ক্ষমা করবেন পাঠক, ভয় পেয়ে গেছি
মতিউর রহমান চৌধুরী
হিসেবটা মেলে না কোন অবস্থাতেই। দেখতে দেখতে চলে গেল ষোল বছর। কিছুই যেন হলো না। কি দিলো মানবজমিন জাতিকে। এদেশের সাংবাদিকতায়ইবা কি অবদান রাখলো। হয়তো সহকর্মীদের কেউ কেউ বলবেন মানবজমিন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল। নানা অন্যায়, অবিচার জাতির সামনে তুলে ধরেছে অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে। সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে। মাথা নত করেনি কোন সময়ই। আমি কিন্তু ভিন্ন মত পোষণ করবো। কারণ, আমি মনে করি জাতির প্রত্যাশা ছিল আরও বেশি। জাতি চেয়েছে মানবজমিন কোন দৃশ্য বা অদৃশ্য শক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করবে না। সাদাকে সাদা বলবে। দেশ, জাতি ও মানবাধিকারের প্রশ্নে আপোষ করবে না।
দিনের শেষে যখন হিসেব মেলানোর চেষ্টা করি, তখন নিজেকেই অপরাধী হিসেবে মনে হয়। কারণ, আমি ভীতু। প্রতিদিন আপোষ করি। সহকর্মীরা সামনে কিছু বলেন না। পেছনে বলেন দেখলেন তো আমাদের সম্পাদকের কি সাহস। সত্যি তাই। সহকর্মীরা খবর লেখেন। বার্তা সম্পাদক পর্যন্ত যায়। আমার টেবিলে এলে কিছু না বলে রেখে দিই। বার্তা সম্পাদক বুঝতে পারেন এটার মৃত্যু হয়ে গেছে। নিজের লেখা রিপোর্টও কিছু সময় পর কিল করি। শিরোনাম পরিবর্তনতো হর রোজের ঘটনা। এটাকেই বলা হয় সেলফ সেন্সরশিপ। আগে নাকি কাগজ বাঁচাতে হবে। প্রায় দু’শ স্টাফের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। একটি রিপোর্ট নিজে নয়, অনেকের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। সহযোগী কেউ লিখলে বরং বলে দেই এক বাক্যে এটা হটকারিতা। কেমন সাহসী এবং বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা দেখুন!
আজকাল সহকর্মীরাই সেলফ সেন্সরশিপকে আলিঙ্গন করে বসে আছেন। সবই যে পত্রিকার কথা ভেবে তা নয়।নিজের ব্যক্তিগত সুবিধা লাভ ফ্যাক্টর হয়ে গেছে। সবাই চান ঝুঁকির পরিবর্তে নিজেকে ঝুঁকিমুক্ত রাখা। এছাড়া, আরও কিছু আলামত আছে যা বলে গালি শুনতে চাই না। তবে সম্পাদক যেখানে সত্যের মুখোমুখি হতে নারাজ- সেখানে সহকর্মীরা কেন সাহসী হবেন। এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে চাই। কে দেবে জবাব। দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে উঠতে পারি না কেন? ৪২ বছর আগে কেন এই পেশায় এসেছিলাম। তখনতো মনে হয়নি এভাবে আপোষের চোরাবালিতে নিজেকে বিসর্জন দেবো।
এখন কিন্তু কোন টেলিফোন বাজে না। বলা হয় না এই রিপোর্ট যাবে- এই রিপোর্ট যাবে না। আমি নিজেই বুঝে ফেলেছি কোন রিপোর্ট দিলে শাসকেরা ক্ষিপ্ত হবেন। মামলায় জড়াবেন। সবইতো এখন জানা। তাই নিজেই মুহূর্তের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেই। এভাবে কি রাষ্ট্র চলে। সাংবাদিকতা চলে। জনগণ তো বসে থাকে সত্য জানা বা শোনার জন্য। আমি তো আমার মতো করে খবর দেই। কেউ পছন্দ করেন। কেউ চারটি গালি দেন। অনলাইনে পাঠকের মন্তব্য থেকে বুঝি তারা আসলে কি চান। তারা চান মানবজমিন আরও কঠিন সত্য তুলে ধরবে। সবাইতো জানেন সত্য বলা বড় কঠিন। অন্তত এই ভূখ-ে। তাই বলে কি সত্যের মৃত্যু হয়েছে এটা কোরাস সুরে বলবো। সত্যবাবু মারা গেছেন বলে দায়িত্ব সেরে ফেলার সুযোগ নেবো।
