মুক্তিযুদ্ধের পথ বেয়ে
মুক্তিযুদ্ধকে বিষয় করে তানভীর মোকাম্মেল বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানালেন তাঁর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রগুলো সম্পর্কে নানা কথা
আপনি মুক্তিযুদ্ধকে বিষয় করে অনেক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। এর মধ্যে যেমন প্রামাণ্যচিত্র আছে, তেমনি আছে কাহিনিচিত্রও। নানাভাবে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণের মধ্য দিয়ে আপনি কোথায় পৌঁছাতে চান?তানভীর মোকাম্মেল: মুক্তিযুদ্ধ আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে বড় ঘটনা—বিষয় ও বৈচিত্র্যে। ১৯৭১ সালে আমি সদ্য কৈশোরোত্তীর্ণ তরুণ, যে বয়সটিতে একজন মানুষের সংবেদনশীলতা থাকে সবচেয়ে তীক্ষ। সে সময়টায় দেখলাম ভয়াবহ সব গণহত্যা, নারী নিপীড়ন, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও রাজাকারদের বর্বরতা, শরণার্থীদের অমানবিক দুঃখ-দুর্দশা, মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ-তিতিক্ষা ও সাহস। মুক্তিযুদ্ধ তাই আমার অবচেতন মনে হয়তো এমন এক গভীর ছাপ ফেলেছে যে যখনই কোনো চলচ্চিত্র নির্মাণ করার কথা ভাবি, তখনই মুক্তিযুদ্ধের সময়কার কোনো ঘটনার কথাই সামনে এসে পড়ে।
আরেকটা কারণও রয়েছে। অনেক বছর ধরে, বিশেষ করে ১৯৭৫ সালের পর থেকে, খুব বেদনার সঙ্গে আমরা লক্ষ করেছি যে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে পাল্টে দেওয়ার, ভুলিয়ে দেওয়ার একটা অপচেষ্টা করা হয়েছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের যাপিত জীবনের অংশ। সেই ইতিহাস পাল্টে দেওয়ার কোনো প্রচেষ্টা আমার জন্য ছিল খুবই বিরক্তিকর। এ কারণেই আমি মুক্তিযুদ্ধের ওপর একটির পর একটি কাহিনিচিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করেছি, যাতে এ দেশের মানুষ, বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম, ১৯৭১ সালের সঠিক ইতিহাসটা জানতে পারে।
আপনার ‘১৯৭১’ প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণের ক্ষেত্রে আপনার ভাবনা কী ছিল? ছবিতে মুক্তিযুদ্ধকে আপনি যেভাবে ধরতে চেয়েছেন, সেভাবে কি ধরতে পেরেছেন?তানভীর মোকাম্মেল: প্রায় সাত বছর গবেষণা ও শুটিং করে আমরা ১৯৭১ প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণ করেছি। ঠাকুরগাঁও থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট থেকে খুলনা—বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই আমরা শুটিং করেছি। প্রায় আড়াই শ ঘণ্টার ফুটেজ ছিল আমাদের, যা থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টার এই মেগা ডকুমেন্টারিটি তৈরি। সেই ১৯৪৭ সাল থেকে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক-ইতিহাস, ২৫ মার্চের অপারেশন সার্চলাইট, গণহত্যা, নারী নিপীড়ন, প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার গঠন, শরণার্থীদের দুঃখ-দুর্দশা, মুক্তি বাহিনীর তৎপরতা, নৌ কমান্ডোদের সাহসী কর্মকাণ্ড, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও ইসলামি মৌলবাদীদের নানা নৃশংসতা, সে সময়কার আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক তৎপরতা, ডিসেম্বরের ভারত-পাকিস্তান চূড়ান্ত যুদ্ধ—এ সবই আমরা প্রামাণ্যচিত্রটিতে তুলে ধরেছি এবং আমি মনে করি, বেশ বিশদে ও সফলভাবেই তা তুলে ধরতে পেরেছি।
