যৌনবাণিজ্যে বাংলাদেশি নারী বাড়ছে ভারতে
গৌতম দেবরায়, নয়া দিল্লি থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 2014-08-13 22:05:26.0 BdST Updated: 2014-08-14 18:01:50.0 BdST
ভারতে যৌনবাণিজ্যে বাংলাদেশি নারীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তা নিয়ে উদ্বিগ্ন নয়া দিল্লি সরকার, যা মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের কূটনীতিকদের জন্যও।
এই বাণিজ্যে যোগ হওয়া বাংলাদেশি নারীদের প্রায় সবাই পাচারের শিকার হয়ে বাধ্য হলেও কয়েকটি ক্ষেত্রে স্বেচ্ছায় জড়িত হওয়ার নজির মিলেছে বলে ভারতীয় কর্মকর্তাদের দাবি।
ভারতে বাংলাদেশ হাই কমিশনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এই বিষয়টি নিয়ে নিজেদের অস্বস্তির কথা জানিয়েছেন।
“ভারতে দেহ ব্যবসায় বাংলাদেশি নারীদের জড়িত থাকার বিষয়ে আমরা সজাগ রয়েছি। এটা বন্ধ করতে আমরা একটা কৌশল নিয়ে কাজ করছি,” বলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কূটনীতিক।
ভারত সরকারের তথ্য অনুযায়ী, মুম্বাইয়ের বিভিন্ন যৌনপল্লী থেকে দেড়শ’ এবং দিল্লির যৌনপল্লী থেকে ৮০ জন বাংলাদেশি নারীকে উদ্ধার করে দুই শহরের বিভিন্ন পুনর্বাসন কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।
“জাতীয়তা যাচাই করে তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ,” বলেন বাংলাদেশ হাই কমিশনের ওই কর্মকর্তা।
গত তিন বছরে ভারতের বিভিন্ন শহরের যৌনপল্লী থেকে উদ্ধারের পর দেড়শ’ বাংলাদেশি নারীকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
এরা সবাই মানব পাচারের স্বীকার হয়ে বাধ্য হয়ে যৌনদাসত্বে নামেন বলে জানান বাংলাদেশি ওই কূটনীতিক। তার কথায় সায় মেলে নয়া দিল্লিভিত্তিক বেসরকারি সংগঠন ‘শক্তি বাহিনী’র সদস্য সুবীর রায়ের কথায়ও।
নয়া দিল্লিভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা শক্তি বাহিনীর এই সদস্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিভিন্ন সময়ে আমরা যখন এসব অসহায় বাংলাদেশি নারীদের সঙ্গে কথা বলেছি তখন তারা জানিয়েছে, তারা মানব পাচারের শিকার। ভারতের বিভিন্ন শহরে ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সহজেই তাদের ফাঁদে ফেলে পাচারকারীরা।”
মুম্বাইয়ের একটি যৌনপল্লী
গত বছরের সেপ্টেম্বরে হরিয়ানার একটি হোটেল থেকে বৈধ পাসপোর্টধারী ২০ বছর বয়সী এক বাংলাদেশি তরুণীকে উদ্ধারের ঘটনাটি নজির হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে এক্ষেত্রে, যা এনজিওকর্মী সুবীর রায়েরও জানা।
তিনি বলেন, “তার খোঁজ জানতে পারার পর আমরা দিল্লি পুলিশের মানবপাচার প্রতিরোধ শাখার সহায়তা নিয়ে হরিয়ানার একটি অভিজাত হোটেল থেকে তাকে উদ্ধার করি।”
পরে বাংলাদেশ হাই কমিশনের মাধ্যমে ওই তরুণীকে ঢাকা পাঠানো হয় বলে জানান সুবীর রায়।
বাংলাদেশ হাই কমিশনের কর্মকর্তাদের মতে, দুর্বল সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং দারিদ্র্যের কারণে বাংলাদেশি নারীরা ভারতে পাচার হচ্ছেন।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মিজোরাম, ত্রিপুরা, ও মেঘালয় রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের ৪ হাজার ৯৬ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ৩ হাজার কিলোমিটার এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর ৭৭ শতাংশ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। তবে সীমান্তে কিছু জায়গা নিয়ে বিরোধ থাকায় বেড়া নির্মাণের কাজ বিলম্বিত হচ্ছে।
সীমান্ত দিয়ে পাচার রোধে সম্প্রতি একটি নির্দেশনা জারি করেছে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এতে কোনো বিদেশি নাগরিক গ্রেপ্তার বা আটক হলে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের মিশনকে জানাতে বলা হয়েছে।
একইসঙ্গে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাসপোর্ট ও ভিসা (সিপিভি) বিভাগকেও খবরটি দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
নির্দেশনায় মানব পাচারকারী এবং পাচার হওয়া ব্যক্তির প্রতি পুলিশকে ভিন্ন আচরণ করতে বলা হয়েছে।
মানব পাচারকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে নথিপত্র, ফরেনসিক পরীক্ষা ও বস্তুগত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তাদের বিচারের কথা বলা হয়েছে।
“মানব পাচারের ঘটনা তদন্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে উৎসাহ দিতে রাজ্য সরকারগুলোকে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে, যাতে শাস্তি নিশ্চিত করা যায়। এক্ষেত্রে দ্রুত বিচার আদালতের ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন,” বলা হয় ভারতীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায়।
No comments:
Post a Comment