আসল বিচারকরা বসে আছেন কলম হাতে। তারা প্রতিদিন নম্বর দেন। তারা হলেন অগণিত পাঠক। অনলাইনের পাঠকরা তাৎক্ষণিকভাবে তাদের মতামত দেন অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে। মাঝে মধ্যে ভয়ও পাই তাদের মন্তব্য দেখে। বেশ ভাল লাগে। জেগে উঠি। আবার চুপসেও যাই। কি যে করবো। অন্যের খবর যখন লিখি তখন চারদিক তাকাইনা। তার সীমাবদ্ধতার কথা মানতে চাই না। উভয় সঙ্কটে লিখে দেই চোখ বুঝে। আসলে উভয় সঙ্কট আমাকে কাবু করে ফেলেছে।
পাঠকরা সবাই জানেন এতসময় কি বলতে চেয়েছি। খোলাসা করার সাহস নেই তাই আপনাদের ওপর ছেড়ে দিলাম। এলোমেলো ভাবনায় গোটা লেখাটি তিন নম্বরের এক রচনায় পরিণত হয়েছে। তাই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। মানবজমিন-এর সাফল্য কি আছে তার বিচার করবেন আপনারা। আমি শুধু আমার ব্যর্থতা, কাপুরুষ আচরণের কথাই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি আভাস ইঙ্গিতে। আজ এ পর্যন্তই। তবে শেষ করার আগে বলে রাখি হিসেব মেলানোর চেষ্টা করবো সামনের দিনগুলোতে। না পারলে সহকর্মীদের বলে যাবো তারা যেন এগিয়ে নিয়ে যান। সৎ সাংবাদিকতা কখনো মরবে না। বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ভিত অনেক শক্ত জমিতে প্রোথিত। কোন কালো শক্তির আঘাতে ভেঙে পড়ার নয়।
মতিউর রহমান চৌধুরী
হিসেবটা মেলে না কোন অবস্থাতেই। দেখতে দেখতে চলে গেল ষোল বছর। কিছুই যেন হলো না। কি দিলো মানবজমিন জাতিকে। এদেশের সাংবাদিকতায়ইবা কি অবদান রাখলো। হয়তো সহকর্মীদের কেউ কেউ বলবেন মানবজমিন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল। নানা অন্যায়, অবিচার জাতির সামনে তুলে ধরেছে অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে। সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে। মাথা নত করেনি কোন সময়ই। আমি কিন্তু ভিন্ন মত পোষণ করবো। কারণ, আমি মনে করি জাতির প্রত্যাশা ছিল আরও বেশি। জাতি চেয়েছে মানবজমিন কোন দৃশ্য বা অদৃশ্য শক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করবে না। সাদাকে সাদা বলবে। দেশ, জাতি ও মানবাধিকারের প্রশ্নে আপোষ করবে না।
দিনের শেষে যখন হিসেব মেলানোর চেষ্টা করি, তখন নিজেকেই অপরাধী হিসেবে মনে হয়। কারণ, আমি ভীতু। প্রতিদিন আপোষ করি। সহকর্মীরা সামনে কিছু বলেন না। পেছনে বলেন দেখলেন তো আমাদের সম্পাদকের কি সাহস। সত্যি তাই। সহকর্মীরা খবর লেখেন। বার্তা সম্পাদক পর্যন্ত যায়। আমার টেবিলে এলে কিছু না বলে রেখে দিই। বার্তা সম্পাদক বুঝতে পারেন এটার মৃত্যু হয়ে গেছে। নিজের লেখা রিপোর্টও কিছু সময় পর কিল করি। শিরোনাম পরিবর্তনতো হর রোজের ঘটনা। এটাকেই বলা হয় সেলফ সেন্সরশিপ। আগে নাকি কাগজ বাঁচাতে হবে। প্রায় দু’শ স্টাফের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। একটি রিপোর্ট নিজে নয়, অনেকের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। সহযোগী কেউ লিখলে বরং বলে দেই এক বাক্যে এটা হটকারিতা। কেমন সাহসী এবং বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা দেখুন!
আজকাল সহকর্মীরাই সেলফ সেন্সরশিপকে আলিঙ্গন করে বসে আছেন। সবই যে পত্রিকার কথা ভেবে তা নয়।নিজের ব্যক্তিগত সুবিধা লাভ ফ্যাক্টর হয়ে গেছে। সবাই চান ঝুঁকির পরিবর্তে নিজেকে ঝুঁকিমুক্ত রাখা। এছাড়া, আরও কিছু আলামত আছে যা বলে গালি শুনতে চাই না। তবে সম্পাদক যেখানে সত্যের মুখোমুখি হতে নারাজ- সেখানে সহকর্মীরা কেন সাহসী হবেন। এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে চাই। কে দেবে জবাব। দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে উঠতে পারি না কেন? ৪২ বছর আগে কেন এই পেশায় এসেছিলাম। তখনতো মনে হয়নি এভাবে আপোষের চোরাবালিতে নিজেকে বিসর্জন দেবো।
এখন কিন্তু কোন টেলিফোন বাজে না। বলা হয় না এই রিপোর্ট যাবে- এই রিপোর্ট যাবে না। আমি নিজেই বুঝে ফেলেছি কোন রিপোর্ট দিলে শাসকেরা ক্ষিপ্ত হবেন। মামলায় জড়াবেন। সবইতো এখন জানা। তাই নিজেই মুহূর্তের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেই। এভাবে কি রাষ্ট্র চলে। সাংবাদিকতা চলে। জনগণ তো বসে থাকে সত্য জানা বা শোনার জন্য। আমি তো আমার মতো করে খবর দেই। কেউ পছন্দ করেন। কেউ চারটি গালি দেন। অনলাইনে পাঠকের মন্তব্য থেকে বুঝি তারা আসলে কি চান। তারা চান মানবজমিন আরও কঠিন সত্য তুলে ধরবে। সবাইতো জানেন সত্য বলা বড় কঠিন। অন্তত এই ভূখ-ে। তাই বলে কি সত্যের মৃত্যু হয়েছে এটা কোরাস সুরে বলবো। সত্যবাবু মারা গেছেন বলে দায়িত্ব সেরে ফেলার সুযোগ নেবো।
আসল বিচারকরা বসে আছেন কলম হাতে। তারা প্রতিদিন নম্বর দেন। তারা হলেন অগণিত পাঠক। অনলাইনের পাঠকরা তাৎক্ষণিকভাবে তাদের মতামত দেন অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে। মাঝে মধ্যে ভয়ও পাই তাদের মন্তব্য দেখে। বেশ ভাল লাগে। জেগে উঠি। আবার চুপসেও যাই। কি যে করবো। অন্যের খবর যখন লিখি তখন চারদিক তাকাইনা। তার সীমাবদ্ধতার কথা মানতে চাই না। উভয় সঙ্কটে লিখে দেই চোখ বুঝে। আসলে উভয় সঙ্কট আমাকে কাবু করে ফেলেছে।
পাঠকরা সবাই জানেন এতসময় কি বলতে চেয়েছি। খোলাসা করার সাহস নেই তাই আপনাদের ওপর ছেড়ে দিলাম। এলোমেলো ভাবনায় গোটা লেখাটি তিন নম্বরের এক রচনায় পরিণত হয়েছে। তাই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। মানবজমিন-এর সাফল্য কি আছে তার বিচার করবেন আপনারা। আমি শুধু আমার ব্যর্থতা, কাপুরুষ আচরণের কথাই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি আভাস ইঙ্গিতে। আজ এ পর্যন্তই। তবে শেষ করার আগে বলে রাখি হিসেব মেলানোর চেষ্টা করবো সামনের দিনগুলোতে। না পারলে সহকর্মীদের বলে যাবো তারা যেন এগিয়ে নিয়ে যান। সৎ সাংবাদিকতা কখনো মরবে না। বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ভিত অনেক শক্ত জমিতে প্রোথিত। কোন কালো শক্তির আঘাতে ভেঙে পড়ার নয়।
No comments:
Post a Comment