ব্যাংক-বীমা ভাগ-বাটোয়ারা
প্রচলিত ধারণা হলো, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে দলীয় বিবেচনায় ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান-বীমা প্রভৃতি প্রতিষ্ঠার অনুমতি দিয়ে থাকে। এর ব্যতিক্রম কিন্তু লক্ষ্য করা যায়নি ১৯৯৬ এবং ২০০৮ সালে। উভয় সময়ে ক্ষমতায় এসে তারা এ কাজটি সুচারুভাবে করেছে। এতে দেশের লাভ না ক্ষতি হয়েছে, সেটি বিবেচনায় নেয়া হয়নি কখনোই। তবে বড় বিষয় হলো, প্রায় সব ক্ষেত্রেই এ সব প্রতিষ্ঠানের লাইন্সেস পেয়েছে দলীয় ব্যক্তিরাই। একাধিক ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা, যাদের রেপুটেশন ভালো, তারা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স পাননি।
দুই দফায় ১৬টি বীমা কোম্পানির অনুমোদন দিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা(আইডিআরএ)। অনুমোদন পাওয়া সব কোম্পানিই রাজনৈতিক বিবেচনায় দেওয়া হয়েছে বলে। নতুন বীমা অনুমোদন দেয়ার আগে ৪২টি সাধারণ বীমা, ১৭টি জীবন বীমা ও একটি বিদেশি জীবন বীমা মেটলাইফ আলিকো এবং সরকারি সংস্থা সাধারণ বীমা করপোরেশন ও জীবন বীমা করপোরেশন নিয়ে ছিল দেশের বীমা খাত। সম্প্রতি দুই দফায় যোগ হয়েছে আরো ১৬ বীমা কোম্পানি। রাজশাহী-৬ আসনের সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলমের সুপারিশে আলফা ইসলামী লাইফের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। আর এর কর্ণধার হলেন তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী নাজিমউদ্দিন আহমেদ। স্বদেশ লাইফের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রের সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরীকে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের সুপারিশে ট্রাস্ট ইসলামী লাইফের লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী আওয়ামী লীগের নেতা জাকের আহমেদ ভূঁইয়াকে। আর যমুনা লাইফ ইনস্যুরেন্সের জন্য সুপারিশ করেছেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের ছেলে সংসদ সদস্য নাজমুল হাসান।
এ ছাড়াও ডায়মন্ড লাইফ ইনস্যুরেন্সের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্নাকে। এর আগে গত ৪ জুলাই প্রথম দফায় ১১টি বীমার অনুমোদন দেওয়া হয়। কোম্পানিগুলো হলো মেজর জেনারেল (অব.) হাফিজ মল্লিকের বেস্ট লাইফ, সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খানের তাইয়ো সামিট লাইফ, এপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর গার্ডিয়ান লাইফ, আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ফরিদুন্নাহার লাইলীর জেনিথ ইসলামী লাইফ,জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ এবং ব্যবসায়ী নূর আলীর চার্টার্ড লাইফ, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আওয়ামী লীগ নেতা মেজর (অব.) রফিকুল ইসলামের প্রটেকটিভ লাইফ, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের সোনালী লাইফ, কানাডা প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল আহাদের এনআরবি গ্লোবাল লাইফ, চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা এম নাসির উদ্দিনের মার্কেন্টাইল লাইফ, সিকদার গ্রুপের চেয়ারম্যান জয়নাল হক সিকদারের সিকদার ইনস্যুরেন্স কোম্পানি এবং বাংলাদেশ সেনাকল্যাণ সংস্থার সেনা কল্যাণ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি।
