আমি স্পাই এডওয়ার্ড স্নোডেন
মূল : এলান রাসব্রিজার ইওয়েন ম্যাকাস্কিল
অনুবাদ : এনামুল হক
অনুবাদ : এনামুল হক
(৩১ জুলাই-এর পর)
কারণ আগে যারা ফাঁস করেছে তাদের পরিণতি ওদের দেখা আছে। ওদের চূড়ান্ত অপদস্থ করে ছাড়া হয়েছে। অস্ত্রের মুখে শাওয়ার থেকে নগ্ন অবস্থায় পরিবার-পরিজনের সামনে টেনে বের করে আনা হয়েছে। আমাদের সবারই মর্টগেজ দেয়া আছে। সবার পরিবার আছে।’
নেটের পর্দার ওপাশে ধূসর আকাশটা অন্ধকার হয়ে এসেছে। স্নোডেন আলোচনায় ছেদ টেনে এক বাটি আইসক্রিমের ফরমায়েশ দিলেন। এরপর তাঁর প্রসঙ্গে উষ্ণতা সঞ্চার করলেন। জানালেন কিভাবে তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা ‘মেটাডাটা’র ওপর দারুণভাবে নির্ভর করতেন। মেটাডাটা হলো ডিজিটাল যোগাযোগের অবস্থানস্থল, সার্চ ও কনট্যাক্ট। এগুলো দেখার জন্য আদালতের আদেশ নেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু এতে আমাদের জীবন সম্পর্কিত বিশাল তথ্য জানা হয়ে যায়। ‘টেলিফোনে কি বলা হলো না হলো তা একজন এনালিস্ট তদন্ত প্রক্রিয়ার শেষ বিন্দুটি পর্যন্ত দশভাগেরই নয় ভাগই গ্রাহ্যের সাধ্যে নেয় না। তারা গ্রাহ্যের মধ্যে নেয় মেটাডাটা, কারণ মেটাডাটা মিথ্যা কথা বলে না। সত্যিকারের কোন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত হলে লোকে টেলিফোন কলে মিথ্যা কথা বলে। তারা সাংকেতিক শব্দ ব্যবহার করে। এই সাংকেতিক শব্দের ভিত্তিতে তারা কথাবার্তা চালিয়ে যেতে থাকে। আপনারা যা শুনেছেন তার ওপর আস্থার রাখতে পারেন না। তবে মেটাডাটার ওপর বিশ্বাস রাখতে পারেন। সে কারণেই মেটাডাটা ব্যাপারটা অনেক সময় অধিকতর অনধিকার প্রবেশমূলক।’
সেøাডেনকে তাঁর নিজের ডিজিটাল অভ্যাস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। জানিয়েছেন যে ব্যক্তিগত কোন কাজে তিনি গুগল বা স্কাইপ ব্যবহার করেন না। ড্রপবক্স কি ব্যবহার করেন? এ প্রশ্নের উত্তরে হেসেছেন স্নোডেন। ড্রপবক্সের পরিবর্তে স্কাইডারওক নামে পুরোপুরি সাংকেতিক ফাইল শোয়ারিং ব্যবস্থার পরামর্শ দিয়েছেন।
রাষ্ট্রকে যতটা বিশ্বাস করা যায় গুগলকে তার চেয়ে বেশি বিশ্বাস কেন করতে হবে এই ছিল গার্ডিয়ানের প্রশ্ন। স্নোডেন জবাব দিয়েছেন, ‘একটা হলো, আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে না। গুগলের সঙ্গে সংশ্রবটা স্বেচ্ছামূলক। তবে এ থেকে একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ওঠে এবং আমি বলব পার্থক্য একটা আছে এই দিক দিয়ে যে গুগল আপনাকে জেলে পুরতে পারবে না, ড্রোন বিমানকে আপনার বাড়িতে বোমা ফেলার দায়িত্ব দিতে পারবে না। তারপরও গুগল কী করছে না করছে, কিভাবে আমাদের ডাটা কাজে লাগাছে যাচাই না করে এদের ওপর আমাদের আস্থা রাখা উচিত নয়।’
