Saturday, August 2, 2014

আরও বি এড কেলেঙ্কারি একইসঙ্গে ২ কলেজের প্রিন্সিপাল একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকও!

আরও বি এড কেলেঙ্কারি
একইসঙ্গে ২ কলেজের প্রিন্সিপাল
একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকও!

Aajkaal: the leading bengali daily newspaper from Kolkata

অভিজিৎ চৌধুরি: মালদা, ২ আগস্ট– কথায় আছে একই অঙ্গে এত রূপ৷‌ তেমনি একজন ব্যক্তিই একইসঙ্গে তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানের পদে! চোখ কপালে উঠে যাওয়ার মতো এই ঘটনার নায়ক হলেন এস এম বাকিবিল্লা৷‌ যিনি গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন একটি বি এড কলেজের অধ্যক্ষ৷‌ আবার বারাসতের একটি বি এড কলেজেরও অধ্যক্ষ৷‌ আবার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকও বটে৷‌ টাকার বিনিময়ে পড়ুয়া ভর্তি নিয়ে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ভক্তবালা বি এড কলেজ কাণ্ডের রেশ কাটতে না কাটতেই এবার আরেক বড় কেলেঙ্কারি ধরা পড়ল মালদার গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন একটি বেসরকারি বি এড কলেজে৷‌ গাজোলের ডেভিড হেয়ার বি এড কলেজের অধ্যক্ষ এস এম বাকিবিল্লা আরও একটি বি এড কলেজে এবং একটি হাই স্কুলে প্রধান শিক্ষক পদে চাকরি করছিলেন বলে অভিযোগ৷‌ একই সঙ্গে তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি বিপুল অর্থ বেতন হিসেবে বেআইনিভাবে উপার্জন করছিলেন বলে সম্প্রতি নজরে পড়েছে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের৷‌ পুরো বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই অভ্যম্তরীণ তদম্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয়৷‌ পাশাপাশি গাজোলের ডেভিড হেয়ার বি এড কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছেও বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে কৈফিয়ত তলব করা হয়েছে৷‌ যোগাযোগ করা হচ্ছে উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের অন্য আরেকটি বেসরকারি বি এড কলেজ এবং স্কুলের সঙ্গেও৷‌ তথ্য প্রমাণ-সহ ৪ আগস্টের মধ্যেই পুলিসের কাছে পুরো বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিযোগ জানাতে চলেছে৷‌ ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্হা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গোপাল মিশ্র৷‌ বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এস এম বাকিবিল্লা উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতে কাজিপাড়া হজরত একদিলশা হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক৷‌ পাশাপাশি তিনি মালদার গাজোল ব্লকের বেসরকারি ডেভিড হেয়ার কলেজের অধ্যক্ষ পদে ২০১২ সালের জুলাই মাস থেকে কাজ করছেন৷‌ ওই বি এড কলেজের পরিচালন সমিতির সম্পাদক মনসুর রহমান জানিয়েছেন, অধ্যক্ষ হিসেবে প্রায় দুই বছর ধরে বি এড কলেজে কর্মরত আছেন এস এম বাকিবিল্লা৷‌ তাঁর বেতন মাসে প্রায় ৪০ হাজার টাকা৷‌ যদিও এই কলেজের অধ্যক্ষ পদে যোগদানের আগে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে হলফনামা দিয়ে বাকিবিল্লা জানিয়েছিলেন তিনি অন্য কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন না৷‌ ইতিমধ্যে ২০১৩ সালের জুলাই মাসে আরও একটি বেসরকারি বি এড কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন৷‌ উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের আদর্শ কলেজ অফ এডুকেশন নামে ওই বেসরকারি বি এড কলেজের অধিকর্তা আবু তাহের জানান, গত এক বছর ধরে বারাসতের ওই বি এড কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত আছেন এস এম বাকিবিল্লা৷‌ তাঁর বেতন ৪৭ হাজার ৪০০ টাকা৷‌ আবু তাহেরের দাবি, বারাসতের বেসরকারি বি এড কলেজে যোগদানের আগে বাকিবিল্লা তাঁদের জানিয়েছিলেন যে, তিনি গাজোলের বি এড কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন৷‌ কিন্তু গাজোলের বেসরকারি বি এড কলেজ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ১ আগস্ট শুক্রবার পুরো বিষয়টি নাড়াচাড়া শুরু হতেই আচমকা ইস্তফা দেন এস এম বাকিবিল্লা৷‌ তার আগে পর্যম্ত তিনি ওই কলেজের অধ্যক্ষ পদে ছিলেন৷‌ গাজোলের ওই বি এড কলেজ থেকে কর্মচারীদের উপস্হিতির খাতা এবং বেতন প্রদান সংক্রাম্ত যাবতীয় তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ৷‌ যোগাযোগ করা হচ্ছে যে হাই স্কুলে প্রধান শিক্ষকের পদে কর্মরত রয়েছেন এস এম বাকিবিল্লা সেই স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও৷‌ পুরো বিষয়টিতে বড়সড় জালিয়াতির গন্ধ পাচ্ছে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ৷‌ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার শ্যামসুন্দর বৈরাগ্য বলেন, পুরো বিষয়টি আমাদের নজরে আসতেই আমরা খোঁজ খবর নিতে শুরু করি৷‌ কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে পড়েছে৷‌ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে থাকা কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখা যায় মিথ্যা হলফনামা জমা দিয়ে একই সঙ্গে দুটি বেসরকারি বি এড কলেজ এবং একটি সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত হাই স্কুলের প্রধানের দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন এস এম বাকিবিল্লা৷‌ পুরো বিষয়টি সম্পূর্ণ বেআইনি৷‌ একই সঙ্গে এতগুলি প্রতিষ্ঠান থেকে একজন ব্যক্তি প্রতি মাসে বেতন তুলতে পারেন না৷‌ আমরা ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট বেসরকারি বি এড কলেজগুলির কর্তৃপক্ষ এবং একটি হাই স্কুলের কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও যোগাযোগ করছি, সমস্ত কাগজপত্র আমাদের হাতে পৌঁছেছে৷‌ আগামী সোমবারের মধ্যেই আমরা পুরো বিষয়টি নিয়ে পুলিসের কাছে জালিয়াতির অভিযোগ জানাব৷‌ বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক অপূর্ব চক্রবর্তী বলেন, পুরো বিষয়টি নিয়ে আমরা স্তম্ভিত৷‌ ওই ব্যক্তিকে অধ্যক্ষ হিসেবে দেখিয়েই বেসরকারি বি এড কলেজগুলি এন সি টি ই-র (ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ টিচার এডুকেশন) অনুমোদন পেয়েছিল৷‌ এই জালিয়াতি ধরা পড়ার পরে ওই অনুমোদন নিয়েও টানাটানি হতে পারে৷‌ অন্য দিকে যাকে কেন্দ্র করে এই জালিয়াতির অভিযোগ, সেই এস এম বাকিবিল্লার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চান৷‌ কোনও প্রতিষ্ঠানে তিনি পূর্ণ সময়ের জন্য নিযুক্ত আছেন, তা নিয়েও কোনও স্পষ্ট উত্তর পাওয়া যায়নি তাঁর কাছ থেকে৷‌ তাঁর দাবি, একটি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পদে নিযুক্ত থাকলেও শিক্ষার স্বার্থেই বাকি বেসরকারি বি এড কলেজগুলির সঙ্গে আংশিক সময়ের জন্য তিনি যুক্ত ছিলেন৷‌

No comments:

Post a Comment