নৈশভোজে এক বন্ধুকে খাচ্ছি’
সেঁজুতি শোণিমা নদী, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 2014-07-31 13:05:48.0 BdST Updated: 2014-07-31 15:46:22.0 BdST
বিরাট ডাইনিং টেবিলে হরেক রকম পদের ছড়াছড়ি। গৃহকর্তা নিজেই অতিথিদের আপ্যায়ন করছেন। তার রান্নার প্রশংসায় পঞ্চমুখ সবাই। অতিথিদের একজন জিজ্ঞেস করলেন, “তোমাকে বলতেই হবে, এই দারুণ পদটা কি দিয়ে রেঁধেছ তুমি?”
স্মিতহাস্যে রাঁধুনীর উত্তর, “যদি বলে দিই, আমার আশঙ্কা, তুমি এটা চেখেও দেখবে না!”
এই রাঁধুনী ডক্টর হ্যানিবল লেক্টার, আর নরমাংস উপাদেয় করে তুলতে সিদ্ধহস্ত তিনি।
দৃশ্যটি সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার ‘রেড ড্রাগন’-এর। মার্কিন ঔপন্যাসিক টমাস হ্যারিসের ‘কুখ্যাত’ সিরিয়াল কিলার ‘হ্যানিবল দ্য ক্যানিবল’কে নিয়ে নিয়ে তৈরি চতুর্থ সিনেমা এটি। এটিসহ হ্যানিবল সিরিজের মোট চারটি সিনেমায় নামভূমিকায় অভিনয় করে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছেন অ্যান্থনি হপকিন্স। আমেরিকান ফিল্ম ইন্সিটিউটিউট এই চরিত্রটিকে নির্বাচিত করেছে শতাব্দির সেরা খলচরিত্র হিসেবে।
১৯৮৬-এর ‘ম্যানহান্টার’ দিয়ে শুরু। এরপর ১৯৯১ সালের ব্লকবাস্টার হিট ‘সাইলেন্স অফ দ্য ল্যাম্বস’ দিয়ে পাঁচ অস্কার জয়। ঠিক এক দশক পরে ‘হ্যানিবল’ দিয়ে প্রত্যাবর্তন। এরপর ২০০২ সালের ‘রেড ড্রাগন’, ২০০৭-এর ‘হ্যানিবল রাইজিং’ আর ২০১৩ থেকে শুরু হওয়া জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ‘হ্যানিবল’। সবমিলিয়ে হ্যানিবলের পর্দার ইতিহাস তিন দশকের।
এই তিন দশকে ‘হ্যানিবল দ্য ক্যানিবল’-এর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মোট চারজন অভিনেতা। ব্রায়ান কক্স, অ্যন্থনি হপকিন্স থেকে হালের জ্যাসপার্ড ইউলিয়েল আর ম্যাডস মিকেলসেনের অভিনয়ে ভিন্ন ভিন্ন গল্প আর আঙ্গিকে বারবার ফিরে এসেছে হ্যানিবলের রক্ত হিম করা সব কাহিনী। তিরিশ বছরে হ্যানিবলের একাল আর সেকালের গল্প নিয়েই এবারের আয়োজন।
অপরাধবিষয়ক সাংবাদিকতা ছেড়ে টমাস হ্যারিস তার ঔপন্যাসিক জীবন শুরু করেছিলেন ১৯৭৪ সালে। ওই বছরে প্রকাশিত ‘ব্ল্যাক সানডে’ ছিল সন্ত্রাসবাদ বিষয়ক এক উপন্যাস। চার বছর পরেই হ্যারিস শুরু করেন তার ক্যারিয়ারের একমাত্র এবং ইতিহাসের অন্যতম বেস্ট সেলিং সাইকো-থ্রিলার সিরিজের কাজ।
প্রথম উপন্যাসেই তিনি পরিচয় করিয়ে দেন সিরিয়াল কিলার হ্যানিবল লেক্টারকে। তুখোড় প্রতিভাবান এবং নামকরা মনোবিজ্ঞানী হ্যানবলকেই একসময় ভয়ঙ্কর এক নরখাদক খুনির ভূমিকায় আবিষ্কার করে ফেলে এফবিআইয়ের স্পেশাল এজেন্ট উইল গ্রাহাম। দোষী সাব্যস্ত হলে তার ঠিকানা হয় মেরিল্যান্ড মেন্টাল ইন্সটিটিউশনে; যেখানে যাবজ্জীন কারদণ্ডের সাজা পাওয়া এই অপরাধীকে থাকতে হয় ফ্রেডরিখ চিলটনের অধীনে।
