| Nagraj Chandal | 2:49pm May 28 |
তিয়র/তিবর/তেওড়
গাত্রবর্ণ কালো থেকে শ্যামলা, তামটে থেকে মাঝারি তামাটে, ১৬০ সেমি এর নিচে গড় উচ্চতা সম্পন্ন বাংলার তিয়র/তিবর/তেওড় জাতি বিহারে ‘পরিচর’ নামে পরিচিত। তিয়র/তেওড় শব্দটি তিবর বা শিকারী শব্দ থেকে উৎপত্তি। এই ধারণাটি লোকায়ত হয়ে আছে। গোল মুণ্ডযুক্ত এই আস্ট্রিক গোষ্ঠীভুক্ত জাতির “অঞ্জিকা” নামে একটি প্রচলিত ভাষা ছিল যা আদি কোল-মুন্ডারী ভাষা থেকে উদ্ভূত। প্রবল প্রবাহযুক্ত বাংলা ভাষার মূল স্রোতে এসে এখন তা একাকার হয়ে গেছে। বিহার সংলগ্ন অঞ্চলে তিয়র জাতির লোকেরা মৈথিলী এবং ভোজপুরী ভাষাতেও কথা বলে।
তিয়র জাতি বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত। এই শাখাগুলি যথাক্রমে রাজবংশী, সুরজবংশী (সুজ্জবংশী), পোলওয়ার, পালওয়ার, মাল্লা সুরাইয়া, মুরিয়ারী এবং কেওট। এদের মধ্যে কেওটরা কেবট/কৈবর্ত /কৈবল্ল ভূমির বাসিন্দা বলে দাবি করেন। এই শাখাগুলিকে আর্যিকরণের সময় আবার নানা গোত্রে ভাগ করা হয়েছে এগুলি যথাক্রমেঃ কাশ্যপ, বশিষ্ঠ, পরাশর, কপিল, আলেম্বান, আলম্বার এবং মদুগল্য। ভিন্ন গোত্রে বিবাহের সামাজিক বিধান নেই। তিয়র জাতির মধ্যে মণ্ডল, বিশ্বাস, বর প্রভৃতি পদবী ব্যবহার করতে দেখা যায়। ২০০১ সালের জনগণনা অনুসারে পশ্চিমবঙ্গে এই জাতির সংখ্যা ১৯৫৩৪০ জন। পুরুষের সংখ্যা (১০০২৯০) অপেক্ষা নারীর সংখ্যা (৯৫০৫০) অনেক কম।
বৈবাহিক প্রতীক হিসেবে মহিলারা কপালে সিঁদুর পরেন। বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য অনুমতি আছে। পুনর্বিবাহে (চুমান) বা বিধবা বিবাহের ক্ষেত্রে দেখাশোনার মাধ্যমে বিবাহের(পঞ্চেরাচিকা) মত আচরণ বিধি নেই। সংসারের বড় ছেলেই সব ক্ষমতার অধিকারী হন। কিন্তু ভাইয়েরা ভিন্ন হয়ে গেলে সম্পদ সমান ভাবে বণ্টিত হয়।
সন্তান ধারণ থেকে প্রসব এবং প্রসবের পরবর্তী কালে নানা আচরণবিধি পালিত হয়। আঁতুড় ঘরে বাচ্চার জন্ম হয়। প্রতিবেশী দাইমা বাচ্চা প্রসব করান। বাচ্চা জন্মানোর ৬ দিন পরে পালিত হয় “ছয়ছিটা”। মৃতদেহ আগুনে পোড়ানো হয়। অশৌচ পালন করা হয় একমাস ধরে।
তিয়র জাতি সাধারণত মৎস্যজীবী। চাষবাস এদের দ্বিতীয় পেশা। ইদানীং দিনমজুরের কাজ করেও ওনেকে সংসার নির্বাহ করছেন। কৃষি শ্রমিক থেকে মৎস্যশ্রমিক হিসেবে এদের দক্ষতা অনেক বেশি।
