বিশ্ব রেকর্ড গড়তে জাতীয় সংগীত গাইল দুই লাখ ৫৪ হাজার ৬৮১ জন
দেশধ্বনি উঠিল বাজি
বিশেষ প্রতিনিধি | আপডেট: ০২:৪৯, মার্চ ২৭, ২০১৪ |
এমন দিন বারবার আসে না। বাঙালি জাতির জীবনে ৪৩ বছর আগে এই দিনটির সূর্য উদিত হয়েছিল পরাধীনতার অন্ধকার ঘুচিয়ে, স্বাধীনতার আলোয় উদ্ভাসিত করে। বাঙালি পেয়েছিল লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা। পেয়েছিল জন্মভূমি, জননী, মাতৃভাষাকে চিরকাল ভালোবাসার এক গান জাতীয় সংগীত হিসেবে। সেই গান গেয়ে বিশ্ব রেকর্ড করতে গতকাল বুধবার মহান স্বাধীনতা দিবসে রাজধানীর জাতীয় প্যারেড ময়দানে সমবেত হয়েছিলেন লাখো বাঙালি। তাঁদের সঙ্গে সারা দেশে অসংখ্য বাঙালি কণ্ঠ ছেড়ে গেয়েছেন ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি...’। দেশের প্রতি ভালোবাসার এই সুরধ্বনি বেজেছিল সবার হূদয়তন্ত্রীতে। সেই সুরধ্বনি লাখো কণ্ঠে গীত হয়ে গতকাল মুখর করে তুলেছিল বাংলার আকাশ-বাতাস।
‘লাখো কণ্ঠে সোনার বাংলা’ নামের এই আয়োজন সম্পর্কে গত ফেব্রুয়ারি থেকেই সারা দেশে প্রচারাভিযান চলছিল ব্যাপক। তিন লাখ লোকের মিলিত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গেয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার এই উদ্যোগটি ছিল সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের। বাস্তবায়নে সহায়তা করেছে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ। গতকাল জাতীয় প্যারেড ময়দানে প্রবেশের সময় স্বয়ংক্রিয় যান্ত্রিক গণনা অনুসারে লোক হয়েছিল দুই লাখ ৫৪ হাজার ৬৮১ জন। এতেই গত বছরের ৬ মে সাহারা গ্রুপের আয়োজনে এক লাখ ২২ হাজার লোকের একসঙ্গে জাতীয় সংগীত গাওয়ার ভারতের রেকর্ডটি ভেঙে নতুন বিশ্ব রেকর্ড হওয়ার কথা। তবে চূড়ান্ত ফল জানতে অপেক্ষা করতে হবে সপ্তাহ দুয়েক।
লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গেয়ে বিশ্ব রেকর্ড করতে গিয়ে গতকাল সরকারি ছুটির দিনটিতে রাজধানীর দৃশ্যপট বদলে গিয়েছিল। পূর্বঘোষণা অনুসারে প্যারেড ময়দানের প্রবেশদ্বার খোলা হয়েছিল ভোর সাড়ে ছয়টায়, বন্ধের সময় ছিল সকাল নয়টা। ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে হাজার হাজার বাস-মিনিবাসে করে লোক আসছিলেন। সকাল সাতটার মধ্যেই বাংলামোটর থেকে বিজয় সরণি, ওদিকে মিরপুর ১০ নম্বর এবং বিমানবন্দর সড়ক এসব যানবাহনের সারিতে স্থবির হয়ে পড়ে। সময়মতো অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য হাজার হাজার লোক অগত্যা বাস থেকে নেমে হাঁটতে থাকেন।
ময়দানে যন্ত্র সংযুক্ত প্রবেশদ্বার ছিল ১৬০টি। লোকজনের চাপে এর মধ্যে ১১টি ভেঙে যায়। পরে এসব দ্বার দিয়ে যাঁরা প্রবেশ করেছেন, তাঁরা গণনার আওতায় আসেননি। এ ছাড়া নয়টা ৪৯ মিনিটে গেট বন্ধ করে দেওয়ার পর সামনের রোকেয়া সরণি থেকে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর এবং বিজয় সরণি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে দিয়ে বিমানবন্দর সড়কও ছিল লোকজনে ঠাসা।