এনএসএ ও জিসিএইচকিউর দলিলপত্রের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য লক্ষ্য করে স্নোডেন অতিমাত্রায় শঙ্কিত। এসব নথিপত্রে দেখা যায় ওদের ইঞ্জিনিয়াররা ইন্টারনেটের মৌলিক নিরাপত্তা নস্যাত করতে উঠে পড়ে লেগেছে। বিশ্বব্যাপী ওয়েব আবিষ্কারের কৃতিত্ব যাকে দেয়া হয় সেই স্যার টিম বার্নার্স-লীকেও এই ব্যাপারটা উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। এ প্রসঙ্গে স্নোডেন বলেন, ‘লোকে অনেক সময় যে বিষয়টা উপেক্ষা করে যায় তা হলো কোন যোগাযোগ ব্যবস্থার খিড়কির দরজা তৈরি করা, বিশ্বের যে কেউ সেই দরজা খুঁজে বের করতে পারবে। তা সে একজন ব্যক্তিবিশেষ হতে পারে কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা গবেষক হতে পারে আবার কোন অপরাধী সংগঠন বা বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থাও হতে পারে। যেমন ধরুন ঘোরতর দায়িত্বজ্ঞানহীন সরকারের এনএসএর সমগোত্রীয় কোন সংস্থা। এখন সেই বিদেশী রাষ্ট্রটি ইন্টারনেটের সাহায্যে শুধু আপনার ব্যাংক রেকর্ডই নয়, আপনার ব্যক্তিগত যোগাযোগ বার্তাও খতিয়ে দেখতে পারে।’ তিনি বলেন, রাজনৈতিক তদারকি বর্তমান ব্যবস্থার সমস্যাটা দ্বিবিধ। প্রথমত, রাজনীতিকরা ও নিরাপত্তা সার্ভিসগুলো অতিমাত্রায় ঘনিষ্ঠ। কোন রাজনীতিক গোয়েন্দাপ্রধানের পরামর্শকে অগ্রাহ্য করতে চান না। গোয়েন্দাপ্রধানরা রাজনীতিকদের ‘দুর্বল’ হিসেবে দেখতে পাওয়ার সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে হুঁশিয়ার করে দিয়ে থাকেন এবং তারপর আছে এই সমস্যা যে অধিকাংশ সমাজে নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর তত্ত্বাবধানের দায়িত্বটা থাকে সর্বাধিক সিনিয়র রাজনীতিকদের হাতে, কিংবা যেমন যুক্তরাজ্যের বেলায়, অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের হাতে। স্নোডেনের মতে, এই রাজনীতিক ও বিচারকদের তাদের কী বিষয়টি সন্ধান করে দেখা বা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত বোঝার মতো প্রযুক্তিগত জ্ঞান থাকে না।
গত বছরের উন্মোচিত ঘটনাবলী থেকে অকাট্য প্রমাণ পাওয়া গেছে যে ইনটারনেটে এনক্রিপ্ট না করা যোগাযোগ বাতিগুলো আর নিরাপদ নয়। যে কোন যোগাযোগবার্তা এনক্রিপ্ট করা হতে হবে। গোপনীয়তা রক্ষার পেশাগত দায়িত্ব বোধের পরিচয় দিতে হয় এমন পরিস্থিতিতে যোগাযোগের জন্য কেউ ইমেইল, টেক্সট, ক্লাউড কম্পিউটিং কিংবা স্কাইপ বা ফোন ব্যবহার করলে তার জন্য এ ব্যাপারটা বিশাল তাৎপর্য বহন করে। ‘সাংবাদিকতার কাজটা অপরিমেয় রকম কঠিন হয়ে পড়েছে। সাংবাদিকদের যে কোন ধরনের নেটওয়ার্ক সিগন্যালিং, যে কোন ধরনের সংযোগ, কোথাও কারোর সঙ্গে মিলিত হবার জন্য যাওয়ার পথে চোখে পড়া যে কোন ধরনের লাইসেন্স প্লেট রিডিং ডিভাইস, তাদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের স্থান, সোর্সের সঙ্গে রক্ষা করা যে কোন ই-মেইল যোগাযোগ সম্পর্কে বিশেষভাবে সচেতন থাকতে হবে। কেননা এনক্রিপ্ট করা যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবার আগে এনক্রিপ্ট না হওয়া প্রথম যোগাযোগটাই তাঁর সবকিছু উন্মোচিত করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।’ স্নোডেন সাংবাদিকদের সঙ্গে ‘আইনজীবী ডাক্তার, তদন্তকারী এবং সম্ভবত এ্যাকাউন্টেটদের যোগ করতে’ চান। তাঁর মতে ‘ক্লায়েন্টদের গোপনীয়তা রক্ষার দায়িত্ব আছে এমন যে কেউই এক নতুন ও চ্যালেঞ্জপূর্ণ বিশ্বের সম্মুখীন হচ্ছে।’
