Sunday, March 16, 2014

বারাণসীতে মোদীই, লখনৌয়ে রাজনাথ, মুরলী কানপুরে

বারাণসীতে মোদীই, লখনৌয়ে রাজনাথ, মুরলী কানপুরে

modi
নয়াদিল্লি: চ্যালেঞ্জটা নিলেন নরেন্দ্র মোদী। গুজরাটের বাইরে বেরিয়ে এবার উত্তর প্রদেশের বারাণসী থেকেই লোকসভা ভোটে লড়তে চলেছেন বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। এ ভাবে মোদী যে শুধু উত্তর প্রদেশের সিংহভাগ আসনে বিজেপি-র জয়ের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে চেয়েছেন তাই নয়, গোবলয়ের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য থেকে ভোটে জিতে তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্য দাবিদার হিসাবেও নিজেকে তুলে ধরতে চেয়েছেন। ভাবী প্রধানমন্ত্রী উত্তর প্রদেশ থেকে লড়ছেন, এই ঘটনাই সেখানে বিজেপি-র জয়ের সম্ভাবনাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। অটলবিহারী বাজপেয়ীর সময়ে এটাই হয়েছিল। বাজপেয়ীর কল্যাণে পর পর বেশ কয়েকবার পঞ্চাশের বেশি আসন পেয়েছিল বিজেপি। আর হিন্দুদের অন্যতম সেরা তীর্থস্থান ও বাবা বিশ্বনাথের বারাণসী থেকে লড়ে মোদী উত্তরপ্রদেশে হিন্দুত্বের তাসটাও খেলে দিয়েছেন।

সাউথ ব্লকের প্রধানমন্ত্রিত্বের অফিসে বসতে গেলে উত্তরপ্রদেশে অত্যন্ত ভালো ফল করতেই হবে মোদীকে। আর সে জন্য শুধু মোদী নন, উত্তরপ্রদেশে দলের সেরা বাজিদেরই নামিয়ে দিয়েছে বিজেপি। দলীয় নেতাদের ধারণা, বারাণসীতে মোদীর লড়ার প্রভাব উত্তরপ্রদেশের অন্তত ৪০টি আসনের উপর পড়বে। বারাণসীতে মোদী ছাড়াও লখনৌতে প্রার্থী হচ্ছেন রাজনাথ, মুরলীমনোহর জোশী লড়বেন কানপুর থেকে এবং ব্রাহ্মণ নেতা কলরাজ মিশ্র প্রার্থী হচ্ছেন দেবরিয়া থেকে, কল্যাণ সিং এটা থেকে, উমা ভারতী লড়বেন ঝাঁসি থেকে এবং মেনকা গান্ধী পিলিভিত থেকে। গৌতম বুদ্ধ নগর থেকে মুম্বইয়ের প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার মহেশ শর্মা লড়বেন। রাজ্যসভার বিরোধী নেতা অরুণ জেটলিও এ বার লোকসভা ভোটে লড়বেন। নভজ্যোত সিং সিধুর জায়গায় জেটলি অমৃতসরে বিজেপি-র প্রার্থী হয়েছেন। চণ্ডীগড়ে লড়বেন অভিনেত্রী কিরণ খের। ফৈজাবাদে গতবারের প্রার্থী লালু সিং-কেই আবার প্রার্থী করা হয়েছে। পাটনা সাহিব কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয়েছে শত্রুঘ্ন সিনহাকে। দিল্লির সাতটি আসনেই প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত হয়েছে। চাঁদনী চক থেকে হর্ষবর্ধন, উত্তর পূর্ব দিল্লি থেকে মনোজ তিওয়ারি, পূর্ব দিল্লি থেকে মহেশ গিরি, নয়াদিল্লি থেকে মীনাক্ষি লেখি, উত্তর পশ্চিম দিল্লি থেকে উদিত রাজ, পশ্চিম দিল্লি থেকে পরবেশ বর্মা ও দক্ষিণ দিল্লি থেকে রমেশ বিদ্রোহীকে প্রার্থী করা হয়েছে।

মোদীর বারাণসীতে লড়ার পথে সবথেকে বড় বাধা ছিলেন মুরলীমনোহর জোশী। গতবার এলাহাবাদ থেকে বারাণসীতে লড়ে জিতেছিলেন মুরলীমনোহর। এ বার তিনি বারাণসী থেকে লড়তে চেয়েছিলেন। এমনকী প্রথমে তিনি মোদীকেও আসনটি ছেড়ে দিতে রাজি ছিলেন না। বারাণসীতে জোশীকে জেতানোর আবেদন করে পোস্টার পর্যন্ত পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মোদী-রাজনাথ ও আরএসএসের কথা মেনে নিয়েছেন জোশী। তিনি কানপুরে লড়তে রাজি হয়েছেন। আবার কানপুরে লড়তে চেয়েছিলেন কলরাজ মিশ্র। তাঁকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে দেবরিয়া থেকে লড়তে রাজি করাতে পেরেছেন রাজনাথ। বিজেপি সভাপতিকে লখনউ ছাড়তে রাজি ছিলেন না লালজি ট্যান্ডন। তাঁকে রাজ্যসভায় নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অবশেষে অবস্থা সামলেছেন রাজনাথ-মোদী। এই সব কাজ করতে গিয়েই উত্তরপ্রদেশ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কয়েকদিন দেরি হয়ে গিয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত তাঁরা বিরোধটা মেটাতে পেরেছেন।

তবে আজকের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত অবশ্যই মোদীর বারাণসী থেকে লড়া।

মোদীর জন্য প্রথমে লখনউয়ের কথা ভাবা হলেও পরে বারাণসীই বাছা হয়েছিল। বারাণসী বেছে নেওয়ার কয়েকটি নির্দিষ্ট কারণ আছে। প্রথমত, বারাণসী বিজেপি-র জন্য অত্যন্ত নিরাপদ আসন। মোদীকে এখানে প্রচারে খুব বেশি সময় দিতে হবে না। দ্বিতীয়ত, বারাণসীতে লড়া মানে হিন্দুত্বের একটা ভাবাবেগও উঠে যাওয়া। রামমন্দির আন্দোলনের সময়, বিজেপি ও ভিএইচপি-র স্লোগান ছিল, 'ইয়ে তো সির্ফ ঝাঁকি হ্যায়, কাশী-মথুরা বাকি হ্যায়।' সেই কাশীকেই বেছে নিলেন মোদী। তৃতীয়ত, বারাণসীতে মোদীর উপস্থিতি আশপাশের অনেকগুলি কেন্দ্রে তো বটেই, গোটা উত্তরপ্রদেশ জুড়েউ প্রভাব ফেলতে পারে।

এ দিন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির বৈঠক প্রায় আট ঘণ্টা ধরে চলে। উত্তরপ্রদেশ নিয়ে আলোচনা শেষ হয়ে যাওয়ার পর লালকৃষ্ণ আডবাণী বৈঠক ছেড়ে চলে যান। তার পরেও হরিয়ানা ও দিল্লির প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা হয়। হোলির আগে গুরুত্বপূর্ণ আসনগুলিতে প্রার্থীদের নাম চূড়ান্ত করতে চেয়েছিলেন মোদী। সে জন্যই এ দিন ম্যারাথন বৈঠক হল।

No comments:

Post a Comment