আয়োজনটি শুরু হয়েছিল সুশৃঙ্খলভাবে পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে। প্রতি ৫০ জন লোককে নিয়ে একটি করে ব্লক করা হয়েছিল। মোট ব্লক ছিল ছয় হাজার। এই ব্লকগুলো সাজানো হয়েছিল উত্তর-দক্ষিণে লম্বা করে। ময়দানের পূর্ব দিকে ছিল প্রধানমন্ত্রী ও বিশিষ্টজনদের জন্য একটি মঞ্চ। এর ঠিক মুখোমুখি পশ্চিম প্রান্তে ছিল অনুষ্ঠানের মঞ্চ। এই মঞ্চে সকাল আটটা ২০ মিনিট থেকে শুরু হয়েছিল সংগীত পরিবেশনা।
সকাল নয়টা ১৫ মিনিটে ঘোষণা করা হয়, এক লাখ ৮০ হাজার লোক ময়দানে প্রবেশ করেছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লোকসমাগম বাড়ছিল। রোদও প্রখর হয়ে উঠছিল। বদলে যাচ্ছিল ময়দানের দৃশ্যপটও। ব্লকগুলো ভরে উঠছিল লাল-সবুজ টুপি পরা অসংখ্য মাথায়। সবার হাতেই ছিল জাতীয় পতাকা। গানের সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা যখন পতাকা নাড়ছিলেন, তখন ঝলমলে রোদে এক বিশাল লাল-সবুজের তরঙ্গ যেন বয়ে যাচ্ছিল বিশাল ময়দানজুড়ে। মঞ্চে শতাধিক শিল্পী সমবেত কণ্ঠে গাইছিলেন ‘বিজয় নিশান উড়ছে ঐ বাংলার ঘরে ঘরে’।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ময়দানে প্রবেশ করেন বিপুল করতালি আর হর্ষধ্বনির মধ্যে। সময় তখন সাড়ে নয়টা। মঞ্চ থেকে ঘোষণা এল—ময়দানে লোকসংখ্যা পেরিয়ে গেছে দুই লাখ ৪০ হাজার। এ সময় পরিবেশিত হলো এই আয়োজনের ভাবসংগীত ‘জয় জয় জয় বাংলা’। সমবেত জনতা আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে লাখো কণ্ঠে আওয়াজ তোলেন ‘এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ, এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ’। এরপর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ও সুরকার সুজেয় শ্যামের পরিচালনায় দুবার মহড়া হয় জাতীয় সংগীতের। জানিয়ে দেওয়া হয় বিশ্ব রেকর্ডের জন্য চূড়ান্ত পর্বে জাতীয় সংগীত গাওয়ার নিয়ম। সবাইকে গলা ছেড়ে গাইতে হবে। গান গাওয়ার সময় হাতের জাতীয় পতাকাটি নামিয়ে রাখতে হবে। নাড়ানো যাবে না।
সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি প্রিয় মাতৃভূমি, মাতৃভাষাকে ভালোবেসে বিশ্ব রেকর্ড করতে আসা সমবেত জনতাকে অভিনন্দন জানান। শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দেশের স্বাধীনতার জন্য যাঁরা জীবন উৎসর্গ করেছেন, ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাঁদের প্রতি। স্বাধীনতার রূপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি, যিনি দীর্ঘ ২৪ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জাতিকে স্বাধীন করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, এই আয়োজন জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্দীপ্ত করবে। সেই প্রেরণা নিয়ে এগিয়ে যাবে সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে।
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পর মঞ্চ থেকে ঘোষণা করা হয়, যান্ত্রিক গণনা অনুসারে ময়দানে দুই লাখ ৫৪ হাজার ৬৮১ জন লোক প্রবেশ করেছেন। তবে লোকসংখ্যা আরও বেশি হবে। সবাইকে প্রস্তুত হতে বলা হয় বিশ্ব রেকর্ডের জন্য জাতীয় সংগীত গাওয়ার জন্য। মঞ্চে আসেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীরাসহ শতাধিক প্রবীণ-নবীন শিল্পী। সুজেয় শ্যামের পরিচালনায় শুরু হয় বিশ্ব রেকর্ড করার জন্য লাখো কণ্ঠের গান। গান শেষ হওয়ার পরেই হর্ষধ্বনিতে ফেটে পড়েন আড়াই লক্ষাধিক মানুষ। পতাকা নেড়ে আবার লাল-সবুজের স্পন্দন তোলেন তাঁরা মাঠে।
জাতীয় প্যারেড ময়দানের এই চূড়ান্ত পর্বে গাওয়া জাতীয় সংগীতের সঙ্গে সারা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকেও সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ কণ্ঠ মিলয়েছেন। এমনকি পথচলতি ট্রেনগুলো এই সময় যেটি যেখানে ছিল থেমে যায়। যাত্রীরা আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীতে কণ্ঠ মেলান।
প্যারেড ময়দানে অনুষ্ঠানটি এ পর্যন্ত সব ঠিকঠাক মতোই চলছিল। তবে শেষটা তেমন হলো না। জাতীয় সংগীতের পর মঞ্চে এলেন শিল্পী মমতাজ। তখন ব্লকগুলোর নিরাপত্তাবেষ্টনী সরিয়ে নেওয়া হয়। যেন নিমেষে ঘটে গেল জনবিস্ফোরণ। সারা মাঠে বিপুল শোরগোল, লাখ লাখ মানুষের ছোটাছুটি। এর মধ্যে মমতাজ ‘এই আকাশ হতো যদি’, ‘আমার ঘুম ভাঙাইয়া গেল রে’সহ কয়েকটি গান গেয়ে শোনান। শেষে মঞ্চে আসেন শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু। তিনি শুরু করেছিলেন ‘রাখে আল্লা মারে কে’ দিয়ে। গানের পাশাপাশি তাঁকে বহু কথা খরচ করতে হয়েছে ছত্রভঙ্গ জনতাকে শান্ত হওয়ার জন্য। আয়োজনটি শেষ হয়েছিল এভাবেই।
এই আয়োজনের ফল কবে জানা যাবে, সে প্রসঙ্গে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর প্রথম আলোকে বলেন, ‘গিনেস বুক কর্তৃপক্ষের কাছে এই আয়োজনের ধারণ করা মূল রেকর্ড পাঠাতে হবে। তারা নিজেরাও রেকর্ড করেছে। পর্যবেক্ষণ করে ফল ঘোষণা করতে প্রায় দুই সপ্তাহ লেগে যাবে। তবে বিশ্ব রেকর্ডের চেয়ে এই আয়োজনের বড় প্রাপ্তি, সারা দেশে মানুষ একসঙ্গে জাতীয় সংগীত গেয়েছেন। অনেকে পথে আটকে পড়ায় মূল আয়োজনে অংশ নিতে পারেননি। সব মিলিয়ে আমাদের প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গেছে।’
‘লাখো কণ্ঠে সোনার বাংলা’ নামের এই আয়োজন সম্পর্কে গত ফেব্রুয়ারি থেকেই সারা দেশে প্রচারাভিযান চলছিল ব্যাপক। তিন লাখ লোকের মিলিত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গেয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার এই উদ্যোগটি ছিল সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের। বাস্তবায়নে সহায়তা করেছে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ। গতকাল জাতীয় প্যারেড ময়দানে প্রবেশের সময় স্বয়ংক্রিয় যান্ত্রিক গণনা অনুসারে লোক হয়েছিল দুই লাখ ৫৪ হাজার ৬৮১ জন। এতেই গত বছরের ৬ মে সাহারা গ্রুপের আয়োজনে এক লাখ ২২ হাজার লোকের একসঙ্গে জাতীয় সংগীত গাওয়ার ভারতের রেকর্ডটি ভেঙে নতুন বিশ্ব রেকর্ড হওয়ার কথা। তবে চূড়ান্ত ফল জানতে অপেক্ষা করতে হবে সপ্তাহ দুয়েক।
লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গেয়ে বিশ্ব রেকর্ড করতে গিয়ে গতকাল সরকারি ছুটির দিনটিতে রাজধানীর দৃশ্যপট বদলে গিয়েছিল। পূর্বঘোষণা অনুসারে প্যারেড ময়দানের প্রবেশদ্বার খোলা হয়েছিল ভোর সাড়ে ছয়টায়, বন্ধের সময় ছিল সকাল নয়টা। ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে হাজার হাজার বাস-মিনিবাসে করে লোক আসছিলেন। সকাল সাতটার মধ্যেই বাংলামোটর থেকে বিজয় সরণি, ওদিকে মিরপুর ১০ নম্বর এবং বিমানবন্দর সড়ক এসব যানবাহনের সারিতে স্থবির হয়ে পড়ে। সময়মতো অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য হাজার হাজার লোক অগত্যা বাস থেকে নেমে হাঁটতে থাকেন।
ময়দানে যন্ত্র সংযুক্ত প্রবেশদ্বার ছিল ১৬০টি। লোকজনের চাপে এর মধ্যে ১১টি ভেঙে যায়। পরে এসব দ্বার দিয়ে যাঁরা প্রবেশ করেছেন, তাঁরা গণনার আওতায় আসেননি। এ ছাড়া নয়টা ৪৯ মিনিটে গেট বন্ধ করে দেওয়ার পর সামনের রোকেয়া সরণি থেকে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর এবং বিজয় সরণি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে দিয়ে বিমানবন্দর সড়কও ছিল লোকজনে ঠাসা।
আয়োজনটি শুরু হয়েছিল সুশৃঙ্খলভাবে পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে। প্রতি ৫০ জন লোককে নিয়ে একটি করে ব্লক করা হয়েছিল। মোট ব্লক ছিল ছয় হাজার। এই ব্লকগুলো সাজানো হয়েছিল উত্তর-দক্ষিণে লম্বা করে। ময়দানের পূর্ব দিকে ছিল প্রধানমন্ত্রী ও বিশিষ্টজনদের জন্য একটি মঞ্চ। এর ঠিক মুখোমুখি পশ্চিম প্রান্তে ছিল অনুষ্ঠানের মঞ্চ। এই মঞ্চে সকাল আটটা ২০ মিনিট থেকে শুরু হয়েছিল সংগীত পরিবেশনা।
সকাল নয়টা ১৫ মিনিটে ঘোষণা করা হয়, এক লাখ ৮০ হাজার লোক ময়দানে প্রবেশ করেছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লোকসমাগম বাড়ছিল। রোদও প্রখর হয়ে উঠছিল। বদলে যাচ্ছিল ময়দানের দৃশ্যপটও। ব্লকগুলো ভরে উঠছিল লাল-সবুজ টুপি পরা অসংখ্য মাথায়। সবার হাতেই ছিল জাতীয় পতাকা। গানের সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা যখন পতাকা নাড়ছিলেন, তখন ঝলমলে রোদে এক বিশাল লাল-সবুজের তরঙ্গ যেন বয়ে যাচ্ছিল বিশাল ময়দানজুড়ে। মঞ্চে শতাধিক শিল্পী সমবেত কণ্ঠে গাইছিলেন ‘বিজয় নিশান উড়ছে ঐ বাংলার ঘরে ঘরে’।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ময়দানে প্রবেশ করেন বিপুল করতালি আর হর্ষধ্বনির মধ্যে। সময় তখন সাড়ে নয়টা। মঞ্চ থেকে ঘোষণা এল—ময়দানে লোকসংখ্যা পেরিয়ে গেছে দুই লাখ ৪০ হাজার। এ সময় পরিবেশিত হলো এই আয়োজনের ভাবসংগীত ‘জয় জয় জয় বাংলা’। সমবেত জনতা আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে লাখো কণ্ঠে আওয়াজ তোলেন ‘এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ, এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ’। এরপর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ও সুরকার সুজেয় শ্যামের পরিচালনায় দুবার মহড়া হয় জাতীয় সংগীতের। জানিয়ে দেওয়া হয় বিশ্ব রেকর্ডের জন্য চূড়ান্ত পর্বে জাতীয় সংগীত গাওয়ার নিয়ম। সবাইকে গলা ছেড়ে গাইতে হবে। গান গাওয়ার সময় হাতের জাতীয় পতাকাটি নামিয়ে রাখতে হবে। নাড়ানো যাবে না।
সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি প্রিয় মাতৃভূমি, মাতৃভাষাকে ভালোবেসে বিশ্ব রেকর্ড করতে আসা সমবেত জনতাকে অভিনন্দন জানান। শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দেশের স্বাধীনতার জন্য যাঁরা জীবন উৎসর্গ করেছেন, ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাঁদের প্রতি। স্বাধীনতার রূপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি, যিনি দীর্ঘ ২৪ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জাতিকে স্বাধীন করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, এই আয়োজন জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্দীপ্ত করবে। সেই প্রেরণা নিয়ে এগিয়ে যাবে সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে।
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পর মঞ্চ থেকে ঘোষণা করা হয়, যান্ত্রিক গণনা অনুসারে ময়দানে দুই লাখ ৫৪ হাজার ৬৮১ জন লোক প্রবেশ করেছেন। তবে লোকসংখ্যা আরও বেশি হবে। সবাইকে প্রস্তুত হতে বলা হয় বিশ্ব রেকর্ডের জন্য জাতীয় সংগীত গাওয়ার জন্য। মঞ্চে আসেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীরাসহ শতাধিক প্রবীণ-নবীন শিল্পী। সুজেয় শ্যামের পরিচালনায় শুরু হয় বিশ্ব রেকর্ড করার জন্য লাখো কণ্ঠের গান। গান শেষ হওয়ার পরেই হর্ষধ্বনিতে ফেটে পড়েন আড়াই লক্ষাধিক মানুষ। পতাকা নেড়ে আবার লাল-সবুজের স্পন্দন তোলেন তাঁরা মাঠে।
জাতীয় প্যারেড ময়দানের এই চূড়ান্ত পর্বে গাওয়া জাতীয় সংগীতের সঙ্গে সারা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকেও সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ কণ্ঠ মিলয়েছেন। এমনকি পথচলতি ট্রেনগুলো এই সময় যেটি যেখানে ছিল থেমে যায়। যাত্রীরা আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীতে কণ্ঠ মেলান।
প্যারেড ময়দানে অনুষ্ঠানটি এ পর্যন্ত সব ঠিকঠাক মতোই চলছিল। তবে শেষটা তেমন হলো না। জাতীয় সংগীতের পর মঞ্চে এলেন শিল্পী মমতাজ। তখন ব্লকগুলোর নিরাপত্তাবেষ্টনী সরিয়ে নেওয়া হয়। যেন নিমেষে ঘটে গেল জনবিস্ফোরণ। সারা মাঠে বিপুল শোরগোল, লাখ লাখ মানুষের ছোটাছুটি। এর মধ্যে মমতাজ ‘এই আকাশ হতো যদি’, ‘আমার ঘুম ভাঙাইয়া গেল রে’সহ কয়েকটি গান গেয়ে শোনান। শেষে মঞ্চে আসেন শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু। তিনি শুরু করেছিলেন ‘রাখে আল্লা মারে কে’ দিয়ে। গানের পাশাপাশি তাঁকে বহু কথা খরচ করতে হয়েছে ছত্রভঙ্গ জনতাকে শান্ত হওয়ার জন্য। আয়োজনটি শেষ হয়েছিল এভাবেই।
এই আয়োজনের ফল কবে জানা যাবে, সে প্রসঙ্গে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর প্রথম আলোকে বলেন, ‘গিনেস বুক কর্তৃপক্ষের কাছে এই আয়োজনের ধারণ করা মূল রেকর্ড পাঠাতে হবে। তারা নিজেরাও রেকর্ড করেছে। পর্যবেক্ষণ করে ফল ঘোষণা করতে প্রায় দুই সপ্তাহ লেগে যাবে। তবে বিশ্ব রেকর্ডের চেয়ে এই আয়োজনের বড় প্রাপ্তি, সারা দেশে মানুষ একসঙ্গে জাতীয় সংগীত গেয়েছেন। অনেকে পথে আটকে পড়ায় মূল আয়োজনে অংশ নিতে পারেননি। সব মিলিয়ে আমাদের প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গেছে।’
No comments:
Post a Comment