নেপথ্য ভাষন -অশোক দাশগুপ্ত
|
ভালর খারাপ খারাপের ভাল
সাম্প্রতিক লোকসভা ভোটে বি জে পি-র আসন অনেক বাড়বে, কে না জানতেন৷ বিহারেও ছবিটা একই রকম ছিল৷ চূড়াম্ত কোণঠাসা হয়েও এই বাস্তব মানতে চাননি নীতীশ কুমার৷ সন্দেহ নেই, বিহারকে অপেক্ষাকৃত সুশাসন দিয়েছেন নীতীশ৷ সেই ‘সুশাসন’-ই তাঁকে তরিয়ে দেবে, ভেবেছেন৷ বি জে পি-র সঙ্গে জোট ভাঙার পরে তেমন কোনও সম্ভাবনাই যে নেই, সব সমীক্ষা বলেছে৷ নীতীশ ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছেন: এ-সবের কোনও দাম নেই, বি জে পি-র লম্ফঝম্পই সার, সামনে থাকবে তাঁর দল জে ডি ইউ-ই৷
অন্যদিকে লালুপ্রসাদ যাদব অঙ্ক কষেছেন, জোট ভাঙায় বি জে পি এবং জে ডি ইউ– দুই দলেরই ক্ষতি হবে৷ প্রচুর ভিড় টেনে ভেবেছেন, তাঁর সুদিন ফিরল বলে৷ কংগ্রেস একটা ক্ষীণ চেষ্টা করেছিল, যাতে এই দুই শক্তিকে এক জোটে জড়ো করা যায়৷ কিন্তু বিহারে কংগ্রেসকে কে পাত্তা দেয়! ভোটে ৪০-এর মধ্যে ৩১ আসন তুলে নিয়ে গেল এন ডি এ, রামবিলাসের এল জে পি-র ৬ শতাংশ ভোট সাহায্য করল৷ এই চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে নীতীশ বুঝলেন, একলা চলে বি জে পি-কে ঠেকানো যাবে না, আগামী বিধানসভা ভোটে গৈরিক শক্তির জয় প্রায় অবধারিত৷ বুঝলেন লালুপ্রসাদও৷ চমকপ্রদ জয়ের আশা যখন হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ল, তিনিও মানলেন, ‘শত্রু’ নীতীশের সঙ্গে হাত মেলাতেই হবে, যদি বি জে পি-র জয়রথ থামাতে হয়৷ উল্লেখযোগ্য, লালুপ্রসাদ যদি একটু উদার হয়ে রামবিলাস পাসোয়ানকে সঙ্গে রাখতে পারতেন, এত খারাপ ফল হত না৷ রামবিলাস এখন সরকারে৷ কিছু করার নেই৷ লালুপ্রসাদ ও নীতীশ কুমারের শত্রুতার বয়স কুড়ি৷ ১৯৭৫-৭৭ সালে জয়প্রকাশ নারায়ণের ইন্দিরা-বিরোধী দুরম্ত আন্দোলনে দু’জন ছিলেন সহযোদ্ধা৷ সেই ঐতিহাসিক সময়ে যাঁরা কাঁধে কাঁধ দিয়ে লড়লেন, বিহারের দখল পাওয়ার লক্ষ্যে তাঁরা পরস্পরের শত্রু হয়ে গেলেন৷ ‘সুসময়ে’ কেউ কারও মুখদর্শন করতে চাননি৷ ‘দুঃসময়’ ঘটিয়ে দিল পুনর্মিলন৷ কংগ্রেসও সঙ্গে৷ বিধানসভার ১০ কেন্দ্রের উপনির্বাচনে আসন ভাগ হল: ৪, ৪, ২ (কংগ্রেস)৷ এবারই সুফল কতটা পাওয়া যাবে, জানি না৷ কিন্তু লালু-নীতীশ একসঙ্গে থাকলে বিহারে বি জে পি-র স্বপ্ন সফল হবে বলে মনে হয় না৷ ব্যাপারটা