তবে যদি স্নোডেনকে জিজ্ঞেস করা হয় যে প্রযুক্তি গোপনীয়তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কি না তাহলে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে তার জবাব হলো ‘অবশ্যই।’ প্রধানত এর কারণ হল তিনি বিশ্বাস করেন যে খোদ প্রযুক্তিই এ সমস্যার ‘প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের জার্নালগুলোতে আমাদের ঘরোয়া জীবনের সেসব খুঁটিনটি বিবরণ থাকে যেগুলো থেকে অনলাইনে পাঠানো ঘরোয়া জীবনের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো কেন আলাদা? ডিজিটাল তথ্য এবং ছাপার অক্ষরে পরিবেশিত তথ্যের মধ্যে এই পার্থক্য থাকা উচিত নয়। কিন্তু মার্কিন সরকার এবং আরও অনেক দেশ এই পার্থক্য সৃষ্টির জন্য উত্তরোত্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।;
স্নোডেন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা বস্তুকে লক্ষ্য করে পরিচালিত গোয়েন্দাবৃত্তির বিরুদ্ধে নন। নিরাপত্তা সংস্থানগুলো যেখানে গোয়েন্দা ক্যামেরা বসানোর জন্য কিম্বা ব্যক্তিগত ডায়ারি ও ফটোগ্রাফ নিয়ে যাওয়ার জন্য নিরীহ লোকজনের বাসায় প্রবেশের ব্যাপার কল্পনাও করতে পারে না। সেখানে তারা ওদের ডিজিটাল সামগ্রী নিয়মিত হরণ করে নিচ্ছে।
এই ডিজিটাল সামগ্রী হরণের দার্শনিক, নৈতিক, আইনগত ও সাংবিধানিক আপত্তির প্রসঙ্গে ফিরে গেলেন স্নোডেন। এনালগ জীবনে এ হরণে কাজটা যদি অন্যায় হয়ে থাকে তাহলে ডিজিটাল জীবনের বেলায় অন্যায় নয় কেন? আর এ কাজটা যে ব্যয়-সাশ্রয়ী কিংবা কার্যকর কোথায় সেই প্রমাণ, তিনি বার বার জিজ্ঞেস করেন এ কথা।
তবে নিশ্চয়ই তিনি স্বীকার করবেন যে কখনও কখনও এমন হয় যখন কোন অপরাধ বা সন্ত্রাসবাদী ঘটনা সংঘটিত হবার পর সংগৃহীত নতিপত্র বাগিয়ে নিতে পারা পুলিশ বা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর জন্য লাভজনক হয়ে দাঁড়ায়? তিনি মানলেন যে প্রমাণ সাপেক্ষে সত্যে বলে ধরে নেয়া যায় এমন পরিস্থিতিতে এ জাতীয় সামর্থ্য কাজে লাগানো যেতে পারে। তবে একইভাবে তিনি পাল্টা প্রশ্ন হাজির করেছেন। আমেরিকা যুদ্ধে লিপ্ত সেই; এ অবস্থা সন্ত্রাসবাদকে একটা অপরাধ সমস্যা হিসেবে গণ্য করতে হবে।
স্নোডেন জার্মান স্ট্যাসিকে একটা দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরে বলেছে, ‘সংস্থাটি এমন সব লোকজনে পরিপূর্ণ ছিল যারা ভাবত তারা তাদের বিবেচনায় হুমকির মুখে থাকা রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা রক্ষা করছে। ওরা ছিল অন্য যে কারোর মতো সাধারণ নাগরিক। ওরা বিশ্বাস করত যে ওরা সঠিক কাজটাই করছে। কিন্তু ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা ওদের দেখণে কী দাঁড়ায়? তাদের জনগণের প্রতি ওরা কী করছিল? ওদের চারপাশের দেশগুলোর প্রতি ওরা কী করছিল? তাদের ব্যাপক ও নির্বিচার অভিযানের নিটফল কী দাড়িয়েছিল?”
