ধর্ষণের লজ্জায় ভারতের মাথা হেট: মোদী
নিউজ ডেস্ক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 2014-08-15 14:01:34.0 BdST Updated: 2014-08-15 20:21:06.0 BdST
প্রধানমন্ত্রী নয়, ভারতের স্বাধীনতা দিবসে জাতির ‘প্রধান সেবক’ হিসাবে সামনে এসে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে নিজের লজ্জা আর হতাশার কথা বললেন নরেন্দ্র মোদী।
ধর্ষণ বন্ধে পরিবারের ছেলে সন্তানদের শাসনে রাখার পাশাপাশি জনগণ ও চিকিৎসকদের প্রতি মেয়ে ভ্রূণ হত্যা বন্ধেরও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার নয়াদিল্লির লাল কেল্লা থেকে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে পূর্বসূরি সব সরকার ও প্রধানমন্ত্রীকে দেশের উন্নয়নের জন্য ধন্যবাদ জানান ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পর স্বাধীনতা দিবসে এটাই ছিল তার প্রথম ভাষণ।
এনডিটিভির খবরে বলা হয়, লাল কেল্লার সামনে প্রধানমন্ত্রীর মঞ্চে এ সময় বুলেটবিরোধী কোনো ব্যবস্থা ছিল না, ভারতের গত কয়েক দশকের ইতিহাসে যা একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা।
গেরুয়া পাগড়ি আর ঘিয়ে রঙের ফতুয়া পরিহিত মোদী যখন খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে জাতির উদ্দেশে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন, তার হাতে লিখিত কোনো খসড়াও ছিল না।
তিনি বলেন, “স্বাধীনতা দিবসে ভারতবাসী সবার প্রতি প্রধান সেবকের শুভেচ্ছা। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নয়, আজ আমি আপনাদের সামনে এসেছি প্রধান সেবক হিসাবে।”
মোদী বলেন, একটি সাধারণ দরিদ্র পরিবার থেকে এসে একজন লোক আজ লাল কেল্লায় দাঁড়িয়ে জাতির সামনে ভাষণ দিচ্ছে- এই কৃতিত্ব ভারতীয় গণতন্ত্রের।
ভারতের উন্নয়নে আগের সরকারগুলোর অবদান স্বীকার করে নিতেও কুণ্ঠা বোধ করেননি গত নির্বাচনে চমক দেখিয়ে ক্ষমতায় আসা এই বিজেপি নেতা।
তিনি বলেন, “ভারতের উন্নয়নে অতীতের প্রতিটি সরকারের অবদান রয়েছে। রাজ্য সরকারগুলোও এক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। অতীতে সব সরকার, সব প্রধানমন্ত্রীকে আমি এজন্য সম্মান জানাতে চাই।
গত নির্বাচনে বিজেপি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও এর ভিত্তিতে দেশ শাসন করতে চান না বলে জানান মোদী।
তিনি বলেন, “সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নয়, ঐকমত্যের ভিত্তিতে আমরা এগিয়ে যেতে চাই। সংখ্যাগরিষ্ঠতার ক্ষমতায় আমরা বিশ্বাসী নই, আমরা সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই। প্রধানমন্ত্রী নয়, সব কৃতিত্ব এমপিদের এবং বিরোধী দলের।
গুজরাটের দাঙ্গার কারণে বহু বছর ধরে সমালোচিত এই বিজেপি নেতা সাম্প্রদায়িক সংঘাত বন্ধের জন্যও ভারতবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “আমরা দীর্ঘ দিন ধরে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের বহু নজির দেখে আসছি। এর শেষ কোথায়? বর্ণ প্রথাই হোক বা সাম্প্রদায়িক বিরোধ- এসব ঘটনা জাতির উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করছে।”
গত কয়েক বছর ধরে ভারতে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে নিজের হতাশার কথাও জাতির সামনে তুলে ধরেন মোদী।
তিনি বলেন, “লজ্জায় আমাদের মাথা হেট হয়ে যায়… । ধর্ষণের হাত থেকে বাঁচতে আমাদের বাবা-মায়েরা মেয়েদের শাসনে রাখেন। কিন্তু তারা কি নিজের ছেলেদের শাসন করছেন?
“যে ধর্ষণ করছে, সে তো কারো না কারো ছেলে। আমরা কি জানি আমাদের ছেলেরা কোথায় যাচ্ছে, কি করছে? ছেলে-মেয়ে সবাইকে কেন আমরা এক মাপকাঠিতে দেখব না?”
দেশের জনসংখ্যায় নারী ও পুরুষের অনুপাতে (৯৪০:১০০০) ভারসাম্যহীনতার দিকে আঙল তুলে ভারতীয়দের সতর্ক হতে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আমরা কি নারী-পুরুষ অনুপাত দেখছি না? এই ভারসাম্যহীনতা কে সৃষ্টি করছে? না, ভগবান এটা করেননি। দেশের ডাক্তারদের প্রতি আমি আবেদন জানাই, আপনারা মায়ের গর্ভে মেয়ে ভ্রুণ হত্যা করবেন না। বাবা-মায়ের প্রতি আমি মিনতি জানাই, ছেলে চান বলে আপনারা অনাগত কন্যাকে খুন করবেন না।
“মেয়ে ভ্রুণ হত্যা বন্ধ করুন, একুশ শতকের ভারতে এটা একটা কলঙ্ক। আমি এমন পরিবার দেখেছি যেখানে একজন মেয়ে তার বাবা-মায়ের জন্য যা করেছে, পাঁচজন ছেলে সন্তানও তা পারে না।”
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ভারতে আসার আহ্বান জানিয়ে মোদী বলেন, “বিশ্বকে আমি বলতে চাই, তোমরা ভারতে আসো। দুনিয়ার যেখানে খুশি বিক্রি কর, কিন্তু উৎপাদন কর এখানে। সেই দক্ষতা আর মেধা আমাদের আছে।”
“বিশ্ব এক সময় ভাবত ভারত বুঝি সাপুড়ে আর জাদুটোনার দেশ। কিন্তু আমার দেশের তরুণরা আজ তথ্য প্রযুক্তির দক্ষতা দেখিয়ে বিশ্বকে চমকে দিয়েছে।”
স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে সব নাগরিকদের জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা ও সব স্কুলে টয়লেটের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দিলেও ভারতের আগের নেতাদের মতো বড় ধরনের কোনো ঘোষণা মোদী দেননি।
আগের নেতাদের মতো স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতায় পাকিস্তানের সমালোচনাও তিনি করেননি।
স্বাধীনতা দিবসে যাতে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী হামলা না ঘটতে পারে, সেজন্য আগের দিন থেকেই নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয় রাজধানীকে। দিল্লির বিভিন্ন স্থানে কয়েক হাজার পুলিশ ও সেনা মোতায়েন করা হয়।
No comments:
Post a Comment