আড়াই লাখ কণ্ঠে ‘সোনার বাংলা’ বিশ্বময়
লিটন হায়দার, সুমন মাহবুব, আশিক হোসেন ও সুলাইমান নিলয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 2014-03-26 11:34:01.0 BdST Updated: 2014-03-26 18:36:47.0 BdST
লিটন হায়দার, সুমন মাহবুব, আশিক হোসেন ও সুলাইমান নিলয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 2014-03-26 11:34:01.0 BdST Updated: 2014-03-26 18:36:47.0 BdST
মাথার ওপরে স্বাধীনতা দিবসের সূর্য, জাতীয় প্যারেড ময়দানে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৬৮১ জন নারী-পুরুষ, কিশোর-কিশোরী, তাদের মাঝে উপস্থিত খোদ দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সবার কণ্ঠে এক সুর- আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি।
RELATED VIDEO
বুধবার বেলা ১১টা ২০ মিনিটে এভাবেই লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গেয়ে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখানোর দাবি তুলল বাংলাদেশ।
২০১৩ সালের ৬ মে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গেয়ে গিনেজ বুকে স্থান করে নিয়েছিল সাহারা ইন্ডিয়া পরিবার (ভারত)। ওই আয়োজনে ১ লাখ ২১ হাজার ৬৫৩ জন অংশ নিয়েছিলেন। বাংলাদেশের আয়োজনে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল তার দ্বিগুণেরও বেশি।
কেবল মাঠেই নয়, প্যারেড গ্রাউন্ডের বাইরে এবং রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যে যেখানে ছিলেন, সবাই দাঁড়িয়ে শামিল হয়েছেন এই আয়োজনে, কণ্ঠ মিলিয়েছেন ‘সোনার বাংলা’য়।
অনুষ্ঠান শেষে ফেরার সময় উত্তরার ব্যবসায়ী ষাটোর্ধ্ব হাজী মতিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আজ জাতীয় সংগীত গাইলাম। নিজেকে আজ স্কুলের ছাত্র মনে হচ্ছে। ভালো লাগছে এত বড় আয়োজনে অংশ নিতে পেরে।”
ধানমণ্ডির শফিউদ্দিন গাজী জানালেন তিনি এসেছেন তিন প্রজন্মের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে।
“একত্রে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার সংগীতে অংশ নিয়েছি। ভালোয় ভালোয় এখন বিশ্ব রেকর্ড হলেই হয়।”
গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিরা পুরো অনুষ্ঠানটি পর্যবেক্ষণ করেন। তাদের পাঠানো প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই নির্ধারিত হবে- বাংলাদেশের এই আয়োজন রেকর্ড বইয়ে উঠবে কি-না।
সকাল সাড়ে ৬টায় প্যারেড মাঠের ফটক খুলে দেয়ার আগেই নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে পায়ে হেঁটে এসে বাইরে জড়ো হতে থাকেন নানা বয়সী নারী-পুরুষ, কিশোর-কিশোরী।
মুক্তিযোদ্ধা; বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী; সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য; বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, আনসার ভিডিপি; রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, পোশাক, পরিবহন ও বিভিন্ন খাতের কর্মীসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষ প্যারেড মাঠে উপস্থিত হতে থাকেন জাতীয় সংগীতে কণ্ঠ মেলাতে।
সকাল সাড়ে ১০টায় গাড়ি থেকে নেমে পতাকা হাতে মাঠের ৯ সেক্টরের উত্তর দিকে নির্ধারিত মঞ্চে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
লাল-সবুজ পাড়ের সাদা জামদানি শাড়ি পরিহিত সরকার প্রধান মঞ্চে উঠেই পতাকা হাতে সবার উদ্দেশ্যে হাত নাড়েন। সমবেত সবাই পাল্টা পতাকা নেড়ে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছার জবাব দেন।
ওই মঞ্চে থেকেই জাতীয় সংগীতে কণ্ঠ মেলান তিনি।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার ও সাবেক সেনাপ্রধান কে এম শফিউল্লাহ, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল, সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভুঁইয়া, নৌবাহিনী প্রধান ভাইস এডমিরাল এম ফরিদ হাবিব ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল এম ইনামুল বারী এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল এই মঞ্চে ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী যখন মঞ্চে আসেন, - তখন মাঠে হাজির ২ লাখ ৩১ হাজার নারী-পুরুষ, কিশোর-কিশোরী। আর ১০টা ৫৫ মিনিটে প্রথম মহড়ায় অংশ নেয় ২ লাখ ৫১ হাজার মানুষ।
দ্বিতীয় মহড়ার পর চূড়ান্ত সময়ে, অর্থাৎ জাতীয় সংগীত গাওয়ার সময় সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ২ লাখ ৫৪ হাজার ৬৮১ জনে।
এর আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই আয়োজনে শামিল সবাইকে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার চেতনাকে শাণিত করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “বাঙালি সবসময় ইতিহাস সৃষ্টি করে।বাঙালি আবার নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করবে।আমাদের জাতীয় সঙ্গীত, যে সঙ্গীতের মধ্যে দিয়ে আমরা আমাদের ভালোবাসা জানাই দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি, যে জাতীয় সঙ্গীত আমাকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বেলিত করে, আমাদের চেতনার অগ্নিশিখা প্রজ্জ্বলিত করে, সেই জাতীয় সঙ্গীত লাখো কণ্ঠে আমরা গাইব, যা বিশ্বে ইতিহাস হয়ে থাকবে।”
এই আয়োজনে সম্পৃক্ত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, আনসার, ভিডিপি, গার্মেন্টকর্মী, নারী-শিশু, সংস্কৃতিকর্মীসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষকে স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবসের শুভেচ্ছা জানান তিনি।
সকালে মাঠের প্রতিটি ফটক দিয়ে আগ্রহীদের প্রবেশ করতে দেয়া হয় গুণে গুণে। প্রত্যেকটি প্রবেশপথে ছিল সংক্রিয় গণনার ব্যবস্থা। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর মঞ্চের প্রবেশপথ এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের প্রবেশপথেও গণনার ব্যবস্থাসম্বলিত গেইট বসানো হয়।
অনেকেই মাঠে আসেন গায়ে পতাকা জড়িয়ে, মাথায় পতাকার রঙের ব্যান্ডানা পরে। শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে প্যারেড মাঠের ওই অংশটি ভাগ করা হয় ১৫টি সেক্টরে।
অংশগ্রহণকারী প্রত্যেককে একটি করে ক্যাপ ও ব্যাগ দেয়া হয়, যাতে জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত ও নিয়মাবলী লেখা সংবলিত একটি কার্ড, পানি, জুস, স্যালাইনসহ তাৎক্ষণিক চিকিৎসার ওষুধ ছিল। প্রতিটি সেক্টরে একটি করে বড় স্ক্রিনে কিছুক্ষণ পরপরই জানিয়ে দেয়া হচ্ছিল মাঠের পরিস্থিতি আর উপস্থিতি।
৯ নম্বর সেক্টরের উত্তর দিকে প্রধানমন্ত্রীর, ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য করা হয় বিশেষ মঞ্চ। সরকারের মন্ত্রী, সাংসদসহ অন্যরা ছিলেন তার দক্ষিণ দিকে সামিয়ানার নিচে।
প্রধানমন্ত্রীর মঞ্চের উল্টো দিকে মাঠের অপর প্রান্তে অনুষ্ঠানের মূলমঞ্চের পশ্চাদপট সাজানো হয় মাঝখানে বঙ্গবন্ধুর ছবি দিয়ে। ডান দিকে ছিল চার জাতীয় নেতা ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছবি। আর বাম দিকে সাত বীর শ্রেষ্ঠ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি।