মস্কোর আকাশ আঁধার হয়ে আসছে। স্নোডেন যাওয়ার জন্য উদ্যত হলেন। আমরা তাঁকে ভাঙ্গাচোরা হার্ডড্রাইভের একটা খ-াংশ দিলাম। জিসিএইচকিউর সঙ্গে গার্ডিয়ানের বচসার স্মৃতিচিহ্ন ওটা। এক বছর আগে সিনিয়র এডিটররা জিসিএইচকিউর প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে স্নোডেনের নথিপত্র সংরক্ষণের কাজে ব্যবহৃত কম্পিউটারগুলো ধ্বংস করেছিলেন। স্নোডেন ক্ষতবিক্ষত সার্কিট রোডটা পরখ করে দেখতে দেখতে বলে উঠলেন ‘ওয়াও! এই তো আসল জিনিস’ তারপর একেবারেই বিকল হয়ে থাকা জিনিসটা নিয়ে কৌতুকের সুরে বলে উঠলেন ‘হয়ত ট্র্যাঙ্কি ডিভাইস আছে ওতে। আজ রাতে অলক্ষ্যে বাড়ি ফিরতে পারা যাবে কি না কে জানে।
বাইরে একজন ড্রাইভার তখন গাড়ি নিয়ে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে।
(সমাপ্ত)
কারণ আগে যারা ফাঁস করেছে তাদের পরিণতি ওদের দেখা আছে। ওদের চূড়ান্ত অপদস্থ করে ছাড়া হয়েছে। অস্ত্রের মুখে শাওয়ার থেকে নগ্ন অবস্থায় পরিবার-পরিজনের সামনে টেনে বের করে আনা হয়েছে। আমাদের সবারই মর্টগেজ দেয়া আছে। সবার পরিবার আছে।’
নেটের পর্দার ওপাশে ধূসর আকাশটা অন্ধকার হয়ে এসেছে। স্নোডেন আলোচনায় ছেদ টেনে এক বাটি আইসক্রিমের ফরমায়েশ দিলেন। এরপর তাঁর প্রসঙ্গে উষ্ণতা সঞ্চার করলেন। জানালেন কিভাবে তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা ‘মেটাডাটা’র ওপর দারুণভাবে নির্ভর করতেন। মেটাডাটা হলো ডিজিটাল যোগাযোগের অবস্থানস্থল, সার্চ ও কনট্যাক্ট। এগুলো দেখার জন্য আদালতের আদেশ নেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু এতে আমাদের জীবন সম্পর্কিত বিশাল তথ্য জানা হয়ে যায়। ‘টেলিফোনে কি বলা হলো না হলো তা একজন এনালিস্ট তদন্ত প্রক্রিয়ার শেষ বিন্দুটি পর্যন্ত দশভাগেরই নয় ভাগই গ্রাহ্যের সাধ্যে নেয় না। তারা গ্রাহ্যের মধ্যে নেয় মেটাডাটা, কারণ মেটাডাটা মিথ্যা কথা বলে না। সত্যিকারের কোন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত হলে লোকে টেলিফোন কলে মিথ্যা কথা বলে। তারা সাংকেতিক শব্দ ব্যবহার করে। এই সাংকেতিক শব্দের ভিত্তিতে তারা কথাবার্তা চালিয়ে যেতে থাকে। আপনারা যা শুনেছেন তার ওপর আস্থার রাখতে পারেন না। তবে মেটাডাটার ওপর বিশ্বাস রাখতে পারেন। সে কারণেই মেটাডাটা ব্যাপারটা অনেক সময় অধিকতর অনধিকার প্রবেশমূলক।’
সেøাডেনকে তাঁর নিজের ডিজিটাল অভ্যাস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। জানিয়েছেন যে ব্যক্তিগত কোন কাজে তিনি গুগল বা স্কাইপ ব্যবহার করেন না। ড্রপবক্স কি ব্যবহার করেন? এ প্রশ্নের উত্তরে হেসেছেন স্নোডেন। ড্রপবক্সের পরিবর্তে স্কাইডারওক নামে পুরোপুরি সাংকেতিক ফাইল শোয়ারিং ব্যবস্থার পরামর্শ দিয়েছেন।
রাষ্ট্রকে যতটা বিশ্বাস করা যায় গুগলকে তার চেয়ে বেশি বিশ্বাস কেন করতে হবে এই ছিল গার্ডিয়ানের প্রশ্ন। স্নোডেন জবাব দিয়েছেন, ‘একটা হলো, আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে না। গুগলের সঙ্গে সংশ্রবটা স্বেচ্ছামূলক। তবে এ থেকে একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ওঠে এবং আমি বলব পার্থক্য একটা আছে এই দিক দিয়ে যে গুগল আপনাকে জেলে পুরতে পারবে না, ড্রোন বিমানকে আপনার বাড়িতে বোমা ফেলার দায়িত্ব দিতে পারবে না। তারপরও গুগল কী করছে না করছে, কিভাবে আমাদের ডাটা কাজে লাগাছে যাচাই না করে এদের ওপর আমাদের আস্থা রাখা উচিত নয়।’
এনএসএ ও জিসিএইচকিউর দলিলপত্রের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য লক্ষ্য করে স্নোডেন অতিমাত্রায় শঙ্কিত। এসব নথিপত্রে দেখা যায় ওদের ইঞ্জিনিয়াররা ইন্টারনেটের মৌলিক নিরাপত্তা নস্যাত করতে উঠে পড়ে লেগেছে। বিশ্বব্যাপী ওয়েব আবিষ্কারের কৃতিত্ব যাকে দেয়া হয় সেই স্যার টিম বার্নার্স-লীকেও এই ব্যাপারটা উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। এ প্রসঙ্গে স্নোডেন বলেন, ‘লোকে অনেক সময় যে বিষয়টা উপেক্ষা করে যায় তা হলো কোন যোগাযোগ ব্যবস্থার খিড়কির দরজা তৈরি করা, বিশ্বের যে কেউ সেই দরজা খুঁজে বের করতে পারবে। তা সে একজন ব্যক্তিবিশেষ হতে পারে কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা গবেষক হতে পারে আবার কোন অপরাধী সংগঠন বা বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থাও হতে পারে। যেমন ধরুন ঘোরতর দায়িত্বজ্ঞানহীন সরকারের এনএসএর সমগোত্রীয় কোন সংস্থা। এখন সেই বিদেশী রাষ্ট্রটি ইন্টারনেটের সাহায্যে শুধু আপনার ব্যাংক রেকর্ডই নয়, আপনার ব্যক্তিগত যোগাযোগ বার্তাও খতিয়ে দেখতে পারে।’ তিনি বলেন, রাজনৈতিক তদারকি বর্তমান ব্যবস্থার সমস্যাটা দ্বিবিধ। প্রথমত, রাজনীতিকরা ও নিরাপত্তা সার্ভিসগুলো অতিমাত্রায় ঘনিষ্ঠ। কোন রাজনীতিক গোয়েন্দাপ্রধানের পরামর্শকে অগ্রাহ্য করতে চান না। গোয়েন্দাপ্রধানরা রাজনীতিকদের ‘দুর্বল’ হিসেবে দেখতে পাওয়ার সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে হুঁশিয়ার করে দিয়ে থাকেন এবং তারপর আছে এই সমস্যা যে অধিকাংশ সমাজে নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর তত্ত্বাবধানের দায়িত্বটা থাকে সর্বাধিক সিনিয়র রাজনীতিকদের হাতে, কিংবা যেমন যুক্তরাজ্যের বেলায়, অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের হাতে। স্নোডেনের মতে, এই রাজনীতিক ও বিচারকদের তাদের কী বিষয়টি সন্ধান করে দেখা বা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত বোঝার মতো প্রযুক্তিগত জ্ঞান থাকে না।
