Friday, May 16, 2014

দিনভর ভাগ্যের ওঠা-নামার সাক্ষী তারকারা

দিনভর ভাগ্যের ওঠা-নামার সাক্ষী তারকারা
SATABDI-ROY
এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: ভোট গণনার সারা দিন কেমন কাটল রাজ্যের তারকা প্রার্থীদের? কেউ কেউ যেমন সাফল্যের চূড়ায় চড়লেন, তেমনই ভাগ্যলক্ষী মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন কারুর ক্ষেত্রে।

ভোটের ফল যা-ই হোক, বিশেষ উদ্বেগে নেই দীপক অধিকারী। তিনি জানেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নামে যে ঘূর্ণিঝড়ের পিঠে তিনি সওয়ার হয়েছেন, সে তাঁকে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দেবেই। তাই বাঘা বাঘা প্রতিদ্বন্দ্বীকে পিছনে ফেলেও দিব্যি ফুরফুরে মেজাজেই রয়েছেন দেব।

য়ে সে প্রতিপক্ষ নন। একদিকে প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিতথা মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। আর একদিকে পোড়খাওয়া বাম নেতা সন্তোষ রাণা। এই দু'জনের মাঝে চিঁড়েচ্যাপ্টা হয়ে যাওয়ার কথা ছিল রাজনীতির প্রাঙ্গনে সদ্য পা রাখা দেবের। কিন্তু চাঁদের পাহাড়ের শঙ্করের মতোই দুর্দমনীয় জেদ আর ইচ্ছেশক্তি, উপরন্তু 'দিদি'র আশীর্বাদ মূলধন করে প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তিনি। চাঁদি-ফাটা রোদ, ধুলোর আস্তরণ, সারাদিন বকবক করে যাওয়া-- কিছুই দমিয়ে রাখতে পারেনিতাঁকে। গোটা ঘাটাল চষে ফেলেছিলেন সে সময় দেব । আর তার ফল মিলতে চলেছে হাতেনাতে। সকাল ৭টা থেকে ভোট গণনার শুরু থেকেই এগিয়ে টলিউডের 'খোকাবাবু'। দুপুর সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত পাওয়া খবরে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএমের সন্তোষ রাণাকে প্রায় ২৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে পিছনে ফেলে দিয়েছেন তিনি। তবে তখনই জয়ের উল্লাসে মাততে তিনি নারাজ। ছবির শেষ দৃশ্যের অভিনয় যে তখনও বাকি! খবর এল বিকেলের আগেই। ঘাটাল জয় করে অবশেষে তাঁর সিগনেচার হাসিতে উদ্ভাসিত হলেন দীপক অধিকারী।

দেবের মতো নয়, বরং মানসিকতায় তাঁর থেকেও এককাঠি এগিয়ে থাকলেন আসানসোলে বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়। গণনার প্রথম ৬ রাউন্ডের পরই তাঁর এগিয়ে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল প্রার্থী দোলা সেনকে পিছনে ফেলে আসানসোল এল তাঁরই দখলে।

কিন্তু তাতে যেন ভ্রূক্ষেপই নেই বাবুলের। সকাল থেকে মাঠে এলাকার ছেলেদের নিয়ে ফুটবল পেটাতে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। প্রচার পর্বে শাসকদলের কম টিপ্পনি হজম করতে হয়নি তাঁকেও। তার ওপর কয়েক জায়গায় তো রীতিমতো ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। এমনকি, হাজিরা দিতে হয় থানাতেও। তাঁর নামে অভিযোগ দায়ের করে পুলিশ। তবে এত কিছুতেও অবিচল মুম্বইয়ের খ্যাতিমান গায়ক। জয় যেন তাঁর জীবনেরই অঙ্গ হয়ে উঠেছে।