শুধু বিহারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়৷ প্রভাব পড়তে পারে গোটা ভারতে৷ তথাকথিত সুসময়ের ভুল দুঃসময়ে শুধরে নেওয়ার সুযোগ৷ কংগ্রেসের কথাই ভাবুন৷ হারবেন জানতেন, কিন্তু ৪৪-এ নেমে যেতে হবে, ভাবতে পারেননি কংগ্রেস নেতারা৷ দলের অভ্যম্তরীণ হিসেবে বলা হচ্ছিল, পরাজয় অনিবার্য, তবে ১০০ আসন আসবেই৷ অর্ধেকও এল না৷ বিরোধী দলনেতার পদও পাওয়া যাচ্ছে না৷ কংগ্রেস বুঝল, হিন্দি বলয়ে নিজেদের জোরেই জমি মজবুত করা এখন দিবাস্বপ্ন৷ রাহুল গান্ধীর তত্ত্ব খারিজ হয়ে গেল৷ মূল প্রতিপক্ষ বি জে পি-র বিরুদ্ধে বন্ধুত্ব বাড়াতেই হবে অন্য দলগুলোর সঙ্গে, ঠেকে বুঝল কংগ্রেস৷ ‘সুসময়’ কংগ্রেসের ক্ষতি করেছে সবচেয়ে বেশি৷ ২০০৪ ও ২০০৯ ভোটে মোটামুটি সাফল্য পেয়ে সোনিয়ারা ভাবতে শুরু করেছিলেন, এরকমই চলবে৷ অধিকাংশ আঞ্চলিক দল কিছুতেই বি জে পি-র সঙ্গে যাবে না৷ মোদির বিধ্বংসী প্রচারও ২০০ আসন দিতে পারবে না বি জে পি-কে৷ একের পর এক বিধানসভা ভোটে ব্যর্থতা দেখেও, রাহুল গান্ধীকে সামনে রাখা হয়েছে৷ আজ দেখুন, কংগ্রেস নেতারা বলতে শুরু করেছেন, সোনিয়াকেই মূল দায়িত্ব নিয়ে চলতে হবে৷ মানে, রাহুল চলে না! কেউ চাইছেন, সোনিয়াকে সামনে রেখে যৌথ নেতৃত্ব৷ কেউ আওয়াজ তুলছেন, প্রিয়াঙ্কাকে আনতে হবে৷ অ্যান্টনির রিপোর্টে কার্যত সোনিয়ারও প্রচ্ছন্ন সমালোচনা৷ এই খারাপ সময়ে ভাল কিছু পাওয়ার চেষ্টা জারি৷ সুসময় হল সুসময়৷ কিন্তু তার গর্ভেই লুকিয়ে থাকে দুঃসময়ের শিশু৷ বাড়তে থাকে৷ ক্ষমতার সূত্রে দুর্নীতি আসে, বাড়ে, জড়িয়ে পড়ে দল ও সরকার৷ ৪৪-এ নেমে এলেও, কংগ্রেস নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, তা নয়৷ উত্তরাখণ্ডে ৩ বিধানসভা কেন্দ্রেই বি জে পি-কে হারিয়ে, দুটি কেন্দ্র ছিনিয়ে নিয়ে কংগ্রেস এই আত্মবিশ্বাস পেতে পারে যে, মোদির আকাশছোঁয়া প্রতিশ্রুতি পূর্ণ না হলে, মোদি সরকার ক্রমশ জনপ্রিয়তা হারালে, অম্তত ১১টি রাজ্যে প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে সুযোগ পাবে কংগ্রেসই৷ এজন্য সংগঠন গোছাতে হবে৷ বিশ্বাসযোগ্য নেতৃত্ব সামনে আনতে হবে৷ সোনিয়াকে বাদ দিয়ে নয়৷ হবে না৷ হলে ভাল হবে না৷ একবার এই রাজ্যের দিকে তাকান৷ সি পি এম তথা বামফ্রন্টের বৃদ্ধি থেকে সমস্যা৷ টানা ক্ষমতায় থাকার জেরে পার্টিতে সুবিধাভোগীদের সরব অনুপ্রবেশ৷ অসহ্য ঔদ্ধত্য নানা স্তরে৷ আমরা যখন এত শক্তিশালী, নিজেদের মধ্যে কোন্দল যেন চলতেই পারে৷ গণসংগঠনের নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়া৷ চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে এখন আর কত ক্ষতি হবে? বেনোজল সরেছে, যতটুকু বাকি আছে– সরবে৷ লক্ষ্মণ শেঠের মতো আঞ্চলিক মনসবদাররা দলের কিছু ক্ষতি করলেও, কঠিন লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে উঠে আসবে নতুন নেতৃত্ব৷ দুর্নীতির সুযোগ নেই, ঔদ্ধত্যের জায়গা নেই৷ সি পি এম নেতারা জানেন, অবিলম্বে ক্ষমতায় ফেরা প্রায় অসম্ভব৷ তাতে কী? প্রস্তুতির সময়৷ শুদ্ধির সঙ্গে লড়াকু সংগঠক বেছে নেওয়ার সময়৷ বৃদ্ধির সমস্যা এখন ভাবাচ্ছে মমতাকে৷ একচ্ছত্র নেতৃত্বের জোরে সামলাচ্ছেন৷ স্হানীয় স্তরে উপদলীয় কোন্দল বাড়ছে৷ সুবিধার মধু খেতে বেনোজল৷বেনোজন দলে ভিড়ছে৷ সুসময়ের মধ্যেই জন্মাচ্ছে দুঃসময়ের চারাগাছ৷ সরকার চালাতে গিয়ে এই সমস্যা তাঁকে ভাবাচ্ছে৷ প্রতিষ্ঠান-বিরোধী ঝড় না-ই বা উঠুক, হাওয়া কখনও জোরদার হতে পারে৷ বি জে পি-র প্রধান বিরোধী দল হওয়ার চেষ্টা বিফল করতে সি পি এম তথা বামফ্রন্ট অবশিষ্ট শক্তি নিয়ে লড়লে, পরিস্হিতির অবনতি হতেই পারে না৷ সুসময়ের পাপ দুঃসময়ে মুছে দেওয়ার চেষ্টা প্রবল হতেও পারে৷ ঠিক পথে চললে, এক সময় প্রমাণিত হবে, সুসময় আসলে দুঃসময়, দুঃসময় আসলে সুসময়৷ ভাল সময়ে খারাপের আবাহন৷ খারাপ সময়ে ভালর জন্য লড়াই৷ |
বাঙালির সম্পূর্ণ ভূগোল,ইতিহাস,সংস্কৃতি,সাহিত্য, শিল্প,অর্থ,বাণিজ্য,বিশ্বায়ণ,রুখে দাঁড়াবার জেদ, বৌদ্ধময় ঐতিহ্য, অন্ত্যজ ব্রাত্য বহিস্কৃত শরণার্থী জীবন যাপনকে আত্মপরিচয়,চেতনা,মাতৃভাষাকে রাজনৈতিক সীমানা ডিঙিয়ে আবিস্কার করার প্রচেষ্টা এই ব্লগ,আপনার লেখাও চাই কিন্তু,যে স্বজনদের সঙ্গে যোগাযাগ নেই,তাঁদের খোঁজে এই বাস্তুহারা তত্পরতা,যেখবর মীডিয়া ছাপে না, যারা ক্ষমতার, আধিপাত্যের বলি প্রতিনিয়তই,সেই খবর,লেখা পাঠান,খবর দিন এখনই এই ঠিকানায়ঃpalashbiswaskl@gmail.com
Saturday, August 2, 2014
নেপথ্য ভাষন -অশোক দাশগুপ্ত ভালর খারাপ খারাপের ভাল
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment