Sunday, March 16, 2014

ব্যাপক পরিসরে সাইবার গোয়েন্দাগিরি চালাচ্ছে ভারত

ব্যাপক পরিসরে সাইবার গোয়েন্দাগিরি চালাচ্ছে ভারত

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি (এনএসএ) ও ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা গভর্নমেন্ট কমিউনিকেশনস হেডকোয়ার্টারসের (জিসিএইচকিউ) সঙ্গে এবার ভারতেরও নাম এলো ব্যাপক সাইবার গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনাকারী দেশের তালিকায়। এ তালিকায় আরো রয়েছে ইরান, চীন ও সৌদি আরবের মতো দেশ। সংবাদ ও তথ্যের নিরাপত্তা প্রদানে নিযুক্ত ফ্রান্সভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রিপোর্টার্স স্যানস ফ্রন্টিয়ারস (আরএসএফ) তাদের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করে। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার।

গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির (এনএসএ) গোপন নজরদারির তথ্য ফাঁস করে দেন সংস্থাটিরই সাবেক কর্মী এডওয়ার্ড স্নোডেন। সংস্থাটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি নিজ দেশের নাগরিকদের ওপরও যে নজরদারি করেছে, তা উঠে আসে স্নোডেনের ফাঁস করা নথিতে। সংস্থাটি সাধারণ নাগরিকদের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ওপরও নজরদারি চালায়। এতে মিত্র দেশগুলোর সঙ্গেও যুক্তরাষ্ট্রের টানাপড়েন শুরু হয়।

এদিকে ব্রিটেনের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা গভর্নমেন্ট কমিউনিকেশন হেডকোয়ার্টারসের (জিসিএইচকিউ) গোপন নজরদারির তথ্যও ফাঁস করেন স্নোডেন। যুক্তরাষ্ট্রে ব্রিটেন নিজেদের মধ্যে  সহযোগিতার ভিত্তিতে এ গোপন নজরদারি চালিয়েছে বলেও স্নোডেনের ফাঁস করা নথিতে উঠে আসে। এবার আরএসএফের তথ্য অনুযায়ী   ভারতও সাইবার গোয়েন্দাগিরির পদ্ধতি ব্যবহারে খারাপ দেশগুলোর তালিকায় উঠে এসেছে।

ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি উন্নয়ন কেন্দ্র ‘সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট টেলেমেটিকস’ও অনেকটা এনএসএ ও জিসিএইচকিউর মতো কার্যক্রম শুরু করেছে বলে প্রতিবেদনে জানায় আরএসএফ। দেশটির ইন্টারনেট ব্যবস্থা থেকে শুরু করে টেলিযোগ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটি। তাদের প্রযুক্তিগত ক্ষমতাকে তারা সাধারণ জনগণের স্বাধীনতা খর্ব করার কাজে লাগাচ্ছে বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়। তাদের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের কারণে সাধারণ মানুষের তথ্যের স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা রক্ষার স্বাধীনতা নষ্ট হচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরএসএফ আরো জানায়, এনএসএ ও জিসিএইচকিউ সাধারণ গ্রাহকের পাশাপাশি গণমাধ্যম কর্মীদের ওপরও নজরদারি চালিয়েছে। ভারতের সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট টেলেমেটিকসও এখন সে পথেই হাঁটছে। এডওয়ার্ড স্নোডেন গত বছর তার নথিতে জানান, যে পদ্ধতিতে এনএসএ ও জিসিএইচকিউ নজরদারি চালাচ্ছে, তা অনেকাংশেই সহ্য করার মতো নয়। ইরান, চীন, তুর্কিমিনিস্তান ও সৌদি আরব একসময় নজরদারিতে যে পদ্ধতি ব্যবহার করত, এনএসএও সে ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করেছে। খুবই বিস্তৃতভাবে নজরদারি চালানোর এ পদ্ধতির কারণে সাধারণ নাগরিকদের ব্যক্তিস্বাধীনতা খর্ব হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছিলেন স্নোডেন।

এদিকে বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানিও নিয়মিত বিভিন্ন গোয়েন্দা প্রযুক্তি বাজারে নিয়ে আসছে। এনএসএ, জিসিএইচকিউর মতো ভারতের সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট টেলেমেটিকস এ ধরনের প্রযুক্তি দ্বারা শক্তিশালী হচ্ছে। বিশেষ বিশেষ প্রতিষ্ঠান শুধু গোয়েন্দা প্রযুক্তিই তৈরি করে। তাদের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ভালো আঁতাত রয়েছে বলে আরএসএফের প্রতিবেদনে জানানো হয়। ফলে এ প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থের লোভে প্রচুর গোয়েন্দা প্রযুক্তি উদ্ভাবন করছে।

ভারতও কিছুদিন ধরে নজরদারি চালানোর জন্য আইনি জটিলতা হ্রাসের চেষ্টা করছে। আইনের মাধ্যমে তারা গোপন নজরদারি চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। যদিও দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে, তারা জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থেই নজরদারি চালাচ্ছে। তবে কোনো সন্দেহ নেই যে এতে সাধারণ জনগণের মৌলিক অধিকারই ক্ষুণ্ন হবে।

আরএসএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নতুন নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে গোয়েন্দারা বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের মানুষের ওপর নজরদারি করতে সক্ষম হবে। আরএসএফ আরো জানায়, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যদি গোয়েন্দা প্রযুক্তি তৈরি বন্ধ করে দেয়, তবেই গোপন নজরদারির প্রবণতা হ্রাস পেতে পারে। কিন্তু বিপুল পরিমাণ অর্থের হাতছানি থেকে বিরত থেকে শুধু নীতিবোধ থেকে কয়টি প্রযুক্তি কোম্পানি এ ধরনের প্রযুক্তি উদ্ভাবন থেকে বিরত থাকবে তাই এখন দেখার বিষয়।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের মতো বড় দেশগুলোও যদি ব্যাপক পরিসরে গোয়েন্দাগিরি শুরু করে, তবে তা সাধারণ জনগণের জন্য আতঙ্কের বিষয়। আরএসএফের মতে, এ ধরনের গোয়েন্দাগিরি নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা প্রণয়ন প্রয়োজন। জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল এনএসএর গোয়েন্দাগিরির আওতায় আসার পর গোপন গোয়েন্দা কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানান। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন বর্তমান প্রেক্ষাপটে খুবই জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ভারতের মতো দেশের গোয়েন্দাদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় তৈরি হতে পারে।

উল্লেখ্য, নেতৃস্থানীয় দেশগুলো তাদের গোয়েন্দা কার্যক্রমের পক্ষে সাফাই গাইতে জাতীয় নিরাপত্তার মতো জরুরি বিষয়কে সামনে নিয়ে আসছে। কিন্তু ব্যাপক পরিসরে গোয়েন্দাগিরি সাধারণ নাগরিকদের স্বাধীনতা খর্ব করার শামিল। তাই শিগগিরই প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন করে তার বাস্তবায়ন করার ওপর গুরুত্বারোপ করে আরএসএফ।

http://www.bonikbarta.com/telecom-and-technology/2014/03/16/34876

No comments:

Post a Comment