Sunday, March 1, 2015

সাগরের তেল-গ্যাস বিদেশিদের কাছে বর্গা দিচ্ছে সরকার

সাগরের তেল-গ্যাস বিদেশিদের কাছে বর্গা দিচ্ছে সরকার




02 Mar, 2015
ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ হওয়ার পর গভীর সাগরের তেল-গ্যাস এখন বিদেশীদের কাছে বর্গা দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে সরকার। গভীর সমুদ্রে তেল গ্যাস অনুসন্ধানে আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স শক্তিশালী হলেও তাকে কাজ না দিয়ে বরং বিদেশীদেরকেই আহবান জানানো হচ্ছে। এজন্য গভীর সমুদ্রের তিনটি ব্লকে (১২, ১৬ ও ২১) গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য শিগগিরই যৌথভাবে মার্কিন কোম্পানি কনোকো ফিলিপস ও নরওয়ের কোম্পানি স্টাটোয়েলের সঙ্গে উৎপাদন বণ্টন চুক্তি (পিএসসি) স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে পেট্রোবাংলা। ইতোমধ্যে কোম্পানি দু’টির সঙ্গে চুিক্তর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। চুক্তির খসড়া পেট্রোবাংলা থেকে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর আগে পিএসসির মাধ্যমে কনোকো ফিলিপসসহ কয়েকটি বিদেশি কোম্পানিকে গভীর ও অগভীর সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে কাজ দেওয়া হলেও তারা বিভিন্ন অজুহাতে দাম বাড়িয়ে দেওয়ার দাবি জানায়। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম সাড়ে ৪ ডলারের পরিবর্তে ২ ডলার বাড়িয়ে এবার সাড়ে ৬ ডলারে চুক্তি সই হবে। চুক্তি অনুযায়ী তাদের অনুসন্ধাকৃত তেল-গ্যাসের ৮০ শতাংশের মালিক হয়ে যান তারা। এতে পুরো তেল-গ্যাসই চলে যায় তাদের দখলে। এ কারণে দেশীয় কোম্পানির মাধ্যমেই অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করা উচিত। প্রয়োজনে বিদেশী বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ দিয়ে কাজে লাগানোর ব্যবস্থা করতে মত দিয়েছেন তারা।
পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য কনোকো ফিলিপস ও স্টাটোয়েলের দেয়া প্রস্তাব অনুযায়ী, ব্লক ১২তে ১ হাজার ৪১২ লাইন কিলোমিটার, ব্লক ১৬তে ৭৭৫ লাইন কিলোমিটার ও ব্লক ২১ এর ১ হাজার ৩৭৬ লাইন কিলোমিটার আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দ্বিমাত্রিক জরিপ করবে তারা। যদি জরিপে এখানে তেল-গ্যাস পাওয়া যায় তাহলে তা উত্তোলনের জন্য আবার চুক্তি করতে হবে। প্রতিটি ব্লকে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলার বা প্রায় পৌনে ৯০০ কোটি টাকা।
জানা যায়, এর আগে ২০১১ সালের ১৬ জুন ১০ ও ১১ ব্লকে তেল গ্যাস অনুসন্ধানে কনোকো ফিলিপসের সঙ্গে চুক্তি করেছিল পেট্রোবাংলা। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ২৮০ কিলোমিটার দূরে এক থেকে দেড় কিলোমিটার গভীরে জরিপ শেষে কোম্পানিটি গত বছর ঘোষণা দেয় এ দু’টি ব্লকে ৭ থেকে ৮ টিসিএফ গ্যাস পাওয়া যেতে পারে। গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা দেখেই তারা প্রতি হাজার ঘনফট গ্যাসের দাম সাড়ে ৪ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৭ ডলার দাবি করে। সরকার দাবি মানতে অপারগতা প্রকাশ করলে কনোকো ফিলিপস গত বছরের ২৬ অক্টোবর ব্লক দুটি ছেড়ে দেয়। এরপর পিএসসি সংশোধন করে প্রতি হাজার ঘনফট গ্যাসের দাম সাড়ে ৬ ডলার করে আবার তাদেরকেই কাজ দেওয়া হচ্ছে। তিনটি ব্লকের মধ্যে ২১ নম্বর ব্লকটিকে সব থেকে সম্ভাবনাময় মনে করা হচ্ছে। এ ব্লকটির সীমানার পাশেই রয়েছে মিয়ানমারের সুয়ে গ্যাসক্ষেত্র। মিয়ানমারের এ ক্ষেত্রটিতে ৯ ট্রিলিয়ন ঘনফুটের (টিসিএফ) বিশাল গ্যাসের প্রমাণিত মজুদ রয়েছে। বাংলাদেশও সে হিসেবে গ্যাস পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, অগভীর ও গভীর সমুদ্রে আমাদের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভারত ও মিয়ানমার দখলে রেখেছিল। এখন আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে দখলমুক্ত হলেও সরকারের কিছু অসাধু ব্যাক্তিরা নিজেদের পকেট ভরার স্বার্থে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বিদেশী কোম্পানির কাছে ইজারা দিয়ে দেশের সম্পদ অন্যদের হাতে তুলে দিচ্ছে। আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স অনুসন্ধান কার্যক্রম চালাতে সক্ষম হলেও তাদের কাজ করতে দেওয়া হয়না। প্রয়োজনে বাপেক্সকে আরও শক্তিশালী করে তাদেরকেই কাজে লাগানো উচিত। এতে দেশের সম্পদ দেশেই থাকবে/
http://www.amadershomoys.com/newsite/2015/03/02/226425.htm#.VPPslyxGTkc

No comments:

Post a Comment