বেশ কয়েকবছর পরের ঘটনা, উইল গ্রাহাম তখন এফবিআইএর চাকরি ছেড়ে স্ত্রী-পুত্র নিয়ে পুরোদস্তুর সংসারী জীবন কাটাচ্ছেন। এমন সময়েই আবির্ভাব ‘দ্য টুথ ফেইরি’ নামের আরেক সিরিয়াল কিলারের। প্রতি পূর্ণিমাতেই তার হাতে খুন হচ্ছে একটি করে পরিবার। আরও একবার এই খুনিকে ধরার দায়িত্ব পড়ে গ্রাহামের কাঁধে। গ্রাহাম তখন সাহায্য চাইতে আসেন তার হ্যানিবলের কাছে। সেখান থেকেই এগুতে থাকে গল্প।
উপন্যাসটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই আলোড়ন তোলে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে। ১৯৮৬ সালে মুক্তি পায় উপন্যাসটি থেকে তৈরী করা প্রথম সিনেমা ‘ম্যানহান্টার’। বিখ্যাত নির্মাতা মাইকেল মান ছিলেন ক্যামেরার পেছনে। সিনেমাটি খুব বেশি ব্যাবসা করতে না পারলেও পরবর্তীতে ‘কাল্ট ফিল্ম’ হিসেবে সিনেমাপ্রেমীদের কাছে সমাদৃত হয়েছে।
এই সিনেমার মাধ্যমেই রূপালি পর্দায় অভিষেক ঘটে হ্যানিবলের। প্রথমবারের মতো এই চরিত্রে অভিনয় করেন ব্রায়ান কক্স। উইল গ্রাহামের চরিত্রে ছিলেন উইলিয়াম পিটারসেন; সিবিএস এর ক্রাইম ড্রামা টিভি সিরিজ ‘সিএআই: ক্রাইম সিন ইনভেস্টিগেশন’-এ আরও একবার এফবিআই কর্মকর্তার ভুমিকায় অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন তিনি।
সাইলেন্স অফ দ্য ল্যাম্বস: হপকিন্স যুগের শুরু
হ্যানিবলকে নিয়ে দ্বিতীয় সিনেমাটি মুক্তি পায় পাঁচ বছর পর। ততদিনে টমাস হ্যারিসের একই নামের উপন্যাসটি অর্জন করে নিয়েছে ওই সময়ের সেরা সাইকো-থ্রিলার উপন্যাসের স্বীকৃতি। উপন্যাসটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই এটির স্বত্ত্ব কিনে নেন অস্কারজয়ী মার্কিন অভিনেতা ও ঔপন্যাসিক জিন হ্যাকম্যান। ওই বছরেই ওরিয়ন ফিল্মসের সঙ্গে তার চুক্তি হয় উপন্যাসটির উপর সিনেমা বানানোর। শুরুতে কথা ছিল, হ্যাকম্যান নিজেই পরিচালনা করবেন সিনেমাটি; আর হ্যানিবলের চরিত্রেও অভিনয় করবেন তিনিই। কিন্তু হঠাৎ করেই মন বদলে ফেলেন হ্যাকম্যান। ওরিয়ন ফিল্মসকে তখন বাধ্য হয়েই নামতে হয় নতুন পরিচালক আর অভিনেতার খোঁজে।
১১৮ মিনিটের ওই সিনেমায় হ্যানিবলরূপী অ্যান্থনি হপকিন্সের পর্দা উপস্থিতি ছিল মোটে সাড়ে ২৪ মিনিটের। এই অল্প সময়ের অভিনয় দিয়েই সেরা অভিনেতা হিসেবে অস্কার জিতে নেন তিনি। খুব কম সময় পর্দায় থেকেও সেরা অভিনেতার অস্কার জেতা দ্বিতীয় ব্যাক্তি হিসেবে ইতিহাসে জায়গা করে নেন তিনি। অভিজ্ঞজনেরা বলেন, কেবল ২৪ মিনিট নয়, দর্শক হ্যানিবলের উপস্থিতি টের পেয়েছেন প্রায় পুরো সিনেমা জুড়েই। হ্যানিবলের ইতিহাসে হপকিন্স যুগের সূচনাও তখন থেকেই।