তিয়র জাতির মধ্যে একটি মৌলিক ‘পঞ্চ’ সমিতি ব্যবস্থা আছে। এই পঞ্চ সমিতি ব্যবস্থার উচ্চ পদাধিকারী হলেন মোড়ল। তিনিই চুড়ান্ত সিদ্ধান্তের অধিকারী। সমিতিতে আর থাকেন দেওয়ান, যিনি সভা সমিতি আহ্বান করেন ও সমাজের মধ্যে তদারকি ও বার্তা বাহকের কাজ করেন। একজন চারিদার থাকেন যিনি এই পঞ্চায়েতের পুলিশ কর্মী হিসেবে কাজ করেন। এই সব সব পদাধিকারগুলি স্থায়ী এবং পারম্পরিক।
তিয়র সমাজ এখন হিন্দুভূত। এদের নিজেদের মেলা বা উৎসবের সঙ্গে রামনবমীর দিন ও পালিত হয়। পামিরাজ, রাজা ভীমসেনকে পূজা করা হয়। আদিমাতা হিসেবে পূজা করা হয় বিষহরী, পরমেশ্বরী, ভগবতী এবং গঙ্গাগুহিলকে ।
তিয়র জাতির সাথে মুসাহার, চামার ও ডোম সমাজের সাথে নিবিড় সামাজিক সম্পর্ক আছে। নানা অনুষ্ঠানে এই জাতিসমূহগুলির মধ্যে সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানের মাধ্যমে একটি স্থায়ী সামজিক পরিকাঠামো গড়ে উঠেছে। বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় বা বিশ্ববিদ্যালয় গুলি থেকে এই প্রজাপুঞ্জের বসতির দূরত্বের জন্য শিক্ষার হার বেশ কম।
তথ্য সূত্রঃ
1) K.S Singh India’s Communities, volume VI, p. 3514
2) H.H Risley, The Tribes and Castes of Bengal (Calcutta: Bengal Secrerariat Press, 1891; rpt. 1981, Calcutta: Firma Mukhopadhyay), vol.1, p. 165
গাত্রবর্ণ কালো থেকে শ্যামলা, তামটে থেকে মাঝারি তামাটে, ১৬০ সেমি এর নিচে গড় উচ্চতা সম্পন্ন বাংলার তিয়র/তিবর/তেওড় জাতি বিহারে ‘পরিচর’ নামে পরিচিত। তিয়র/তেওড় শব্দটি তিবর বা শিকারী শব্দ থেকে উৎপত্তি। এই ধারণাটি লোকায়ত হয়ে আছে। গোল মুণ্ডযুক্ত এই আস্ট্রিক গোষ্ঠীভুক্ত জাতির “অঞ্জিকা” নামে একটি প্রচলিত ভাষা ছিল যা আদি কোল-মুন্ডারী ভাষা থেকে উদ্ভূত। প্রবল প্রবাহযুক্ত বাংলা ভাষার মূল স্রোতে এসে এখন তা একাকার হয়ে গেছে। বিহার সংলগ্ন অঞ্চলে তিয়র জাতির লোকেরা মৈথিলী এবং ভোজপুরী ভাষাতেও কথা বলে।
তিয়র জাতি বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত। এই শাখাগুলি যথাক্রমে রাজবংশী, সুরজবংশী (সুজ্জবংশী), পোলওয়ার, পালওয়ার, মাল্লা সুরাইয়া, মুরিয়ারী এবং কেওট। এদের মধ্যে কেওটরা কেবট/কৈবর্ত /কৈবল্ল ভূমির বাসিন্দা বলে দাবি করেন। এই শাখাগুলিকে আর্যিকরণের সময় আবার নানা গোত্রে ভাগ করা হয়েছে এগুলি যথাক্রমেঃ কাশ্যপ, বশিষ্ঠ, পরাশর, কপিল, আলেম্বান, আলম্বার এবং মদুগল্য। ভিন্ন গোত্রে বিবাহের সামাজিক বিধান নেই। তিয়র জাতির মধ্যে মণ্ডল, বিশ্বাস, বর প্রভৃতি পদবী ব্যবহার করতে দেখা যায়। ২০০১ সালের জনগণনা অনুসারে পশ্চিমবঙ্গে এই জাতির সংখ্যা ১৯৫৩৪০ জন। পুরুষের সংখ্যা (১০০২৯০) অপেক্ষা নারীর সংখ্যা (৯৫০৫০) অনেক কম।
