলের উদ্যোগে শুক্রবার সকালে শুরু হওয়া হামাস-ইসরায়েলের তিন দিনের অস্ত্রবিরতি শুরুর মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যেই ভেঙ্গে পড়েছিল রাফাহ এলাকায় ইসরায়েলের বড় ধরনের কামান হামলার মধ্য দিয়ে। শুক্রবার সকালের দিকেই গোলা হামলায় অন্তত ৫০ জন নিহত হন।
পরে দিনব্যাপী আরো হামলায় ওই এলাকায় সর্বমোট দেড়শ’ মানুষ নিহত হন বলে হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
রাফাহ শহরের বাসিন্দারা জানান, ইসরায়েলি সেনারা তাদের বাড়িতে অবস্থানের জন্য একের পর এক টেলিফোন করে সতর্ক করতে থাকে। এরইমধ্যে তাদের নিক্ষিপ্ত গোলায় অনেক ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়। কয়েকটি পরিবারের ৭ থেকে ৮ জন করে সদস্য এই অভিযানে নিহত হন।
রাফার বাসিন্দা বাসিম আবেদ রয়টার্সকে বলেন, “অ্যাকশন মুভির দৃশ্যের মতো ছিল সেই অভিযান। চতুর্দিকে বিস্ফোরণ হচ্ছিল, ধোঁয়ার কুণ্ডলির সঙ্গে উড়ে যাচ্ছিল গাড়িগুলো। বোমার আঘাতে বিধ্বস্ত হয়ে পড়া বাড়িঘরের মধ্যে মানুষ একের পর চাপা পড়ছিল।
“ঘটনাস্থল থেকে আমি অলৌকিকভাবে বেঁচে এসেছি।”
গাজার বেইত হানুন শহরে নিজের বিধ্বস্ত বাড়িতে সন্তানকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন ফিলিস্তিনি নারী। ছবি: রয়টার্স।
ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধাপরাধ করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
লক্ষ্য সুড়ঙ্গ ধ্বংস?
গাজার সুড়ঙ্গপথ ব্যবহার করে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র দলগুলো ইসরায়েলে আক্রমণ চালায় বলে অভিযোগ করে আসছে দেশটির সরকার। গাজার সুড়ঙ্গগুলো ধ্বংস করাই চলমান সেনা অভিযানের মূল লক্ষ্য বলে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
ওই সুড়ঙ্গ পথগুলো ধ্বংসের অভিযানে সমর্থন রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রেরও। মিত্র দেশটির আত্মরক্ষার স্বার্থে এমনটি প্রয়োজন বলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মন্তব্য করেন।
এর আগে কয়েক দফার সমায়িক অস্ত্রবিরতির সময়েও সুড়ঙ্গ ধ্বংসের অভিযান অব্যাহত রেখেছিল ইসরায়েলি সেনারা।
গাজা থেকে হামাসের শাসনের অবসানে নয়; বরং সুড়ঙ্গগুলো ধ্বংস করেই সেখানকার অভিযান শেষ করার ঘোষণা দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
এরইমধ্যে হামাসের ৩০টির মতো সুড়ঙ্গপথ ধ্বংস করা হয়েছে বলে ইসরায়েলি সেনা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে রয়টার্স।
গাজার খান ইউনিস শহরে নিজের বিধ্বস্ত বাড়িতে বিলাপ করছেন এক ফিলিস্তিনি নারী। ছবি: রয়টার্স।
গাজার খান ইউনিস এলাকায় নিজের পরিবার নিয়ে মোটরসাইকেল যোগে পালাতে দেখা যায় এই ফিলিস্তিনিকে। ছবি: রয়টার্স।
বেইত লেহিয়ার বাসিন্দাদের ঘরে ফেরা
উত্তর গাজার বেইত লেহিয়া এলাকায় ৭০ হাজার লোকের বসবাস, যারা ইসরায়েলি অভিযানের কারণে ঘর ছেড়ে পালিয়েছিলেন।
শনিবার এক ঘোষণায় ওই এলাকার বাসিন্দাদের নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যেতে বলেছে ইসরায়েল, যাকে ওই এলাকায় অভিযান শেষ করার ইঙ্গিত বলে মনে করা হচ্ছে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বেইত লেহিয়ার বাসিন্দাদের নিজ নিজ বাসস্থানে ফিরে যেতে বলেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। সেখানে হামাসের রেখে দেয়া বিস্ফোরকগুলো এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে তাদের।
তবে বাসিন্দাদের অনেকেই জানিয়েছে, তারা বাড়িতে ফিরে যাওয়ার কোনো নির্দেশনা পাননি।
জাতিসংঘ শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করা তালাব মান্না বলেন, “আমরা ঝুঁকি নিয়ে ফিরে যেতে চাই না, ইসরায়েলি বোমার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে চাই না।”
জিম্মি কৌশল
স্থল অভিযানে ইসরায়েলি সেনারা হামাস যোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়তে পারেন বলে বিশ্লেষকদের আশঙ্কা ছিল। আগেও সেনাদের আটকের পর তাদের মুক্তির বিনিমিয়ে ফিলিস্তিনি বন্দীদের ছাড়িয়ে এনেছিল হামাস।
শুক্রবারও যুদ্ধবিরতির সময় হামাস ইসরায়েলি সেনা হাদার গুলদিনকে অপহরণ করে বলে ইসরায়েলে পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। তবে হামাস তা নাকচ করে বলেছে, ঘটনাটি সম্পর্কে তারাও অন্ধকারে।
রাফাহ সীমান্তের যে এলাকায় হাদার গুলদিন নামের ওই ইসরায়েলি সেনা ‘অপহৃত’ হয়েছিলেন, শুক্রবার সেখানে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল ইসরায়েলি বাহিনী।
এক বিবৃতিতে হামাসের সশস্ত্র শাখা কাসেম ব্রিগেড জানায়, নিখোঁজ ইসরায়েলি সেনা হাদার গুলদিন সম্পর্কে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।
“ধারণা করছি যোদ্ধারা ওই ইসরায়েলি সেনাকে আটক করতে পেরেছিল। পরক্ষণেই ইসরায়েলি গোলা হামলায় হামাস যোদ্ধারাসহ সবাই নিহত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে,” বলা হয় বিবৃতিতে।
No comments:
Post a Comment