আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ॥ এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর প্রচার
মুনতাসীর মামুন
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে বিতর্কিত করতে দেশী-বিদেশী মহল শুরু থেকেই সক্রিয়। জামায়াতে ইসলামী শত শত কোটি টাকা ব্যয় করছে লবিস্ট নিয়োগ করে- লবিস্টরা আইসিটির কর্মকা-কে নানাভাবে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্নবিদ্ধ করতে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ এ ব্যাপারে সরকার পক্ষের কোন কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেই। এ বিষয়ে প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন লিখেছেন তাঁর বিশ্লেষণধর্মী লেখা। গতকালের পর আজ পড়ুন শেষ কিস্তি।
প্রথম কথা, রাজনৈতিক ফায়দা। যারা যুদ্ধাপরাধী তারা যদি জামায়াত করে এবং যুদ্ধাপরাধে তাদের অভিযুক্ত করা হয় তাহলে তা রাজনৈতিক ফায়দা হবে কেন? পৃথিবীর অন্যান্য দেশে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে সেসব ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ফায়দার কথা তো আসছে না। অপরাধীকে বিচার করতে গেলেই যদি এ কথা বলা হয় তাহলে অপরাধকে নাকচ করা হয়। ১৯৭১ সালে জামায়াত ইসলাম যুদ্ধাপরাধ করেছে তা ঐতিহাসিক সত্য, সেটি আইনগতভাবে বিচার করলে ‘রাজনৈতিক ফায়দা’ হবে কেন? এই প্রশ্নের জবাব পাওয়া জরুরী। কেননা কেউ যদি অপরাধ করে রাজনৈতিক দলের আশ্রয় নেয় এবং সেই অপরাধের যদি বিচার করা হয় তাহলে কি বলা হবে তা রাজনৈতিক প্রতিশোধ? আওয়ামী লীগের অনেকের সঙ্গে জামায়াত নেতা-কর্মীর ব্যবসায়িক-আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকতে পারে। সেটি কেউ অস্বীকার করবে না। কিন্তু নেতৃস্থানীয় কোন রাজাকার এ কারণে বিচারের আওতায় আসছে না তার বা তাদের নামগুলো জানা দরকার। তাহলে আমরা তা আলোচনায় আনতে পারি। যেমন, মোবারক। পরিচয় ভাঙিয়ে কিছুদিন আওয়ামী লীগে ছিল। তাকে ট্রাইব্যুনালে বিচারের সম্মুখীন করা হলো কিন্তু কেউ আপত্তি করেনি। ফরিদপুরের এক বিখ্যাত রাজাকার এক আওয়ামী লীগের নেতার আত্মীয় একথা আমাকে কয়েকজন বলেছেন। কিন্তু সেই ব্যক্তি এ ধরনের অপরাধ করলে এবং তদন্ত সংস্থা তার বিরুদ্ধে তদন্ত করলে, আওয়ামী লীগ নেত্রী বা প্রধানমন্ত্রী আপত্তি জানাবেন এটি মনে করার কোন কারণ নেই।
এশিয়ান হিউম্যান রাইটস উপর্যুক্ত যে মন্তব্য করেছে তার সঙ্গে জামায়াতের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদকীয়র কোন অমিল নেই। ট্রাইব্যুনাল গঠিত হওয়ার একদিন পর থেকে বিএনপি-জামায়াত নেতারা এ অভিযোগ করে আসছে। তারা বিদেশী যে সব লবিস্ট নিয়োগ করেছে, তারাও একই ভাষায় বিবৃতি দিচ্ছে। হিউম্যান রাইটসও দিচ্ছে। তাহলে এ কথা বললে অসত্য হবে কেন যে, সংস্থাটি যুদ্ধাপরাধের পক্ষের শক্তির হয়ে কাজ করছে। আন্তর্জাতিকভাবে এটি একটি অপরাধ এবং আইন মন্ত্রণালয়ের উচিত, আমি আবারও বলব, তাদের উচিত এদের কঠোর সমালোচনা করা এবং বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম থাকলে তা সীমিত করা। মানবাধিকার সংস্থার অবশ্যই অধিকার আছে মানবাধিকার প্রশ্নে আলোচনা-সমালোচনা করার। কিন্তু, তাদের কোন অধিকার নেই ঐতিহাসিক সত্যের বিরুদ্ধাচরণ করা। হংকংয়ে বসে যারা চীনের মানবাধিকার নিয়ে কোন প্রশ্ন তুলতে পারে না, এমনকি আফগানিস্তানের তালেবান নৃশংসতা নিয়ে চুপ থাকে, তাদের কী অধিকার থাকতে পারে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ বিচার নিয়ে সমালোচনা করার?
তৃতীয় পরিচ্ছেদে সত্য-মিথ্যার একটি মিশেল আছে। তারা লিখেছে, ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ট্রাইব্যুনালের রায় প্রকাশিত হতে থাকলে তা সন্ত্রাসে প্রণোদনা যোগায়, যার কারণে ৮৮ জন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে আরও অনেকে। ইংরেজীতে ‘Beginning 5 February 2013, mass Protests were held in response to results of these tribunals, inciting violence that claimed the lives of 88 People and injured hundreds more.’-এর কথা বলা হচ্ছে আদৌ কি তা ছিল? না এটি ছিল জামায়াত-বিএনপির সশস্ত্র হামলা? রেকর্ডে আছে, বিএনপি-জামায়াত নেতারা হত্যার প্ররোচনা দিয়েছিলেন প্রকাশ্যে। এ কথা হিউম্যান রাইটস বলেনি। শুধু বলেছে, জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে বলা হয়েছে, অপরাধী যেই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে।
এই মানবাধিকার সংস্থাটি বলছে, আইসিটি যে মৃত্যুদ- দিচ্ছে যা সবাইকে চিন্তিত করছে কারণ বিরোধীদলের সদস্য ও কর্মীদের এই দ- দিচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক আইনের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ তা পারে না।
এ বিষয়টি সর্বৈব মিথ্যা। যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের দ- দেয়া আর বিরোধী দলের কর্মীদের অভিযুক্ত করা বিনা কারণে তা ভিন্ন ব্যাপার। লক্ষণীয় ঐতিহাসিকভাবে যারা অভিযুক্ত এই সংস্থাটি কখনও তাদের যুদ্ধাপরাধী বলছে না, বলছে বিরোধী দলের সদস্য যে কৌশল নিয়েছে বিএনপি-জামায়াত নেতৃবৃন্দ। এই যে মন্তব্য এটি ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছে আইসিটির বিরুদ্ধে যা আদালত অবমাননার শামিল। এই ধরনের ভিত্তিহীন সমালোচনার কারণে, আইসিটি আগে অনেককে তলব করেছে।
ইংরেজী বাক্যটি হলো ‘The use of Death Penalty under the ICT is of Particular worry. as sentences one hundred out to political activists and members of rival parties. the Death penalty under any circumstances is a violation of the right of life and contradicts Bangladeshi abligations under the International covenant on civil and political Rights and International Law.’