বৈবাহিক প্রতীক হিসেবে মহিলারা কপালে সিঁদুর পরেন। বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য অনুমতি আছে। পুনর্বিবাহে (চুমান) বা বিধবা বিবাহের ক্ষেত্রে দেখাশোনার মাধ্যমে বিবাহের(পঞ্চেরাচিকা) মত আচরণ বিধি নেই। সংসারের বড় ছেলেই সব ক্ষমতার অধিকারী হন। কিন্তু ভাইয়েরা ভিন্ন হয়ে গেলে সম্পদ সমান ভাবে বণ্টিত হয়।
সন্তান ধারণ থেকে প্রসব এবং প্রসবের পরবর্তী কালে নানা আচরণবিধি পালিত হয়। আঁতুড় ঘরে বাচ্চার জন্ম হয়। প্রতিবেশী দাইমা বাচ্চা প্রসব করান। বাচ্চা জন্মানোর ৬ দিন পরে পালিত হয় “ছয়ছিটা”। মৃতদেহ আগুনে পোড়ানো হয়। অশৌচ পালন করা হয় একমাস ধরে।
তিয়র জাতি সাধারণত মৎস্যজীবী। চাষবাস এদের দ্বিতীয় পেশা। ইদানীং দিনমজুরের কাজ করেও ওনেকে সংসার নির্বাহ করছেন। কৃষি শ্রমিক থেকে মৎস্যশ্রমিক হিসেবে এদের দক্ষতা অনেক বেশি।
তিয়র জাতির মধ্যে একটি মৌলিক ‘পঞ্চ’ সমিতি ব্যবস্থা আছে। এই পঞ্চ সমিতি ব্যবস্থার উচ্চ পদাধিকারী হলেন মোড়ল। তিনিই চুড়ান্ত সিদ্ধান্তের অধিকারী। সমিতিতে আর থাকেন দেওয়ান, যিনি সভা সমিতি আহ্বান করেন ও সমাজের মধ্যে তদারকি ও বার্তা বাহকের কাজ করেন। একজন চারিদার থাকেন যিনি এই পঞ্চায়েতের পুলিশ কর্মী হিসেবে কাজ করেন। এই সব সব পদাধিকারগুলি স্থায়ী এবং পারম্পরিক।
তিয়র সমাজ এখন হিন্দুভূত। এদের নিজেদের মেলা বা উৎসবের সঙ্গে রামনবমীর দিন ও পালিত হয়। পামিরাজ, রাজা ভীমসেনকে পূজা করা হয়। আদিমাতা হিসেবে পূজা করা হয় বিষহরী, পরমেশ্বরী, ভগবতী এবং গঙ্গাগুহিলকে ।
তিয়র জাতির সাথে মুসাহার, চামার ও ডোম সমাজের সাথে নিবিড় সামাজিক সম্পর্ক আছে। নানা অনুষ্ঠানে এই জাতিসমূহগুলির মধ্যে সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানের মাধ্যমে একটি স্থায়ী সামজিক পরিকাঠামো গড়ে উঠেছে। বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় বা বিশ্ববিদ্যালয় গুলি থেকে এই প্রজাপুঞ্জের বসতির দূরত্বের জন্য শিক্ষার হার বেশ কম।
তথ্য সূত্রঃ
1) K.S Singh India’s Communities, volume VI, p. 3514
2) H.H Risley, The Tribes and Castes of Bengal (Calcutta: Bengal Secrerariat Press, 1891; rpt. 1981, Calcutta: Firma Mukhopadhyay), vol.1, p. 165
No comments:
Post a Comment