আপনি মুক্তিযুদ্ধকে বিষয় করে অনেক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। এর মধ্যে যেমন প্রামাণ্যচিত্র আছে, তেমনি আছে কাহিনিচিত্রও। নানাভাবে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণের মধ্য দিয়ে আপনি কোথায় পৌঁছাতে চান?তানভীর মোকাম্মেল: মুক্তিযুদ্ধ আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে বড় ঘটনা—বিষয় ও বৈচিত্র্যে। ১৯৭১ সালে আমি সদ্য কৈশোরোত্তীর্ণ তরুণ, যে বয়সটিতে একজন মানুষের সংবেদনশীলতা থাকে সবচেয়ে তীক্ষ। সে সময়টায় দেখলাম ভয়াবহ সব গণহত্যা, নারী নিপীড়ন, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও রাজাকারদের বর্বরতা, শরণার্থীদের অমানবিক দুঃখ-দুর্দশা, মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ-তিতিক্ষা ও সাহস। মুক্তিযুদ্ধ তাই আমার অবচেতন মনে হয়তো এমন এক গভীর ছাপ ফেলেছে যে যখনই কোনো চলচ্চিত্র নির্মাণ করার কথা ভাবি, তখনই মুক্তিযুদ্ধের সময়কার কোনো ঘটনার কথাই সামনে এসে পড়ে।
আরেকটা কারণও রয়েছে। অনেক বছর ধরে, বিশেষ করে ১৯৭৫ সালের পর থেকে, খুব বেদনার সঙ্গে আমরা লক্ষ করেছি যে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে পাল্টে দেওয়ার, ভুলিয়ে দেওয়ার একটা অপচেষ্টা করা হয়েছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের যাপিত জীবনের অংশ। সেই ইতিহাস পাল্টে দেওয়ার কোনো প্রচেষ্টা আমার জন্য ছিল খুবই বিরক্তিকর। এ কারণেই আমি মুক্তিযুদ্ধের ওপর একটির পর একটি কাহিনিচিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করেছি, যাতে এ দেশের মানুষ, বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম, ১৯৭১ সালের সঠিক ইতিহাসটা জানতে পারে।
আপনার ‘১৯৭১’ প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণের ক্ষেত্রে আপনার ভাবনা কী ছিল? ছবিতে মুক্তিযুদ্ধকে আপনি যেভাবে ধরতে চেয়েছেন, সেভাবে কি ধরতে পেরেছেন?তানভীর মোকাম্মেল: প্রায় সাত বছর গবেষণা ও শুটিং করে আমরা ১৯৭১ প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণ করেছি। ঠাকুরগাঁও থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট থেকে খুলনা—বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই আমরা শুটিং করেছি। প্রায় আড়াই শ ঘণ্টার ফুটেজ ছিল আমাদের, যা থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টার এই মেগা ডকুমেন্টারিটি তৈরি। সেই ১৯৪৭ সাল থেকে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক-ইতিহাস, ২৫ মার্চের অপারেশন সার্চলাইট, গণহত্যা, নারী নিপীড়ন, প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার গঠন, শরণার্থীদের দুঃখ-দুর্দশা, মুক্তি বাহিনীর তৎপরতা, নৌ কমান্ডোদের সাহসী কর্মকাণ্ড, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও ইসলামি মৌলবাদীদের নানা নৃশংসতা, সে সময়কার আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক তৎপরতা, ডিসেম্বরের ভারত-পাকিস্তান চূড়ান্ত যুদ্ধ—এ সবই আমরা প্রামাণ্যচিত্রটিতে তুলে ধরেছি এবং আমি মনে করি, বেশ বিশদে ও সফলভাবেই তা তুলে ধরতে পেরেছি।
সম্প্রতি ‘জীবনঢুলী’ নামে আপনি একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। এই চলচ্চিত্রের বিষয়ও মুক্তিযুদ্ধ। ‘১৯৭১’-এর পর আবার মুক্তিযুদ্ধকে উপজীব্য করে আরেকটি ছবি নির্মাণে আগ্রহী হলেন কেন?তানভীর মোকাম্মেল: জীবনঢুলী নিম্নবর্গের একটি হিন্দু ঢাকি ও তার পরিবারের ১৯৭১ সালের অভিজ্ঞতার কাহিনি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের সব শ্রেণী ও সব সম্প্রদায়ের মানুষই বিপন্ন ছিল। তবে সবচেয়ে বেশি বিপন্ন ছিল দরিদ্র হিন্দু পরিবারগুলোর জীবন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও রাজাকারদের হাতে ধরা পড়লে তাদের বাঁচার কোনো উপায় ছিল না। যেহেতু আমাদের রাষ্ট্রক্ষমতার বলয়ে বা করপোরেট মিডিয়ায় তাদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই, তাই আমাদের মুক্তিযুদ্ধে এই সম্প্রদায় ও শ্রেণীর আত্মত্যাগের কথাটা তেমনভাবে বলা হয় না। সে কারণেই আমি একজন গরিব হিন্দু ঢাকি ও তার পরিবারের কাহিনিকে বেছে নিয়েছিলাম।
‘জীবনঢুলী’ নির্মিত হয়েছে ২০১৩ সালে। ২০১৩ সালে দাঁড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন ১৯৭১ সালের প্রেক্ষাপট সৃষ্টি করা কতটা সম্ভব?তানভীর মোকাম্মেল: ১৯৭১ সাল থেকে আমরা এখন প্রায় চার দশক দূরে। মানুষের পোশাক-আশাক, ঘরবাড়ি, যানবাহন—সবকিছুই আজ পাল্টে গেছে। একাত্তরের বাস্তবতাকে ফিরিয়ে আনতে হলে শিল্পনির্দেশনার কাজটি এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জীবনঢুলীর পরিশ্রমী শিল্পনির্দেশক উত্তম গুহ এবং পোশাকের দায়িত্বে যিনি ছিলেন—চিত্রলেখা গুহ, এ কাজটি খুবই দক্ষতার সঙ্গে করেছেন। জনগণেরও অনেক সহায়তা পাওয়া গেছে। যেমন চুকনগর গণহত্যার দৃশ্যটি পুনর্নির্মাণে আমাদের কয়েক শ মানুষের প্রয়োজন ছিল। শুটিংয়ের আগে আমরা আশপাশের গ্রামগুলোয় প্রচার করেছিলাম। শত শত গ্রামবাসী অভিনয়ে অংশ নিতে এসেছিলেন। তাঁদের অনেকেই একাত্তরে চুকনগরের গণহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষ। অনেকে আবার চুকনগরের গণহত্যায় তাঁদের বাবা-মাকে হারিয়েছেন। তাঁরা যখন দৃশ্যটার জন্য অভিনয় করছিলেন, তখন শুটিংটা তাঁদের জন্য এক গভীর আবেগময়তার সৃষ্টি করেছিল। আমাদের জন্যও! আসলে জনগণের সহায়তা পেলে সবকিছুই করা সম্ভব।
‘জীবনঢুলী’ নির্মিত হয়েছে ২০১৩ সালে। ২০১৩ সালে দাঁড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন ১৯৭১ সালের প্রেক্ষাপট সৃষ্টি করা কতটা সম্ভব?তানভীর মোকাম্মেল: ১৯৭১ সাল থেকে আমরা এখন প্রায় চার দশক দূরে। মানুষের পোশাক-আশাক, ঘরবাড়ি, যানবাহন—সবকিছুই আজ পাল্টে গেছে। একাত্তরের বাস্তবতাকে ফিরিয়ে আনতে হলে শিল্পনির্দেশনার কাজটি এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জীবনঢুলীর পরিশ্রমী শিল্পনির্দেশক উত্তম গুহ এবং পোশাকের দায়িত্বে যিনি ছিলেন—চিত্রলেখা গুহ, এ কাজটি খুবই দক্ষতার সঙ্গে করেছেন। জনগণেরও অনেক সহায়তা পাওয়া গেছে। যেমন চুকনগর গণহত্যার দৃশ্যটি পুনর্নির্মাণে আমাদের কয়েক শ মানুষের প্রয়োজন ছিল। শুটিংয়ের আগে আমরা আশপাশের গ্রামগুলোয় প্রচার করেছিলাম। শত শত গ্রামবাসী অভিনয়ে অংশ নিতে এসেছিলেন। তাঁদের অনেকেই একাত্তরে চুকনগরের গণহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষ। অনেকে আবার চুকনগরের গণহত্যায় তাঁদের বাবা-মাকে হারিয়েছেন। তাঁরা যখন দৃশ্যটার জন্য অভিনয় করছিলেন, তখন শুটিংটা তাঁদের জন্য এক গভীর আবেগময়তার সৃষ্টি করেছিল। আমাদের জন্যও! আসলে জনগণের সহায়তা পেলে সবকিছুই করা সম্ভব।
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তৈরি চলচ্চিত্রগুলো নিয়ে তরুণদের কাছ থেকে কী রকম সাড়া পেয়েছেন?
তানভীর মোকাম্মেল: জীবনঢুলী, ১৯৭১ ও আমার মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক অন্য চলচ্চিত্রগুলোর একটা বড় লক্ষ্য থাকে এ দেশের তরুণ প্রজন্ম। কারণ, তারাই দেশের আগামী, ভবিষ্যৎ। আমি সুখী যে এ দেশের তরুণ-তরুণীরা আমাদের ছবিগুলো খুবই পছন্দ করেন এবং তাঁরাই আমাদের ছবিগুলোর সিংহভাগ দর্শক। ছবিঘরে এসে ছবি দেখে বা ফেসবুকে কিংবা ইন্টারনেটে সারাক্ষণই তাঁরা আমাদের ছবিগুলো নিয়ে লেখালেখি ও ইতিবাচক নানা মন্তব্য প্রচার করে থাকেন।
http://www.prothom-alo.com/entertainment/article/172876/%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A7%87%E0%A6%B0_%E0%A6%AA%E0%A6%A5_%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A7%9F%E0%A7%87
No comments:
Post a Comment