এশিয়ান হিউম্যান রাইটস আরও অভিযোগ তুলেছে এ বলে যে, অবস্থা আরও জটিল করে তুলেছে, ‘ফেয়ার ট্রায়াল’ করতে না পারায় বাংলাদেশের অক্ষমতা। ট্রাইব্যুনালের ত্রুটি অনেক যার মধ্যে অন্তর্গত জামিন না দেয়া এবং প্রাক বিচার মুক্তি, প্রধান সাক্ষীদের অপহরণ ও হুমকি। এমনকি অভিযোগ আছে প্রসিকিউটর, বিচারক ও সরকারের মধ্যে আঁতাতের। এটি মারাত্মক অভিযোগ। আইন মন্ত্রণালয় এবং ওঈঞ-এর মন্তব্যের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ না করলে, এটি এই মানবাধিকার সংস্থা উদ্ভাবিত সত্য বলে পরিচিত পাবে। কারণ, এই সংস্থাটি শক্তিশালী ও প্রভাবশালী। ইংরেজী ভাষ্যটি উদ্ধৃত করলে বোঝা যাবে বাংলায় তাদের বক্তব্যের মূল সুর ধরা যায়নি- ‘This is further compounded by Bangladeshi Inability to provide a fair trial and due Process. the flaws of this Tribunal are varied and include the Denial of bail and pre-trial release, the abduction and intimidation of key witnesses, and even allegations of collusion between prosecutors, judges and the government.’
এশিয়ান হিউম্যান রাইটসের এই সব মন্তব্য প্রবন্ধের শুরুতে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম তার প্রমাণ। অর্থাৎ মানবাধিকার সংস্থাসমূহ এখন কোন না কোন পক্ষের হয়ে কাজ করে এবং এ ক্ষেত্রে অর্থের ভূমিকা বিশাল। এশিয়ান হিউম্যান রাইটস যে ভূমিকা নিয়েছে তা যে পক্ষপাতদুষ্ট তা বলার অপেক্ষা রাখে না, হংকংয়ে বসে তারা মানবাধিকার চর্চা করে যেখানে চীনসহ এশিয়ার অন্য শক্তিশালী দেশসমূহের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে কোন বক্তব্য নেই। কিন্তু বাংলাদেশ সম্পর্কে যা বক্তব্য তার সবই হেজাবি এবং যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষের।
আইসিটি সম্পর্কে তারা যে মন্তব্য করেছে তা যে সত্য নয়, আমরা তা জানি। এর একটি কারণ হতে পারে মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদকীয়র কোন অমিল নেই। ট্রাইব্যুনাল গঠিত হওয়ার একদিন পর থেকে বিএনপি-জামায়াত নেতারা এ অভিযোগ করে আসছে। তারা বিদেশী যে সব লবিস্ট নিয়োগ করেছে, তারাও একই ভাষায় বিবৃতি দিচ্ছে। হিউম্যান রাইটসও দিচ্ছে। তাহলে এ কথা বললে অসত্য হবে কেন যে, সংস্থাটি যুদ্ধাপরাধের পক্ষের শক্তির হয়ে কাজ করছে। আন্তর্জাতিকভাবে এটি একটি অপরাধ এবং আইন মন্ত্রণালয়ের উচিত, আমি আবারও বলব, তাদের উচিত এদের কঠোর সমালোচনা করা এবং বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম থাকলে তা সীমিত করা। মানবাধিকার সংস্থার অবশ্যই অধিকার আছে মানবাধিকার প্রশ্নে আলোচনা-সমালোচনা করার। কিন্তু, তাদের কোন অধিকার নেই ঐতিহাসিক সত্যের বিরুদ্ধাচরণ করা। হংকংয়ে বসে যারা চীনের মানবাধিকার নিয়ে কোন প্রশ্ন তুলতে পারে না, এমনকি আফগানিস্তানের তালেবান নৃশংসতা নিয়ে চুপ থাকে, তাদের কী অধিকার থাকতে পারে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ বিচার নিয়ে সমালোচনা করার?
তৃতীয় পরিচ্ছেদে সত্য-মিথ্যার একটি মিশেল আছে। তারা লিখেছে, ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ট্রাইব্যুনালের রায় প্রকাশিত হতে থাকলে তা সন্ত্রাসে প্রণোদনা যোগায়, যার কারণে ৮৮ জন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে আরও অনেকে। ইংরেজীতে ‘Beginning 5 February 2013, mass Protests were held in response to results of these tribunals, inciting violence that claimed the lives of 88 People and injured hundreds more.’ GB.’ এই যে massprotests-এর কথা বলা হচ্ছে আদৌ কি তা ছিল? না এটি ছিল জামায়াত-বিএনপির সশস্ত্র হামলা? রেকর্ডে আছে, বিএনপি-জামায়াত নেতারা হত্যার প্ররোচনা দিয়েছিলেন প্রকাশ্যে। এ কথা হিউম্যান রাইটস বলেনি। শুধু বলেছে, জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে বলা হয়েছে, অপরাধী যেই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে।
এই মানবাধিকার সংস্থাটি বলছে, আইসিটি যে মৃত্যুদ- দিচ্ছে যা সবাইকে চিন্তিত করছে কারণ বিরোধীদলের সদস্য ও কর্মীদের এই দ- দিচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক আইনের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ তা পারে না।
এ বিষয়টি সর্বৈব মিথ্যা। যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের দণ্ড দেয়া আর বিরোধী দলের কর্মীদের অভিযুক্ত করা বিনা কারণে তা ভিন্ন ব্যাপার। লক্ষণীয় ঐতিহাসিকভাবে যারা অভিযুক্ত এই সংস্থাটি কখনও তাদের যুদ্ধাপরাধী বলছে না, বলছে বিরোধী দলের সদস্য যে কৌশল নিয়েছে বিএনপি-জামায়াত নেতৃবৃন্দ। এই যে মন্তব্য এটি ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছে আইসিটির বিরুদ্ধে যা আদালত অবমাননার শামিল। এই ধরনের ভিত্তিহীন সমালোচনার কারণে, আইসিটি আগে অনেককে তলব করেছে।
ইংরেজী বাক্যটি হলো ‘The use of Death Penalty under the ICT is of Paticular worry. as sentences one hundred out to political activists and members of rival parties. the Death penalty under any circumstances is a violation of the right of life and contradicts Bangladeshi abligations under the International covenant on civil and political Rights and International Law.’