অথচ প্রথমদিকে এই চরিত্রের জন্য পরিচালকের পছন্দের তালিকাতেই ছিলেন না হপকিন্স। ডেমের তালিকার শীর্ষে ছিলেন রবার্ট ডুভাল। ডাকসাইটে এই অভিনেতা ছাড়াও জ্যাক নিকলসন, রবার্ট ডি নিরো, শন কনারি, ডাস্টিন হফম্যান এবং প্যাট্রিক স্টুয়ার্টদের মতো তারকারাই ছিলেন ডেমের চিন্তায়। তবে শেষমেশ ১৯৮০ সালের ড্রামা ‘দ্য এলিফ্যান্ট ম্যান’ দেখে হপকিন্সকেই বেছে নেন তিনি।
সিনেমার মূল অভিনেত্রী, জোডি ফস্টারও কিন্তু সেই হিসেবে ‘রিপ্লেসমেন্ট চয়েস’! সোনালি চুলের কমবয়সী এফবিআই এজেন্ট ক্ল্যারিস স্টার্লিংয়ের চরিত্রে ডেমে চেয়েছিলেন মিশেল ফাইফার, মেগ রায়ান আর মেলানি গ্রিফিথদের মতো হলিউড সুন্দরীদের। তারা ফিরিয়ে দিলে নিকোল কিডম্যান, হ্যালি বেরির মতো অভিনেত্রীও অডিশন দিয়েছিলেন চরিত্রটির জন্য। কিন্তু ৩০০ আবেদনকারীর মধ্য থেকে শেষ পযর্ন্ত সুযোগটি বাগিয়ে নেন ফস্টারই। পরিচালকের আস্থার প্রতিদানও ভালভাবেই দিয়েছিলেন তিনি। দ্বিতীয়বারের মতো সেরা অভিনেত্রীর অস্কার জিতে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শতাব্দীর সেরা ১০ এফবিআই চরিত্রের ছয় নম্বর স্থানটি দখল করে নেন তিনি।
সিনেমাটি সমালোচকের প্রশংসার পাশাপাশি দর্শকপ্রিয়তাও পেয়েছিল। ১৯৯১ সালের ভালবাসা দিবসে মুক্তি পেয়ে ২৭ কোটিরও বেশি ব্যবসা করেছিল সিনেমাটি; যা ‘দ্য সাইলেন্স অফ ল্যাম্বস’কে এনে দেয় রাতারাতি ব্লকবাস্টার হওয়ার স্বীকৃতি।
হ্যানিবল সিরিজের দ্বিতীয় সিনেমাটি মুক্তি পায় ‘সাইলেন্স অফ দ্য ল্যাম্বস’-এর এক দশক পর। এক দশক আগের সিনেমায় হয়েছিল ক্ল্যারিস স্টার্লিং-এর সঙ্গে হ্যানিবলের অন্যরকম এক সম্পর্কের সূচনা। সেটিকে আরও পোক্ত করতেই টমাস হ্যারিস লেখেন তার ১৯৯৯ সালের উপন্যাস ‘হ্যানিবল’। দুই বছর পর সেটিকেই রূপালি পর্দায় নিয়ে আসেন রিডলি স্কট, ‘হ্যানিবল’ সিনেমার মাধ্যমে।
আগের সিনেমায় দুর্দান্ত অভিনয় করলেও ‘হ্যানিবল’-এ আরও একবার ক্ল্যারিস স্টার্লিং-এর চরিত্রে অভিনয় করতে চাননি জোডি ফস্টার। তার জায়গায় তাই চুক্তিবদ্ধ করা হয় জুলিয়ান মুরকে।
‘সাইলেন্স অফ দ্য ল্যাম্বস’-এ ক্ষেত্রবিশেষে হ্যানবলই ছিলেন স্টার্লিং-এর রক্ষক। কুখ্যাত খুনি ‘বাফেলো বিল’কে ধরতে স্টার্লিংয়ের পথপ্রদর্শক হিসেবেই কাজ করেছেন হ্যানিবল। কিন্তু ‘হ্যানিবল’-এ এসে স্টার্লিংই হয়ে ওঠেন হ্যানিবলের রক্ষাকর্তা। হ্যানিবলের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া মেসন ভার্জারের জিঘাংসার হাত থেকে তাকে রক্ষা করতে সে পাড়ি জমায় ইতালিতে।