গত বছরের উন্মোচিত ঘটনাবলী থেকে অকাট্য প্রমাণ পাওয়া গেছে যে ইনটারনেটে এনক্রিপ্ট না করা যোগাযোগ বাতিগুলো আর নিরাপদ নয়। যে কোন যোগাযোগবার্তা এনক্রিপ্ট করা হতে হবে। গোপনীয়তা রক্ষার পেশাগত দায়িত্ব বোধের পরিচয় দিতে হয় এমন পরিস্থিতিতে যোগাযোগের জন্য কেউ ইমেইল, টেক্সট, ক্লাউড কম্পিউটিং কিংবা স্কাইপ বা ফোন ব্যবহার করলে তার জন্য এ ব্যাপারটা বিশাল তাৎপর্য বহন করে। ‘সাংবাদিকতার কাজটা অপরিমেয় রকম কঠিন হয়ে পড়েছে। সাংবাদিকদের যে কোন ধরনের নেটওয়ার্ক সিগন্যালিং, যে কোন ধরনের সংযোগ, কোথাও কারোর সঙ্গে মিলিত হবার জন্য যাওয়ার পথে চোখে পড়া যে কোন ধরনের লাইসেন্স প্লেট রিডিং ডিভাইস, তাদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের স্থান, সোর্সের সঙ্গে রক্ষা করা যে কোন ই-মেইল যোগাযোগ সম্পর্কে বিশেষভাবে সচেতন থাকতে হবে। কেননা এনক্রিপ্ট করা যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবার আগে এনক্রিপ্ট না হওয়া প্রথম যোগাযোগটাই তাঁর সবকিছু উন্মোচিত করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।’ স্নোডেন সাংবাদিকদের সঙ্গে ‘আইনজীবী ডাক্তার, তদন্তকারী এবং সম্ভবত এ্যাকাউন্টেটদের যোগ করতে’ চান। তাঁর মতে ‘ক্লায়েন্টদের গোপনীয়তা রক্ষার দায়িত্ব আছে এমন যে কেউই এক নতুন ও চ্যালেঞ্জপূর্ণ বিশ্বের সম্মুখীন হচ্ছে।’
তবে যদি স্নোডেনকে জিজ্ঞেস করা হয় যে প্রযুক্তি গোপনীয়তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কি না তাহলে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে তার জবাব হলো ‘অবশ্যই।’ প্রধানত এর কারণ হল তিনি বিশ্বাস করেন যে খোদ প্রযুক্তিই এ সমস্যার ‘প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের জার্নালগুলোতে আমাদের ঘরোয়া জীবনের সেসব খুঁটিনটি বিবরণ থাকে যেগুলো থেকে অনলাইনে পাঠানো ঘরোয়া জীবনের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো কেন আলাদা? ডিজিটাল তথ্য এবং ছাপার অক্ষরে পরিবেশিত তথ্যের মধ্যে এই পার্থক্য থাকা উচিত নয়। কিন্তু মার্কিন সরকার এবং আরও অনেক দেশ এই পার্থক্য সৃষ্টির জন্য উত্তরোত্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।;
স্নোডেন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা বস্তুকে লক্ষ্য করে পরিচালিত গোয়েন্দাবৃত্তির বিরুদ্ধে নন। নিরাপত্তা সংস্থানগুলো যেখানে গোয়েন্দা ক্যামেরা বসানোর জন্য কিম্বা ব্যক্তিগত ডায়ারি ও ফটোগ্রাফ নিয়ে যাওয়ার জন্য নিরীহ লোকজনের বাসায় প্রবেশের ব্যাপার কল্পনাও করতে পারে না। সেখানে তারা ওদের ডিজিটাল সামগ্রী নিয়মিত হরণ করে নিচ্ছে।