এশিয়ান হিউম্যান রাইটস আরও অভিযোগ তুলেছে এ বলে যে, অবস্থা আরও জটিল করে তুলেছে, ‘ফেয়ার ট্রায়াল’ করতে না পারায় বাংলাদেশের অক্ষমতা। ট্রাইব্যুনালের ত্রুটি অনেক যার মধ্যে অন্তর্গত জামিন না দেয়া এবং প্রাক বিচার মুক্তি, প্রধান সাক্ষীদের অপহরণ ও হুমকি। এমনকি অভিযোগ আছে প্রসিকিউটর, বিচারক ও সরকারের মধ্যে আঁতাতের। এটি মারাত্মক অভিযোগ। আইন মন্ত্রণালয় এবং ওঈঞ-এর মন্তব্যের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ না করলে, এটি এই মানবাধিকার সংস্থা উদ্ভাবিত সত্য বলে পরিচিত পাবে। কারণ, এই সংস্থাটি শক্তিশালী ও প্রভাবশালী। ইংরেজী ভাষ্যটি উদ্ধৃত করলে বোঝা যাবে বাংলায় তাদের বক্তব্যের মূল সুর ধরা যায়নি- ‘This is further compounded by Bangladeshi Inability to provide a fair trial and due Proces. the flaws of this Tribunal are varied and include the Denial of bail and pre-trial release, the abduction and intimidation of key witnesses, and even allegations of collusion between prosecutors, judges and the government.
এশিয়ান হিউম্যান রাইটসের এই সব মন্তব্য প্রবন্ধের শুরুতে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম তার প্রমাণ। অর্থাৎ মানবাধিকার সংস্থাসমূহ এখন কোন না কোন পক্ষের হয়ে কাজ করে এবং এ ক্ষেত্রে অর্থের ভূমিকা বিশাল। এশিয়ান হিউম্যান রাইটস যে ভূমিকা নিয়েছে তা যে পক্ষপাতদুষ্ট তা বলার অপেক্ষা রাখে না, হংকংয়ে বসে তারা মানবাধিকার চর্চা করে যেখানে চীনসহ এশিয়ার অন্য শক্তিশালী দেশসমূহের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে কোন বক্তব্য নেই। কিন্তু বাংলাদেশ সম্পর্কে যা বক্তব্য তার সবই হেজাবি এবং যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষের।
আইসিটি সম্পর্কে তারা যে মন্তব্য করেছে তা যে সত্য নয়, আমরা তা জানি। এর একটি কারণ হতে পারে আইসিটির আইন সম্পর্কে তাদের অজ্ঞতা, আইনটি পড়ে না থাকলে এ সম্পর্কে মন্তব্য না করাই বাঞ্ছনীয়। আর যদি আইন সম্বন্ধে তারা জেনে থাকে, তাহলে, এই মানবাধিকার সংস্থা যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে কাজ করার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছে।
এবার এ পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের কথা বলি। আইসিটিতে কয়েকটি পক্ষ আছে। বিচারক, আসামি পক্ষ ও সরকার পক্ষ। সরকার পক্ষে দুটি ভাগ (যদিও তা প্রসিকিউশনের আধীন) তদন্ত ও প্রসিকিউশন। এসব ভাগের মধ্যে প্রসিকিউশন ছাড়া অন্য কোন বিভাগ সম্পর্কে তেমন কোন অভিযোগ নেই। তদন্ত কর্তৃপক্ষ তাদের সাধ্যানুযায়ী তদন্ত করছে। বিচারকদের প্রতিটি রায়ই আদালতের মানকে উচ্চাসনে নিয়ে যাচ্ছে। আসামি পক্ষ আসামিদের হয়ে যথাসাধ্য লড়ছে। শুধু খবরাখবর প্রকাশিত হয় প্রসিকিউশন নিয়ে। প্রসিকিউটরদের দ্বন্দ্ব এখন পুরনো বিষয়। সেখানে এখন একজন চিফ প্রসিকিউটর ও আরেকজন ভারপ্রাপ্ত চিফ প্রসিকিউটর আছেন। একটি আওয়ামী ফ্যাকশন, আর অন্যান্য নিয়ে আরেকটি ফ্যাকশন আছে। পত্রিকায় দেখেছি, আওয়ামী ফ্যাকশনের ঘোষণা, এখানে আওয়ামীরা কাজ করবে। সত্য মিথ্যা জানি না, তবে এ খবরের প্রতিবাদ করা হয়নি। তাদের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। উদাহরণস্বরূপ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের উল্লেখ করছি-
নিজেদের দাখিল করা নথির সত্যতা প্রমাণে রাষ্ট্রপক্ষের ব্যর্থতার কারণে মো. মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার কার্যক্রম পিছিয়ে গেছে। ২৭ মে পর্যন্ত এ মামলার যুক্তি উপস্থাপন মুলতবি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। মোবারক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার মোগড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা।
বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হকের সমন্বয়ে গঠিত ট্রাইব্যুনাল-১-এ গতকাল বুধবার এ মামলার চূড়ান্ত যুক্তি উপস্থাপন শেষ হতে পারত। কিন্তু আসামিপক্ষের যুক্তি খ-নকালে ট্রাইব্যুনালের প্রশ্নের মুখে রাষ্ট্রপক্ষ খেই হারিয়ে ফেলে। যত্ন নিয়ে মামলা পরিচালনা না করায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে ট্রাইব্যুনাল বলে, বিপুল পরিমাণ অপ্রয়োজনীয় নথি দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ সরকারী অর্থ অপচয় করেছে।