সমালোচকদের মন ভরাতে না পারলেও বক্স অফিসে কিন্তু দারুণ ব্যাবসা করেছিল সিনেমাটি। ফলে হপকিন্স জাদুতে ভর করে হ্যানিবলকে নিয়ে আরও একবার সিনেমা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় ইউনিভার্সাল পিকচার্স। পরিচালক হিসেবে রিডলি স্কটের জায়গায় আসেন ব্রেট র্য্যাটনার। পরের বছরই ‘ম্যানহান্টার’-এর রিমেইক হিসেবে ‘রেড ড্রাগন’ নিয়ে মাঠে নামে তারা। হপকিন্সের সঙ্গী এবার র্য্যাল্ফ ফিয়েনেস, এডওয়ার্ড নর্টন আর ফিলিপ সিমোর হফম্যান। বিশেষ করে ‘দ্য টুথ ফেইরি’ ফ্রান্সিস ডলারহাইডের চরিত্রে অস্কারজয়ী ফিয়েনেসের অভিনয় নজর কেড়ে নেয় সবার। ফলাফল- দর্শক-সামালোচক সবার সমর্থন নিয়েই মুল বাজেটের তিন গুণ বেশি অর্থ বক্স অফিস থেকে তুলে নেয় সিনেমাটি।
‘রেড ড্রাগন’-এর মাধ্যমেই হ্যানিবলনামায় হপকিন্স যুগের শেষ। এই সিরিজের সবশেষ সিনেমা ২০০৭ সালের ‘হ্যানিবল রাইজিং’। এর ঠিক এক বছর আগেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসিদের হাতে পুরো পরিবারকে হারানো হ্যানিবলের ‘খুনি’ হয়ে ওঠার গল্প নিয়ে এই কিস্তির চতুর্থ উপন্যাসটি লিখেছিলেন হ্যারিস। সেটির উপর ভিত্তি করেই তৈরি হয় সিনেমাটি। এবার তরুণ হ্যানিবলের চরিত্রে অভিনয় করেন একজন ফরাসি অভিনেতা, জ্যাসপার্ড ইউলিয়েল। পরিচালনায় ছিলেন ‘গার্ল উইথ দ্য পার্ল ইয়ার রিং’ খ্যাত ব্রিটিশ পরিচালক পিটার ওয়েবার
সিনেমার প্লট চমকপ্রদ হলেও, ঠিক হপকিন্সের মতো অভিনয় দক্ষতা দেখাতে পারেননি তরুণ ইউলিয়েল। ফলে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য আর যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে মূলধন ওঠাতে পারলেও আগের সিনেমাগুলির মতো সাফল্য পায়নি সিনেমাটি।
বড়পর্দায় হ্যানিবলে অধ্যায় শেষ হয়ে যায় ২০০৭ সালেই। হ্যানিবলকে নিয়ে আর কোনো উপন্যাস বের না হওয়ায়, ভক্তরা ধরে নিয়েছিলেন, হ্যানিবল যুগের সমাপ্তি হয়েছে ওখানেই। আর তাই, ২০১২ সালে যখন এএক্সএন ঘোষণা দিল হ্যানিবলকে নিয়ে টিভি সিরিজ বানানোর, স্বাভাবিক ভাবেই, বিষয়টি আলোড়ন তুলেছিল গোটা বিশ্বের থ্রিলারপ্রেমীদের কাছে
সিরিজটি শুরু হওয়ার আগে হরেক রকম প্রশ্ন আর সংশয় উঁকি দিচ্ছিল ভক্তদের মনে। সিনেমা থেকে টিভির পর্দা- হ্যানিবলের মতো ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ একটি চরিত্রকে ঠিক কতটা তুলে ধরতে পারবেন নির্মাতারা? অ্যান্থনি হপকিন্স এই চরিত্রটিকে যেভাবে তুলে ধরেছেন, নতুন অভিনেতা ম্যাডস মিকেলসেন কি পারবেন প্রত্যাশার সেই পারদ ধরে রাখতে? সিরিজের গল্পগুলোই বা কেমন হবে? হুবুহু উপন্যাসের কাহিনী ধরেই কি এগুবে নির্মাতারা, নাকি মুলভাব বজায় রেখে অন্যরকম এক গল্পই তুলে ধরা হবে হ্যানিবলকে নিয়ে?