মূল পর্বের আগে সকাল ৮টা থেকে শিল্পকলা একাডেমীর পরিবেশনায় দেশবরেণ্য এবং খ্যাতনামা শিল্পীদের অংশগ্রহণে মাঠে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। চূড়ান্ত জাতীয় সংগীত পরিবেশনের আগে পৌনে ১১টায় হয় দুই দফা অনুশীলন। প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার সদস্যরাও এতে অংশ নেন।
অনুষ্ঠান শেষে আসাদুজ্জামান নূর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।”
আর কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, “আমরাই পারি।”
জাতীয় সংগীত গেয়ে বাড়ি ফেরার পথে পোশাক কর্মী হোসনে আরা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আওনের পর রইদে খারাপ লাগছিল, অহন ভাল্লাগতেছে। ছোড থাকতে ইশকুলে জাতীয় সংগীত গাইছি। এইবার এতো মানুষের লগে গাইলাম।”
অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হলেও শেষ পর্যন্ত পুরো বিষয়টি ‘দারুণ আনন্দের’ ছিল বলে জানাল নওয়াব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুলের শিক্ষার্থী নজিবুর রহমান সৈকত।
তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী মো. আরিফুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাত ৪টায় জেগেছি। ৫ টায় বাসা থেকে (জুরাইন) বের হয়েছি। কলেজ ঘুরে ৭টায় এখানে এসেছি। এতো সব কষ্ট বিশ্ব রেকর্ড করার জন্য।”
অনুষ্ঠানের আগে বিভিন্ন অঙ্গনের শিল্পীরা অনুষ্ঠানে এসে সংহতি প্রকাশ করেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীরা ছাড়াও সবিনা ইয়াসমিন, সামিনা চৌধুরী, কনকচাঁপা, কনা, শুভ্র দেব, মমতাজ, বাপ্পা মজুমদার, ফকির আমলগীর, মিতা হক, তপন চৌধুরী, এন্ড্রু কিশোর, আইয়ুব বাচ্চুসহ শিল্পীরা মূলমঞ্চে জাতীয় সংগীতে কণ্ঠ মেলান।
সংহতি প্রকাশ করে চিত্র নায়ক ফেরদৌস বলেন, “একটি স্বপ্ন নিয়ে আমরা এই দেশ গড়েছিলাম। লাল সবুজের পতাকা হাতে আজ এসেছি জাতীয় সংগীত গাইতে।”
এ আয়োজনের সার্বিক দায়িত্বে ছিল সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ।
প্যারেড গ্রাউন্ডে আসা কেউ কেউ গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ রকম অন্তত ৩০ জনকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে স্থাপতি সেনাবাহিনীর মেডিকেল ক্যাম্পে চিকিৎসা দেয়া হয়।
বুধবার বেলা ১১টা ২০ মিনিটে এভাবেই লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গেয়ে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখানোর দাবি তুলল বাংলাদেশ।
২০১৩ সালের ৬ মে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গেয়ে গিনেজ বুকে স্থান করে নিয়েছিল সাহারা ইন্ডিয়া পরিবার (ভারত)। ওই আয়োজনে ১ লাখ ২১ হাজার ৬৫৩ জন অংশ নিয়েছিলেন। বাংলাদেশের আয়োজনে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল তার দ্বিগুণেরও বেশি।
কেবল মাঠেই নয়, প্যারেড গ্রাউন্ডের বাইরে এবং রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যে যেখানে ছিলেন, সবাই দাঁড়িয়ে শামিল হয়েছেন এই আয়োজনে, কণ্ঠ মিলিয়েছেন ‘সোনার বাংলা’য়।
অনুষ্ঠান শেষে ফেরার সময় উত্তরার ব্যবসায়ী ষাটোর্ধ্ব হাজী মতিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আজ জাতীয় সংগীত গাইলাম। নিজেকে আজ স্কুলের ছাত্র মনে হচ্ছে। ভালো লাগছে এত বড় আয়োজনে অংশ নিতে পেরে।”
ধানমণ্ডির শফিউদ্দিন গাজী জানালেন তিনি এসেছেন তিন প্রজন্মের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে।
“একত্রে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার সংগীতে অংশ নিয়েছি। ভালোয় ভালোয় এখন বিশ্ব রেকর্ড হলেই হয়।”
গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিরা পুরো অনুষ্ঠানটি পর্যবেক্ষণ করেন। তাদের পাঠানো প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই নির্ধারিত হবে- বাংলাদেশের এই আয়োজন রেকর্ড বইয়ে উঠবে কি-না।
সকাল সাড়ে ৬টায় প্যারেড মাঠের ফটক খুলে দেয়ার আগেই নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে পায়ে হেঁটে এসে বাইরে জড়ো হতে থাকেন নানা বয়সী নারী-পুরুষ, কিশোর-কিশোরী।
মুক্তিযোদ্ধা; বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী; সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য; বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, আনসার ভিডিপি; রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, পোশাক, পরিবহন ও বিভিন্ন খাতের কর্মীসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষ প্যারেড মাঠে উপস্থিত হতে থাকেন জাতীয় সংগীতে কণ্ঠ মেলাতে।
সকাল সাড়ে ১০টায় গাড়ি থেকে নেমে পতাকা হাতে মাঠের ৯ সেক্টরের উত্তর দিকে নির্ধারিত মঞ্চে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
লাল-সবুজ পাড়ের সাদা জামদানি শাড়ি পরিহিত সরকার প্রধান মঞ্চে উঠেই পতাকা হাতে সবার উদ্দেশ্যে হাত নাড়েন। সমবেত সবাই পাল্টা পতাকা নেড়ে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছার জবাব দেন।
ওই মঞ্চে থেকেই জাতীয় সংগীতে কণ্ঠ মেলান তিনি।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার ও সাবেক সেনাপ্রধান কে এম শফিউল্লাহ, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল, সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভুঁইয়া, নৌবাহিনী প্রধান ভাইস এডমিরাল এম ফরিদ হাবিব ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল এম ইনামুল বারী এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল এই মঞ্চে ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী যখন মঞ্চে আসেন, - তখন মাঠে হাজির ২ লাখ ৩১ হাজার নারী-পুরুষ, কিশোর-কিশোরী। আর ১০টা ৫৫ মিনিটে প্রথম মহড়ায় অংশ নেয় ২ লাখ ৫১ হাজার মানুষ।
দ্বিতীয় মহড়ার পর চূড়ান্ত সময়ে, অর্থাৎ জাতীয় সংগীত গাওয়ার সময় সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ২ লাখ ৫৪ হাজার ৬৮১ জনে।
এর আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই আয়োজনে শামিল সবাইকে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার চেতনাকে শাণিত করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “বাঙালি সবসময় ইতিহাস সৃষ্টি করে।বাঙালি আবার নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করবে।আমাদের জাতীয় সঙ্গীত, যে সঙ্গীতের মধ্যে দিয়ে আমরা আমাদের ভালোবাসা জানাই দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি, যে জাতীয় সঙ্গীত আমাকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বেলিত করে, আমাদের চেতনার অগ্নিশিখা প্রজ্জ্বলিত করে, সেই জাতীয় সঙ্গীত লাখো কণ্ঠে আমরা গাইব, যা বিশ্বে ইতিহাস হয়ে থাকবে।”
এই আয়োজনে সম্পৃক্ত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, আনসার, ভিডিপি, গার্মেন্টকর্মী, নারী-শিশু, সংস্কৃতিকর্মীসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষকে স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবসের শুভেচ্ছা জানান তিনি।
সকালে মাঠের প্রতিটি ফটক দিয়ে আগ্রহীদের প্রবেশ করতে দেয়া হয় গুণে গুণে। প্রত্যেকটি প্রবেশপথে ছিল সংক্রিয় গণনার ব্যবস্থা। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর মঞ্চের প্রবেশপথ এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের প্রবেশপথেও গণনার ব্যবস্থাসম্বলিত গেইট বসানো হয়।