প্রসঙ্গত, নতুন বীমা কোম্পানি অনুমোদন দেয়ার উদ্দেশ্যে গত ১০ ফেব্রুয়ারি বীমাকারীর নিবন্ধন প্রবিধানমালা-২০১৩ গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। গেজেট প্রকাশের পর ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত নতুন বীমা কোম্পানির নিবন্ধনের জন্য আইডিআরএর পক্ষ থেকে আবেদনপত্র চাওয়া হয়। এরপর তিন দফা সময় বাড়িয়ে ১৫ মে পর্যন্ত তা বর্ধিত করা হয়। এই সময়ের মধ্যে মোট ৭৭টি আবেদন জমা পড়ে। আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করে গত ৪ জুলাই আইডিআরএ প্রাথমিকভাবে ১১ নতুন বীমা কোম্পানির অনুমোদন দেয়। এর মধ্যে নয়টি জীবন বীমা ও দুটি সাধারণ বীমা কোম্পানি রয়েছে। বীমা বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশে ৬২টি বীমা কোম্পানি রয়েছে,যা প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি। বিদ্যমান কোম্পানিগুলোই ঠিকমতো চলতে পারছে না। এই অবস্থায় রাজনৈতিক বিবেচনায় এর আগে ১১টি বীমা কোম্পানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই সংখ্যা আরও বাড়লে বীমা খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে এবং বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। বস্তুত যখন যারা ক্ষমতায় থাকে, তারাই দলীয় প্রভাবশালীদের তুষ্ট করতে নতুন নতুন ব্যাংক-বীমার অনুমোদন দিয়ে আসছে। এক্ষেত্রে দেশের অর্থনীতির আকার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ইত্যাদি বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে না। বাস্তবতা হল, গত কয়েক বছর ধরে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে বিরাজ করছে স্থবিরতা। এ অবস্থায় নতুন নতুন বীমা কোম্পানি গড়ে উঠলে সেসবের আয়ের উৎস কী হবে, তা স্পষ্ট নয়। জানা যায়, দেশে বিদ্যমান বীমা কোম্পানিগুলোই ভালোভাবে চলতে পারছে না। বীমা খাতে চলছে নানা অনিয়ম। বীমা কোম্পানিগুলোর স্বেচ্ছাচারিতার কাছে প্রায় জিম্মি হয়ে পড়ছেন শিল্পোদ্যোক্তারা। সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সব নিয়ম-কানুন মেনে বীমা করেও দুর্ঘটনাকবলিত হওয়ার পরে মাসের পর মাস অতিবাহিত হলেও দাবির অর্থ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন গ্রাহকরা। অধিকাংশ কোম্পানিই নানা অজুহাতে ঠকানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পকারখানার মালিককে। এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী বীমা কোম্পানিগুলো ২০১১ সালে প্রিমিয়াম বাবদ গ্রাহকদের কাছ থেকে আয় করেছিল প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। অথচ একই সময়ে গ্রাহকদের দাবির অর্থ ফেরত দিয়েছে মাত্র ১ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা। এ অর্থ পেতেও নানা ঝক্কি, পদে পদে হয়রানি।
শুধু বীমাই নয়, ব্যাংকের অনুমোদনও দেয়া হয়েছে দলীয় এবং রাজনৈতিক বিবেচনায়। প্রাথমিক বাছাইয়ে বিবেচিত নতুন ব্যাংকের তালিকায় আছে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ‘ইউনিয়ন ব্যাংক’। যদিও এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে নাম রয়েছে জনৈক শহীদুল আলমের। একসময় এরশাদের ঘনিষ্ঠ গোলাম মসি, যিনি জাতীয় পার্টির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন, তিনিও ব্যাংকটির একজন উদ্যোক্তা। পরবর্তীতে লাইসেন্স পাওয়ার পাওয়ার পর এরশাদ ব্যাংকটি বিক্রি করে দেন চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের কাছে। ঢাকার সরকারদলীয় সংসদ সদস্য এবং প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ফজলে নূর তাপস পেয়েছেন ‘মধুমতি ব্যাংক’। এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে নাম আছে হুমায়ুন কবীরের। সংসদ সদস্য এইচ এন আশিকুর রহমান ও প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের ব্যাংক ‘মেঘনা ব্যাংক’। চেয়ারম্যান হিসেবে নাম রয়েছে আশিকুর রহমানের। সাবেক মন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের ‘ফার্মারস ব্যাংক’। তিনি ব্যাংকটির প্রস্তাবিত চেয়ারম্যান ছিলেন। পরবর্তীতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ায় দায়িত্ব ছেড়ে দেন। ‘সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক’-এর চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেন। উদ্যোক্তাদের মধ্যে আছেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাবেক নেতা অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী। শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত কর্মসংস্থান ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম মনিরুজ্জামান খন্দকারের প্রস্তাবিত ব্যাংকের নাম মিডল্যান্ড ব্যাংক।
এনআরবি ব্যাংকগুলোর মধ্যে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র-প্রবাসী আওয়ামী লীগের নেতা ও ব্যবসায়ী ফরাসত আলী। এনআরবি ব্যাংক লিমিটেডের মূল উদ্যোক্তা যুক্তরাষ্ট্র-প্রবাসী আওয়ামী ঘরানার ব্যবসায়ী ও ইউএ করপোরেশনের চেয়ারম্যান নিজাম চৌধুরী। এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের উদ্যোক্তা যুক্তরাজ্য-প্রবাসী আওয়ামী ঘরানার ব্যবসায়ী ও সিমার্ক গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল আহমেদ। বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা পড়া ৩৭টি আবেদন যাচাই-বাছাই করে প্রাথমিকভাবে ১৬টির লাইসেন্স দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। পরে বৈঠকের মাধ্যমে দেয়া হয় ৯টি ব্যাংকের অনুমোদন।
এই আওয়ামী লীগের সরকারের দুই শাসনামলের ৮ বছরে ২৩টি নতুন ব্যাংক অনুমোদন দেয়া হলো। আর খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির দুই শাসনামলের ১০ বছরে নতুন ব্যাংক দেয়া হয় ৮টি। বিএনপি আমলের ৮ ব্যাংকের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের ঢাকা ব্যাংককে অনুমোদন দেয়া হয়। আর আওয়ামী লীগের ৮ বছরে যে ২৩টি ব্যাংককে অনুমোদন দেয়া হয় তার সবটার উদ্যোক্তাই আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা কিংবা আওয়ামী ঘরানার লোকজন। আওয়ামী লীগের ১৯৯৭-২০০১ সময়ে যে ১৪টি ব্যাংক অনুমোদন দেয়া হয় তার মধ্যে রয়েছে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল জলিলের মার্কেন্টাইল ব্যাংক, আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ডা. ইকবালের প্রিমিয়ার ব্যাংক, আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার হোসাইন খানের শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক এবং আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীর বড় ভাই সাঈদ হোসেন চৌধুরীর ওয়ান ব্যাংক।
কোন আমলে কয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংক: স্বাধীনতার পর পাকিস্তান আমলের ব্যাংকগুলোকে রাষ্ট্রীয়করণ করা হলে ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়ায় ছয়টিতে। এরশাদের আমলে পূবালী ও উত্তরাকে বিরাষ্ট্রীয়করণের মাধ্যমে বেসরকারি খাতে ব্যাংকের যাত্রা শুরু হয়। এরশাদের আমলে বেসরকারি খাতে মোট ৯টি ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়। এরপর বিএনপির আমলে অনুমোদন দেয়া হয় নতুন আটটি ব্যাংক। আর আওয়ামী লীগের আমলে ২০০১ সাল পর্যন্ত দেয়া হয় ১৩টি ব্যাংক। ১টি দেয়া হয় বিশেষায়িত ব্যাংক। আর আওয়ামী লীগের চলতি আমলে দেয়া হলো ৯টি ব্যাংক। অর্থাৎ দুই আমলে আওয়ামী লীগ অনুমোদন দেয় ২৩টি ব্যাংক।
১৯৮২-১৯৯০: এর আগে এরশাদের আমলে ১৯৮২-৯০ সময় পর্যন্ত ৯টি ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়। ব্যাংকগুলো হলো পূবালী ব্যাংক, এবি ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, দি সিটি ব্যাংক, ইউসিবিএল ও আইসিবি ইসলামী ব্যাংক।