এই ডিজিটাল সামগ্রী হরণের দার্শনিক, নৈতিক, আইনগত ও সাংবিধানিক আপত্তির প্রসঙ্গে ফিরে গেলেন স্নোডেন। এনালগ জীবনে এ হরণে কাজটা যদি অন্যায় হয়ে থাকে তাহলে ডিজিটাল জীবনের বেলায় অন্যায় নয় কেন? আর এ কাজটা যে ব্যয়-সাশ্রয়ী কিংবা কার্যকর কোথায় সেই প্রমাণ, তিনি বার বার জিজ্ঞেস করেন এ কথা।
তবে নিশ্চয়ই তিনি স্বীকার করবেন যে কখনও কখনও এমন হয় যখন কোন অপরাধ বা সন্ত্রাসবাদী ঘটনা সংঘটিত হবার পর সংগৃহীত নতিপত্র বাগিয়ে নিতে পারা পুলিশ বা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর জন্য লাভজনক হয়ে দাঁড়ায়? তিনি মানলেন যে প্রমাণ সাপেক্ষে সত্যে বলে ধরে নেয়া যায় এমন পরিস্থিতিতে এ জাতীয় সামর্থ্য কাজে লাগানো যেতে পারে। তবে একইভাবে তিনি পাল্টা প্রশ্ন হাজির করেছেন। আমেরিকা যুদ্ধে লিপ্ত সেই; এ অবস্থা সন্ত্রাসবাদকে একটা অপরাধ সমস্যা হিসেবে গণ্য করতে হবে।
স্নোডেন জার্মান স্ট্যাসিকে একটা দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরে বলেছে, ‘সংস্থাটি এমন সব লোকজনে পরিপূর্ণ ছিল যারা ভাবত তারা তাদের বিবেচনায় হুমকির মুখে থাকা রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা রক্ষা করছে। ওরা ছিল অন্য যে কারোর মতো সাধারণ নাগরিক। ওরা বিশ্বাস করত যে ওরা সঠিক কাজটাই করছে। কিন্তু ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা ওদের দেখণে কী দাঁড়ায়? তাদের জনগণের প্রতি ওরা কী করছিল? ওদের চারপাশের দেশগুলোর প্রতি ওরা কী করছিল? তাদের ব্যাপক ও নির্বিচার অভিযানের নিটফল কী দাড়িয়েছিল?”
মস্কোর আকাশ আঁধার হয়ে আসছে। স্নোডেন যাওয়ার জন্য উদ্যত হলেন। আমরা তাঁকে ভাঙ্গাচোরা হার্ডড্রাইভের একটা খ-াংশ দিলাম। জিসিএইচকিউর সঙ্গে গার্ডিয়ানের বচসার স্মৃতিচিহ্ন ওটা। এক বছর আগে সিনিয়র এডিটররা জিসিএইচকিউর প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে স্নোডেনের নথিপত্র সংরক্ষণের কাজে ব্যবহৃত কম্পিউটারগুলো ধ্বংস করেছিলেন। স্নোডেন ক্ষতবিক্ষত সার্কিট রোডটা পরখ করে দেখতে দেখতে বলে উঠলেন ‘ওয়াও! এই তো আসল জিনিস’ তারপর একেবারেই বিকল হয়ে থাকা জিনিসটা নিয়ে কৌতুকের সুরে বলে উঠলেন ‘হয়ত ট্র্যাঙ্কি ডিভাইস আছে ওতে। আজ রাতে অলক্ষ্যে বাড়ি ফিরতে পারা যাবে কি না কে জানে।
বাইরে একজন ড্রাইভার তখন গাড়ি নিয়ে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে।
(সমাপ্ত)
http://allbanglanewspapers.com/janakantha/
No comments:
Post a Comment