Thursday, May 29, 2014

মোদি সরকারের সঙ্গে শীঘ্রই অমীমাংসিত ইস্যু নিয়ে আলোচনা আগস্টে আসছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ॥ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

মোদি সরকারের সঙ্গে শীঘ্রই অমীমাংসিত ইস্যু নিয়ে আলোচনা
আগস্টে আসছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ॥ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
স্টাফ রিপোর্টার ॥ বর্তমান সরকারের ওপর অতীতের যে কোন সরকারের চেয়ে বিদেশী রাষ্ট্রগুলো বেশি আস্থাশীল। জাপান, চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের এই সরকারের ওপর পূর্ণ আস্থা রয়েছে। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এ সব কথা বলেন। এ ছাড়া ভারতের নতুন সরকারের সঙ্গে খুব শীঘ্রই অমীমাংসিত ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে বলেও তিনি জানান। আগামী আগস্টের শেষের দিকে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজু আবে বাংলাদেশ সফরে আসছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফর নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরার লক্ষ্যে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় জাপান সফরের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তিনি জানান, গত ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা বলা এখন কালক্ষেপণ মাত্র। জাপান, রাশিয়া, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক চমৎকার। বর্তমান সরকারের ওপর তাদের পূর্ণআস্থা রয়েছে। আর এই আস্থা অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক বেশি।
বিদেশীরা আগের চেয়ে নমনীয় কিনা-জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন রাষ্ট্রের আন্তরিকতায় আমরা ঘাটতি দেখিনি এবং কার্যক্ষেত্রেও আমাদের কোন অসুবিধা নেই।
এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘে স্থায়ী পরিষদে সদস্য প্রদানের বিষয়ে জাপানকে অতীতেও বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ সহায়তা করেছে। আর এ নিয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কোন কনফ্লিক্ট নেই বলেও জানান তিনি।
ভারতের নতুন সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানান, ভারতের নতুন সরকারের সঙ্গে খুব শীঘ্রই অমীমাংসিত ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাপান সফর অত্যন্ত সফল হয়েছে। আর এ সফর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই আগামীকাল শনিবার একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিস্তারিত তুলে ধরবেন।
হত্যা, গুম ও খুনের বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের কিছু কিছু ঘটনা ঘটেছে। সরকার এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপও নিয়েছে। তবে সার্বিক অর্থে আইনশৃঙ্খলার কোন অবনতি ঘটেনি বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
শাহরিয়ার আলম বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ১২০০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছে জাপান। এবার প্রধানমন্ত্রীর সফরেও ৬০০ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে তারা। সফরে জাপানের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত করেন প্রধানমন্ত্রী।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান, জাপানে এক জোড়া রয়েল বেঙ্গল টাইগার পাঠানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের ঐতিহ্য সম্পর্কে জাপানের তরুণ প্রজন্মকে জানাতে প্রধানমন্ত্রী এ আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামী ২০২০ সালে টোকিওতে অলিম্পিক ও প্যারা-অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হবে। এ অলিম্পিক অনুষ্ঠানসংক্রান্ত নির্মাণ কাজে বহু বিদেশী দক্ষ ও আধা দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হবে। এ ছাড়া সুনামি বিধ্বস্ত এলাকায় চলমান পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন কার্যক্রমেও বিদেশী শ্রমিক নিয়োগের প্রয়োজন আছে। এ বিষয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপানের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশী শ্রমিক নিয়োগের আহ্বান জানান। জাপানের প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনার আশ্বাস দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপানের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাপান সরকার তা আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেছে। জাপানের পক্ষ থেকে আগামী আগস্টের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশ সফরের সম্ভাব্য তারিখও জানানো হয়েছে ।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামী চার-পাঁচ বছর দশমিক ০১ শতাংশ সুদে বাংলাদেশকে ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তা দেবে জাপান। এই অর্থ গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প, বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরাল আরও একটি সেতু, যমুনা নদীর নিচে বহুমুখী টানেল, ইস্টার্ন বাইপাস এবং ঢাকার চারটি নদী পুনরুদ্ধার প্রকল্পে ব্যয় করা হবে বলে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে শীঘ্রই একটি জাপানী অর্থনৈতিক সমীক্ষা দল বাংলাদেশ সফর করবেন। এ সময় অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলো প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সমীক্ষা চালাবে। এ ছাড়া বাংলাদেশে পরমাণু বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে জাপানের সহায়তা চাওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।
প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানান, বাংলাদেশের রফতানি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে নিটওয়্যার পণ্যের রফতানি ক্ষেত্রে ‘রুলস অব অরিজিন’ আরও শিথিল করার বিষয়টি জাপান সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছে। এ ছাড়া দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে দুই দেশের পক্ষে সম্ভাব্য করণীয় পদক্ষেপগুলো বিবেচনার জন্য ঐকমত্য প্রকাশ করে জাপান। জাপানী বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলেও জানান শাহরিয়ার আলম। এ ছাড়া বাংলাদেশে একটি ‘পিস বিল্ডিং সেন্টার’ স্থাপনের জন্য জাপান কারিগরি সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
শাহরিয়ার আলম বলেন, বাংলাদেশের পাঁচটি রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে জাপানী বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের জন্য ৪০টি প্লট এবং দুটি শিল্প ইমারত সংরক্ষিত রাখার বিষয়েও দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। এ ছাড়া দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওডিএ লোন প্যাকেজের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর আওতায় জাপান সরকার বাংলাদেশকে সহজ শর্তে ১২০ বিলিয়ন জাপানী ইয়েন (প্রায় ১ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার) ঋণ দেবে, যা দিয়ে এক হাজার দুই শ’ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র গড়ে তোলা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রণালয়ের সচিব শহীদুল হক, বহির্প্রচার অণুবিভাগের মহাপরিচালক সালাউদ্দিন নোমান চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত শনিবার মধ্য রাতে ১০৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে জাপান সফরে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী জাপান সফর শেষে দেশে ফেরেন।
http://www.allbanglanewspapers.com/janakantha.html

No comments:

Post a Comment