অনেকেই মাঠে আসেন গায়ে পতাকা জড়িয়ে, মাথায় পতাকার রঙের ব্যান্ডানা পরে। শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে প্যারেড মাঠের ওই অংশটি ভাগ করা হয় ১৫টি সেক্টরে।
অংশগ্রহণকারী প্রত্যেককে একটি করে ক্যাপ ও ব্যাগ দেয়া হয়, যাতে জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত ও নিয়মাবলী লেখা সংবলিত একটি কার্ড, পানি, জুস, স্যালাইনসহ তাৎক্ষণিক চিকিৎসার ওষুধ ছিল। প্রতিটি সেক্টরে একটি করে বড় স্ক্রিনে কিছুক্ষণ পরপরই জানিয়ে দেয়া হচ্ছিল মাঠের পরিস্থিতি আর উপস্থিতি।
৯ নম্বর সেক্টরের উত্তর দিকে প্রধানমন্ত্রীর, ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য করা হয় বিশেষ মঞ্চ। সরকারের মন্ত্রী, সাংসদসহ অন্যরা ছিলেন তার দক্ষিণ দিকে সামিয়ানার নিচে।
প্রধানমন্ত্রীর মঞ্চের উল্টো দিকে মাঠের অপর প্রান্তে অনুষ্ঠানের মূলমঞ্চের পশ্চাদপট সাজানো হয় মাঝখানে বঙ্গবন্ধুর ছবি দিয়ে। ডান দিকে ছিল চার জাতীয় নেতা ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছবি। আর বাম দিকে সাত বীর শ্রেষ্ঠ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি।
মূল পর্বের আগে সকাল ৮টা থেকে শিল্পকলা একাডেমীর পরিবেশনায় দেশবরেণ্য এবং খ্যাতনামা শিল্পীদের অংশগ্রহণে মাঠে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। চূড়ান্ত জাতীয় সংগীত পরিবেশনের আগে পৌনে ১১টায় হয় দুই দফা অনুশীলন। প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার সদস্যরাও এতে অংশ নেন।
অনুষ্ঠান শেষে আসাদুজ্জামান নূর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।”
আর কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, “আমরাই পারি।”
জাতীয় সংগীত গেয়ে বাড়ি ফেরার পথে পোশাক কর্মী হোসনে আরা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আওনের পর রইদে খারাপ লাগছিল, অহন ভাল্লাগতেছে। ছোড থাকতে ইশকুলে জাতীয় সংগীত গাইছি। এইবার এতো মানুষের লগে গাইলাম।”
অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হলেও শেষ পর্যন্ত পুরো বিষয়টি ‘দারুণ আনন্দের’ ছিল বলে জানাল নওয়াব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুলের শিক্ষার্থী নজিবুর রহমান সৈকত।
তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী মো. আরিফুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাত ৪টায় জেগেছি। ৫ টায় বাসা থেকে (জুরাইন) বের হয়েছি। কলেজ ঘুরে ৭টায় এখানে এসেছি। এতো সব কষ্ট বিশ্ব রেকর্ড করার জন্য।”
অনুষ্ঠানের আগে বিভিন্ন অঙ্গনের শিল্পীরা অনুষ্ঠানে এসে সংহতি প্রকাশ করেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীরা ছাড়াও সবিনা ইয়াসমিন, সামিনা চৌধুরী, কনকচাঁপা, কনা, শুভ্র দেব, মমতাজ, বাপ্পা মজুমদার, ফকির আমলগীর, মিতা হক, তপন চৌধুরী, এন্ড্রু কিশোর, আইয়ুব বাচ্চুসহ শিল্পীরা মূলমঞ্চে জাতীয় সংগীতে কণ্ঠ মেলান।
সংহতি প্রকাশ করে চিত্র নায়ক ফেরদৌস বলেন, “একটি স্বপ্ন নিয়ে আমরা এই দেশ গড়েছিলাম। লাল সবুজের পতাকা হাতে আজ এসেছি জাতীয় সংগীত গাইতে।”
এ আয়োজনের সার্বিক দায়িত্বে ছিল সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ।
প্যারেড গ্রাউন্ডে আসা কেউ কেউ গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ রকম অন্তত ৩০ জনকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে স্থাপতি সেনাবাহিনীর মেডিকেল ক্যাম্পে চিকিৎসা দেয়া হয়।
No comments:
Post a Comment