গতকাল ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমের শুরুতে প্রথমে যুক্তি দেন আসামিপক্ষের আইনজীবী তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের দাখিল করা শান্তি কমিটির তালিকায় মোবারক হাজীর নাম উল্লেখ রয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের নথি অনুসারে মোবারকের বয়স তখন ২১ বছর। ওই বয়সে তিনি কিভাবে হাজী হলেন? এ ছাড়া রাষ্ট্রপক্ষের নথিতে তাঁকে আখাউড়া থানার রাজাকার কমান্ডার উল্লেখ করা হয়েছে অথচ আখাউড়া থানা গঠিত হয়েছে ১৯৭৬ সালে। তাহলে তিনি কিভাবে একাত্তর সালে আখাউড়া থানার রাজাকার কমান্ডার হলেন? পরে যুক্তি খ-ন শুরু করেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি সাহিদুর রহমান। এ সময় ট্রাইব্যুনাল বিভিন্ন প্রশ্ন করলে তিনি সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি।
এ মামলার রাষ্ট্রপক্ষের দাখিল করা বিপুল পরিমাণ নথিপত্র দেখিয়ে ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রপক্ষকে বলে, ‘আপনাদের দাখিল করা নথি থেকে সংশ্লিষ্ট মাত্র ১০ পৃষ্ঠার ওপর যুক্তি দিয়েছেন। তাহলে বাকি পৃষ্ঠাগুলো কেন ট্রাইব্যুনালে জমা দিলেন? প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) এ মামলায় মুক্তিযুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বীরাঙ্গনাদের একটি তালিকা দিয়েছে, যা এ মামলার কোন অভিযোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। এগুলো অপ্রয়োজনে জমা দেয়া হয়েছে। এগুলোর ওপর আপনাদের প্রতিপক্ষ যুক্তি দিয়েছে এবং প্রশ্ন তোলার সুযোগ পেয়েছে।’
রাষ্ট্রপক্ষের দাখিল করা নথিপত্রের ১০৬ নম্বর পৃষ্ঠায় একটি ফুটনোটে লেখা ‘এএসপি হেলাল কথা বলুন। পরের কপিগুলো সত্যায়িত নহে’। ট্রাইব্যুনাল ওই পৃষ্ঠার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে সাহিদুর রহমানকে বলেন, ‘এ ফুটনোট তদন্ত কর্মকর্তা রাষ্ট্রপক্ষকে দিয়েছেন। আপনি এ ফুটনোটসহ নথি ট্রাইব্যুনালে জমা দিয়েছেন। আপনি এটা দেখার সময় পাননি! ... আমরা আর কিছু বলতে পারছি না, এখানে সাংবাদিকেরা উপস্থিত আছেন।’ [প্রথম আলো,২২-০৫-১৪]
যোগ্যতার বহর বোঝাই যাচ্ছে। জামায়াতে ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা কে করবেন তা নিয়ে দ্বন্দ্বের খবরও পত্রিকায় আসছে। প্রতিপক্ষকে সাহায্য করার খবরও আসছে।
আওয়ামী লীগ কে করে, না করে তা নির্ধারণ করবে কে? যে আওয়ামী লীগ করছেন তিনি যখন আবার জামায়াত কর্মীর জামিন মামলা করেন, তখন তিনি কোন দলের সমর্থক বলে পরিচিত হন? আর প্রসিকিউশন যদি বলে ‘আওয়ামী লীগ সমর্থক’রাই মামলা পরিচালনা করবে, তা’হলে বলতে হবে হিউম্যান রাইটসের মতো তারাও পয়সা খেয়েছে। কারণ ক্যাডমান, শর্টম্যান বা লম্বাম্যান থেকে শুরু করে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস একই অভিযোগ করছে যে, মামলা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রসিকিউশনের এ ধরনের মনোভাব তাদের হাতই শক্তিশালী করবে মাত্র।
জামায়াত নিয়ে মামলার দ্বন্দ্বের দায় সরকারের ওপর বর্তাচ্ছে। দু’ধরনের বক্তব্য শোনা যাচ্ছে- এক, সেই পয়সা খাওয়ার ব্যাপার, দুই, হেজাবিদের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে চাচ্ছে সরকার এবং তারই প্রকাশ জামায়াত নিয়ে মামলার গ-গোল লাগানো।
আমরা এসব সত্যমিথ্যায় যাব না। কিন্তু এইভাবে ট্রাইব্যুনাল চললে সরকারের পক্ষে জনমত থাকবে না। সমস্ত দায় নতুন আইনমন্ত্রীকে নিতে হবে। কেননা এই অভিযোগ উঠছে যে, তিনি নিজেই পক্ষাবলম্বন করছেন। সামনের নির্বাচনে যুদ্ধাপরাধ বিচারও একটি প্রবল ইস্যু হিসেবে বিরাজ করবে।
সমস্ত কিছু মিলিয়ে একটি কথাই বলতে চাই- উপমহাদেশে যাঁরা শাসন করেছেন তাঁরা কখনও ইতিহাস ও পূর্ব অভিজ্ঞতার প্রতি নজর দেননি। যিনিই ক্ষমতায় আসেন তিনিই মনে করেন, দেশটিকে পাঁচ বছরের জন্য তাদের লিজ দেয়া হয়েছে এবং মানুষরা তাদের ভৃত্য। পূর্বসূরিদের কেন ক্ষমতা ছাড়তে হলো এবং তারা ইতিহাসচ্যুত হলেন কেন এটিও তদের মনে থাকে না। ভারতের সবাই মোদিকে ভালবাসে দেখে ভোট দিয়েছে তা নয়। নতুন ভোটাররা অবশ্য অধিকাংশই মোদিকে ভোট দিয়েছেন। জাতীয় দল কংগ্রেসের আজ কী অবস্থা। আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব যেন এ কথা মনে রাখেন।
