Wednesday, May 28, 2014

রমনা বোমা হামলা মামলার রায় ১৬ জুন আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি কামনা


রমনা বোমা হামলা মামলার রায় ১৬ জুন
আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি কামনা
সৈয়দা ফরিদা ইয়াসমিন জেসি ॥ বহু বাধা বিপত্তি ও আসামিপক্ষে মামলা বিলম্বিত করার নানান অপচেষ্টা অতিক্রম করে অবশেষে রমনা বটমূলে নৃশংসতম গ্রেনেড হামলার ১৩ বছর পর মামলাটির বিচার শেষ হতে যাচ্ছে। আগামী ১৬ জুন মামলাটির রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়েছে। বুধবার আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক শেষে ঢাকার ২য় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রুহুল আমিন এ দিন ধার্য করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত পিপি এসএম জাহিদ সরদার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন দাবি করে সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- কামনা করেন। অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী টিএম আকবর, জসিম উদ্দিন ও ফারুক আহমেদ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের খালাস দাবি করেন। এর আগে গত ৮ ও ১৮ মে উভয়পক্ষ অভিযোগভিত্তিক ও মামলার ১৪ আসামির বিষয়ে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। ১৮ মে আইনী পয়েন্টে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেন রাষ্ট্রপক্ষ। ওইদিন তাদের যুক্তিতর্কের জবাবে আইনী পয়েন্টে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন আসামিপক্ষ। এর আগে গত ৫ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি ইন্সপেক্টর আবু হেনা মোঃ ইউসুফের পুনঃসাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। পুনঃসাক্ষ্য প্রদানের সময় মোহাম্মদপুরের যে বাড়িতে হত্যা পরিকল্পনা হয়েছিল, সে ঘটনাস্থলের মানচিত্র আদালতে উপস্থাপন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। এর পর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাকে জেরা শেষ করেন।
গত বছরের ১৪ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবু হেনা মোঃ ইউসুফ সাক্ষ্য দেয়ার সময় মোহাম্মদপুরের যে বাড়িতে হত্যা পরিকল্পনা হয়েছিল, সে ঘটনাস্থলের মানচিত্র আদালতে উপস্থাপন করেননি। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের ভুলে তা উপস্থাপন ছাড়াই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করেন রাষ্ট্রপক্ষ। এর পর শুরু হয় মামলার প্রথম পর্যায়ের যুক্তিতর্ক। এর শেষ পর্যায়ে আসামিপক্ষ তদন্ত কর্মকর্তার ভুলের সুযোগ নিতে চাইলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এসএম জাহিদ সরদার তড়িঘড়ি করে তা উপস্থাপন করার জন্য মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে পুনরায় সাক্ষ্য প্রদানের (রি-কল) জন্য আদালতের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু আসামিপক্ষে তদন্ত কর্মকর্তার পুনরায় সাক্ষ্য প্রদানের বিরোধিতা করা হয়। তাদের দাবি, যুক্তিতর্কের পর্যায়ে মামলার ত্রুটি সারাতে কোন সাক্ষীকে রি-কল করা যাবে না। আসামিপক্ষের বিরোধিতা সত্ত্বেও বিচারক রুহুল আমিন রি-কলের আবেদন মঞ্জুর করলে আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক হোসেন ওই আদেশ আইনানুগ হয়নি বলে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে যাওয়ার ঘোষণা দেন। কিন্তু মামলার তিনটি তারিখেও হাইকোর্টের আদেশ দাখিল করতে না পারায় আদালত পুনঃসাক্ষ্যগ্রহণের নির্দেশ দেন। গত বছরের ১০ নবেম্বর আসামিরা আত্মপক্ষ সমর্থন করে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় সাক্ষ্য দেন। এ সময় সব আসামি নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। রায় ঘোষণার আগে মামলাটির ৮৪ সাক্ষীর মধ্যে ৬১ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে।
২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল, ১ বৈশাখে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান চলাকালে জঙ্গীদের বোমা হামলায় ১০ জন নিহত হন। তাদের মধ্যে ঘটনাস্থলে ৯ জন এবং পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজন মারা যান। আহত হন অনেকে। নৃশংসতম এ বোমা হামলা মামলাটির তদন্তে দীর্ঘদিন কালক্ষেপণ করা হয়। বার বার মামলার তদন্ত কর্মকর্তার পরিবর্তন হয়। বিপাকে পড়ে তদন্ত কাজ। অবশেষে গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ঘটনার প্রায় ৮ বছর পর ২০০৮ সালের ২৯ নবেম্বর হুজি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মামলাটিতে ২০০৯ সালের ১৬ এপ্রিল ১৪ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন আদালত। মামলার ১৪ আসামির মধ্যে মুফতি হান্নান, আরিফ হাসান সুমন, শাহাদত উল্লাহ ওরফে জুয়েল, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা আব্দুর রউফ, মাওলানা সাব্বির ওরফে আব্দুল হান্নান সাব্বির, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া ও মাওলানা আকবর হোসাইন কারাগারে আছেন। আসামি মাওলানা মোঃ তাজউদ্দিন, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মুফতি শফিকুর রহমান ও মুফতি আব্দুল হাই পলাতক আছেন।

http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=27&dd=2014-05-29&ni=174347

No comments:

Post a Comment