‘অবৈধ’ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধে হস্তক্ষেপ চায় ইউজিসি
নিজস্ব প্রতিবেদক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 2014-08-15 16:51:55.0 BdST Updated: 2014-08-15 20:20:02.0 BdST
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নীতি বিবর্জিত’ শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধে দুটি মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি বিচার বিভাগের ‘পদক্ষেপ’ চেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
বর্তমানে ৭৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ১১৬টি শাখা সরকার ও ইউজিসির অনুমোদন নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে জানিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের ঠিকানাও তুলে ধরা হয়েছে কমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে।
কমিশনের সদস্য আতফুল হাই শিবলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শিক্ষার্থীরা যেন ‘অবৈধ’ শাখায় ভর্তি না হয় সে বিষয়ে সতর্ক করতেই এ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে।
অবৈধভাবে পরিচালিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকাও শিগগিরই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রকাশ করা হবে বলে জানান তিনি।
“আদালতের রায় নিয়ে পরিচালিত এবং যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব আছে তাদের তালিকাও তুলে ধরা হবে।”
শিবলী বলেন, “অনেকে কম পয়সায়, কম সময়ে টাকার বিনিময়ে সনদ কিনতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবৈধ শাখায় ভর্তি হয়। সতর্ক করার পরেও যারা অবৈধ শাখায় ভর্তি হবে তাদের বিষয়ে সরকারের কোনো দায়-দায়িত্ব থাকবে না।”
বর্তমানে বাংলাদেশের ৭৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১১টিতে মালিকানার দ্বন্দ্ব এবং অবৈধ ক্যাম্পাস পরিচালনার মাধ্যমে সনদ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে ইউজিসি বলেছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক নির্বাহী প্রধান। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের ‘ক্ষমতার অপব্যবহার, ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি ও দ্বন্দ্বের কারণে’ উপাচার্য যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না।
এতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় ‘নানারকম অব্যস্থাপনা’ দেখা দিচ্ছে বলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইউজিসি স্বীকার করেছে।
“বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবৈধ ক্যাম্পাস বন্ধে ইউজিসির নিষেধাজ্ঞার ওপর উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ ও মামলা জটের ফলে ওইসব বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার নামে তথাকথিত কার্যক্রম পরিচালিত করছে।”
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিশ্চিত করা এবং ‘সনদ বিক্রি’ বন্ধে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভূমিকাই যথেষ্ট নয়। এই ‘নীতি বিবর্জিত কার্যক্রম’ বন্ধে স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়, বিচার বিভাগ এবং ওইসব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের পদক্ষেপ প্রয়োজন।
ইউজিসিকে ক্ষমতায়তনের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা কমিশনে রূপান্তরিত করলে বেশিরভাগ সমস্যা দূর করা সম্ভব হবে বলেও মনে করে সংস্থাটি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ইবাইস, দারুল ইহসান, প্রাইম, নর্দার্ন, সাউদার্ন, এশিয়ান, অতীশ দীপঙ্কর, পিপলস, বিজিসি ট্রাস্ট, কুইনস এবং আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিতে মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব ও ট্রাস্টি বোর্ডে বিভক্তি আছে। কোনো কোনোটি উচ্চ আদালতের রায় নিয়ে অবৈধভাবে ‘আউটার ক্যাম্পাস’ পরিচালনা করছে।
তবে ইউজিসির বিজ্ঞপ্তিতে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছে।
ইবাইস ইউনিভার্সিটি নিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে ইউজিসি বলেছে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ট্রাস্টি বোর্ড দুই ভাগে বিভক্ত এবং পরস্পরের বিরুদ্ধে মামলা চলছে।
প্রাইম ইউনিভার্সিটির ২এ/১, নর্থ ইস্ট দারুস সালাম রোডের ক্যাম্পাস সুপ্রিম কোর্টের মাধ্যমে স্বীকৃত উল্লেখ করে ইউজিসি বলেছে, অন্য ঠিকানায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবৈধ শাখা উচ্ছেদের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে।
আর ঝালকাঠির গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি অনুমোদন পাওয়ার পর সরকার বা ইউজিসির সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
মালিকানাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিরোধ থাকা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ‘দ্বন্দ্ব’ মেটাতে না পারলে ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হবে বলে গত ১৬ জানুয়ারি হুমকি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এরপর অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সমস্যার সমাধান করতে না পারলেও সরকার প্রশাসক নিয়োগের বিষয়টি আর এগিয়ে নেয়নি।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজস্ব ক্যাম্পাসে ফিরতে গত তিন বছরে তিন দফা সময় দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই সময়ের মধ্যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ই কেবল নিজস্ব ক্যাম্পাস চালু করতে পেরেছে।
যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সাত বছর পার করছে তাদের নিজস্ব ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের জন্য ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
তবে ১৫ অগাস্ট পর্যন্ত মাত্র ১৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে বলে ইউজিসি জানিয়েছে।
No comments:
Post a Comment