২০১৩ সালে এনবিসিতে প্রচার শুরু হওয়া ‘হ্যানিবল’-এর প্রথম সিজন দিয়েই সেসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেছে ভালভাবেই। সিনেমার হ্যানিবলের থেকে ছোটপর্দার এই হ্যানিবল একেবারেই অন্যরকম। এই হ্যানিবল অসম্ভব বিনয়ী; অন্যদের সাহায্য করার প্রশ্নে তার দুয়ার সবসময়ই খোলা। দারুণ সহানুভূতিশীল এই মুখোশের পেছনেই আবার অত্যন্ত ধূর্ত, ঠাণ্ডা মাথার এক খুনি সে। স্পেশাল এজেন্ট উইল গ্রাহামকে সাহায্য করার আড়ালে নিজের ভয়ঙ্কর পরিকল্পনারই ছক কষে সে। অমায়িক ভদ্রলোক অথচ ক্রুর বুদ্ধিমত্তার এই হ্যানিবলকে নিজের শক্তিশালী অভিনয়ের মাধ্যমে ভালোভাবেই তুলে ধরতে পেরেছেন ম্যাডস মিকেলসেন। হ্যানিবল লেক্টারের চরিত্রের ‘মাস্টারমাইন্ড গেইমার’-এর দিকটিও দারুণভাবেই উঠে এসেছে তার অভিনয়ে।
সিরিজের অন্যতম প্রধান চরিত্র উইল গ্রাহামের ভুমিকায় অভিনয় করছেন হিউ ডান্সি। মানসিক ভারসাম্যের দিক থেকে খুবই দুর্বল, কিন্তু প্রখর কল্পনাশক্তি আর অপরাধীদের মানসিকতা বোঝার তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন গ্রাহামের কাছে প্রতি পর্বেই আসে নতুন নতুন রহস্য। বিচিত্র মানসিকতার এইসব খুনিদের ধরার ব্যাপারে হ্যানিবলই পথ দেখায় গ্রাহামকে। কিন্তু একটা পর্যায়ে এসে সে বুঝতে পারে ভয়ঙ্কর খুনি ‘দ্য চেসিপিক রিপার’ আর কেউ নয়, হ্যানিবল নিজেই।
এরকম একটি জটিল মনস্তাত্বিক দ্বন্দ্বে ভোগা চরিত্রে হিউ ড্যান্সির অভিনয়ও খুবই সাবলীল। সিরিজের অন্যান্য চরিত্রে লরেন্স ফিশবার্ন, জিনা তোরেস, জিলিয়ান অ্যান্ডারসনদের মতো তারকাদের অভিনয়ও দারুণ। ফলে, মূল উপন্যাসের সঙ্গে কাহিনীর মিল সামান্য হলেও, নতুন যুগের এই ‘হ্যানিবল’ দর্শক-সমালোচকদের মন জয় করে নিতে সময় নেয়নি খুব বেশি।
দুই সিজন শেষে আইএমডিবিতে ‘হ্যানিবল’-এর রেটিং এখন ৮ দশমিক ৬। রটেন টোমাটোজের ভোটে এটির গ্রহণযোগ্যতা শত ভাগ। মেটাক্রিটিকের সমালোচকদের মধ্যে ৮৮ শতাংশই পছন্দ করেছেন সিরিজটিকে। অ্যাওয়ার্ড আসরগুলোতে খুব বেশি আলো ছড়াতে না পারলেও সবার পছন্দের শীর্ষেই রয়েছে সিরিজটি। দ্বিতীয় সিজনের শেষ চমকপ্রদ হওয়ায়, সবাই এখন দিন গুনছে তৃতীয় সিজনের।
ছোটপর্দায় ‘হ্যানিবল- দ্য ক্যানিবল’-এর যাত্রা তাই অব্যাহত থাকছে।
No comments:
Post a Comment