১৯৯১-১৯৯৬: বিএনপি আমলে (১৯৯১-৯৬) যে আটটি ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয় সেগুলো হলো—ইস্টার্ন ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, এসআইবিএল ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। বিএনপির দ্বিতীয় আমলে(২০০১-২০০৬) কোনো ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়নি।
১৯৯৭-২০০১: এদিকে আওয়ামী লীগের (১৯৯৭-২০০১) সময়ে ১৩টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়। ব্যাংকগুলো হলো মার্কেন্টাইল ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ট্রাস্ট ব্যাংক, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংক। এ সময় কর্মসংস্থান ব্যাংক নামে একটি বিশেষায়িত ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়।
এদিকে অনুমতি পাওয়া ও কার্যক্রম শুরু করা নতুন ব্যাংকগুলোর অবস্থা ততটা ভালো নয়। নেতিবাচক অর্থনীতির প্রভাব পড়েছে তাদের ওপরও। ব্যাংকিং সেবাবঞ্চিত গ্রাহকদের সেবার আওতায় আনার লক্ষ্যে নতুন কিছু ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয় মহাজোট সরকারের শেষ সময়ে। তবে অনুমোদন পাওয়া এ ব্যাংকগুলো হাঁটছে উল্টো পথে। নতুন গ্রাহক সৃষ্টির মাধ্যমে আমানত সংগ্রহের বদলে সরকারি তহবিলের অংশবিশেষ আমানত হিসেবে পেতে ব্যাংকগুলো কার্যত এখন তদবির চালাচ্ছে। মূলত সরকারি আমানতের ওপর ভর করেই ব্যাংকগুলো বড় হওয়ার সুযোগ খুঁজছে।
নিয়মানুযায়ী, সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অলস অর্থ ও সঞ্চয়ের ৭৫ শতাংশ কোনো রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানাধীন ব্যাংকে রাখতে হয়। বাকি ২৫ শতাংশ তহবিল বেসরকারি ব্যাংকে জমা রাখা যেতে পারে। নতুন অনুমোদন পাওয়া নয়টি বেসরকারি ব্যাংক এ তহবিলই আমানত হিসেবে পেতে তৎপরতা চালাচ্ছে বলে জানা গেছে। গত এক মাসে নতুন এ ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন, তিতাস গ্যাস, পেট্রোবাংলা, চট্টগ্রাম বন্দর, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড,পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড, ওয়াসা, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সিভিল এভিয়েশনসহ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তহবিল আমানত হিসেবে সংগ্রহের জন্য চেষ্টা করেছে। নতুন ব্যাংকগুলো সরকারি আমানত পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবে - অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা এ প্রজ্ঞাপনই নথি হিসেবে সরকারি ওইসব প্রতিষ্ঠানে উপস্থাপন করছে ব্যাংকগুলো।
গত ২২ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে নতুন ব্যাংকগুলোয় তারল্য জোগানে সরকারি আমানত রাখার সুযোগ করে দেয়া হয়। আগে নতুন ব্যাংক কার্যক্রম শুরুর পাঁচ বছর পর সরকারি আমানত গ্রহণের সুযোগ পেত। অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় সরকার থেকে পাওয়া তহবিলের সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেসরকারি ব্যাংকে আমানত হিসেবে রাখতে পারবে। এসব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিলের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখা যাবে।
নতুন ব্যাংকগুলোর পরিচালন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে বিনিয়োগ পরিস্থিতি মন্দা। পুরনো ব্যাংকগুলোই অলস অর্থ নিয়ে বিপাকে আছে। আমরা জনগণের কাছ থেকে আমানত নিলে বেশি হারে সুদ দিতে হবে। তাই সরকারি আমানতের দিকেই নজর বেশি। অর্থ মন্ত্রণালয় এক্ষেত্রে নিয়ম কিছুটা শিথিল করায় তার সদ্ব্যবহার করছে ব্যাংকগুলো।।
No comments:
Post a Comment