প্রথম কথা, রাজনৈতিক ফায়দা। যারা যুদ্ধাপরাধী তারা যদি জামায়াত করে এবং যুদ্ধাপরাধে তাদের অভিযুক্ত করা হয় তাহলে তা রাজনৈতিক ফায়দা হবে কেন? পৃথিবীর অন্যান্য দেশে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে সেসব ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ফায়দার কথা তো আসছে না। অপরাধীকে বিচার করতে গেলেই যদি এ কথা বলা হয় তাহলে অপরাধকে নাকচ করা হয়। ১৯৭১ সালে জামায়াত ইসলাম যুদ্ধাপরাধ করেছে তা ঐতিহাসিক সত্য, সেটি আইনগতভাবে বিচার করলে ‘রাজনৈতিক ফায়দা’ হবে কেন? এই প্রশ্নের জবাব পাওয়া জরুরী। কেননা কেউ যদি অপরাধ করে রাজনৈতিক দলের আশ্রয় নেয় এবং সেই অপরাধের যদি বিচার করা হয় তাহলে কি বলা হবে তা রাজনৈতিক প্রতিশোধ? আওয়ামী লীগের অনেকের সঙ্গে জামায়াত নেতা-কর্মীর ব্যবসায়িক-আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকতে পারে। সেটি কেউ অস্বীকার করবে না। কিন্তু নেতৃস্থানীয় কোন রাজাকার এ কারণে বিচারের আওতায় আসছে না তার বা তাদের নামগুলো জানা দরকার। তাহলে আমরা তা আলোচনায় আনতে পারি। যেমন, মোবারক। পরিচয় ভাঙিয়ে কিছুদিন আওয়ামী লীগে ছিল। তাকে ট্রাইব্যুনালে বিচারের সম্মুখীন করা হলো কিন্তু কেউ আপত্তি করেনি। ফরিদপুরের এক বিখ্যাত রাজাকার এক আওয়ামী লীগের নেতার আত্মীয় একথা আমাকে কয়েকজন বলেছেন। কিন্তু সেই ব্যক্তি এ ধরনের অপরাধ করলে এবং তদন্ত সংস্থা তার বিরুদ্ধে তদন্ত করলে, আওয়ামী লীগ নেত্রী বা প্রধানমন্ত্রী আপত্তি জানাবেন এটি মনে করার কোন কারণ নেই।
এশিয়ান হিউম্যান রাইটস উপর্যুক্ত যে মন্তব্য করেছে তার সঙ্গে জামায়াতের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদকীয়র কোন অমিল নেই। ট্রাইব্যুনাল গঠিত হওয়ার একদিন পর থেকে বিএনপি-জামায়াত নেতারা এ অভিযোগ করে আসছে। তারা বিদেশী যে সব লবিস্ট নিয়োগ করেছে, তারাও একই ভাষায় বিবৃতি দিচ্ছে। হিউম্যান রাইটসও দিচ্ছে। তাহলে এ কথা বললে অসত্য হবে কেন যে, সংস্থাটি যুদ্ধাপরাধের পক্ষের শক্তির হয়ে কাজ করছে। আন্তর্জাতিকভাবে এটি একটি অপরাধ এবং আইন মন্ত্রণালয়ের উচিত, আমি আবারও বলব, তাদের উচিত এদের কঠোর সমালোচনা করা এবং বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম থাকলে তা সীমিত করা। মানবাধিকার সংস্থার অবশ্যই অধিকার আছে মানবাধিকার প্রশ্নে আলোচনা-সমালোচনা করার। কিন্তু, তাদের কোন অধিকার নেই ঐতিহাসিক সত্যের বিরুদ্ধাচরণ করা। হংকংয়ে বসে যারা চীনের মানবাধিকার নিয়ে কোন প্রশ্ন তুলতে পারে না, এমনকি আফগানিস্তানের তালেবান নৃশংসতা নিয়ে চুপ থাকে, তাদের কী অধিকার থাকতে পারে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ বিচার নিয়ে সমালোচনা করার?
তৃতীয় পরিচ্ছেদে সত্য-মিথ্যার একটি মিশেল আছে। তারা লিখেছে, ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ট্রাইব্যুনালের রায় প্রকাশিত হতে থাকলে তা সন্ত্রাসে প্রণোদনা যোগায়, যার কারণে ৮৮ জন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে আরও অনেকে। ইংরেজীতে ‘Beginning 5 February 2013, mass Protests were held in response to results of these tribunals, inciting violence that claimed the lives of 88 People and injured hundreds more.’-এর কথা বলা হচ্ছে আদৌ কি তা ছিল? না এটি ছিল জামায়াত-বিএনপির সশস্ত্র হামলা? রেকর্ডে আছে, বিএনপি-জামায়াত নেতারা হত্যার প্ররোচনা দিয়েছিলেন প্রকাশ্যে। এ কথা হিউম্যান রাইটস বলেনি। শুধু বলেছে, জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে বলা হয়েছে, অপরাধী যেই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে।
এই মানবাধিকার সংস্থাটি বলছে, আইসিটি যে মৃত্যুদ- দিচ্ছে যা সবাইকে চিন্তিত করছে কারণ বিরোধীদলের সদস্য ও কর্মীদের এই দ- দিচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক আইনের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ তা পারে না।
এ বিষয়টি সর্বৈব মিথ্যা। যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের দ- দেয়া আর বিরোধী দলের কর্মীদের অভিযুক্ত করা বিনা কারণে তা ভিন্ন ব্যাপার। লক্ষণীয় ঐতিহাসিকভাবে যারা অভিযুক্ত এই সংস্থাটি কখনও তাদের যুদ্ধাপরাধী বলছে না, বলছে বিরোধী দলের সদস্য যে কৌশল নিয়েছে বিএনপি-জামায়াত নেতৃবৃন্দ। এই যে মন্তব্য এটি ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছে আইসিটির বিরুদ্ধে যা আদালত অবমাননার শামিল। এই ধরনের ভিত্তিহীন সমালোচনার কারণে, আইসিটি আগে অনেককে তলব করেছে।
ইংরেজী বাক্যটি হলো ‘The use of Death Penalty under the ICT is of Particular worry. as sentences one hundred out to political activists and members of rival parties. the Death penalty under any circumstances is a violation of the right of life and contradicts Bangladeshi abligations under the International covenant on civil and political Rights and International Law.’
এশিয়ান হিউম্যান রাইটস আরও অভিযোগ তুলেছে এ বলে যে, অবস্থা আরও জটিল করে তুলেছে, ‘ফেয়ার ট্রায়াল’ করতে না পারায় বাংলাদেশের অক্ষমতা। ট্রাইব্যুনালের ত্রুটি অনেক যার মধ্যে অন্তর্গত জামিন না দেয়া এবং প্রাক বিচার মুক্তি, প্রধান সাক্ষীদের অপহরণ ও হুমকি। এমনকি অভিযোগ আছে প্রসিকিউটর, বিচারক ও সরকারের মধ্যে আঁতাতের। এটি মারাত্মক অভিযোগ। আইন মন্ত্রণালয় এবং ওঈঞ-এর মন্তব্যের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ না করলে, এটি এই মানবাধিকার সংস্থা উদ্ভাবিত সত্য বলে পরিচিত পাবে। কারণ, এই সংস্থাটি শক্তিশালী ও প্রভাবশালী। ইংরেজী ভাষ্যটি উদ্ধৃত করলে বোঝা যাবে বাংলায় তাদের বক্তব্যের মূল সুর ধরা যায়নি- ‘This is further compounded by Bangladeshi Inability to provide a fair trial and due Process. the flaws of this Tribunal are varied and include the Denial of bail and pre-trial release, the abduction and intimidation of key witnesses, and even allegations of collusion between prosecutors, judges and the government.’
এশিয়ান হিউম্যান রাইটসের এই সব মন্তব্য প্রবন্ধের শুরুতে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম তার প্রমাণ। অর্থাৎ মানবাধিকার সংস্থাসমূহ এখন কোন না কোন পক্ষের হয়ে কাজ করে এবং এ ক্ষেত্রে অর্থের ভূমিকা বিশাল। এশিয়ান হিউম্যান রাইটস যে ভূমিকা নিয়েছে তা যে পক্ষপাতদুষ্ট তা বলার অপেক্ষা রাখে না, হংকংয়ে বসে তারা মানবাধিকার চর্চা করে যেখানে চীনসহ এশিয়ার অন্য শক্তিশালী দেশসমূহের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে কোন বক্তব্য নেই। কিন্তু বাংলাদেশ সম্পর্কে যা বক্তব্য তার সবই হেজাবি এবং যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষের।
আইসিটি সম্পর্কে তারা যে মন্তব্য করেছে তা যে সত্য নয়, আমরা তা জানি। এর একটি কারণ হতে পারে মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদকীয়র কোন অমিল নেই। ট্রাইব্যুনাল গঠিত হওয়ার একদিন পর থেকে বিএনপি-জামায়াত নেতারা এ অভিযোগ করে আসছে। তারা বিদেশী যে সব লবিস্ট নিয়োগ করেছে, তারাও একই ভাষায় বিবৃতি দিচ্ছে। হিউম্যান রাইটসও দিচ্ছে। তাহলে এ কথা বললে অসত্য হবে কেন যে, সংস্থাটি যুদ্ধাপরাধের পক্ষের শক্তির হয়ে কাজ করছে। আন্তর্জাতিকভাবে এটি একটি অপরাধ এবং আইন মন্ত্রণালয়ের উচিত, আমি আবারও বলব, তাদের উচিত এদের কঠোর সমালোচনা করা এবং বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম থাকলে তা সীমিত করা। মানবাধিকার সংস্থার অবশ্যই অধিকার আছে মানবাধিকার প্রশ্নে আলোচনা-সমালোচনা করার। কিন্তু, তাদের কোন অধিকার নেই ঐতিহাসিক সত্যের বিরুদ্ধাচরণ করা। হংকংয়ে বসে যারা চীনের মানবাধিকার নিয়ে কোন প্রশ্ন তুলতে পারে না, এমনকি আফগানিস্তানের তালেবান নৃশংসতা নিয়ে চুপ থাকে, তাদের কী অধিকার থাকতে পারে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ বিচার নিয়ে সমালোচনা করার?
তৃতীয় পরিচ্ছেদে সত্য-মিথ্যার একটি মিশেল আছে। তারা লিখেছে, ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ট্রাইব্যুনালের রায় প্রকাশিত হতে থাকলে তা সন্ত্রাসে প্রণোদনা যোগায়, যার কারণে ৮৮ জন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে আরও অনেকে। ইংরেজীতে ‘Beginning 5 February 2013, mass Protests were held in response to results of these tribunals, inciting violence that claimed the lives of 88 People and injured hundreds more.’ GB.’ এই যে massprotests-এর কথা বলা হচ্ছে আদৌ কি তা ছিল? না এটি ছিল জামায়াত-বিএনপির সশস্ত্র হামলা? রেকর্ডে আছে, বিএনপি-জামায়াত নেতারা হত্যার প্ররোচনা দিয়েছিলেন প্রকাশ্যে। এ কথা হিউম্যান রাইটস বলেনি। শুধু বলেছে, জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে বলা হয়েছে, অপরাধী যেই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে।
এই মানবাধিকার সংস্থাটি বলছে, আইসিটি যে মৃত্যুদ- দিচ্ছে যা সবাইকে চিন্তিত করছে কারণ বিরোধীদলের সদস্য ও কর্মীদের এই দ- দিচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক আইনের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ তা পারে না।
এ বিষয়টি সর্বৈব মিথ্যা। যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের দণ্ড দেয়া আর বিরোধী দলের কর্মীদের অভিযুক্ত করা বিনা কারণে তা ভিন্ন ব্যাপার। লক্ষণীয় ঐতিহাসিকভাবে যারা অভিযুক্ত এই সংস্থাটি কখনও তাদের যুদ্ধাপরাধী বলছে না, বলছে বিরোধী দলের সদস্য যে কৌশল নিয়েছে বিএনপি-জামায়াত নেতৃবৃন্দ। এই যে মন্তব্য এটি ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছে আইসিটির বিরুদ্ধে যা আদালত অবমাননার শামিল। এই ধরনের ভিত্তিহীন সমালোচনার কারণে, আইসিটি আগে অনেককে তলব করেছে।
ইংরেজী বাক্যটি হলো ‘The use of Death Penalty under the ICT is of Paticular worry. as sentences one hundred out to political activists and members of rival parties. the Death penalty under any circumstances is a violation of the right of life and contradicts Bangladeshi abligations under the International covenant on civil and political Rights and International Law.’
এশিয়ান হিউম্যান রাইটস আরও অভিযোগ তুলেছে এ বলে যে, অবস্থা আরও জটিল করে তুলেছে, ‘ফেয়ার ট্রায়াল’ করতে না পারায় বাংলাদেশের অক্ষমতা। ট্রাইব্যুনালের ত্রুটি অনেক যার মধ্যে অন্তর্গত জামিন না দেয়া এবং প্রাক বিচার মুক্তি, প্রধান সাক্ষীদের অপহরণ ও হুমকি। এমনকি অভিযোগ আছে প্রসিকিউটর, বিচারক ও সরকারের মধ্যে আঁতাতের। এটি মারাত্মক অভিযোগ। আইন মন্ত্রণালয় এবং ওঈঞ-এর মন্তব্যের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ না করলে, এটি এই মানবাধিকার সংস্থা উদ্ভাবিত সত্য বলে পরিচিত পাবে। কারণ, এই সংস্থাটি শক্তিশালী ও প্রভাবশালী। ইংরেজী ভাষ্যটি উদ্ধৃত করলে বোঝা যাবে বাংলায় তাদের বক্তব্যের মূল সুর ধরা যায়নি- ‘This is further compounded by Bangladeshi Inability to provide a fair trial and due Proces. the flaws of this Tribunal are varied and include the Denial of bail and pre-trial release, the abduction and intimidation of key witnesses, and even allegations of collusion between prosecutors, judges and the government.
এশিয়ান হিউম্যান রাইটসের এই সব মন্তব্য প্রবন্ধের শুরুতে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম তার প্রমাণ। অর্থাৎ মানবাধিকার সংস্থাসমূহ এখন কোন না কোন পক্ষের হয়ে কাজ করে এবং এ ক্ষেত্রে অর্থের ভূমিকা বিশাল। এশিয়ান হিউম্যান রাইটস যে ভূমিকা নিয়েছে তা যে পক্ষপাতদুষ্ট তা বলার অপেক্ষা রাখে না, হংকংয়ে বসে তারা মানবাধিকার চর্চা করে যেখানে চীনসহ এশিয়ার অন্য শক্তিশালী দেশসমূহের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে কোন বক্তব্য নেই। কিন্তু বাংলাদেশ সম্পর্কে যা বক্তব্য তার সবই হেজাবি এবং যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষের।
আইসিটি সম্পর্কে তারা যে মন্তব্য করেছে তা যে সত্য নয়, আমরা তা জানি। এর একটি কারণ হতে পারে আইসিটির আইন সম্পর্কে তাদের অজ্ঞতা, আইনটি পড়ে না থাকলে এ সম্পর্কে মন্তব্য না করাই বাঞ্ছনীয়। আর যদি আইন সম্বন্ধে তারা জেনে থাকে, তাহলে, এই মানবাধিকার সংস্থা যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে কাজ করার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছে।
এবার এ পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের কথা বলি। আইসিটিতে কয়েকটি পক্ষ আছে। বিচারক, আসামি পক্ষ ও সরকার পক্ষ। সরকার পক্ষে দুটি ভাগ (যদিও তা প্রসিকিউশনের আধীন) তদন্ত ও প্রসিকিউশন। এসব ভাগের মধ্যে প্রসিকিউশন ছাড়া অন্য কোন বিভাগ সম্পর্কে তেমন কোন অভিযোগ নেই। তদন্ত কর্তৃপক্ষ তাদের সাধ্যানুযায়ী তদন্ত করছে। বিচারকদের প্রতিটি রায়ই আদালতের মানকে উচ্চাসনে নিয়ে যাচ্ছে। আসামি পক্ষ আসামিদের হয়ে যথাসাধ্য লড়ছে। শুধু খবরাখবর প্রকাশিত হয় প্রসিকিউশন নিয়ে। প্রসিকিউটরদের দ্বন্দ্ব এখন পুরনো বিষয়। সেখানে এখন একজন চিফ প্রসিকিউটর ও আরেকজন ভারপ্রাপ্ত চিফ প্রসিকিউটর আছেন। একটি আওয়ামী ফ্যাকশন, আর অন্যান্য নিয়ে আরেকটি ফ্যাকশন আছে। পত্রিকায় দেখেছি, আওয়ামী ফ্যাকশনের ঘোষণা, এখানে আওয়ামীরা কাজ করবে। সত্য মিথ্যা জানি না, তবে এ খবরের প্রতিবাদ করা হয়নি। তাদের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। উদাহরণস্বরূপ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের উল্লেখ করছি-
নিজেদের দাখিল করা নথির সত্যতা প্রমাণে রাষ্ট্রপক্ষের ব্যর্থতার কারণে মো. মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার কার্যক্রম পিছিয়ে গেছে। ২৭ মে পর্যন্ত এ মামলার যুক্তি উপস্থাপন মুলতবি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। মোবারক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার মোগড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা।
বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হকের সমন্বয়ে গঠিত ট্রাইব্যুনাল-১-এ গতকাল বুধবার এ মামলার চূড়ান্ত যুক্তি উপস্থাপন শেষ হতে পারত। কিন্তু আসামিপক্ষের যুক্তি খ-নকালে ট্রাইব্যুনালের প্রশ্নের মুখে রাষ্ট্রপক্ষ খেই হারিয়ে ফেলে। যত্ন নিয়ে মামলা পরিচালনা না করায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে ট্রাইব্যুনাল বলে, বিপুল পরিমাণ অপ্রয়োজনীয় নথি দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ সরকারী অর্থ অপচয় করেছে।