কৃষ্ণনগরে জয়ী তৃণমূল সাংসদ তাপস পাল। তিনি অবশ্য রাজনীতিতে হাত পাকিয়েছেন বেশ কয়েক বছর। বলা যায়, ছবির পর্দা থেকে এখন রাজনীতির ময়দানেই তাঁর আনাগোনাবেশি। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএমের শান্তনু ঝাকে তিনি ৭১,২৫৫ ভোটে পরাজিত করেন। প্রচারপর্বেই অবশ্য এর আঁচ পেয়েছিলেন টলিউডের এক সময়ের বক্স অফিস কাঁপানো নায়ক। তবে ভোটের দিন টিভির পর্দায় পুলিশের ওপর তাঁর হম্বিতম্বি নিয়ে কম জলঘোলা করেনি বিরোধী শিবির। কিন্তু সাফল্যের চেয়ে বড় সাফল্য যে আর হয় না। ফল ঘোষণার পর কৃষ্ণনগরবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি এই উত্সর্গ করলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

রুপোলি পর্দায় তাপস পালের একদা নায়িকা, বর্তমানে দলীয় সঙ্গী শতাব্দী রায়ের জয়যাত্রা এবারও অব্যাহত। বীরভূমের তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী এবারও তাঁর জয়ের ধারা অব্যাহত রাখলেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএম প্রার্থী ডঃ এলাহি কামরে মহম্মদকে ৬৭,২৬৩ ভোটে হারালেন টলিউডের নায়িকা। তবে ফল ঘোষণা শেষ হওয়ার পর স্বভাবতই উচ্ছসিত হয়ে পড়েন তিনি। 

মাত্র কিছু দিন হল প্রয়াত হয়েছেন বাংলা ছবির মহানায়িকা। তবে মাতৃশোক বুকে নিয়েও মমতার ডাকে ভোটের রণাঙ্গনে ঝাঁপিয়ে পড়েন বাংলা ছবির আরেক গ্ল্যামারাস নায়িকা মুনমুন সেন। নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া মনোনয়নপত্রে অবশ্য লিখতে হয়েছে পোশাকি নাম শ্রীমতী দেব বর্মা। তাতে কি! প্রচার পর্বে তাঁর সভায় ভিড় ছিল দেখার মতো। তার ওপরে মমতা ফ্যাক্টর। দুয়ে মিলে জয় প্রায় হাতের মুঠোয় মুনমুনের। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী দুঁদে বাম নেতা বাসুদেব আচারিয়ার থেকে তিনি এক লক্ষের বেশি ভোটে পরাজিত করেন তিনি।

মেদিনীপুর কেন্দ্রে জয়ী তৃণমূল প্রার্থী অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়। বাম প্রার্থী প্রবোধ পান্ডাকে এক লক্ষের বেশি ভোটে পরাজিত করেন তিনি।

নাট্য ব্যক্তিত্ব অর্পিতা ঘোষ বালুরঘাট কেন্দ্র থেকে জয়লাভ করেছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আরএসপি-র বিমলেন্দু সরকারকে তিনি ১,০৬,৯৬৪ ভোটে পরাজিত করেন।

তবে এদিন ভোট আকাশে সব তারাই ঝলমল করেননি। এক সময় এগিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত পরাজিত হয়েছেন বিজেপি প্রার্থী প্রখ্যাত সুরকার বাপ্পি লাহিড়ি। ভোট মঞ্চে জাদু দেখাতে অপারগ জাদুসম্রাট পি সি সরকার (জুনিয়র)। পরাজিত হয়েছেন আরেক বিজেপি প্রার্থী নিমু ভৌমিকও। 

হার-জিত্‍ আছে, থাকবে। তবে নির্বাচনী লড়াইয়ের ফলে মাত্র কিছু দিনের জন্য হলেও খ্যাতির স্বপ্নালোক ছেড়ে ভক্তদের নাগালের মধ্যে ধরা দিলেন ওঁরা। দু' পক্ষের লাভ এটাই।

No comments:

Post a Comment