গতকাল ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমের শুরুতে প্রথমে যুক্তি দেন আসামিপক্ষের আইনজীবী তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের দাখিল করা শান্তি কমিটির তালিকায় মোবারক হাজীর নাম উল্লেখ রয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের নথি অনুসারে মোবারকের বয়স তখন ২১ বছর। ওই বয়সে তিনি কিভাবে হাজী হলেন? এ ছাড়া রাষ্ট্রপক্ষের নথিতে তাঁকে আখাউড়া থানার রাজাকার কমান্ডার উল্লেখ করা হয়েছে অথচ আখাউড়া থানা গঠিত হয়েছে ১৯৭৬ সালে। তাহলে তিনি কিভাবে একাত্তর সালে আখাউড়া থানার রাজাকার কমান্ডার হলেন? পরে যুক্তি খ-ন শুরু করেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি সাহিদুর রহমান। এ সময় ট্রাইব্যুনাল বিভিন্ন প্রশ্ন করলে তিনি সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি।
এ মামলার রাষ্ট্রপক্ষের দাখিল করা বিপুল পরিমাণ নথিপত্র দেখিয়ে ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রপক্ষকে বলে, ‘আপনাদের দাখিল করা নথি থেকে সংশ্লিষ্ট মাত্র ১০ পৃষ্ঠার ওপর যুক্তি দিয়েছেন। তাহলে বাকি পৃষ্ঠাগুলো কেন ট্রাইব্যুনালে জমা দিলেন? প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) এ মামলায় মুক্তিযুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বীরাঙ্গনাদের একটি তালিকা দিয়েছে, যা এ মামলার কোন অভিযোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। এগুলো অপ্রয়োজনে জমা দেয়া হয়েছে। এগুলোর ওপর আপনাদের প্রতিপক্ষ যুক্তি দিয়েছে এবং প্রশ্ন তোলার সুযোগ পেয়েছে।’
রাষ্ট্রপক্ষের দাখিল করা নথিপত্রের ১০৬ নম্বর পৃষ্ঠায় একটি ফুটনোটে লেখা ‘এএসপি হেলাল কথা বলুন। পরের কপিগুলো সত্যায়িত নহে’। ট্রাইব্যুনাল ওই পৃষ্ঠার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে সাহিদুর রহমানকে বলেন, ‘এ ফুটনোট তদন্ত কর্মকর্তা রাষ্ট্রপক্ষকে দিয়েছেন। আপনি এ ফুটনোটসহ নথি ট্রাইব্যুনালে জমা দিয়েছেন। আপনি এটা দেখার সময় পাননি! ... আমরা আর কিছু বলতে পারছি না, এখানে সাংবাদিকেরা উপস্থিত আছেন।’ [প্রথম আলো,২২-০৫-১৪]
যোগ্যতার বহর বোঝাই যাচ্ছে। জামায়াতে ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা কে করবেন তা নিয়ে দ্বন্দ্বের খবরও পত্রিকায় আসছে। প্রতিপক্ষকে সাহায্য করার খবরও আসছে।
আওয়ামী লীগ কে করে, না করে তা নির্ধারণ করবে কে? যে আওয়ামী লীগ করছেন তিনি যখন আবার জামায়াত কর্মীর জামিন মামলা করেন, তখন তিনি কোন দলের সমর্থক বলে পরিচিত হন? আর প্রসিকিউশন যদি বলে ‘আওয়ামী লীগ সমর্থক’রাই মামলা পরিচালনা করবে, তা’হলে বলতে হবে হিউম্যান রাইটসের মতো তারাও পয়সা খেয়েছে। কারণ ক্যাডমান, শর্টম্যান বা লম্বাম্যান থেকে শুরু করে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস একই অভিযোগ করছে যে, মামলা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রসিকিউশনের এ ধরনের মনোভাব তাদের হাতই শক্তিশালী করবে মাত্র।
জামায়াত নিয়ে মামলার দ্বন্দ্বের দায় সরকারের ওপর বর্তাচ্ছে। দু’ধরনের বক্তব্য শোনা যাচ্ছে- এক, সেই পয়সা খাওয়ার ব্যাপার, দুই, হেজাবিদের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে চাচ্ছে সরকার এবং তারই প্রকাশ জামায়াত নিয়ে মামলার গ-গোল লাগানো।
আমরা এসব সত্যমিথ্যায় যাব না। কিন্তু এইভাবে ট্রাইব্যুনাল চললে সরকারের পক্ষে জনমত থাকবে না। সমস্ত দায় নতুন আইনমন্ত্রীকে নিতে হবে। কেননা এই অভিযোগ উঠছে যে, তিনি নিজেই পক্ষাবলম্বন করছেন। সামনের নির্বাচনে যুদ্ধাপরাধ বিচারও একটি প্রবল ইস্যু হিসেবে বিরাজ করবে।
সমস্ত কিছু মিলিয়ে একটি কথাই বলতে চাই- উপমহাদেশে যাঁরা শাসন করেছেন তাঁরা কখনও ইতিহাস ও পূর্ব অভিজ্ঞতার প্রতি নজর দেননি। যিনিই ক্ষমতায় আসেন তিনিই মনে করেন, দেশটিকে পাঁচ বছরের জন্য তাদের লিজ দেয়া হয়েছে এবং মানুষরা তাদের ভৃত্য। পূর্বসূরিদের কেন ক্ষমতা ছাড়তে হলো এবং তারা ইতিহাসচ্যুত হলেন কেন এটিও তদের মনে থাকে না। ভারতের সবাই মোদিকে ভালবাসে দেখে ভোট দিয়েছে তা নয়। নতুন ভোটাররা অবশ্য অধিকাংশই মোদিকে ভোট দিয়েছেন। জাতীয় দল কংগ্রেসের আজ কী অবস্থা। আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব যেন এ কথা মনে রাখেন।
http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=16&dd=2014-05-29&ni=174272
No comments:
Post a Comment